ভালোবাসার ছোঁয়া
নাইম সাহেবের বয়স ৩৩ । দেশের নামকরা একটা ব্যাংকে চাকরি করেন। এত বয়স হয়ে গেলেও বিয়ে করেন নি। তার বাবা-মা দুইজনই মারা যায় প্রায় ৯ বছর আগে। এর পর থেকেই তিনি কেমন যেন হয়ে গেছেন। কারও সাথে কথা বলেন না, সবসময় রাগান্বিত থাকেন, কাউকে সাহায্যও করেন না। তিনি যেই ভবনে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন সেখানকার কেউ তাকে দেখতে পারে না। তিনিও কাউকে পাত্তা দেন না।
এমনই এক দিনের কথা বরাবরের মতোই ঠিক সময়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হন। লিফটের ভিতরে ঢুকে লিফট বন্ধ করেন, কিন্তু এই সময়ই এক মহিলা লিফটের দিকে দৌড়াতে থাকেন। দূর থেকে তাকে বলেন লিফট টা খুলতে। তিনি পাত্তা না দিয়ে চলে আসেন। ভবনের নিচে একটা বাচ্চা বেলুন নিয়ে খেলা করছিলো। বেলুনটা তার হাত থেকে উড়ে যায়। নাইম সাহেব ইচ্ছে করলেই সেটি ধরতে পারতেন। তিনি তা করেন নি। বাসা থেকে বের হতেই একটা সংস্থা যারা অপরিকল্পিত নগরায়ন এর বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের কিছু সেচ্ছাসেবী নাইম সাহেবের কাছে আসেন এবং তাকে লিফলেট দেন এবং তাকে তাদের সংস্থায় যুক্ত হতে বলেন। নাইম সাহেব এসব পাত্তা না দিয়ে চলে আসেন । রাস্তার অন্য পাশে বাস থাকায়, রাস্তা পার হওয়ার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক এইসময়ই এক বৃদ্ধ লোক তার হাত ধরে এবং তাকে রাস্তা পার করিয়ে দিতে বলে। তিনি একটু বিরক্তবোধ করলেও বৃদ্ধ দেখে কিছু বলতে পারেন না। তিনি সেই বৃদ্ধকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন কিন্তু ঠিক তখনই একটা ট্রাক তাদের দিকে আসছিলো। একেবারে কাছে ট্রাক। তিনি ভয় পেয়ে যান। কি করবেন না করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। তিনি পারলে দৌড় দিয়ে নিজের জীবন রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু এইবার তিনি কোন এক অদৃশ্য কারণে বৃদ্ধের কথা ভাবছিলেন। বৃদ্ধকে আগলে তিনি দাঁড়িয়ে যান। কি হবে না হবে এই কথা চিন্তা না করেই। ভাগ্যক্রমে বাসটি দাঁড়িয়ে যায়, তাদের থেকে কয়েক হাত দূরত্বেই। দুইজনই বেঁচে যান। তিনি বৃদ্ধকে রাস্তা পার করান। বৃদ্ধ খুশি হয়ে তার মাথায় শরীরে হাত বুলিয়ে দেন। আর বলেন, “এমনই থেকো।মানুষকে সাহায্যে করো।” রাস্তার সবাই তাকে বাহবা দিচ্ছে তার সাহসিকতা দেখে। রাস্তার মানুষের ভিড়ের ভিতর বৃদ্ধকে আর দেখতে পায় না নাইম সাহেব। সেদিন আর অফিসে যান না নাইম সাহেব। বাসায় চলে আসেন।অনেক কিছু চিন্তা চিন্তা করতে সেদিন ঘুমিয়ে পড়েন।
পরের দিন ঠিক সময়ে আবার অফিসের উদ্দেশ্যে বের হন। আগের মতোই লিফটে উঠেন। লিফট বন্ধ করতে সুইচ চাপেন। লিফট বন্ধ হতে যাচ্ছে কিন্তু আজকেও সেই মহিলা। এবার নাইম সাহেব লিফট আটকে রাখেন। মহিলা লিফটে উঠে তাকে ধন্যবাদ জানায়। নিচে আবার সেই বাচ্চা। সেই একই ঘটনা এবার তিনি বেলুন ধরে ফেলেন। আর বেলুনটি একটি বড় সুতা দিয়ে বেধে দেন। বাচ্চাটিও তাকে ধন্যবাদ দেয়। রাস্তায় আবার সেই সংস্থার সেচ্ছাসেবীরা। এবার তিনি নিজে তাদের কাছ যান তাদের নামের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করেন। পরবর্তীতে তাদের সাথেই সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন।
এইভাবে ৫ মাস চলে গিয়েছে। নাইম সাহেব আর আগের মতো নেই। তিনি এখন সবাইকে সাহায্য করেন। সবার সাথে মিশেন। একদিন অফিসে যাওয়ার সময় তিনি যেই রাস্তার পাশে বৃদ্ধের দেখা পেয়েছিলেন। সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বৃদ্ধের কথা চিন্তা করছেন। একটু পর আরেকটু দূরত্বে তিনি এক আনমনা লোক দেখতে পান। সেই আগের তাকে সে এই লোকের মধ্যে দেখে। সে মনে মনে চিন্তা করে কিভাবে এই লোককে সাহায্যে করবে। এবার তিনি নিজেই অন্ধ সেজে লোকটির হাত ধরেন। তাকে রাস্তা পার করিয়ে দিতে বলেন।ঠিক সেই বৃদ্ধের মতো। বৃদ্ধের যেই ছোঁয়া তাকে পরিবর্তন করে দিয়েছিলো সেইভাবেই সে এই লোকটিকেও সাহায্যে করতে চান। সেই ছোঁয়া, সেই বিস্ময়কর ভালোবাসার ছোঁয়া।
ভালোবাসার ছোঁয়া || মোঃ রাকিন হাসান রওনক
মোঃ রাকিন হাসান রওনক, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা, ছোটবেলা থেকেই গল্প পড়ার প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। তাঁর গল্প লেখার আগ্রহ তার পড়াশোনার শখ থেকে শুরু হয় এবং তিনি বিভিন্ন কাল্পনিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে ভালোবাসেন। সাহিত্য জগতে তার এই সৃজনশীলতা তাকে নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
This post of CC is sponsored by- Print World