নীলা
সকালটা সুন্দর। মিষ্টি রোদ উঠেছে। নীলা সেন যে ঘরে বসে কাজ করছেন তা থেকে বাইরের আবহাওয়া চট করে বোঝা বেশ মুশকিল। কারণ ঘরটির চর্তুদিকে ভারী পর্দা লাগানো। বেশ বড় একটা এসি লাগানো রয়েছে। তাছাড়া কিছু সবুজ গাছ ঘরটির শোভা বাড়াচ্ছে।বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি এক বিদেশি ডিজাইনার দিয়ে অফিস ঘরটি নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছেন।
কোনমতে নিজেকে সামলে সে সাবেরের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে নমস্কার জানালো। নীলার চোখমুখে তখন এক অন্যরকম এক ভাব, বুকে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে কিন্তু সাবেরকে কোনভাবেই এ বূঝতে দেয়া যাবে না। নীলা বললো, "হলে মন বসছিলো না, তাই ভাবলাম একা একা একটু পাহাড় দেখে আসি।"
"বাহ, বেশ তো। আমিও ওদিকেই যাচ্ছি। তাহলে চলো, একসাথে যাওয়া যাক। একা মানুষ তো এসব ভিড় একদম ভালো লাগে না। পাহাড়ের বুকে এক চিলতে শান্তি খুঁজে পাই।"
নীলা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলো না। সে যেন এক ঘোরের ভেতর চলে গেল। কোনমতে বললো, "চলুন।" সিএনজিতে বসার পর কোন কথা বলেনি সে। সাবের একমনে কথা বলে যাচ্ছিলেন। পাহাড়ের বিশালতা আর সৌন্দর্য দেখে নীলা আস্তে আস্তে সহজ হচ্ছিল। তাদের মধ্যে অনেকক্ষণ কথা হলো। আচমকা সে সাবেরের হাত ধরে বললো, "আমি আপনাকে ভালোবাসি।"
রায়কর সেন বেশ নামকরা বিজনেসম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুর পর সমস্ত বিজনেস তার মেয়ে নীলা নিজ হাতে সামলাচ্ছে। রায়কর সেনের এটাই ইচ্ছে ছিল মেয়ে যেন দায়িত্বটা নেয়। বাবার কোন ইচ্ছেই সে আজ অব্দি ফেলেনি। সেই ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর বাবাই তার সব।
গুলশানে এত বড় অফিস পুরোটাই তাকে দেখতে হয়। সবদিক সামলাতে তার হিমশিম খেতে হয় কিন্তু সব যেন সয়ে যাচ্ছে তার। মুখ বুঝে এই নিজের উপর করা অত্যাচারটা করতে এখন আর তার খুব একটা খারাপ লাগে না। গম্ভীর আর বদমেজাজী এই নীলাকে অফিসের সবাই খুব ভয় পায়। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া অফিসের কেউ তার সাথে যেচে কথা বলতে আসেন না। অথচ নীলা আগে এমন ছিল না।ভার্সিটিতে পড়াকালীন কি হাসিখুশি একটা মেয়ে ছিল সে... তারপর সব
কেমন যেন হয়ে গেল। বয়স এখনো ত্রিশ পার হয়নি তার, তাতেই কেমন যেন যৌবন হারিয়ে গেছে। বয়সের থেকে তাকে বেশ বয়স্ক লাগে।
ফাইলগুলো সাইন করতে করতে নীলা বেল টিপে এক মগ ব্ল্যাক কফি দিয়ে যেতে বললেন। অফিসে কাজ করতে করতে এই এক অভ্যেস হয়েছে, একটু পর পর কফি খাওয়া।আগে তার এই অভ্যাস ছিল না। বেয়ারা কফি দিয়ে যেতেই তিনি বললেন ফাইলগুলো যেন রহমান সাহেবের রুমে দিয়ে দেয়া হয়। আর সে বিকেল অব্দি রেস্ট নিবে, তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে। কফির মগ হাতে নীলা জানালার পাশের চেয়ারটায় বসলো। পর্দাগুলো খুলে দিতেই মিষ্টি একটা রোদ এসে গায়ে পড়ল। বেশ ভালো লাগছে এভাবে কফি খেতে। কি ব্যস্ত নগরী, সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। কারোর দিকে কারোর তাকাবার সময়টুকু নেই। নীলা কফির মগে চুমুক দিয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ যেন তার সামনে দশ বছর আগের নীলা ভেসে উঠল। কি এমন ভুল করে ছিল সে? "ভালবাসাটা কি এই সমাজে অপরাধ?" নিজেকেই যেন প্রশ্ন করছিল সে।
নীলা সেন উনিশ বছরের তরুণী, বেশ ছিমছিমে গড়ন। অত্যন্ত সুন্দরী বলাবাহুল্য। যেকোন পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তুলতে সক্ষম। সবে সে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে বাংলায় ভর্তি হয়েছে বাবার ইচ্ছায়। তার নিজের ইচ্ছে ছিল ডাক্তারি পড়বার। অথচ তার ইচ্ছেটাকে কেউ গুরত্ব দিল না। শেষে বাবার ইচ্ছেই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে সে। প্রথম কিছুদিন সেখানে তার ভালো লাগছিল না। নতুন পরিবেশ নতুন মানুষ সবার সাথে খাপ খাওয়াতে তার একটু সময় লাগছিলো। তাছাড়া মনের বিরুদ্ধে কোন কাজ করতে হলে তাতে মন বসাতে একটু সময় লাগে। আস্তে আস্তে সে সহজ হচ্ছিল। সবার সাথে মিশতে শুরু করার পর তার মনে হল এ জীবন খারাপ না।
এরপরেই তার জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হল।
সেদিন ছিল সোমবার। প্রথম পিরিয়ডে বসে থাকতে হবে জেনেও নীলা সেদিন ক্লাসে গেল। কারণ বিলাস বাবু চাকুরী ছেড়ে দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছিল। বিলাস স্যার প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন। নীলা ক্লাসে গিয়ে প্রায় অবাক। এক মাঝবয়েসী ভদ্রলোক রোল কল করছেন। ক্লাসের দরজায় সে ইতস্তত করতে লাগলো। শেষমেশ বলেই ফেললো "স্যার, আসবো?" খাতা থেকে মাথা ঊঠিয়ে নীলাকে দেখে সামান্য হেসে সাবের হাসনাত বললেন, "এসো।" সাবের হাসনাত সবে জয়েন করেছেন। বয়স প্রায় পঁয়ত্রিশের কোঠায়, কিন্তু এখনও বেশ সুপুরুষ। তিনি বিপত্নীক। স্ত্রী গত হয়েছে বছর পাঁচেক হলো। এরপর আর বিয়ে করেননি। তার কোন সন্তানও নেই, মোটামুটি একা একজন মানুষ তিনি।
নীলা প্রতিনিয়ত ক্লাস করে। সাবের হাসনাত নামের এই লোকটাকে বেশ ভালো লাগতে থাকে তার। সাবের হাসনাত এর কোন ক্লাসই সে বাদ দেয় না। ক্লাস করার সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। কি সুন্দর ভাবেই না পড়ান তিনি! আচ্ছা, এটাকেই কি ভালোবাসা বলে? উত্তর খুঁজে পায় না সে। তার কুমারী জীবনের প্রথম ভালোবাসা কি এই মাঝবয়েসী লোকটা?
আচ্ছা, লোকটাও কি তাকে ভালোবাসে? কি ভাবছে সে এসব! ছিঃ ছিঃ। তার যেন বিবেকে বাধলো। কিন্তু মন যে কেমন কেমন করছে?
এক বিকেল বেলায় সে ভার্সিটির দুই নম্বর গেট দিয়ে বের হতেই দেখল সাবের হাসনাত সেখানে দাঁড়িয়ে সিএনজি ঠিক করছেন। নীলার সাবেরকে দেখেই বুক ধড়াক করে উঠলো। সে কোনমতে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিল কিন্তু সাবের তাকে ডাকলেন, "এই যে মিস নীলা সেন! এই বিকেলে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?"
কোনমতে নিজেকে সামলে সে সাবেরের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে নমস্কার জানালো। নীলার চোখমুখে তখন এক অন্যরকম এক ভাব, বুকে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে কিন্তু সাবেরকে কোনভাবেই এ বূঝতে দেয়া যাবে না। নীলা বললো, "হলে মন বসছিলো না, তাই ভাবলাম একা একা একটু পাহাড় দেখে আসি।"
"বাহ, বেশ তো। আমিও ওদিকেই যাচ্ছি। তাহলে চলো, একসাথে যাওয়া যাক। একা মানুষ তো এসব ভিড় একদম ভালো লাগে না। পাহাড়ের বুকে এক চিলতে শান্তি খুঁজে পাই।"
নীলা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলো না। সে যেন এক ঘোরের ভেতর চলে গেল। কোনমতে বললো, "চলুন।" সিএনজিতে বসার পর কোন কথা বলেনি সে। সাবের একমনে কথা বলে যাচ্ছিলেন। পাহাড়ের বিশালতা আর সৌন্দর্য দেখে নীলা আস্তে আস্তে সহজ হচ্ছিল। তাদের মধ্যে অনেকক্ষণ কথা হলো। আচমকা সে সাবেরের হাত ধরে বললো, "আমি আপনাকে ভালোবাসি।"
এটার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলেন না সাবের। কি বলবেন তাও বুঝতে পারছিলেন না। এক সময় বলে ফেললেন, "নীলা তুমি ভুল করছো।"
-"আমি ভুল করছি?"
-"হ্যাঁ! সমাজ আমাদের মেনে নিবে না। তাছাড়া ধর্ম আমাদের বিপক্ষে।কিসের ভিত্তিতে আমরা ভালোবাসবো একে অপরকে?"
-"কেন? আমরা কি মানুষ না? ভালোবাসতে হলে কি ধর্মে রর্মে দোহাই লাগে? আর এই আধুনিক সমাজে এসেও আপনি এসব বলবেন, আমি ভাবিনি।"
-"কিন্তু সমাজ?"
-"ওসব আমি পরোয়া করি না।"
-"তোমার বাবা কি এসব মেনে নেবেন? আমি শুনেছি তোমরা বেশ সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার।"
এবার যেন দমে গেল নীলা। আসলেই তো বাবার কথা একদম ভাবেনি সে।তারপর সে নিজের অজান্তেই বলে ফেললো যে সমাজের বিরুদ্ধে লড়তে পারবে, সে নিজের বাবার সাথে ও পারবে। কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা ধরে আসল তার।
সেদিন সাবের এই যুবতী মেয়েটার কথা আর সাহসের কাছে হেরে গিয়েছিলেন।
নীলার দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ।এই দেড় বছরে সাবের-নীলার প্রেম কাহিনিতে ভার্সিটি বেশ উত্তাল ছিল।অনেকে অনেক কটু কথা বলেছে কিন্তু নীলা সে সব গায়ে মাখে নি।লড়াই করে গেছে সবার সাথে। এবার সে দূর্গাপূজোয় বাসায় যাচ্ছে। তাদের আদি বাসা মালিবাগ চৌধুরিপাড়ায়। ঢাকায় এসে বাবার মুখোমুখি হতেই বললেন, "রেস্ট নাও। রাতে তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে।"
নীলার বুক ধড়াক করে উঠলো, কি বলবেন বাবা? তার আর সাবেরের ব্যাপারে জেনে যাননি তো? না কীভাবে জানবে, নিজেকে সান্ত্বনা দিল নীলা।
-"তোর পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?"
-"ভালো, বাবা।"
-"আমার কানে কিছু কথা এসেছে সেগুলো কি সত্যি?"
-"কি কথা বাবা?"
-"তুই নাকি এক আধ বুড়োর সাথে প্রেম করছিস?"
-"হ্যাঁ, বাবা, সত্যি।" কথাটা বলতে একটুও কাঁপল না সে। তারপর সে আবার বললো, "বাবা, লোকটা অনেক ভালো। ভার্সিটির শিক্ষক।"
-"কি নাম? কোন গোত্র?"
এবার সে কাঁপতে কাপতে বললো, "সাবের হাসনাত।"
-"কি বললি তুই? মুসলিম ছেলে? তোর লজ্জা নাই। আমাদের নাম ধুলোয় মিশিয়ে দিলি?"
-"কেন, বাবা, ভালোবাসা কি অপরাধ?"
-"না। অপরাধ নয়। কিন্তু অন্য ধর্মের লোককে ভালোবাসা অবশ্যই অপরাধ বলে গণ্য হবে।"
-"বাবা, এই যুগে এসেও তুমি এসব বলছো?"
-"অবশ্যই। সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। তুই এসব ভাঙতে পারিস না।আমি কেন কেউ তাকে মেনে নিবে না।"
-"সমাজ কি বলে তাতে আমার কিছু যায় আসে না, বাবা। আমি ওকে ভালোবাসি। সে কোন ধর্ম সেটা আমার কাছে বড় নয়। আমার কাছে প্রথমে সে একজন মানুষ। তার বয়স, তার সোশ্যাল স্ট্যাটাস, ওসবে আমি কেয়ার করি না। আমি তাকে ভালোবাসি এটাই শেষ কথা।"
রায়কর সেন এক দৃষ্টিতে মেয়েকে দেখছিলেন। কি বলছে সে এসব। মেয়েটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল?আর সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করলেন "তোদের বিয়ে কীভাবে হবে?"
-"বিয়ে? বিয়ে কি, বাবা? শুধু মন্ত্রপাঠ করে সাতপাকে ঘুরলেই কি বিয়ে হয় বাবা? আমি সেসব প্রয়োজন বোধ করি না, বাবা।"
-"মানে কি বলতে চাস তুই?"
-"আমার কাছে বিশ্বাসটাই সব, বাবা।মনের বিশ্বাস থাকলে ওসব লোক দেখানো সাতপাকে ঘোরা আর মন্ত্রপাঠ সবই বৃথা। সবাইতো বিয়ে করে বাবা। ধর্ম মেনেই করে। তাদের সবাই কি খুশি, বাবা? নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখো। আশেপাশে তাকাও একবার, সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরা শুধু সমাজের কথা ভাবি বাবা। সমাজ কি বলবে? লোকে কি বলবে? তারা কি মেনে নিবে আমাদের। আমরা এসব নিয়ে এত কেন মাথা ঘামাই বাবা? আচ্ছা, সমাজ কি আমাদের খাওয়াবে?" একনাগাড়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছিল নীলা। কোন সঙ্কোচ নেই।
-"চুপ কর তুই। এইজন্য তোকে আমি এত পড়ালাম। এই দিন দেখতে হবে জানলে যে দিন তোর জন্ম হয়েছিলো সেদিনই গলাটিপে মেরে ফেলতাম তোকে। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। ধর্মে বিশ্বাস করে না। বিয়েতে বিশ্বাস করে না। মেয়ে আমার দেশ উদ্ধার করেছে। অনেক জ্ঞান হয়েছে। বাবাকে জ্ঞান দিতে এসো না। মনে রেখো, তোমাকে আমি জম্ম দিয়েছি, তুমি আমাকে নয়। নাস্তিক মেয়ে কোথাকার। বেরিয়ে যাও তুমি আমার বাড়ি থেকে। তোমাকে আমি ত্যাজ্য কন্যা করলাম। এ জীবনে আর তোমার মুখ দর্শন করতে চাই না আমি।" কথাগুলো বলতে বলতে মাটিতে পড়ে গেলেন রায়কর সেন।
হাসপাতালে কয়েকটা দিন নীলার কীভাবে পার হয়ে গেল সে টের পেল না। তার বাবার তিনদিন পর আজ সকালে জ্ঞান ফিরেছে। তিনদিনেই বাবার চেহারাটা কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। বাবাকে সে অনেক ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকে মানুষটা তার জন্য কি করেননি? তার নিজের সব সুখ বাদ দিয়ে তাকে মানুষ করেছেন। আজ কীভাবে সে এই মানুষটার প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারে। অথচ তার কিন্তু কোন ভুল নেই। ভালোবাসা কোন ভুল নয়।
হাসপাতালে কয়েকটা দিন নীলার কীভাবে পার হয়ে গেল সে টের পেল না। তার বাবার তিনদিন পর আজ সকালে জ্ঞান ফিরেছে। তিনদিনেই বাবার চেহারাটা কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। বাবাকে সে অনেক ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকে মানুষটা তার জন্য কি করেননি? তার নিজের সব সুখ বাদ দিয়ে তাকে মানুষ করেছেন। আজ কীভাবে সে এই মানুষটার প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারে। অথচ তার কিন্তু কোন ভুল নেই। ভালোবাসা কোন ভুল নয়।
হাসপাতালের কেবিনে রায়কর সেন শুয়ে আছেন। নীলা আস্তে আস্তে বাবার পাশে গিয়ে বসলো। বাবার একটা হাত ধরে বললো, "বাবা, আমি তোমার কখনও অবাধ্য হব না।" তার চোখের কোণে জল কিন্তু তা রায়কর সেন দেখলেন না। কি সহজেই না সে নিজের ভালোবাসাকে ত্যাগ করে দিল। চিরকাল কি মেয়েরাই সব ত্যাগ করে যাবে সমাজের কাছে?
নীলা পড়ালেখা সব বন্ধ করে দেয়।যেই মানুষটার জন্য লড়াই করবে ভেবেছিল সবার সাথে তাকে জানিয়ে দেয় যে বাবা তার বিয়ে দিয়েছেন একজন ভালো হিন্দু ছেলের সাথে।সে বিদেশ চলে যাচ্ছে। আর দেখা হবে না। তাকে যেন মাফ করে দেয়। এরপর নীলা নিজেকে বন্দী করে ফেলে চার দেয়ালের মাঝে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয় না। কারো সাথে তেমন কথাও বলে না।
এর এক বছরের মাথায় রায়কর সেন মারা যান। তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তার সমস্ত বিজনেস সামলানোর দায়িত্ব পড়ে নীলার উপর। বাবার কথা রাখতেই সে নিজেকে আবার বিলিয়ে দেয়।
ত্রিং ক্রিং!
হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় নীলা বাস্তবে ফিরে এলো।
পুরানো কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে তার খেয়ালই নেই। সে কফির মগটা টেবিলে রেখে চোখ দুটো মুছলো। এতদিন সে এসব কথা ভাবে নি। ইচ্ছে করেই ভাবেনি। নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? আর এখন ওসব ভেবে কি কোন লাভ আছে? মানুষটা কি এখনও বেঁচে আছে? যদি বেচেঁ থাকে তাহলে কি বিয়ে করেছে? সে তো জানিয়ে ছিল বিয়ের কথা কিন্তু এখন অব্দি বিয়ে করতে পারেনি। হয়তো পারবেও না কোনদিন।
মানুষ প্রথম প্রেম কখনো ভুলতে পারে না।
কি জানি! কেউ হয়তো পারে। আবার কেউ তা সযত্নে লুকিয়ে রাখে মনের কোন এক খাঁচায়। বয়ে নিয়ে যায় মৃত্যু অব্দি।
নীলা || Zuhayer Anjum Tashfiq
Zuhayer Anjum Tashfiq is from Dinajpur Sadar.
নীলা || Zuhayer Anjum Tashfiq
Zuhayer Anjum Tashfiq is from Dinajpur Sadar.