প্রথম দিনের গল্প
“হ্যালো, আপনি কোথায়?”
হঠাৎ পিছনে থেকে ছায়া মূর্তির মতো একজন আমার পিছনে এসে থামলো, সাথে আমার হৃদস্পন্দনও। অনেক সাহস নিয়ে পিছনে ঘুরে তাকাতেই অবশেষে মানুষটাকে দেখলাম। প্রথম দেখা, চোখে চোখ পরা, দৃষ্টি বিনিময়। জানি না সে কতটুকু উদ্বিগ্ন ছিলো, আমিও কম উদ্বিগ্ন ছিলাম না। হাতে থাকা ফোনটা একটুর জন্য পড়তে গিয়ে ও পড়ে নি, শরীরের প্রত্যেকটা কোষ আমাকে বার্তা দেওয়া শুরু করলো,” সে এসেছে। আমাকে দেখছে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে।“ এতটাই উদ্বিগ্ন ছিলাম যে তাকে মাথা উঁচু করে দেখতে অত্যন্ত লজ্জা লাগছিলো। যে কনফিডেন্স নিয়ে এসেছিলাম সেটা কেমন বাষ্পের মত উড়ে গেলো বুঝতে ও পারলাম না। বান্ধবীকে ফোন দিয়ে উদ্বিগ্নতা কাটানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়, ফোন ধরলো না।
- “ কাকে ফোন দিচ্ছো??”
- “ বান্ধবীকে।“
- “ ও কোথায় আসবে?? এখানে?”
- “ সমস্যা তো এখানেই। হঠাৎ কোচিং থেকে ফোন দিয়ে ওর আব্বুকে বলেছে আজকে পরীক্ষা ২টাতে। ওর আব্বু ওকে দিয়ে আসবে। আসার আগে মেসেজ দিয়ে বলল আসতে পারবে না।“
- “ তাহলে?”
- বাক্যবিহীন –
- “ আমাকে দাও আমি নিচ্ছি।“
আমার হাত থেকে ভারি বইয়ের ব্যাগটা নিয়ে নিলো। সামান্য একটু ছোঁয়া কিন্তু মনে হলো যেন আমার অনুভূতিগুলো কাজ করা বন্ধ হয়ে গেলো।
“সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ, উত্তরা উত্তর অভিমুখী ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম নম্বর ২ এ প্রবেশ করছে। দয়া করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।“
- মেট্রো চলে এসেছে।
- কোনটাতে উঠবো??
- যেটা ফাঁকা পাবো।
দুজন ট্রেনের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ,
- এটাতে আসেন। এটা ফাঁকা আছে। (পিছনে ফিরে)
তখন পর্যন্ত উদ্বিগ্নতা এবং লজ্জা আমাকে ঘিরে ধরে আছে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কি একটা অনুভূতি, না ভালো লাগা না মন্দ লাগা কোনো ভাবেই সংজ্ঞায়িত করতে পারছিলাম না। আরচোখে বেশ কিছুক্ষণ খেয়াল করলাম তার মুখভঙ্গী, ড্রেস আপ পুরোপুরি ফরমাল। বলতে বেশ ইচ্ছে করছিল,” স্যার, আপনি কি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন??”
মেট্রো স্টেশনের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে গিয়ে চলন্ত সিঁড়িতে উঠলাম। উনি একদম আমার পিছনে, কি অদ্ভুত একটা অনুভুতি খেলে গেলো ভিতরে, কেউ আছে যে আমাকে অনুসরণ করছে। এই প্রথম কোনো মানুষের উদ্বিগ্নতা দেখে মুগ্ধ লাগলো, কারোর আত্মবিশ্বাস দেখে মুগ্ধ হলাম, হয়তো মানুষটার মায়াতে ও।
মানুষটাকে নিয়ে হুডখোলা রিকশাতে ইলশেগুড়ি বৃষ্টিতে ভেজা, দৃষ্টি বিনিময়, ছোট ছোট কথা, পর্যবেক্ষণ করা সবই আমার অমূল্য একটা স্মৃতি। তার মুখের ভালোবাসি আমার মস্তিষ্কের সিস্টেমকে অচল করে দেয়, তার একটু প্রশংসার জন্য নিজেকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে ইচ্ছা করে, তার মুখে আমার নিজের বর্ণনা শুনে আমি যুগের পর যুগ পার করে দিতে পারবো। সে যখন বলে তুমি আমার জন্য সেরা, দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ মনে হয় নিজেকে। স্বার্থপরের মত বলতে ইচ্ছা হয়,” আপনি না হয় আমার হয়েই থাকেন, প্লিজ। আপনাকে আমার দরকার খুব করে।“
মানুষটা খুব করে আমার হোক।
শুধুমাত্র আমার হোক।
প্রথম দিনের গল্প ।। আতিয়া তাহিরা
পেশায় একজন ছাত্রী হলেও বই পড়া আর লেখালেখি নেশার মত অনেকটা। নিজের জন্য লেখার শুরু, লিখে মনের ভাব প্রকাশ করতে বেশ লাগে। মুখে যা বলা কষ্ট মনে হয় লিখে বলাটা ততটাই সহজ লাগে। নিজেকে এক নতুন উচ্চতায় দেখার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা।