এটি একটি নিছক প্রেমপত্র
সিন্ধুবাসিনী:
কতোশত প্রার্থনায় আমার উঠোনে বুঝি নেমে এলো চাঁদ!
বিষন্ন চোরাবালি:
অপ্রেম-সংকেতও বুঝি, না বুঝি কবিতা,
তুমি করো অনুবাদ।
সিন্ধুবাসিনী:
মেঘকে বলেছিলাম, কেন তুমি রোজ রাতে করো অনুনাদ?
বিষাদিনী হয়ে ঝরো,
ভরে দাও সরোবরও,
কাকভেজা করেও কি মিটেনি কো সাধ?
বিষন্ন চোরাবালি:
মেঘবালিকা বড্ড বোকা! একচোখা হয়ে তুমি দিচ্ছো অপবাদ,
বিধাতার লিখন, না যায় খণ্ডন, মিছে করছো এ বাদানুবাদ।
সিন্ধুবাসিনী:
প্রিয়কণ্ঠ! মেঘের হয়েই যদি করো প্রতিবাদ,
দেখাই দেবো না তবে,
থাকো পড়ে অনুভবে;
অভিমান-কাঁপুনিতে,
পাবে বিনা মেঘে বজ্রপাতে নিখোঁজ সংবাদ!
বিষন্ন চোরাবালি:
আলোই না মেলে যদি, ভালোই আছি আজ অবধি চাঁদশূন্য ছাদে,
ঘুমের চাদর পাতা, আদর করেও মাথা রাখোনি তো কাঁধে!
সিন্ধুবাসিনী:
চাঁদ বলে, আরও গভীরে গেলে মেঘ আমায় গিলবে না,
আমি বলি, পিছু হটে গেলে তুমি,
আমার সময় মিলবে না।।
হঠাৎই কি হলো কি জানি!
কান পেতে রক্তস্রোতে মিশে যাওয়া শুনি,
কবিতার প্রতিধ্বনি -
মেঘনাদ! তুমি বিনে ব্যর্থ আকাশ,
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টনী সত্ত্বেও
ভালোবাসার প্রশ্নফাঁস!
অতঃপর মৃদু হেসে ভালোবেসে বলি-
গত জন্মের পর, যখনই কেঁপেছে স্বর,
চোরাবালি, তোমার প্রতি প্রবল আসক্তির এতোটুকুও হয়নি নড়চড়,
ভুলতে বসেছি আমিই আমার আপন,
আমার কবিতা, তুমিও পর!
বিষন্ন চোরাবালি:
রূপ-লাবণ্যে হয়ে হন্যে বৃথা কেন জুড়ে দিচ্ছো হাজারটা প্রবাদ?
ভালোবাসা মিছে আশা, সাধনায় মেলে শুধু দেবীর প্রসাদ!
পূর্ণিমা আসলে তবে জোয়ার এমনি হবে,
আমি কে দেবার বাঁধ!
সিন্ধুতে তলিয়ে যেতে আজন্ম উন্মুখ এই অপূর্ব বিষাদ।।
সিন্ধুবাসিনী:
শেষমেশ কবিতা চুরি গেলে কার কাছে অভিযোগ করবো, বলো?
যেখানে আমি নিজেই ডাকাতির টাকায় কিনে নিয়েছি প্রেমিকের ভাঙা আঙুলও!
বিষন্ন চোরাবালি:
বয়স যখন ত্রিশ, খেতে চাও বিষ!
সিন্ধুবাসিনী:
এই জোছনাপাগল বেলাভূমিতে বসে আজ নির্ভীক উত্তর দিলাম,
খুঁজে নিয়ে মনের হদিশ,
বললাম, দেশপ্রেমিক প্রীতিলতাকে চিনতে,
আমি না হয় মনুষ্যপ্রেমী প্রীতিলতাই হলাম!
এটি একটি নিছক প্রেমপত্র || তাসফিয়া ইসলাম লাবণ্য
তাসফিয়া ইসলাম লাবণ্য একজন উদীয়মান লেখক, ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর যার জন্ম। সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি ষষ্ঠ শ্রেণির শেষ থেকেই। এরপর আর থেমে থাকেনি তাঁর কলম। কবিতা তাঁর রক্তে নেশার মতো প্রবহমান। কবিতাকে বুঝতে হয়, বুকের ভেতর সবাই কবিতা পোষে, কিন্তু তার শব্দ শুনতে পায় খুব বেশি সরল স্বভাবের মানুষেরা। লেখকের শতভাগ বিশ্বাস তিনি একজন সাদা মনের মানুষ। পাঠকের মনোজগতে ছাপ ফেলার স্বপ্নই তাঁর লেখালেখির অনুপ্রেরণা। বর্তমানে তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত। কবির প্রার্থনায় তার পুরো পাঠকসমাজ এবং বেলাশেষে তাঁর ছায়াসঙ্গী কবিতাগুলো।