সত্যি বলতে
আমি বড়ো বেশি অপদার্থ!
নিজের গায়ে বুলেট লাগার আগ পর্যন্ত আমার জবানই খোলে না।
পিঠ বাঁচিয়ে চলতে চলতে একদিন লক্ষ্য করলাম পিঠ ঠেকে গেছে সীমান্তের কাঁটাতারে।।
এই যে, আমাদের দেশে এতো বড়ো অভ্যুত্থান ঘটে গেল,
আমি কিন্তু মশাই আন্দোলনে একটা দিনও বেরোই নি!
কেউ পোস্ট করেছে, কেউ বা শেয়ার করেছে স্টোরি।
সত্যি বলতে আমি নিজেও করেছি দু-চারটে পোস্ট।
কিন্তু পরবর্তীতে আত্মীয়ের ধমকের ভয়ে তাকে ফ্রেন্ডস এক্সেপ্ট দিয়ে...
আরে হ্যাঁ!
আমি ভীতুর ডিম,
তবে আমার এতোটুকু সাহস আছে সেটা স্বীকার করার।
যা করেছি আত্মীয়ার চাকরি বাঁচানোর জন্যে।
বেচারার সরকারি চাকরি...
আমি জানি-
ছাত্ররা ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যে বুক চিতিয়ে এগিয়ে গেছে সংশপ্তকের মতো
কিন্তু আমার আছে প্রাণের ভয়!
তাই একপেশে পোস্ট করে দুকূল-ই রক্ষা করেছি।
সত্যি বলতে, লেখক হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে তো, নাকি?
বন্যার পানিতে আমার নির্লজ্জ চোখ দুটোও যদি ভেসে যেতো!
হুম, আমি জানি!- আপনারা অনেকেই তা মন থেকে চান।
আমার মতো অপদার্থের জন্যেই বোধহয় চশমখোর শব্দটার প্রচলন।
কি করবো বলুন! আমার ভয় লাগে।
আমার সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে যদি বিশ্বজিৎকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হতো,
আমি বিশ্বাস করি, আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করতাম।এই আশায়-
যে আমার ভিডিওতে কয়েক লাখ রিয়েক্ট কমেন্ট হবে।
কিংবা সময় টিভির ঐ সাংবাদিকের মতো বলতাম-
আমাদের পুলিশ কাকুকে, "ভাই গুলি করেন, একটা ছবি তুলবো!"
সবাই যখন শোক পালনে সংহতি প্রকাশের চিহ্নস্বরূপ ডিপি রেড কালার করে দিলো,
সত্যি বলতে,
আমি সেটাও করিনি।
আমি সাধারণের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিতে চাইনি।
আর এই না চাওয়াই আমাকে অমানুষ বানিয়েছে।
আমার এই অমানবিকতায় আমার কোনো আক্ষেপ নেই।
কারণ এদেশে মানুষের জীবনের দাম যা, কুকুরেরও সেই!
আমার নিউজফিডে দেখলাম পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ার একটা মেয়ে, মৌমিতা, ধর্ষণের শিকার।
মেয়েটাকে কিভাবে পিষে ফেলা হয়েছে সে বিবরণ-ও আমি এড়িয়ে গেছি।
সত্যি বলতে, আমি ভয় পাই!
তারপর-
এমন একদিন এলো যেদিন আমার প্রেমিকাকে নিয়ে ভালোবাসা দিবসে ঘুরতে বের হলাম।
কতিপয় মুখোশধারী আমার প্রেমিকাকে আমার সামনেই...
আহা!
আমি কি করলাম জানেন?
আমি তাকে বললাম,
"আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা অসম্ভব! সমাজে আমার একটা স্ট্যাটাস আছে..."
সত্যি বলতে -
এভাবেই আমি গা বাঁচিয়ে চলি!
সত্যি বলতে || তাসফিয়া ইসলাম লাবণ্য
তাসফিয়া ইসলাম লাবণ্য একজন উদীয়মান লেখক, ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর যার জন্ম। সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি ষষ্ঠ শ্রেণির শেষ থেকেই। এরপর আর থেমে থাকেনি তাঁর কলম। কবিতা তাঁর রক্তে নেশার মতো প্রবহমান। কবিতাকে বুঝতে হয়, বুকের ভেতর সবাই কবিতা পোষে, কিন্তু তার শব্দ শুনতে পায় খুব বেশি সরল স্বভাবের মানুষেরা। লেখকের শতভাগ বিশ্বাস তিনি একজন সাদা মনের মানুষ। পাঠকের মনোজগতে ছাপ ফেলার স্বপ্নই তাঁর লেখালেখির অনুপ্রেরণা। বর্তমানে তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত। কবির প্রার্থনায় তার পুরো পাঠকসমাজ এবং বেলাশেষে তাঁর ছায়াসঙ্গী কবিতাগুলো।