EXPIRE DATE

  • Sumaiya Siddika Sirat
  • Category: Short Story
  • Published on: Thursday, Feb 20, 2025

অনেক্ষণ থেকেই বিছানায় শুয়ে মোবাইল টা সামনে ধরে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছি । কিন্তু ওয়ালপেপারের স্ক্রীন ব্যতীত কোন অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করবো বুঝতে পারছি না ।

 

মিনিমাম বিশ মিনিট ওয়ালপেপারের স্ক্রীন এর উপর আঙ্গুল দিয়ে অ্যাপসগুলো আপ ডাউন করতে করতেই চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো ।

 

একি ! চোখের পানি কথা বলছে ! ঝিঁঝিঁ পোকা কথা বলছে ! মশার দল কথা বলছে ! ট্যাপের প্রতি ফোঁটা পানি কথা বলছে । কিন্তু কোথাও কোনো মানুষের কথার আওয়াজ নেই । এইতো কিছু মুহূর্ত পূর্বেই আমার ঠিক পাশে আম্মুর গা ঘেঁষে শুয়ে ছিলাম । মেঝেতে বসে ছিলো ভাইয়া । গল্প আড্ডায়, হাসিতে রমরমা আসর! আম্মু এখন কোথায়? উত্তরবঙ্গ ! আমি কোথায়? দক্ষিণবঙ্গ ! মানে ? বাংলাদেশ এর একপ্রান্তে আমি সম্পূর্ণ একা, অপর প্রান্তে আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি শত্রুরাও । এই ভয়ংকর একাকিত্ব-ই কি চোখের কোণায় জল হয়ে গড়িয়ে পড়েছে ? ছিহ ! এ কেমন নির্লজ্জ অশ্রু ! আগেও তো কতদিন বাড়ি থেকে দূরে থেকেছি, কাঁদার কি আছে ? আসলেই কি আম্মু চলে গিয়েছে, এখানে একদম একা তাই কাঁদছি ?

 

"না।"

জীবনের হিসাব চুকিয়ে যাচ্ছে ভেবে কম্পিত হৃদয়ের কান্না এটা ।

 

হে দুনিয়া! বড়ই কৌশলী তুমি !

 

~শৈশবে খেলার সাথীর প্রয়োজন ছিলো । তুমি আমাকে শারমিন, মৌসুমী আপুকে দিলে । স্কুলে উঠে তাদের সাথে আমার সময় ফুরালো, তুমি মনোমালিন্য করালে, আমরা আলাদা হলাম । দোষ হলো-মনোমালিন্যের

 

~ স্কুলে লাবনী, লিজা, কেয়া কে পেলাম । হাইস্কুলে লিজার সাথে আমার সময় ফুরালো । তুমি আমাদের বিভাগ পরিবর্তন করালে, আমরা আলাদা হলাম । দোষ হলো-সায়েন্স-আর্সের |

 

~হাইস্কুলে সিনহা, কেয়া, লাবনী, ঐশী, ছোঁয়া, নিরব, নিঝুম, রুহুল কে পেলাম । কলেজে নিরব, নিঝুম, ঐশী, ছোঁয়ার সাথে আমার সময় ফুরালো । তুমি মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তি প্রবেশ করালে সবার মাঝে একে অপরকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলো । আমাদের সম্পর্কের গভীরতা হারিয়ে গেলো । দোষ হলো- সন্দেহের ।

 

~ কলেজে কেয়া, আইরিন, সুরাইয়া, রুহুল কে পেলাম । কলেজ জীবনের শেষে কেয়া, আইরিন, সুরাইয়ার সাথে আমার সময় ফুরালো । তুমি আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি কে প্রবেশ করালে । আলাদা হলাম সবাই । দোষ হলো - ভুল বোঝাবুঝির

 

~ কলেজ জীবনের শেষে পেলাম শিফা,তাহিরা । ভার্সিটি লাইফে এসে তাদের সাথে আমার সময় ফুরালো । তুমি আমাদের মাঝে স্থানের দূরত্বকে প্রবেশ করালে, আমরা আলাদা হলাম । দোষ হলো - দূরত্বের ।

 

-সকল প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমি চেষ্টা করেছিলাম প্রতিটা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার, কিন্তু তুমি তখন আমাকে "Danger ! Poison!" সংকেত দিয়েছো । হ্যা, ঠিক-ই তো । ডেইট এক্সপায়ার হলে সবকিছু বিষে-ই পরিণত হয় ।

 

~ এখন ! আমার জন্মস্থান থেকে আমাকে আলাদা করে কি বোঝাতে চাচ্ছো সেটা বুঝেছি আমি । তাই সবকিছু ছেড়ে এসেছি হাঁসতে হাঁসতেই । আম্মুকে বিদায় জানানোর সময় হাঁসতে পারিনি জন্য দুঃখিত । আমি জানি, এভাবেই তুমি পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে প্রতিটা নির্ভরশীল সম্পর্কের বন্ধন থেকে আমাকে মুক্ত করবে, যেনো আমি বাঁচতে পারি যখন আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে থাকবেন না ।

 

এটা প্রথম ধাপের বিচ্ছেদ । দ্বিতীয় ধাপের বিচ্ছেদে তুমি আমাকে আপন গর্ভের সন্তান থেকেও বিচ্ছিন্ন করবে এবং আমি তখন দুনিয়ার সকল সম্পর্ক থেকে মুক্ত এবং তোমার সাথে সাক্ষাতের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত । সম্পর্কহীন ভাবে জন্মেছিলাম, দুনিয়া আমাকে সম্পর্ক দিয়েছিলো, দুনিয়াতেই সেই সম্পর্ক চুকিয়ে আবারো সম্পর্কহীন ভাবেই চলে যাবো ।

 

[সৃষ্টির অস্তিত্বের আদি থেকে অন্ত একটা সম্পর্ক-ই বিদ্যমান । স্রষ্টা আর সৃষ্টির সম্পর্ক ]

 

 

 

 

EXPIRE DATE || Sumaiya Siddika Sirat

 

তিনি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন লাইফবয়ের একটি সেমিনারে গল্প লিখে জীবনে প্রথমবার পুরস্কার পান, যা তাঁকে লেখালেখির প্রতি আগ্রহ তৈরি করে। স্কুল এবং কলেজ জীবনে ক্লাস প্রেজেন্টেশন, গল্প বলা, বিদায়ী বক্তব্যের মতো সৃজনশীল কথাবার্তা বলার জন্য তাঁকে বেশ প্রাধান্য দেওয়া হতো। সেই ছোট্ট আগ্রহই ধীরে ধীরে গভীর ভালোবাসায় পরিণত হয়, যার পথ ধরে আজ তিনি প্রথমবারের মতো তাঁর একটি লেখা এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন।

 

 

 

This post of CC is sponsored by- Print World