শঙ্খনীল কারাগার
পরিচিতি:
হুমায়ূন আহমেদ
শঙ্খনীল কারাগার
নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস "শঙ্খনীল কারাগার"।উপন্যাসটির কাহিনী উত্তম পুরুষে বর্ণিত। গল্পকথক খোকার বর্ননায় একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সুস্পষ্ট ছায়াপাত ফুটে উঠেছে। ৮ টি পরিচ্ছেদে বর্ণিত এই উপন্যাসে নিম্নমধ্যবিত্তের জীবনকাহিনীর প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয়।
কাহিনী সংক্ষেপ:
উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যাবে যে, গল্পকথক খোকা রাতে বাড়ি ফেরার সময় দেখে, তার ছোট ভাই মন্টু নাপিতের টুলবক্সের পাশে জবুথুবু হয়ে বসে আছে। ছোট ভাই মন্টুকে নিয়ে বাসায় ফিরে জানতে পারে যে, ছোট রুনু আয়না ভেঙ্গে ফেলায় মা রুনুকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে।রাবেয়া জানায় যে, মায়ের প্রসববেদনা শুরু হওয়ায় মায়ের মন মেজাজ খারাপ। মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ওভারশীয়ার কাকুর বৌ ও ধাত্রী সুহাসিনী মাসিকে খবর পাঠানো হয়। সুহাসিনী মাসি এলেও অবস্থা সংকটাপন্ন হলে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কী একটা কাজে আটকে যাওয়ায় বাবার বাসায় ফিরতে দেরী হলো। হাসপাতালে রাত ভর প্রতিক্ষার পর সুসংবাদ এলো। রুনু-ঝুনুদের ফুটফুটে বোন হয়েছে। কিন্তু মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ফ্ল্যাশব্যাগে মায়ের স্মৃতিচারণ করা হয়। মা শিরীন সুলতানা যখন এম. এ পড়াশোনা করেন তখন তাদের বাবা মায়ের বাড়ীতে আশ্রিত ছিলেন। শিরীনের গানের গলা সুকন্ঠী হওয়ায় বাবা মাকে পছন্দ করেন। শিরীনকে বিয়ে করে এই কুঠীরে নিয়ে আসেন। শিরীন সুলতানা ২৩ বছরের সংসারটাকে আগলে রেখেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর রাবেয়া সংসারের সমস্ত কিছুর দেখাশোনা করে। ছোট বোন নিনুও বড় হয়েছে। রুনু-ঝুনু কলেজে উঠেছে। বাবার অবসর হয়। খোকা কলেজে শিক্ষকতা করে। রাবেয়া খোকার চেয়ে পাচ বছরের বড় হলেও সংসারের দেখাশোনার জন্য বিয়ে করে নি। এক পর্যায়ে খালাতো বোন কেটকীর প্রসঙ্গ আসে। ছোটবেলায় মজাচ্ছলে খোকাকে বিয়ে করবে বলেছিলো। খোকা বাড়ী ফেরে তালাবদ্ধ গেটে একটা চিরকুট পায়। সেখানে লেখা রাবেয়া রুনু-ঝুনুকে নিয়ে খালার বাসায় গেছে। খোকাকেও যেতে বলেছে। রুনু-ঝুনুর মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। গোপনে চিঠি লেখে। আচমকা একদিন মনসুরের বাবা খোকার বাবাকে রুনুর বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিয়ের ২-৩ আগে মনসুর খোকাকে সবুজ নামের ছেলের কথা জানায় রুনু যাকে চিঠি লিখতো। অবশেষে ঝুনুর সাথে মনসুরের বিয়ে হয়। কেটকীরা পাচ বছরের জন্য ম্যানিলা যাচ্ছে। কেটকীর প্রতি খোকার তীব্র আকর্ষণ থাকলেও সেটা গোপন রাখে। ঝুনুর বিয়ের পর রুনু কেমন যেন মনমরা হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে জ্বরের সাথে পাঞ্জার লড়ে ঝুনু এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুরো বাড়িটা শূন্যতায় খা খা করে। তিন বছর পর রাবেয়া ঝুনুকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে আসে। ঝুনুর একটা ছেলে হয়। মন্টু একটা পত্রিকা অফিসে সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করে। কবিতার বই প্রকাশ করে মন্টুর নাম ডাক হয়।ওদিকে শোনা যায় কেটকীর বিয়ে ঠিক হয়। রাবেয়া একদিন খোকাকে জানায়,সে দূরের কোনো স্কুলে শিক্ষকতা করবে। সেই স্কুলের হেডমাস্টার নিজে আসে রাবেয়াকে স্কুলে যোগদানের জন্য। হেডমাস্টার রাবেয়াকে সন্তানের মতো স্নেহ করেন। সবাই নিজ অবস্থানে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। রাবেয়া খোকাকে চিঠিতে লেখে---রাবেয়ার অনেক কথাই মনে পড়ে। রাবেয়া স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে বলে-বাবার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে আবিদ হোসেনের সাথে মায়ের বিয়ে হয়। একটা মেয়ের জন্ম হয়। সেই মেয়েটিই রাবেয়া। স্কুলের এক ছাত্রীকে দেখতে অবিকল ঝুনুর মতো। এভাবে সবার জীবনই যেন কারাগারের মতো বন্দী হয়ে যায়। এ যেন শঙ্খনীল কারাগার।
শঙ্খনীল কারাগার || সাবরিনা তাহ্সিন
একজন বই প্রেমিক। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের জন্য তার অন্যরকম ভালোলাগা ও ভালোবাসা। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই তিনি বই নিয়ে বসে যান। হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয় লেখক। বই পড়ার পাশাপাশি তিনি মনোমুগ্ধকর বইয়ের রিভিউ দিয়ে থাকেন।