জীবনের উপকথা
জোছনা রাত শুনশান হিমেল শীতল এক পরিবেশ। বিস্তীর্ণ আকাশে বিশাল চাঁদের আলো এসে যেন ঠিকরে পড়ছে শফিক-রফিক দুভাইয়ের মুখে৷ চাঁদ দেখার এক ফাকে বড় ভাইকে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে ছোট্ট শফিক।
-রফিক ভাই, আমরা যেখানে যেখানে যাই চাঁদ সেখানে সেখানে যায় কেন বলোতো?
হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা থমকে গেলেও নিজেকে সামলে রফিক কিছুটা ধাধাঁনো উত্তর দেয় শফিকের প্রশ্নের জবাবে !
-জানিস ছোট, মানুষের জীবন যেন ঐ চাঁদের মতই বিচিত্র। কখনো ছোট-বড়,মেঘাচ্ছন্ন-জোছনাময়।
প্রসঙ্গত শফিকের দুরন্ত মনে প্রশ্ন আসে জীবন কি আর এ জীবনে এত কষ্ট কেন ?
কতো প্রশ্ন মনের ভিতর ঘুরপাক খায় সদ্য শৈশবের দুরন্ত শফিকের মনে। মূলত, আনন্দের সময় জীবনের ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের প্রশ্ন খুব বেশি মূখ্য হয়ে উঠে না। তবে, বেদনার সময় জীবনের স্থিতিশীলতাসহ নানান দিক নিয়ে সন্দেহমূলক প্রশ্ন মনে উঁকি দেয়।
রফিক ও শফিক দু ভাই। শফিক শৈশব রাঙাচ্ছে মাত্র অন্যদিকে রফিক সদ্য কিশোর হলেও দু ভাইয়ের সুখ-দুঃখ যেন এক কাতারে গাথা। চিন্তা-চেতনায় তারা যেন একাত্মা! তাদের ব্যক্তিজীবনে খুব বেশি দুঃখের ছোয়া নেই তবে তাদের চোখে দুঃখ হয়ে নেমেছে গাজাবাসীর কষ্টগুলো। তাদের হৃদয়ে ব্যথাতুর হয়ে উঠে সিরিয়ার সিদনায়ার মজলুমবাসীদের কষ্টগাথায়।
-রফিক ভাই, সারা বিশ্বে প্রান্তে-প্রান্তে এত জুলুম কেন বলতে পারো ?
-জানিস ছোট, তোর-আমার চোখে জালিম দুনিয়া আমাদেরকে নানাভাবে মানবাধিকার,ব্যক্তি অধিকারসহ নানান ধরনের ছবক দেয়।
-এগুলো মূলত ভালো মানুষের মুখোশধারী তাইনা, রফিক ভাই?
না হলে দুনিয়ায় এতো অশান্তি কেন হবে?
-হয়তো তাই হবেরে, প্রানটুশ ভাই আমার !
শফিকের চোখ স্থির হয়ে আকাশ দেখতে থাকে। জোছনা রাতের চাদঁও মাঝে মাঝে মেঘের আড়ালে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। আর এতে করে চারদিকে গুমোট একটা আবহের দেখা মিলছে। এমন আবহে দুজনেই কিছুটা চুপ হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। এযেন জোছনার চাদেঁর মতো নিশ্চুপ! দুটি প্রাণের একাত্মতা। চাঁদের সাথে একাত্মা জীবনের। যাদের জানা নেই সেভাবে , নিজেদের মাঝে মধুর বন্ধন সম্পর্কের বিস্তারিত ভাবরূপ । নিশ্চুপ কৌতুহলি চিন্তামগ্ন দুটো একান্ত প্রাণের সাথে চাঁদের এযেন লুকোচুরি খেলা।
রফিকের কিশোর চোখে, জীবন যেন বহমান নদীর বুকে বিচিত্র এক আকাশ! যে আকাশে ঘনকালো মেঘ হয়ে কখনো দু:খ আসে, কখনো ঘটে শুভ্রসৌন্দর্যে রঙধনুর মত শত রঙ-বেরঙের আনন্দের প্রতিফলন।
রফিক আনমনে গুনগুনিয়ে বলে উঠে -
কয়েক ফোটা বেদনা,
কয়েক তোলা হাসি।
জীবন সংগ্রামে আহা!
জীবন ভালোবাসি।
ওহে, জীবন
তোমার দু:খে লাগে দু:খী
তোমার সুখে সুখী!
জীবন’রে তোমায় বড় ভালবাসি।
জীবনের উপকথা || উমর শরীফ
উমর শরীফের শৈশব কেটেছে দিনাজপুর জেলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মাঝে, যেখানে মেঠোপথ ধরে বয়ে চলেছে তার বেড়ে ওঠার গল্প। বানিয়াপাড়া নামের ছোট্ট গ্রাম তাকে শিখিয়েছে প্রকৃতির ছন্দ, মানুষের হাসি-কান্না, জীবনের বাস্তবতা। শৈশবের সেই স্মৃতিগুলোই তার লেখার অনুপ্রেরণা। ভালবাসা থেকেই তার লেখালেখির শুরু। জীবনের প্রতিটি অনুভূতি, আশাপ্রদ স্বপ্ন কিংবা বাস্তবতার কঠোর রূপ—সবই ধরা দেয় তার লেখায়। তিনি শব্দের মাধ্যমে মানুষের আবেগের গভীরে পৌঁছাতে ভালোবাসেন। তার প্রতিটি লেখা একেকটি গল্প, যা পাঠককে ভাবায়, অনুভব করায়, কখনো বা শৈশবের গ্রামীণ পথে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। উমর শরীফ তার লেখনীর মাধ্যমে আরও গভীরভাবে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন, শব্দের শক্তি মানুষকে ভাবতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়, বদলে যেতে শেখায়। তার লেখাগুলো একদিন অনেকের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক—এটাই তার স্বপ্ন।
This post of CC is sponsored by- Print World