অভিমানী ভালোবাসা
এলোমোলো চুলে আলিফ ধীর পায়ে এক হাতে গিটার আর অন্য হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে এগিয়ে এসে নি:শব্দে বসল। পকেট থেকে সিগারেট বের করে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে অথৈ কি টের পায় নি যে সে এসেছে!
_ তুমি এই ছাইপাস আজও ছাড়লে না!!
_ কি করব বলো....তুমি যে ছেড়ে চলে গেলে। ( ব্যঙ্গ করে হাসলো)
_ ( আলিফের কথা উপেক্ষা করে) তোমায় না কতবার বারণ করেছি..... শুনলা না আর আমার কথা ।
_ তুমি শুনছিলা!?!!
_ ( কিছুক্ষণ চুপ থেকে) ঐ ব্যাগে কী?
_একটা নীল শাড়ি, লাল চুড়ি আর এক জোড়া কানের দুল।
_ আমার জন্য?? তোমার আজও মনে আছে এগুলো আমার পছন্দের!!
_ না। তোমার উপর আমার সব অধিকার তো হারিয়ে ফেলেছি।
_ তাহলে কার জন্য??
_ কারো না এভাবেই ভালোলেগেছে তাই কিনে রেখেছি।
_ আচ্ছা, তুমি প্রতিদিন কেন আসো এভাবে এখানে??
_ আমি তোমার মতো কথা দিয়ে বিশ্বাস ভাঙি না। আমি বলেছিলাম প্রতিদিন কিছু সময় হলেও তোমাকে দিব।
_ কিন্তু এখন আর কিছু আগের মতো নাই।
_ তোমার জন্য হয়ত বদলে গেছে আমার জন্য না। তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেছো , তুমি কথা রাখো নি কিন্তু আমি আজও পুরানো স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি।
_ আমি নিজের ইচ্ছায় কিছু করি নি। বাবা - মায়ের বিরোধে যাওয়ার সাহস আমার ছিলো না।
_ তাহলে তাদের কথাই মেনে নিতে.......
_ তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতাও আমার ছিলো না।
_ তাই বলে এমন করলে...... না! তুমি কখনো আমায় ভালোবাসনি। যদি ভাসতে এভাবে যেতে না...... আমায় একটু সময় দিতে...
_ সময় ই তো ছিল না ( দীর্ঘশ্বাস ফেলল) আনমনে হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দুইজন।
_ ( কিছুক্ষণ পর) তোমার চাকরি কেমন যাচ্ছে?
_ ভালো।
_ বাসায় কল দাও?
_ হুম।
_ এখনো সবসময় গিটার টা নিয়েই ঘুরে বেড়াও?
_ হুম।
_ আচ্ছা বলো তো দিন দিন এমন অগোছোলো কেন হয়ে যাচ্ছো?
_ আমি এমনই।
_ আগে তো এমন ছিলে না!!
_ তখন তো তুমিও আমার জীবনে ছিলে না।
_ এখনো তো নেই!!!
_ হুম....কিন্তু বয়ে যাওয়া ঝড়ের মতো এসেছিলে তো....
_( নিচু - চিন্তাময় স্বরে) নিজের একটু খেয়াল রেখো।
_ খেয়াল রাখার কথা তো তোমার ছিলো....
_ রাগ??
_ না, অভিমান।
_ তো জনাব.. কতদিন এ অভিমান পুষে রাখবেন?? ( কান্না র স্বর টা লুকানোর জন্য একটু হাসার ভঙ্গি করল)
_ তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা যেমন আজীবন থেকে যাবে তেমনি অভিমান টাও রয়ে যাবে।( চোখের কোণে প্রকাশ পেলো জমে থাকা সেই অভিমান)
এরপর কেউ আর কিছু বলল না।
এক অদ্ভুত নিরবতা পড়ন্ত বিকেলের হাওয়া কে ছুঁয়ে গেল।
কিছুক্ষণ বসে থেকে মাগরিবের আযান পড়তেই কবরস্থান থেকে বের হয়ে আলিফ পথ চলা শুরু করল তার উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের দিকে।
অভিমানী ভালোবাসা || Marjia Tasmin
তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে IER বিভাগে অধ্যায়নরত একজন শিক্ষার্থী। তাহার জীবনে বই পড়ার শুরু ছোটবেলা থেকেই। বাসায় আমার বাবা-কাকা সবার বই পড়া দেখেই তিনি অনুপ্রেরণা পান। ছোট-গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদি পড়তে তিনি বেশি পছন্দ করেন। নতুন নতুন বই সংগ্রহ এখন তার অন্যতম শখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তিনি বই পড়ার পাশাপাশি টুকটাক লেখা-লেখিতে মনঃসংযোগ করছেন। এছাড়াও তিনি প্রচুর ভ্রমণ প্রিপাসু মানুষ। প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখেন বিশ্ব জয় করার।