বাঁধা দেয়া যায়নি

  • লেখক: আখতারুল ইসলাম খোন্দকার
  • Category: Short Story
  • Published on: Tuesday, Jan 30, 2024
বাড়ির বড় মেয়ে অনিমা। পড়াশোনাতে  অনেক ভাল, এবার এস এস সি পরীক্ষায় লেটার মার্ক নিয়ে পাশ করেছে। তাই বাবা-মার অতি স্নেহ ও আদরের সন্তান। আবার অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে বিয়ের ছ' বছর পর তার জন্ম হয়েছে। যদিও আরো তিনটি ছোট ভাই আছে যারা বাস্তবতার সাথে চড়াই উৎরাই কিছুই বোঝেনা। বাবা একটা ব্যাংকে চাকুরী করেন। ছোট পদের কর্মচারী হলেও যা বেতন পান তাতে সংসার মোটামুটি ভাবে চলে যায়।

     বাবা সিকদার কোন ঘোর প্যাঁচের লোক ছিলেননা। সংসারের সব দায়-দায়িত্ব মা জাহানারার হাতে ন্যাস্ত। তিনি শুধু মাসের বেতন মা'র হাতে তুলে দিয়েই দায়িত্বের পরিসিমা। কিন্তু যথেষ্ট পরিমান ঝড় ঝামেলা সব সহ্য করতে হয় মাকে। ছেলে-মেয়েদের কোন কিছুর দরকার হলে সরাসরি তার কাছেই আবদার। তিনি একটু গম্ভীর ও কড়া মেজাজের ছিলেন কাউকে প্রশ্রয় দিতেন না। ছেলে-মেয়েরা সবাই ভয় করে চলতো মাকে। তবে বাবা তাদের খুব ভালবাসতো এবং খেলার সাথীও ছিলেন। কিন্তু এগুলো মোটেই পছন্দ করতেন না মা তাই বাবাকে মাঝেমধ্যে এর জন্য বকুনি খেতে হয়। সিকদার তার স্ত্রীর গায়ে কখনো হাত তুলেছে বলে শোনা যায়নি এমনকি উঁচু কন্ঠে কথাও বলেনি বরং জাহানারাই স্বামীকে সুজোগ পেলেই বকুনি ও ধমক দিতেন। তিনি কিছু না মনে করে হেসে উড়িয়ে দিয়ে সন্তানদের স্বাক্ষী করতো। তাদের পরিবারটা একটা সুন্দর ফুল বাগানের মতো গোছানো কোন বেদনা তাদের ছুঁতে পারেনি।

     সিকদার হঠাৎ দুপুরের আগেই সবাইকে হতবাক করে অফিস হতে বাড়ি ফিরেছেন।  এমন ভাবে অফিস ফাঁকি দেওয়ার লোক তিনি না প্রচন্ড অসুস্থ ছাড়া।  বিষন্নতায় ভরা গোমড়া মুখে চুপ করে সোফায় বসে পড়লো। বরাবর তিনি জানান দিয়ে বাসায় ঢুকতেন এবং ছেলে-মেয়েরা ছুটে যেতেন বাবার কাছে। কেননা বাসায় ফেরার পথে কিছু না কিছু নিয়ে এসে ছেলে-মেয়েদের হাতে ধরিয়ে দিবেন এবং সামনে বসেই তা খেতে হবে। আর  কেউ একজন অনুপস্থিত থাকলে তার খোঁজ আগে করবেন। কিন্তু আজকে অনিমার জন্মদিন উপলক্ষে অফিস ছুটির পর কেক ও উপহার নিয়ে আসার কথা। কিন্তু কি হয়েছে বাবার ব্যপারটি বেশ উদ্বীগ্ন করে তুললো তাকে। কারণ এ সংসারের বড় মেয়ে সে, বড় ছেলের মতো অনেক সমস্যার সামাল দেয়ার কলা কৌশল শিক্ষা নিতে হয়েছে।

     জাহানারা স্বামীকে প্রশ্ন করে কোন উত্তর না পেয়ে চোখ ভরা ছলছল জল নিয়ে পাশের ডাইনিং এর চেয়ারটাই বসে পড়লো। অনেক চিন্তা ভাবনা করে মৃদু পদক্ষেপে গিয়ে বাবার গা ঘেঁষে বসলো অনিমা। তিনি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মেয়ের মাথার চুল গুলো আংগুল দিয়ে বিলি কাটছে। নিজে থেকে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন যেন বোবা হয়ে গেছেন। সে অবাক দৃষ্টিতে মা'র দিকে একনজরে লক্ষ ছিল। বুঝতে বাকি রইলো না যে বাবার দিকে  তাকালে হয়তো চোখে আপাতত লুকানো অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পড়তে পারে, তবুও কান্নার ঢেউ চাপাতে গিয়ে চোখ দু'টো লাল করে ফেলেছে আঁড় ভাবে দেখল। তিনি কিছু না বলে পকেট থেকে লম্বা একটা হলুদ ছেঁড়া খাম বের করে মেয়ের হাতে দিল। খাম থেকে চিঠি বের করতেই মা ইশারায় পড়ে শোনাতে বললেন। চিঠি খুললো, কালো অক্ষরে টাইপ করা। ঝটপট সমগ্র চিঠিটা আলগুছিয়ে দেখে নিল। ভাই তিনটিও কাছে গিয়ে বসলো। চিঠিতে এমন কি রহস্য আছে যা দেখে মেয়েও ফ্যাকাসে হয়ে বাবার মতো রুপ ধারণ করলো। মা জিজ্ঞেস করলেন, কিরে কি লিখা আছে চিঠিতে? ভাংগা ভাংগা গলাই বলল, চাকুরী থেকে  বাবাকে সাসপেন্স করা হয়েছে। মেয়ের কথা শুনে যেন মাথায় বাজ পড়লো তার। তবু অতি কষ্টে আগ্রহ নিয়ে বলল, কেনরে?  মেয়েকে বাঁধা দিয়ে নিজেই বলতে লাগলেন, ছ'মাস আগে অফিস থেকে লোন নিয়ে বাড়ি করলাম। এ লোন নাকি নেয়া বৈধ ছিলনা, এমন আটশো জনের মতো কর্মচারীদের চাকুরী সাসপেন্স হয়েছে আর যে কর্মকর্তা এই লোন পাশ করেছে তাকেই প্রথমে তার চাকুরী গেছে নতুন পরিচালক এসে এ কাজ করেছে।  অনিমা বলল, বাবা তাহলে এখন উপায় কি? তিনি লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, কি আর হবেরে মা! লোনের অর্ধেক টাকা অফিসে জমা দিলেই চাকুরী আবার বহাল থাকবে। কথা গুলো বলতে বলতে তিনি কেমন জানি করতে শুরু করলেন। চিৎকার করে দৌড়ে গিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন জাহানারা। ছোট ভাইটাকে টেবিল ফ্যান অনতে বলে সিলিং ফ্যান অন করে দিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে শুরু করল অনিমা। তার জানা আছে বাবার এমনিতেই হাই প্রেসার। ছোট্ট দু'ভাই ফিসফিসিয়ে কাঁদছে কোন দিকে কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলনা মেয়েটা। তার পরও ওর মা'কে মাথায় পানি দিতে বলে ডাক্তার আনতে ছুটে গেল।

     ডাক্তার সাহেব বলেছেন, ওনার এখন প্রচন্ড বিশ্রামের প্রয়োজন তাছাড়া কোন রকম দুশ্চিন্তা যেন না করে সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু চিন্তা-ভাবনা না করলেও এমনই এসে যায়। যেহেতু চাকুরী তাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল আর সেটাই যদি না থাকে তাহলে চলবে কি করে। আবার চাকুরী ফিরে পেতে হলে অনেক গুলো টাকার প্রয়োজন সেটা কিভাবে জোগাড় করা একেবারে অসম্ভব। সংসারের আয়-রোজগার করার মানুষ তো মাত্রই একজন। সুখী পরিবারটা যেন দারুন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হল।

     এরিমধ্যে সিকদার সাহেব প্রচন্ড অসুখ বাঁধিয়ে বসলেন। কয়েকবার এমন সমস্যা হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সপ্তাহখানেক ধরে হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা চলছে। মা-মেয়ের হাতের পাতের যা ছিল এর মধ্যে প্রায় খরচ হয়ে গেছে। আজকে আবার ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছে এবং কয়েকটি টেষ্ট করানোর জন্যে বলেছেন। তাই এগুলো করানো খুবই জরুরী কেননা রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন অপারেশনের ব্যপারে।

     কাছে যা কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে ওষুধ পত্র কেনা ও সকল পরীক্ষা করানো সম্পুর্ন হয়েছে। এখন কিছু টাকা বাকী আছে টেষ্টের রিপোর্ট নেওয়ার সময় পরিশোধ করতে হবে। আপাতত: হাজার দেড়েক টাকার প্রয়োজন। এ ব্যপারে মাকে কিছু বলেনি অনিমা। ইতিমধ্যেই বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা কর্জ নেওয়া হয়েছে। আত্নীয়-স্বজনও তাদের এখানে কেউ থাকেনা সবাই নওগাঁর গ্রামের বাসায়। যদিও তাদের এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি। আর জানিয়ে কোন লাভ হবেনা কারণ সেখানে ওরকম কেউ নাই যে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করবে। সেখানে কিছু জমি ছিল সেটাও বিক্রি করায় চাচাদের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছে। মেয়েটা একা একা কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলনা। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ প্রতিবেশী সম্পর্কের এক মামার কথা মনে পড়লো। তার কাছে নাকি হাত বাড়িয়ে খালি হাতে কেউ ফিরেনি। খুব অমায়িক ও পরোপকারী বলে আশেপাশের এলাকায় সুনাম রটানো আছে। তৎক্ষনাৎ দেরি না করে তার সাথে দেখা করার জন্য  রওনা দিল অনিমা।

     দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল টিপতেই বিরক্তি মুখে দরজা খুললেন ভদ্রলোক। কোট-প্যান্ট পরনে হয়তো কোথাও বের হচ্ছিলেন তিনি। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন, অনিমা- তুমি কি মনে করে?  কখনো তো আসনি আমাদের বাসায়, কি ব্যাপার? মাথা নিঁচু করে জবাব দিল সে, মামা- কিছু দিন যাবত আমার আব্বার অবস্থা খুব খারাপ। এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে হাতে যা ছিল শেষ আমার হাজার দু'য়েক টাকার দরকার, পরে শোধ দিয়ে দিব। ওর বাবার অবস্থা জেনে কিছুটা মর্মাহত হয়ে বললেন, কিন্তু মা, আমি এক জায়গায় বেরুচ্ছি তো সন্ধ্যার পরে এসে নিয়ে যেও। মাথা নেঁড়ে সম্মতি জানিয়ে মেয়েটি চলে আসলো।

     মনে অনেক প্রফুল্ল নিয়ে সন্ধ্যার পারে আবার ওনার বাসায় গেল অনিমা। চারদিকে লক্ষ্য করে দেখলো এতো বড়ো বাড়িতে জনমানবশূন্য। বড্ডই ভয় করতে লাগলো তার তবু ভয়কে দমিয়ে রেখে ঘরে ঢুকতেই চমকে উঠলো ভদ্রলোকের কন্ঠস্বরে। তিনি বললেন, ভয় করছো নাকি?  কিসের ভয়, বস! বলে মেয়েটার দু' কাধে হাত দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল। কেন জানি অহেতুক বুকের মধ্যে ধুক ধুক করছে তার। হাজারো রকম অজানা ভাবনা ডানা বেধেছে মনের মধ্যে। ভেতর থেকে টাকা নিয়ে এসে ভদ্রলোক ওর গা ঘেঁষে বসে হাত দু' টো টেনে গুজে দিল পাঁচশ টাকার চারটি নোট। অনিমা এতোটা খুশি হলো যে এর আগে কখনো হয়েছে কি মনে করতে পারছেনা। সন্তুষ্টচিত্তে তাকে পায়ে হাত দিয়ে ছালাম করতে যাবে এমন সময় লোকটা হেঁচকা টানে তার বুকে টেনে নিয়ে শুকনো ঠোঁট দিয়ে নরম গালে চার পাচঁটা চুমু দিলেন। মুখ হতে একটি কথাও বের হলনা, ও তো রীতিমতো হতবাক! আবার ভাবছে যেহেতু মেয়ে বয়সী তাই হয়তো একটু আদর করে দিচ্ছে। কিন্তু এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হল যখন তার নোংরা আচরণে। শত ইচ্ছে থাকা শর্তেও মেয়েটি আর নড়তে পাছেনা যেন পা দ' টো অবশ হয়ে গেছে। লজ্জায় আর ক্ষোভে ফুলে ফেঁপে যেন লালা হয়ে গেল। মুহুর্তেই বিশালদেহী লোকটার বাহুবন্ধনে আটকিয়ে আছে। হাডুডু খেলায় যেমন করে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে খপাৎ করে শক্তি খাটিয়ে জড়িয়ে রাখে ঠিক তেমনি ভাবে ধরে রেখেছে। ঘৃনায় রি রি করে উঠলো সারা শরীরটা, কিন্তু তখনো কিচ্ছু বলার শক্তি ছিলনা শুধু মনে হলো কে যেন গলা চেপে ধরে আছে। অতি কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল বটে কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারলোনা। সামনাসামনি লোকটার দিকে তাকিয়ে কোন কথা বলার ইচ্ছা হলোনা। সে অসম্ভব লজ্জায় গুটিয়ে এতোটুকু হয়ে গেছে। মেয়েটার অবস্থা বুঝতে পেরে বদমায়েশটা শান্তনার বানী শোনালেন, লজ্জা করোনা, কেমন? যখন যা দরকার হবে নিয়ে যেও। অনিমা তখনো নির্বাক কিন্তু পা দু'টোতে সামান্য শক্তি ফিরে এসেছে তাই সরে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই জোর করে পাশের বিছানায় বসালো এবং তার সর্বাঙ্গে অমসৃন হাতের পরশ বুলিয়ে দিলেন। তিনি হাই ব্লাড প্রেশার রোগীর মতো ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছিল যে তার উষ্ণ নিশ্বাসে মেয়েটার শরীরে কেমন যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। কি এক অজানা উন্মাদনায় মেয়েটি শিউরে উঠছিল যখন অমানুষটার হাত দু' টো তার বুকের উপরে ঘুরছিল আর ক্ষুধার্ত বাচ্চার ন্যায় ললিপপ খাওয়ার নেশায় খপ করে ঠোঁট মুখে পুরে নিয়ে পাগলের মতো চুসতে লাগলো। আবার উঠতে চেষ্টা করেও পারলো না কেননা শরীরটাকে যেন অবশ ও শক্তিহীন করে ফেলেছে। প্রতিবাদ করতে চেয়েও ব্যর্থ হলো যখন চকচকে নোটের কথা মনে পড়লো কারণ বর্তমানে এ টাকাটার বড়ই প্রয়োজন। ওদিকে বাবার করুন চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল কি ভয়ানক মৃত্য যন্ত্রনায় কাতর তার তিনি।

     লোকটা আর কোন রকম সুজোগ না দিয়ে বিছানায় শুইয়ে আস্তে আস্তে অনিমার যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখা নরম শরীরের সমস্ত রহস্যের দ্বার একে একে উন্মোচন করতে লাগলো। এক হাত বুকের উপর খেলা করছে আর অন্যটি নিচের দিকে অমূল্য রত্ন আহরণে খনিজ শ্রমিকের ন্যায় ব্যস্ত। ইতিমধ্যে ওর চোখের সামনে নিজের সতীত্বের সবচেয়ে বড় সম্পদ লুন্ঠন হয়ে যাচ্ছে আর মেয়েটি শুধু বোবা হয়ে চেয়ে দেখছে। মেয়েদের কতো দিনের যত্ন করে সাজিয়ে রাখা সারা জীবনের লজ্জা ভাংগায় যে বাসর রাত, সে রাতেও নারী তার গোছানো সমস্ত শরীর উন্মোচন করতে কিছু সময় নেই কতো রকম ভনিতাই না করে। অথচ, সে আজ কিছুই করতে পারছেনা শুধু কাঠের পুতুল হয়ে দেখছে আর ভদ্রলোকের খাদ্য সামগ্রী হয়ে পড়ে রয়েছে। ওকি নারী নাকি নারী জাতের কলংক নিজেই প্রশ্ন করে বুঝতে তার অনেক কষ্ট হয়।

     অনিমা এই প্রথম লাইটের উজ্জল আলোর ঝলকানিতে তার সর্বাঙ্গের সৌন্দর্য দেখে তৃপ্ত হয়। নিজের যে একটা সুন্দর- সুশ্রী  শরীর আছে এতোদিন নজরে পড়েনি। বাস্তবে যে এই লোভিষ্ঠ শরীরের প্রচন্ড ক্ষুধা আছে এবং ডাকলে সাঁড়া দেয় এবার প্রথম জানল। তবে এভাবে না জানায় ভাল ছিল! লোকটা একটা কমবয়সী কন্যার সরলতার সুজোগ পেয়ে ধৈর্য হারিয়ে প্রচন্ড শক্তি দিয়ে যুদ্ধজয়ে লিপ্ত। এভাবে ক্রমশই তিনি নিচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছেন অবাধে। অভিজ্ঞ খনকের মতো নিপুণ হাতে নতুন কৌশলে খনন করে চলেছে ভেতরের শক্ত মাটি। সে প্রচন্ড উত্তেজনায় চঞ্চল হয়ে পড়ে আর এক অজানা অমৃত পিপাসায় হারিয়ে ফেলে নিজেকে অথচ ভুলেই গেছে বাবা মৃত্য শয্যাশায়ী।

     লোকটা একটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়লাভ করে ছটফট করা বন্দী খাঁচার পাখিকে যেন মুক্ত করে দিয়েছে। আর পরাজিত সৈনিকের মতো শান্তি চুক্তি মেনে অসম যুদ্ধে লড়তে গিয়ে ভিষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে মেয়েটি। সারা শরীরটাই এতো ব্যাথা যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কেউ যখম করেছে। নিস্তেজ চোখে প্রচন্ড ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে ইচ্ছে থাকলেও উঠতে পারছিলনা মনে হচ্ছিল বিছানা পেছান দিক থেকে কে যেন টেনে ধরেছে। হটাৎ বাবার কথা মনে পড়ায় চমকে উঠে দাঁড়ালো যখন চেতনা ফিরলো বাথরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ পেয়ে।

     কিছু ফলমূল ও টেষ্টের সকল রিপোর্ট হাতে নিয়ে হাসপাতালে বাবার বেডের কাছে না যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায় অনিমা। সাদা কাঁপুড়ে ঢেকে দেওয়া বাবার শরীর, মা মুখে হাত বুলিয়ে ডুকরে কাঁদছে, ছোট তিন ভাই তারাও বাবার বুকে পড়ে আছে। এমন অবস্থায় সে একটুও কাঁদতে চাইলো না বরং প্রচন্ড উল্লাসে নিজেকে অনেক ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করলো। এতো কিছুর পরেও বাবার মৃত্যু বাঁধা দেওয়া গেলনা? পঁচা, নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত শরীরটাকে ছিঁড়ে খাঁমচে রক্তাক্ত করে কোন ক্ষুদার্থ বাঘের খাঁচাই ফেলে দিলেই যেন স্বস্তি পেত। হঠাৎ সবচেয়ে ছোট্ট ভাইটার করুণ কান্না আর সহ্য হলোনা। হাতর সব ফলমূল ও রিপোর্ট গুলো পড়ে গেল। মেয়ের দিকে ফিরে তাকালো জাহানারা, ভাই গুলো ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো। অনিমা আর নিজেকে বোঝাতে পারলো না চোখ ফেঁটে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা অশ্রুর ফোটা গড়িয়ে পড়লো।

*********--********

লেখক পরিচিতি

কবি আখতারুল ইসলাম খোন্দকার ১৯৭৬ সালে রাজশাহী জেলা মোহনপুর থানার বিদিরপুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত সিরাজ উদ্দীন খোন্দকার এবং মাতা মোসাঃ আছিয়া খাতুন। ছোট বেলা থেকেই সাংবাদিকতা ও সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন। ১৯৯৫ সাল থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও ফিচার প্রকাশিত হয়। একক বই প্রকাশিত না হলেও দশটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কর্ম জীবনে লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি তে কর্মরত। এছাড়াও একজন সমাজসেবী হিসেবেও বিভিন্ন ভাবে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মানবতার সেবায় "আখতার ফাউন্ডেশন" নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলেছেন এবং অনান্য বেশ কিছু সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত আছেন। ই-মেইল akhtar.khandokar@gmail.com