বইমেলা ও বইপড়া

  • এস এ বিপ্লব
  • Category: ছোট্ট কলাম
  • Published on: Friday, Feb 21, 2025

কথায় আছে, পড়িলে বই আলোকিত হই,না পড়িলে বই অন্ধকারে রই......

একদম সত্যি  কথা, কেন না আজও আমরা আলোকিত হতে পারিনি, কারন এখনো বই থেকে মানুষ অনেক দুরে রয়েছে। আর বই থেকে দুরে থাকা মানে নিজ থেকে দুরে থাকা, নিজ থেকে দুরে মানে পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্রের সে হয় বোঝা না হয় সমস্যা তৈরীর অন্যতম একজন। তাই আমরা বই পড়ি আর আলোকিত হই।তা না হলে চিরতরেই যেন অন্ধকারে রই।এই অন্ধকার থেকে আর বের হওয়া যায় না। এজন্যই একটি কথা আছে যে, অন্ধকার জগতে যাওয়া যতটা সোজা বা সহজ কিন্তু সেই অন্ধকার জগত থেকে বের হয়ে আসা তার চেয়ে বেশী কঠিন।অন্ধত্ব কয়েকভাবে হয়ে থাকে, একটা আছে জম্মগত অন্ধত্ব,আরেকটা আছে দূর্ঘটনা বসত অন্ধত্ব, আরেকটি হলো টাকার অন্ধত্ব আর সর্বশেষ হলো চোখ থাকতে অন্ধত্ব।অর্থাৎ চোখ থাকতেও যে পড়তে পারে না। তার চেয়ে দূর্ভাগা আর কেউ নেই।যত রকমের অন্ধত্ব থাকুক কেন চোখ থাকতে আমরা কেউ যেন অন্ধ না থাকি। যে চোখ থাকতে অন্ধ তাকেই মানুষ ঠকায় বেশি।  এছাড়াও  আবার বলতে পারি প্রবাদ আছে"  যে বই ভালোবাসে তার সাথে বই কথা বলে "।  

আপনি কাউকে ভালোবাসলে কিংবা কাউকে সম্মান দিলে সেও আপনাকে সম্মান দিবে। তাই আমি, আপনি যদি বই কে ভালোবাসি সে ও আপনাকে ভালোবাসবে। একসময় সে আপনার সাথে কথা বলবে। বই একমাত্র সঙী যে আমাকে, আপনাকে জীবন্ত করে রাখবে, বাচিয়ে রাখবে।আমরা মনে করি বাবা- মা, ভাই- বোন, বন্ধু- বান্ধব,কিংবা টাকা জমিজমা এসব আমাদের কে বাচিয়ে রাখবে৷ কিন্তু আসলে তা নয়। আমি আপনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো, কিন্তু যদি একটা ভালো মানের বই লিখে যান তবে সে বই আপনাকে সারা জীবন বাচিয়ে রাখবে। বই নামক সে সন্তান আপনাকে মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। বই ছাড়া কেউ আপনাকে বাচাতে পারবে না। বই কখনো কাউকে  কাদায় না, হয় হাসায়,না হয় শিখায় আর না পথ দেখায়। বই কখনো বেইমানী, বাটপারি কিংবা কাউকে ঠকায় না। এক একটা বই এক একটা সন্তানের মত। আর বই যে সন্তানের মত সেটা একমাত্র তারাই বুঝতে পারে, যারা বই লিখে। আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারে, এমন লেখক যাদের কোন সন্তান নেই।কেন বলছি বই সন্তানের মত কারন, একটা সন্তান জম্ম দিতে মায়ের জঠরে যেমন দশ মাস থাকতে হয় আর বইতো তার চেয়ে বেশী জঠরে থাকে। একটা বই লেখার কাজ শেষ করতে দশ মাসের বেশী সময় লাগে। তাহলে বইকি সন্তান না?  

তাই তো কোন এক  সময় এক রাজা বলেছিলেন যে, আমি এমন রাজা হতে চাই না যে বই ভালোবাসে না। কারন যে বই ভালোবাসে তার সাথে যে বই কথা বলে। বই কখনো রাগ করেনা, বই কখনো ছেড়ে যায়, বই কখনো মিথ্যা বলে না, বই কখনো খারাপ কিছু শেখায় না।  এবং যে বই ভালোবাসে সে কখনো গুম,খুন করতে পারে না। বইয়ের এতো গুণ যে বলে শেষ করা যাবে না। বই হচ্ছে আপনার জীবনের চরম, পরম  এবং শ্রেষ্ঠ সঙ্গী।

 

বইমেলা :  অন্যদিকে বই আছে বলেই, বইমেলা হচ্ছে, হবে, এবং হওয়া উচিত বলে মনে করি।  দিন কে দিন আমরা হয়তো অনুধাবন করতে পারছি যে, বছরে দুইটি ঈদ ছাড়া আরো  যে উৎসব হয়ে থাকে সেগুলো কিন্তুু আজকাল ঈদের মতন ঝাকজমক হয়ে থাকে। এজন্য মতান্তরে বিভিন্ন উৎসব কে নানা নামে বলা হয়ে থাকে। যেমন - ভালোবাসা দিবসকে বলা হয় তরুন- তরুনী বা প্রেমিক- প্রেমিকাদের ঈদ।আবার ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন কে বলা হয় হুযুরদের ঈদ।  আর আমার দৃষ্টিতে ঠিক বলতে পারি যে, বইমেলা হচ্ছে, কবি- সাহিত্যিকদের ঈদ। 

এই ঈদ থেকে আমরা দুরে থাকতে চাই না। কারন বইমেলা সকলের জন্য, এখানে ছোট বড় সর্ব শ্রেণীর লোক সমবেত হয়ে থাকে। তাই এটা শুধু কবিদের নয় বরং সকলের জন্য এই উৎসব হয়ে থাকে। বলতে গেলে  ঐ দুই ঈদের আনন্দের চেয়ে এক বিন্দুও কম নয়  আমাদের বইমেলা। বইমেলা মানে কবিদের মিলন মেলা। যেখানে সকল কবিসাহিত্যিক দের বই থাকে, সকলে এক সাথে মেলা তে এসে প্রাণ প্রায়।একটু শস্তির নিশ্বাস নিতে পারে। আমাদের জীবনে বইমেলার প্রয়োজন ছিল, আছে, থাকবে। কবিরা কখনো পাওয়ার আসা করে না। তারা শুধু দেওয়ার আসা করেই বই বের করে থাকে। বাবা- মা যেমন সন্তানের কাছ থেকে কখনো কোন কিছু আসা করে না, হাজার কষ্টেও দোয়া করে সন্তান যেন সুখে থাকে। ঠিক তেমনি কবিরাও কখনো কোন কিছু পাওয়ার আসা করে না।শুধু ভাবে একটি বই বের হোক। বইমেলা হলো পাঠক লেখকদের একটা বন্ধন, একটা অন্য তম মিলন মেলা। সর্বশেষ কথা হলো, যার যে কাজ সে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি একজন লেখকের কাজ লেখালেখি করা।

কিন্তু আমাদের দেশে একজন লেখক কে তার লেখালেখির পাশাপাশি সংসার চালাতে অন্য কাজ করতে হয়। কারন হলো লেখকদের কোন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না, লেখকদের নেই কোন ভাতা, না আছে বেতন।এমন কি প্রকাশনীরাও ঠকিয়ে থাকে।  তাই এদিকে যদি একটু দৃষ্টি দিত সরকার ভালো হতো।বিশেষ করে বলব অন্তত যাদের একক বই আছে সেসব লেখকদের তালিকা করে তাদের থেকে শুরু হোক ভাতা বা অন্যসব সুবিধা। এতে করে লেখকরা উৎসাহ,উদ্দিপনা আর সাহস পাবে। আর মানুষ ও দেখবে  জানবে যে, লেখকদের মূল্যায়ন করছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশে লেখকদের তেমন কোন মূল্য দিতে দেখি না।চলে পুরষ্কার বানিজ্য। বইমেলার মাধ্যমে সকলে মিলে এই প্রতিশ্রুতি নেওয়া হোক।

 

 

 

বইমেলা ও বইপড়া || এস এ বিপ্লব

 

এস এ বিপ্লব, একজন প্রতিভাবান লেখক ও সমাজ সেবক, ১৯৮৯ সালের ২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এল এল বি এবং এম এস এস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার এককভাবে প্রকাশিত বই ৭টি এবং যৌথভাবে প্রায় ৪০টি বই রয়েছে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ, চান মারি এলাকায় বসবাস করেন। লেখালেখিতে তার প্রতিভা তাকে একাধিক পুরষ্কার, including ২০২৪ সালের জাতীয় পুরষ্কার, এনে দিয়েছে। তার সাহিত্যিক কাজের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আলোকিত করেছেন, যা পাঠকদের হৃদয়ে দাগ রেখে যায়।

 

 

This post of CC is sponsored by- Print World