একাত্তরের দিনগুলি

  • সাবরিনা তাহ্সিন
  • Category: Book Review
  • Published on: Tuesday, Dec 17, 2024

"একাত্তরের দিনগুলি" বইয়ের গ্রন্থ পর্যালোচনা: 

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা, পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা এবং যুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকা শহরের সার্বিক পরিস্থিতির দেশের মানুষকে জানানোর জন্য শহীদ জননী জাহানারা ইমাম " একাত্তরের দিনগুলি " নামক গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটি সকল শহীদ ও গেরিলাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে। তারিখ, মাস ও বছর সম্বলিত গ্রন্থটিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রতিদিনের ঘটনা বিবৃত হয়েছে। গ্রন্থটিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের পুত্র রুমীকে কেন্দ্র করেই ঘটনা আবর্তিত হয়েছে। গ্রন্থের প্রথমদিকে জাহানারা ইমামের পরিবারের সদস্যদের কিছু বিবৃত্তি রয়েছে।জাহানারা ইমামের বাড়িতে জাহানারা ইমাম, স্বামী শরীফ ইমাম, দুই পুত্র রুমী ও জামী ,চাকর সোবহান ও শ্বশুর থাকেন। আরেকজন সদস্য কিটি। কিটি আমেরিকান মেয়ে। একটা স্কলারশিপ নিয়ে এদেশে এসেছিলো ১৯৭০ ,সালের ডিসেম্বর মাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে মুনীর চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে " সমাজ ভাষাবিজ্ঞানে বাংলার মান নির্ধারণ " বিষয়ে গবেষণা করার জন্য ন'টা ভাষা জানে। বাংলা ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলতে পারে। তাড়াতাড়ি বাংলা শেখার জন্য কোনো বাঙালি পরিবারে বাস করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলো কিটি। তাই মুনীর চৌধুরী স্যার জাহানারা ইমামকে অনুরোধ করেছিলেন কিটির জন্য একটা বাঙালি পরিবার খুঁজে দিতে।

মার্চের শুরু থেকেই যুদ্ধের ভয়াবহতা। প্রতিদিনই প্রায় কয়েক দফা পরপর করফিউ-হরতাল লেগেই থাকে। ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য এক আতঙ্কগ্রস্থ ও দুর্বিষহ দিন কাটাতে হয়। সমগ্র বাঙালি স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। বেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্রে মিলিটারি মোতায়েন করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন শিল্পী ও সাহিত্যিক গোষ্ঠী। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তাঁর " হেলালে ইমতিয়াজ " খেতাব বর্জন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুনীর চৌধুরী " সিতারা-ই-ইমতিয়াজ " খেতাব বর্জন করেছেন। পাকিস্থানি হায়নাদের বর্বরতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাকিস্থানি সেনাবাহিনী সবজায়গায় টেলিফোন সংযোগ কেটে দিয়েছে। জাহানার ইমামের ছেলে রুমী গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হয়। শহীদ মিনারের রাস্তায় গাড়ির গতি কমায়। পাক-বর্বররা শহীদ মিনার নিঃশেষ করে দিয়েছে। ৪ এপ্রিল কিটি ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কিটি রাওয়ালপিন্ডি হয়ে তেহরান যাবে।নিরাপদে রাখার জন্য ' বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চ ভাষণের রেকর্ড,চে গুয়েভারার দু'টো বই ," জয় বাংলা, বাংলার জয় " রেকর্ডটা কিটির সাথে দেওয়া হলো।পাকসেনারা জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছে। যার ফলে রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য। আর এর মধ্যেই খবর এলো সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নাকি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। অনেক তরুণ ছেলে বাসায় না জানিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।

রুমী আই-এ পাশ করার পর লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তই হওয়ার কথা। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে বড় ডিগ্রি অর্জনের জন্য আমেরিকা না গিয়ে রুমী দেশে থেকেই দেশের জন্য কিছু করবে বলে মনস্থির করলো। মায়ের অনুমতি নিয়ে রুমী যুদ্ধে গেলো। এর মধ্যে যেসব বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে ,পাকসেনারা সেসব বাড়ি সার্চ করলো,মুক্তিযোদ্ধার বাবা-ভাইকে ধরে নিয়ে গেলো। রুমী যুদ্ধে গেছে ,মাঝে ঢাকায় অপারেশনের জন্য বাড়ি এসেছে। আর এর মধ্যেই পাক আর্মি এসে রুমী ,জামী ও শরীফকে নিয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য জানার জন্য পাক-আর্মীরা জামী ও শরীফের উপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। পাক আর্মীরা শরীফ ও জামীকে ছেড়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু রুমীকে ছাড়ে নি। রুমীর জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। এক মাস হয়ে যায় ,কিন্তু রুমীর কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। ১৩ ডিসেম্বর জাহানারা ইমামের স্বামী শরীফ ইমাম হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।বোমা ও গুলি বর্ষণে আকাশ ফেটে চৌচির। ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজী নব্বই হাজার সেনাবাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে,আকাশে উড়ছে স্বাধীন বাংলার পতাকা। "একাত্তরের দিনগুলি " কেবল একটি গ্রন্থ নয় , এটি মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত দলিল।

বইয়ের নাম: "একাত্তরের দিনগুলি"

বিষয় ও ধরণ: (দিনলিপি) বাস্তব তথ্যভিত্তিক রচনা

লেখকের নাম: জাহানারা ইমাম 

প্রচ্ছদ শিল্পী: কাইয়ুম চৌধুরী

প্রকাশক: সন্ধানী প্রকাশনী এবং চারুলিপি প্রকাশনী।



একাত্তরের দিনগুলি । ।  সাবরিনা তাহ্সিন 

একজন বই প্রেমিক। তিনি বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পেশায় তিনি একজন কনটেন্ট রাইটার। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের জন্য তার অন্যরকম ভালোলাগা ও ভালোবাসা। লেখালেখি, ছবি আঁকা, রচনা প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে অনেক পুরষ্কার প্রাপ্তি ঘটেছে। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই তিনি বই নিয়ে বসে যান, এছাড়াও অনলাইন পত্র-পত্রিকা ,ম্যাগাজিনেও লেখালেখি করা হয়। হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয় লেখক। বই পড়ার পাশাপাশি তিনি কবিতা, ছোট গল্প এবং মনোমুগ্ধকর বইয়ের রিভিউ দিয়ে থাকেন।