অবসরে কর্ম
স্কুল জীবনের পর কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে চাকরি করছি। আমি নিজের পরিচয় দিতে চাই না। আমার তেমন কোন পরিচয় নেই। আমি মানুষ। ঘটনাক্রমে আমি বোবা মানুষ। আমার চোখ আছে। সেই চোখে আছে তান্নীর জন্য মায়া।
সাহেদ প্রায়ই একা অবচেতন মনে তন্নীর কথা ভাবে। আজও এর ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে না। চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে মনে করিয়ে দেয় অফিসের পিয়ন রহমান। সাহেদ কিছু না বলার পর রহমান সাহেদের কক্ষ ত্যাগ করে বলে- “এ আসছে প্রেমিক পুরুষ। বড় লোক বইলা গরিবের কথার মূল্য নাই।” সাহেদ কিছুক্ষণ পর রহমানকে ডাক দেয়। রহমান সাহেদের কাছে যাওয়ার পর সাহেদ জানায় তার বাবার চাকরি শেষ। সাহেদের বাবা যে ব্যাংকে চাকরি করতো সেখান থেকে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আগামীকাল। সেজন্য সাহেদ আগামীকাল অফিসে আসতে পারবে না বিধায় একটা ছুটির আবেদন দেয় রহমানের কাছে। অফিসের প্রধান কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে রহমান অফিসের সব। রহমানের সাথে প্রধান কর্মকর্তার বেশ ভালো সম্পর্ক।
"দুলাভাই এখন কিন্তু আপনি আর আমি একই শ্রেণিভুক্ত।" এ কথা বললো সাহেদের মামা আলতাফ। সাহেদ অফিস থেকে বাসায় আসলো। আলতাফ সোফায় বসে বক্তৃতা লিখছে আর প্রাকটিস করছে। সাহেদ অফিস থেকে বাসায় আসার পর সাহেদকে আলতাফ তার নির্ধারিত বক্তৃতা শুনাতে চাচ্ছে। কিন্তু সাহেদ অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত তাই মামার বক্তৃতা শোনার সময় নেই। আলতাফ কাজের মেয়ে মেঘলাকে ডাক দিয়ে তার বক্তৃতা শুনায়। মেঘলা মেঝেতে বসে কিছুক্ষণ বক্তৃতা শুনে চলে যায়। কারণ তার এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। বিকালে টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠান আছে। সেই অনুষ্ঠান দেখা বাদ দেয়া যাবে না।
ব্যাংক নব সাজে সজ্জিত। সাহেদের বাবা, মা, মামা ও সাহেদকে কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়। সাহেদের মামা ব্যানারের সামনে গিয়ে একটু রেগে যায়। কেননা তার বোনের নাম লিখতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভুল করেছে। তার বোনের নাম মালা বেগম কিন্তু তারা একটি আকার দিতে ভুল করেছে। তারা লিখেছে মলা বেগম। অবশ্য পরে আলতাফের তৎপরতায় আকার যুক্ত হয়েছে। আলতাফের বক্তব্য শুনে সাহেদের বাবার চোখে পানি চলে এসেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাহেদের বাবার স্মৃতিচারণ করলো। সাহেদের বাবা জীবিত থাকতেই কিছুটা শুনে নিলো তিনি মারা গেলে লোকজন কি বলবে। বিদায় অনুষ্ঠান শেষ।
সাহেদের বাসায় আজ আলোচনা সভা বসেছে। আলোচনার শেষে ঠিক হলো আলতাফ তার দুলাভাইয়ের সাথে ব্যবসা করবে। তারা বিভিন্ন স্থানে জমি কিনবে বাড়ি করবে। পরে বিক্রি করবে। তবে এই সাহেদ চায় তার বাবা অবসরে বিশ্রাম নিবে।
পরের দিন সাহেদ অফিসে আসার পর আলতাফও চলে আসে সাহেদের কাছে। কথা বলে যাওয়ার সময় রহমানের সাথে দেখা হয় আলতাফের। আলতাফের কথা মত রহমান অফিসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের কাছে তাকে নিয়ে যায়। তার সাথে কথা বলে। সাহেদ সম্পর্কে জানতে চায়। সে চায় সহেদের বিবাহ দিবে। অফিসে সাহেদের কোন পছন্দ আছে কিনা তা জানতে এমন উদ্যোগ। তবে অফিসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে সাবিতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে সে বিবাহিত।
দুই স্থানে জমি কেনার জন্য বায়না করেছে সাহেদের বাবা ও আলতাফ। কয়েকদিন পরেই দলিল হবে। আজকে আবার আলোচনা সভা বসেছে সাহেদের বাসায়। আলোচনা বিষয় বিবাহ। সাহেদের বাবা জানায় আলতাফের জন্য মেয়ে দেখতে হবে তবে আলতাফের কোন পছন্দ আছে কিনা তা জানতে চায়। আলতাফ বলে, "আপনাদের পছন্দই আমার পছন্দ৷" সে আরো বলে, "আমি বিবাহ করতে চাই না। শুধুমাত্র ভাগিনার জন্য বিবাহ করছি। যদি আমি বিয়ে না করি তাহলে সাহেদ বলতে পারে মামা আগে বিয়ে করবে তারপর আমি। গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি সাহেদ অফিসের কাজে মন দিতে পারছে না। সে উদাস।" আরো কিছু বলতে চায় তবে সাহেদের বাবার ধমকে আলতাফ চুপ করে।
শুক্রবার সাহেদের কাজ নামাজের আগ পর্যন্ত ঘুমানো কিন্তু আজ সেটা হলো না। অতি সকালে উঠতে হলো। মেয়ে দেখতে গেল। সাহেদের নতুন মামিকে সবার সামনে আনার আগেই সাহেদ ভিতরের রুমে গেল। একটি কন্ঠ সাহেদকে ভিতরে নিলো। কলেজে পড়ার সময় সেই কন্ঠ সাহেদ প্রতিদিন শুনতো। এত বছর তাদের দেখে হয় নি। আজ সেই কন্ঠ শুনে সাহেদের চোখে যার জন্য মায়া তাকে পেয়েছে।
অবসরে কর্ম ।। মুহাম্মদ আল ইমরান
মুহাম্মদ আল ইমরান এম এ ইমরান নামেও পরিচিত, একজন বাংলাদেশী অভিনেতা, লেখক এবং নির্মাতা। ইমরান থিয়েটার, ফিল্ম এবং টেলিভিশন প্রযোজনায় একজন অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন। পিতার নাম আব্দুল মান্নান হাওলাদার ও মাতার নাম মোসাঃ মাছুমা বেগম। ১৫ জুলাই বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।