টিফিন টাইমের বন্ধুত্ব
স্কুল জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই সবচেয়ে পছন্দের সময় হলো টিফিনের সময় ক্লাসরুমে সবাই গোল করে বসে আড্ডা দেয়া অথবা খোলা মাঠে কড়া রোদে কানামাছি খেলার অসাধারণ মুহূর্তগুলো। মনে পড়ে যাবে ক্লাসে বসে টিফিনের ঘন্টার জন্য অপেক্ষা করার কথা। ক্ষুধার্থ পেটে চিন্তা করা, আজ টিফিন বক্সে কি থাকবে অথবা ক্যান্টিন থেকে কি খাব? ঘন্টা দেয়ার সাথে সাথে সঙ্গীদের সাথে ক্যান্টিনে ছুটে যাওয়া, আইসক্রিম-ফুচকা ভাগাভাগি করে খাওয়া, এরকম কত স্মৃতিই না আছে টিফিনের মুহূর্তকে ঘিরে। আজ হঠাৎ আমার স্কুল জীবনের টিফিনের কথা মনে পড়ে গেলো। আমিও তো স্কুলে টিফিন নিয়ে যেতাম, কিন্তু আমার টিফিন এতো চকমকে এবং আজকালের মত হালফ্যাশনের ছিল না। একটু ঘরোয়া, একটু সাদামাটা। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে আমি, নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ এই আমার কিছু বাধাধরা টিফিন ছিল, যেগুলো অতি সাধারণ। যেমন- ধরুন রুটি আর আলুভাজি, বা রুটি আর ডিমের অমলেট বা খুব বেশি হলে পরোটার সাথে আলুভাজি বা অমলেট। আমার মত টিফিন অনেকেই নিয়ে যেত, সুতরাং আমার সাথে নতুন করে ভাগ করে খাওয়ায় আবার কি মজা! তবুও এর মধ্যে ক্লাসে একজন মেয়ে ছিল, যে আমাকে সবসময় বলতো তার পরিবারও যদি তাকে নিজ হাতে নাস্তা বানিয়ে দিত। কেনো তারা প্রতিদিন হাতে টাকা দিয়ে বলে দেয়, যা ইচ্ছা খেয়ে নিও! বাহিরের খাবার যে মেয়েটার একদম ভালো লাগতোনা, সেজন্য বেশিরভাগ টিফিন পিরিয়ড সে না খেয়েই কাটিয়ে দিতো। একদিন আমি মেয়েটিকে বললাম, আমি তোমার সাথে প্রতিদিন টিফিন শেয়ার করতে পারবো, তাছাড়া টিফিনবক্সে ফিরিয়ে নেয়া খাবারের জন্য আমাকে প্রতিদিনই বকা শুনতে হয়। এরপর থেকে সেই মেয়েটি হয়ে গেল আমার টিফিন টাইম এর নিত্যদিনের সঙ্গী। একদিন আম্মু স্কুলে যেয়ে আমার টিফিনবক্স খালি হয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে পেল। আমি ভেবেছিলাম বাসায় নিয়ে আমাকে হয়তো আজ খুব বকা দেয়া হবে। কিন্তু সেদিন আম্মু আমার শেয়ারিং মনোভাব দেখে অনেক বেশি খুশি হয় এবং এরপর থেকে আমাদের দুজনের জন্যই নাস্তা দেয়া হতো।
সবথেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই মেয়েটি একাধারে আমার স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের টিফিনের ভাগিদার ছিল এবং আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড। আমরা এখন প্লান করি, ভবিষ্যতে আমাদের ছেলেমেয়েদের একই স্কুলে পড়াবো আর এই সুযোগে নিত্যদিনের ব্যস্ততার মাঝেও একে অপরের সাথে কিছু সময়ের জন্য দেখা হবে। মনের কথাগুলোর ভাগাভাগি হবে, ঠিক যেমনটা আগে হতো। এই বন্ধুত্ব আমার জীবনের অনেক বড় একটা অংশ। ইনশাআল্লাহ স্কুলের টিফিন টাইমের সেই বন্ধুত্ব জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অটুট রাখার চেষ্টা করবো।
টিফিন টাইমের বন্ধুত্ব || Monira Islam
Monira Islam is from Old Dhaka. Recently she has completed her post graduation and is now working in a private company. Writing is her passion.