Home » MAWblog » Miscellaneous » ৭ জন জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ যারা সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন
Miscellaneous
Written by: এস এম নাহিয়ান
13-12-2023
খেলাধুলা এমন একটি পেশা যেখানে হয়তো বিশ্বের বেশিরভাগ পিতা-মাতাই তাদের সন্তানকে দেখার কথা ভাবেন না। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে কথাটি আরও বেশি সত্যি। কিন্তু খেলাধুলা এমন একটি পেশা যেখানে অর্থ উপার্জন কঠিন হলেও, যারা একবার অর্থ উপার্জনের সঠিক রাস্তা খুঁজে পান, তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। এমন ক্রীড়াবিদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সত্যি বলতে, জনপ্রিয় খেলোয়াড় ও ধনী খেলোয়াড়, বর্তমান বিশ্বে এ দুটিকে প্রায় সমার্থক শব্দই বলা চলে। আর তাই আজকের এই লেখাতে থাকছে ৭ জন সফল ক্রীড়াবিদের নাম। যারা কিনে খেলার পাশাপাশি অথবা খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা।
বাস্কেটবল জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ধনী খেলোয়াড় হলেন মাইকেল জর্ডান। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, তার মোট সম্পদের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ১৫ বার অংশ নিয়েছেন মাইকেল জর্ডান। এর ভেতর চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ৬ বার। এক্ষেত্রে একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফোর্বস এর তথ্য অনুযায়ী, এনবিএ থেকে মাইকেল জর্ডানের মোট আয় ১৫ সিজনে ৯০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০০৩ সালে অবসর গ্রহণের পর ২০২৩ সালে এসে কিভাবে তার মোট সম্পদের পরিমাণ হলো ৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানেই লুকিয়ে আছে তার উদ্যোক্তা সত্ত্বার রহস্য।
মাইকেল জর্ডানের রহস্য মূলত সঠিক স্থানে সঠিক বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জর্ডান শুধু টাকা ব্যবহার করেন নি, করেছেন নিজের খ্যাতিকে। অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বই যুগে যুগে নিজের খ্যাতি ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যক্তিই কোন স্থানে নিজের খ্যাতি বিনিয়োগ করলে তা সবচেয়ে বেশি ব্যবসাসফল হবে, তা বুঝতে পারেন না। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম মাইকেল জর্ডান। ১৯৮৪ সালে তার ‘নাইকি’ এর সাথে করা চুক্তিটি খেলার জগতের সর্ববৃহৎ চুক্তি গুলোর একটা। নাইকি এর ‘এয়ার জর্ডান’ শ্যু এর কথা কে না জানে। আর এই ‘এয়ার জর্ডান’ ব্র্যান্ডের লভ্যাংশের ৫% মালিকানা মাইকেল জর্ডানের। ফলে আজ অবধি শুধু তিনি এই একটি বিনিয়োগ থেকেই ১.৩ বিলিয়নের ডলারেরও বেশি উপার্জন করেছেন।
তবে শুধু এয়ার জর্ডান নয়, মাইকেল জর্ডানের রয়েছে আরও বহুল বিনিয়োগ। এনবিএ বিখ্যাত টিম হর্নেট এর অন্যতম শেয়ার হোল্ডার ছিলেন মাইকেল জর্ডান। তবে সেই শেয়ারের বিক্রয়ের মাধ্যমে তিনি কয়েক মাস আগেই ৩ বিলিয়নের মাইলফলক ছুয়েছেন। এর বাইরেও তিনি একটি নাসকার (NASCAR) টিমের মালিক। তার রয়েছে টেকিলা (Tequilla) পানীয়ের ব্যবসা ও নিজস্ব স্টেক হাউস ফ্রাঞ্চাইজ।
ইংলিশ এই ফুটবল তারকার খ্যাতি শুধু ফুটবলেই সীমাবদ্ধ নয়। সৌর্ন্দয্যের জন্যও অনেকের কাছে বিশেষ ভাবে পরিচিত তিনি। তবে নিঃসন্দেহে তিনি ফুটবলের সবচেয়ে সফল তারকাদের মধ্যে একজন। তবে এ সব কিছুর পাশাপাশি তিনি একজন সফল ব্যবসায়ীও বটে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সহ বেশ কিছু ক্লাব ও জাতীয় দলে খেলার সুবাদে, তিনি তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ৮০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি কামিয়েছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকে তিনি পুরো দস্তর একজন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী হিসেবে জীবন নির্বাহ করছেন। অবসরের পর পরই তিনি শুরু করেন তার নিজস্ব কোম্পানি ‘ডিভি ভেঞ্চারস’ (DB Ventures)। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। তবে ২০২২ সালের মার্চ মাসে বেকহ্যাম তার কোম্পানির ৫৫% সত্ত্ব বিক্রয় করে দেন। এই চুক্তি থেকে তার আয় হয় ২৩০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এছাড়াও অন্যান্য খেলোয়াড়দের মতো বেকহাম তার খ্যাতিকেও বিনিয়োগ করেছেন। অ্যাডিডাস ও টিউডর, এই দুইটি ব্র্যান্ডের সাথে তার রয়েছে বিশেষ চুক্তি।
তবে ফুটবলার হয়ে স্বভাবতই তিনি ফুটবলের জগতে একটি শক্ত অবস্থান বজায় রাখতে চেয়েছেন। ২০০৭ সালে তিনি যখন মেজর লীগের ‘এলএ গ্যালাক্সি’ (LA Galaxy) এর চুক্তি সই করেন তখনই তাকে ২৫ মিলিয়নের বদলে একটি অতিরিক্ত দলের মালিকানা অফার করা হয়। ২০১৪ সালে তার অবসরের পর তিনি প্রকাশ করেন যে তিনি সেই অফারটি নিয়েছিলেন। এরপরেই জন্ম হয় ইন্টার মিয়ামি ফুটবল ক্লাবের। সমসাময়িক মেসি ক্লাবটিতে যোগদান করলে ক্লাবটির মূল্য বেড়ে যায় অনেক গুণ। আর এই ক্লাবটির মালিক এবং পরিচালক আর কেউ নন, ইংলিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম। এভাবেই তিনি পৃথিবীর অন্যতম ধনী ফুটবলারদের মধ্যে একজন। এছাড়াও তার রয়েছে নিজস্ব হুইস্কি ব্র্যান্ড ‘হাইগ ক্লাব’ (Haig Club)।
শ্রীলংকার ইতিহাসে অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান এবং শ্রেষ্ঠ কিপার কুমার সাঙ্গাকারা অবসরের পরে পুরোপুরি ব্যবসাতেই মনোযোগী হয়েছেন। সমসাময়িক কালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলার।
পূর্ববর্তী দুইজন খেলোয়াড়ের তুলনায় তার মোট সম্পদের পরিমাণ অনেক কম হলেও, কুমার সাঙ্গাকারা একজন খাঁটি ব্যবসায়ী। অবসর গ্রহণের পরেই তিনি চালু করেন ‘মিনিস্ট্রি অফ ক্র্যাব’ (Ministry of Crab)। নামে মিনিস্ট্রি হলেও, এটি আসলে একটি রেস্তোরাঁ। শ্রীলংকান রন্ধনশৈল্পীর অন্যন্য ও আধুনিক নিদর্শন বলা চলে এই রেস্তোরাঁটিকে। এই রেস্তোরাঁটিতে মূলত লাগুন ক্র্যাব বা কাঁকড়া পরিবেশন করা হয়। আন্তর্জাতিক মানের এই রেস্তোরাঁটির শ্রীলংকার বাইরেও বেশ কিছু শাখা আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সাংহাই, ম্যানিলা, কলম্বো, চেংডু, ব্যাংকক, মালদ্বিপ ইত্যাদি। এই রেস্তোরাঁটার পেছনে কুমার সাঙ্গাকারা ছাড়াও আরও দুইজন ব্যক্তির নাম। মাহেলা জয়বর্ধান ও দর্শান মুনিদাসা। রেস্তোরাঁটির মান এতই ভাল যে ২০১৫-২০২০, এই টানা পাঁচ বছরে এশিয়ার সেরা ৫০ রেস্তোরাঁ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এই মিনিস্ট্রি অফ ক্র্যাব। অর্থাৎ একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী হিসেবে কুমার সাঙ্গকারাকে সফল বলাই যায়।
ভোজনরসিকরা জেনে নিতে পারেন বাংলাদেশের বিখ্যাত দশটি খাবার সম্পর্কে।
তবে রেস্তোরাঁ ব্যবসাতেই কুমার সাঙ্গাকারার ব্যবসায়িক জীবন শেষ নয়। বাকি সব খেলোয়াড়দের মতো তিনিও ২০২২ সালে খেলা ভিত্তিক একটি ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছেন। কুমার সাঙ্গাকারা বিহেভিওল (Behaviol) নামে একটি ই-স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম লঞ্চ করেছেন যা হয়তো শুরু করতে যাচ্ছে এক নতুন দিগন্তের। এই প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যে ২.৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছেন। এই প্ল্যাটফর্মটির প্রথম গেম হতে যাচ্ছে মেটা ১১। এই গেমটির গেমাররা চাইলে তাদের পছন্দের তারকাদের নিয়ে টিম গঠন করতে পারবেন। সেই টিমটিকে গড়ে তুলতে পারবেন এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রতিযোগিতাও করতে পারবেন। মূলত ক্রিকেটকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির রুপ দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপটি রাখছে বিহেভিওল। নিজেকে এই ব্যবসার সাথে জড়ানোর পেছনে অন্যতম কারণ যে তার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার,সেটিও স্বীকার করেছেন কুমার সাঙ্গাকারা।
টেনিসের জগতে যেই গুটি কয়েক নাম জ্বল জ্বল করে ওঠে তার ভেতর সেরিনা উইলিয়ামস অন্যতম। জনপ্রিয় নারী ক্রীড়াবিদদের ভেতরেও তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আর তিনিই আজকের এই তালিকার একমাত্র নারী খেলোয়াড়। মাত্র ১ বছর আগে অবসরে যাওয়া এই মার্কিন টেনিস খেলোয়াড় ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক ভাবে নিজের অবস্থান বেশ পাকা-পোক্ত করে ফেলেছেন। অবসরের আগে বিভিন্ন ম্যাচ জেতার পুরুষ্কারের বদৌলতে তার মোট আয় ছিল ৯৫ মিলিয়ন ডলার।
সেরিনা উইলিয়ামস এর বর্তমান মোট সম্পদের পরিমাণ ২৯০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে আয়ের বাইরেও তিনি কিভাবে এত বিশাল সম্পদ গড়লেন, সে প্রশ্ন উঠে আসবে অনেকের মনেই। অন্য সকল বড় তারকার মতই সেরিনা উইলিয়ামস এরও রয়েছে ডজন খানেক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে নিজের খ্যাতি বিনিয়োগ করার পাশাপাশি নিজের অর্থও বিনিয়োগ করেছেন। এমনকি বিনিয়োগের জন্য রয়েছে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, যার নাম ‘সেরিনা ভেঞ্চারস (Serena Ventures)।
এসবের পাশাপাশি সেরিনা উইলিয়ামস এর রয়েছে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘উইল পারফর্ম’ যা যাত্রা শুরু করে ২০২২ এর ডিসেম্বরে। এটি মূলত মাসল-কেয়ার বা পেশীর ব্যাথা নিরাময়কারী প্রতিষ্ঠান। পেশির যেকোনো ধরনের ব্যাথার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি লোশন, স্প্রে ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। সেরিনা উইলিয়ামস এত বিশাল মাপের খেলোয়াড় হওয়ার কারণে স্বভাবতই এক্ষেত্রে তার উপস্থিতিকে একটি আস্থার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তবে এর পাশাপাশি তার রয়েছে আরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে যাত্রা শুরু করে তার নতুন প্রডাকশন হাউজ, ‘নাইন টু সিক্স প্রডাকশনস’। এর পাশাপাশি আমেরিকান ফুটবল টিম ‘মিয়ামি ডলফিনস’ এও রয়েছে তার মালিকানা।
দি টার্মিনেটর খ্যাত আর্নল্ড শোয়ার্জেগারকে চেনে না এমন সিনেমা প্রেমিক হয়তো নেই। কিন্তু অভিনয়ের জন্য সুখ্যাত হলেও আর্নল্ড শোয়ার্জেগারের প্রথম পরিচয় একজন ক্রীড়াবিদ। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বডি-বিল্ডিং শুরু করা এই অস্ট্রিয়ান নাগরিক। মাত্র ২০ বছর বয়সে জিতে নেন মি. ইউনিভার্স পদক। আর তার মাধ্যমেই তিনি সুযোগ পান যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর। কথিত আছে, তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম পা রাখেন, তখন তার পকেটে ছিল মাত্র ২৫ ডলার। সেই ২৫ ডলারকে সম্বল করেই পথ চলা শুরু তার। আর মাত্র ৫ বছরের ভেতরেই তিনি জিতে নেনে চারটি মি. ইউনিভার্স পদক। তার পাশাপাশি তার ঝুলিতে ছিল সবচেয়ে কম বয়সে মি. অলিম্পিয়াস জেতার রেকর্ড। আর এই ৫ বছরের মধ্যেই মাত্র ২৫ বছর বয়সে মিলিওনিয়ার হয়ে যান আর্নল্ড শোয়ার্জেগার।
কিন্তু তালিকার বাকি সকল ক্রীড়া তারকের তুলনায় তার গল্পটি একদমই ভিন্ন রকমের। অন্য সকল তারকারাই খেলার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা কামিয়েছেন, অর্থ উপার্জন করেছেন। এরপর সেই অর্থ বিনিয়োগ করে তবেই সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছেন। কিন্তু আর্নল্ড শোয়ার্জেগার সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাতুতে গড়া। শরীর-চর্চার ক্রীড়া তাকে যৎসামান্য খ্যাতি এনে দিলেও, তেমনটা অর্থের মুখ দেখাতে পারে নি কখনই। এমনকি সবচেয়ে কম বয়সে মি. অলিম্পিয়া হওয়ার পরেও তার পুরুষ্কারের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৫০ ডলার। তাই পেট চালাতে তাকে বাধ্য হয়ে বেছে নিতে হয় ব্যবসার পথ।
আর্নল্ড শোয়ার্জেগারের প্রথম বিনিয়োগই ছিল রিয়েল-এস্টেট এ। কাড়ি কাড়ি টাকা না থাকলে রিয়েল-এস্টেট ব্যবসাতে নামা যায় না, এই ধারনা ভেঙে দেন তিনি। শরীর-চর্চার করার পাশাপাশি সে সম্পর্কিত বইও লিখতেন তিনি। বানাতেন ভিডিওও। সে সব আবার নিজস্ব ‘আর্নল্ড স্ট্রং’ নামক ছোট্ট ডাকযোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে বিলি করতেন। এভাবে যখন কিছুটা সামর্থ্য হলো, তিনি শুধু ডাউন পেমেন্টের সাহায্যে একটি বাড়ি কিনলেন। তার সাথে সাথেই ওই বাড়িটি বিক্রি করে দিয়ে কিনে ফেললেন আরও ভাল একটি বাড়ি। এভাবেই শুরু। এই ব্যবসার সাথে সাথে তিনি খুলে ফেললেন একটি ব্রিকলেয়িং কোম্পানি। ব্রিকলেয়িং কোম্পানি হলো মূলত এক ধরনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যারা ইটের সাহায্যে দেয়াল তৈরিতে পারদর্শী। আর এর মাধ্যমেই আর্নল্ড শোয়ার্জেগার মাত্র ২৫ বছর বয়সে মিলিওনিয়ার হয়ে যান।
পরবর্তীতে তিনি অনেক ব্যবসার সাথেই জড়িত ছিল। ৮০ ও ৯০ এর দশকে তিনি সিনেমার সাথে যুক্ত হয়েছে। প্রথমে সি-গ্রেডের সিনেমাতে অভিনয় করলেও টার্মিনেটর সিরিজের মাধ্যমেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও বিপুল অংকের টাকা উপার্জন করেন আর্নল্ড শোয়ার্জেগার। পরবর্তীতে ২০০৩ সাল ও ২০০৭ সালে পর পর দুইবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়া স্টেটের গভর্নর নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে সফল ও ধনী এই ব্যক্তির বর্তমান মোট সম্পদ ৪৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল তারকাদের একটি তালিকা তৈরি করা হলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো অবশ্যই সেখানে থাকবে। শুধু জনপ্রিয়তা নয় বরং আয়ের দিক থেকেও তার অবস্থান তুঙ্গে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার যা এই তালিকার যেকারও থেকে অনেক বেশি।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খেলার পাশাপাশি বরাবরই ব্যবসায়ে ছিলেন মনোযোগী। তার ব্যবসায়ের ধরন ও আয়ের উৎস, দুটিই বহুমুখী। তার ব্যবসা সমূহের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো হোটেল ব্যবসা। পর্তুগালের পেস্টানা গ্রুপের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সিআর৭ খ্যাত এই খেলোয়াড় নিয়ে এসেছে ‘পেস্টানা সিআর৭ লাইফ স্টাইল হোটেল’। বিশ্বব্যাপী তার পাঁচটি হোটেল রয়েছে। হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ব্যবসাতেও তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত রেস্তোরাঁ ‘যেলা’ (Zela) তেও রয়েছে তার যৌথ মালিকানা।
হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসার পাশাপাশি রোনালদোর রয়েছে নিজস্ব কাপড় ও সুগন্ধির ব্যবসা। তার নিজস্ব জিনস কোম্পানির নাম সিআর৭ ডেনিম। এর বাইরেও সিআর৭ কম্বলেরও ব্যবসা রয়েছে তার নামে। একই সাথে ব্রিটিশ সুগন্ধী নির্মাতার সাথে চুক্তি করে বাজারে এসেছে ‘ইডেন পারফিউম ক্রিস্টিয়ানো রোলানদো ফ্র্যাগনেন্স’ (Eden Perfume Cristiano Ronaldo Fragrance)।
এসবের বাইরেও ২০১৬ সালে রোনালদো তৈরি করে তার নিজস্ব ফিটনেস সেন্টার ‘ক্রাঞ্চ ফিটনেস’ (Crunch Fitness)। বর্তমানে মাদ্রিদে এমন দুইটি সেন্টার রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে হেয়ার ক্লিনিকের ব্যবসা। তালিকার শেষে রয়েছে প্রাইভেট জেট কোম্পানি যার প্রতি ঘন্টায় ভাড়া হতে পারে ৩ হাজার ইউরো।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা, সাকিব আল হাসান। এমন কোনো বাংলাদেশী নেই যে কি না সাকিবকে চেনে না। রোনালদো এর মতো সাকিবও বর্তমানে খেলার সঙ্গেই আছেন। তবে যদি ভেবে থাকেন সাকিব এই তালিকার সর্বনিম্ন সম্পদের অধিকারী, তাহলে ভুল ভাবছেন। সাকিবের সম্পদের পরিমাণ এ সকল রথী মহারথীদের সমান না হলেও নেহায়েত কম নয়। এই তালিকায় শেষ দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন তিনি। সবার শেষে আছেন কুমার সাঙ্গাকারা। ইনসাইড স্পোর্টস এর সূত্র মতে সাকিবের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৬ মিলিয়ন ডলার।
খেলোয়াড়ের পাশাপাশি সাকিব আল হাসানকে নিঃসন্দেহে পুরোদস্তর ব্যবসায়ী বলা যায়। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি সংযুক্ত ছিলেন নানা ব্যবসার সাথে। প্রথম ব্যবসায়িক জগতে পা রাখেন রেস্তোরাঁ ব্যবসার সাহায্যে। সাকিবস সেভেন্টি ফাইভ নামক রেস্তোরাঁটিই তার প্রথম ব্যবসা। এরপরে ক্রমাগত নাম লিখিয়েছেন নানা ব্যবসায়। ২০১৮ সালে কক্সবাজারে শুরু করেন হোটেল ব্যবসা। আবার সেই কক্সবাজারেই হোটেল কাম শপিংমলে চালু করেন প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবসা। একই ব্যবসা করেছেন যমুনা ফিউচার পার্কেও। যদিও এগুলো আপাতত বন্ধ আছে। কাঁকড়ার ফার্মের ব্যবসা নিয়েও আলোচনায় আসেন সাকিব আল হাসান। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হওয়ায় বেশ কয়েকবার আলোচনায় আসে তার নাম। কিন্তু সেটি সরাসরি পরিচালনার সময় ছিল না সাকিবের। পরবর্তীতে সকল বেতন-ভাতাই পরিশোধ হয়। এসবের পাশাপাশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে ই-কমার্স, সকল ক্ষেত্রেই বিচরণ আছে মিস্টার অলরাউন্ডারের। বিনিয়োগ ব্যবসা এবং স্বর্ণ ব্যবসাতেও রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। বনানীতে রয়েছে স্বর্ণের দোকান। এমনকি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার ইচ্ছাও ছিল সাকিব আল হাসানের। কিন্তু পরিচালক হওয়ার শর্তসমূহ পূরণ না হওয়ায় অনুমতি মেলে নি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার উদ্ভোধনের সাথে জড়িত আছেন তিনি। সেটিও বেশ বড় একটি আয়ের উৎস বলা যায়। সব মিলিয়ে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের একজন অন্যতম ধনী ব্যক্তি নিঃসন্দেহে।
কথায় আছে টাকায় টাকা আনে। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কথাটি সত্যি তো বটেই, তার পাশাপাশি খ্যাতিও যে টাকা আনে এই কথাটিও সত্য। ব্যবসায় সফলতা লাভের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় নিয়ামক হলো ব্যবসার পরিচিতি। আর সেই পরিচিতিটি যদি বিনামূল্যে নিমিষেই আসে, তাহলে সেই ব্যবসা সফল হতে বাধ্য। আর ঠিক সেজন্যই জনপ্রিয় খেলোয়াড়দের অধীনে থাকা ব্যবসা গুলো এতটা সফল হয়ে থাকে। তবে শুধু খ্যাতি ও টাকা থাকলেই হয় না, ব্যবসায়িক বুদ্ধি ও উদ্যোক্তা স্বত্তাও বেশ বড় একটা ভুমিকা রাখে। আর তাই আজকের লেখায় সংযুক্ত এই ৭ জনই ক্রীড়াবিদ হিসেবে যেমন প্রতিভাবান, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবে ঠিক তেমনটাই সফল।
31-10-2024
Miscellaneous
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত...
Read More22-10-2024
Miscellaneous
ব্রেন ড্রেইন (Brain Drain) হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দক্ষ,...
Read More30-09-2024
Miscellaneous
ড. মুহাম্মদ ইউনুস, একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ,...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.