একাকী জীবন
ছোটবেলা থেকে আমি শান্তশিষ্ট স্বভাবের এক ছেলে। আড্ডা, মাস্তি, পার্টি, হৈ-হুল্লোর করা আমার একেবারেই পছন্দ না। ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথেও কখনো সেরকমভাবে কথা-বার্তা, হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠা হয়নি। স্বল্পভাষী আমি স্কুল, কোচিং কিংবা বাসায় সবসময়ই চুপচাপ থাকি, প্রয়োজন পড়লে দু-একটা কথা বলে আবারো চুপ হয়ে যাই।
স্কুলে সহপাঠীরা যখন আড্ডা দিত কিংবা সবাই মিলে টিফিন খেত আমি শ্রেণিকক্ষে এক কোণায় বসে তাদের কর্মকান্ড দেখতাম। বিকেলে এলাকার সমবয়সী ছেলেরা যখন মাঠে খেলতে যেত আমি জানালা/বারান্দা দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মাঝে মধ্যে মন চাইতো তাদের সাথে আমিও যাই, আম্মু অনেকবার বলেছে, "যাও খেলা করে আসো।" কিন্তু কেন জানি শেষমেষ আর যাওয়া হয়ে উঠতো না। ঘরে একাকীত্বে সময় কাটাতেই আমার সবথেকে বেশি ভালো লাগে। এজন্য স্কুল, কোচিং, কলেজ, এলাকা; কোনো জায়গাতেই সেরকম বন্ধুমহল গড়ে ওঠেনি।
ঈদ, বিয়ে, জন্মদিন, গায়ে হলুদ, পহেলা বৈশাখ বিভিন্ন উৎসবে সবাই একসাথে ঘুরতে যেতো। আর আমি ঘরে বসে ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রামে তাদের ছবিতে লাইক-কমেন্ট করে সময় পার করতাম। রাস্তায় চলাচলের সময় যদি দেখতাম কোন এক যুগল হাতে হাত ধরে হাঁটছে, রিক্সায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কিংবা ফুচকা খাচ্ছে তখন আমারও মন চাইতো কোনো এক রুপসী মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠুক, যার সাথে আমি সুখ-দুঃখ সবকিছু শেয়ার করব। কিন্তু কিভাবে একটি মেয়ের সাথে কথা শুরু করতে হয়, কিভাবে বন্ধুত্ব গড়তে হয় তার ছিটেফোঁটাও আমি জানিনা। তাই আজ পর্যন্ত নিজের মনের মানুষকে খুঁজে পাইনি।
আমার নীরব স্বভাবের কারণে স্কুল-কলেজে বিভিন্ন সময়ে সহপাঠীদের হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছি। তারা হাসাহাসি করে বলতো, "ওই মিয়া তুমি এত চুপচাপ থাক ক্যা? কথা কইতে পারোনা?" আমি হাবিজাবি দু-একটা কথা বলে তাদের এড়িয়ে যেতাম। গতবছর লকডাউনে অনেকেই বাসায় থাকতে থাকতে হাপিয়ে গিয়েছিল, তবে আমার তেমন কিছুই হয়নি। কারণ আমি ছোট থেকে নিজেকে বাসাতেই বন্দি করে রেখেছি। তাই লকডাউনে একটানা তিন-চার মাস বাসায় বন্দি থাকতে কোন সমস্যাই হয়নি আমার। একাকী সময় কাটাতেই আমার ভালো লাগে। অবসরে ক্রিকেট দেখা কিংবা জানালার পাশে বসে গান শুনি আর মনে মনে বলি, "একাকীত্বই আমার চিরদিনের সঙ্গী।"
একাকী জীবন || Odeteyo Nibir
Odeteyo Nibir is a student of BAF Shaheen College