রামাদান সমাচার
খোকা গেলো করতে বাজার,বাবার কাধে চড়ে
বটের ছায়ায় বসে এ-বাজার,হাজার বছর ধরে।
রমজান আসলে সবাই খুশি,উড়ে যায় চোখের ঘুম
মাছ-মাংস,সবজি-কাবাব,শত খাবারের ধুম।
দিন এনে খাওয়া মজনু মিয়া,হাতে নিয়ে এলো থলে
দুই-একটা ভালোমতো কিনতে পারলে,বাড়িতে যাবে চলে।
"চাল কতো ভাই?" -"৭০ টাকা।"
"ডালের দাম তাহলে কতো?"
"১৫০ রাখবো বাপু নিয়ে নিও মনমতো।"
বুকপকেটের কোনায় পাশে,৩০০'র মলিন টাকা
ভালো করে খুজে হাতরে দেখে,"যা বাবা!পকেটটাই তো ফাকাঁ।"
সকাল থেকে কামলা দিয়ে দু'টো পয়সা হলো।
দোকানির চাওয়া চড়া দামে পেটের ক্ষুধা বুঝি আজ গেলো।
চোখ বুঝে তাই,পকেট হাতরায় কচি দুটো নোট খুলে
"দাও দেখি ভাই আধা কেজি ডাল,দু'কেজিতে দিও চালে।"
আরেকখানা নোট এখনো জীবিত,সবজিতে ব্যাগ করতে হবে ভার।
রাতের খাবারটুকু জুটলেই হবে,পাশের মসজিদে মিলে ভালো ইফতার!
মজনু মিয়া ব্যাগ নিয়া,বাড়ির পানে হাটে।
গরিবের আবার রোজার বাজার,ভাত-ই তো জুটতে চায়না ঘটে।
নব্য বিবাহিত রহিস ব্যাটা,সেও এসেছে আজ হাটে
নববধূ করেছে কতকি'র বায়না,নিয়ে যেতে হবে করে সাথে।
আদা,রসুন,জিরে বাটা সব ছুয়েছে আকাশ
ক্ষুদ্র আয়ের রহিস ব্যাটা, দাম শুনেই তো হতাশ।
সাজসজ্জার উপকরণাদি এখনো তো কেনা বাকি।
শূন্য হয়ে ফেরা যাবেনা বাপু,খেতে হবে বউয়ের ঝাকি।
দু-চারখানা পণ্য কিনিয়া পকেট হয়েছে ফাঁকা।
চোরা পকেটে হাত দিয়ে দেখে,সেখানেও নাই টাকা।
তাগড়া যুবক রহিস মিয়া,বাজার বাগড়া দিয়ে
কপালে হাত, করিছে বিলাপ "কেনো যে করলাম বিয়ে!"
রমজান এলেই দেশী ব্যবসাইদের বাড়ে বিক্রির ধুম
কাটা খেয়ে রোজা রাখা মধ্যবিত্তের তাতেই উড়ে ঘুম।
"ডালিম খাবো বাবা,খেজুরও খাবো-এগুলো প্রিয় খাবার।"
বাবার পানে ছুড়ে দেয়া ছোট্ট খোকার আবদার।
মধ্য আয়ের চাকুরে বাবা,ছেলের বায়না শুনে
এমনভাবে মুখ ফেরালো, যেনো শুনতে পায়নি কানে।
ফল যদি নেয় বাজার করে,আর কি নিবে সাথে?
ফল দিয়ে কি পেট ভরে আর? কাজ দেয় কি ডালে ভাতে?
ছোট্ট খোকাদের ছোট্ট বায়না মধ্যবিত্ত বাবাদের কাছে পায়না সাড়া,
কষ্টে পাথর বাবাদের বুক কিছু যেনো করার নেই তাছাড়া।
রমজান হলো পূণ্যের মাস,পাক্কা করবে দিল
এই মাসেই সব অসাধুদের,বের হয় মহামিছিল।
কি খাবে তুমি? খেজুর,বাদাম? আর কি খেতে চাও?
দাম চলে যাবে আকাশের পানে,টাকার পাহাড় বেয়ে খেয়ে নাও।
রহিস,মজনু কিংবা ছোট্ট খোকা
তুমি,আমি আর আমরা।
হাটবাজারে হেটে বেড়ানো এরা,
আমাদের শরীরেরই চামড়া।
রমজান এলো দুয়ারের মুখে,শান্তির পয়গাম নিয়ে
অসাধুদের কালোথাবা তারে করলো বিদায়,ভর্ৎসনা দিয়ে।
সেহরিতে জুটেনা সুষম কিছু,ইফতারে জুটে তাই
মধ্যবিত্তের জন্যই এ মাস সংযমের,বাকিদের জন্য হুদাই!
রামাদান সমাচার || মোঃ সজিব মিয়া
মোঃ সজিব মিয়া একজন প্রতিভাবান লেখক, যিনি কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস এবং বিভিন্ন রচনায় তার দক্ষতা প্রদর্শন করেন। লেখার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা এবং সৃজনশীলতা তাকে সাহিত্য জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তার রচনা পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায় এবং তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার চেষ্টা করেন।
This post of CC is sponsored by- Print World