বুক রিভিউ: পদ্মা নদীর মাঝি
বইয়ের নামঃ পদ্মা নদীর মাঝি
লেখকঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ধরণঃ চিরায়ত উপন্যাস
প্রকাশনীঃ আপন
পদ্মার বুকে ভেসে চলে কুবের মাঝির জীবন ।পদ্মা-ই যার আশ্রয় ,সে সাহসী না হয়ে যায় না।কুবের মাঝিও সাহসী।দারিদ্র্য, পঙ্গু স্ত্রী মালা,বিবাহযোগ্যা কন্যা গোপীর ভার নিয়েও কুবের জীবন যুদ্ধের সাহসী সৈনিক।
কৌশলীও বটে।গ্রামের প্রভাবশালী মহাজন হোসেন মিয়ার থেকে কত কোশলেই যে কুবের নিজেকে বাঁচিয়ে চলে।না চলেই বা উপায় কি তার?গরীব,বোকা,অসহায় লোকগুলোর মত হোসেনের ময়নাদ্বীপে নির্বাসিত না হতে চাইলে একটু সাহসী,একটু কৌশলী হতেই হয় কুবেরকে।কেননা জীবনযুদ্ধে জয়-পরাজয়ের একেবারে মিলনসীমান্তে যারা বাস করে,মিত্র তাদের কেউ নেই।
অভাবক্লিষ্ট দরিদ্র কুবেরের মধ্যেও স্বাভাবিক দোষগুণ,কামনা-বাসনা লক্ষ্য করা যায়।অভাবের কাছে কুবেরের ন্যায়নীতি,ধর্ম হার মানে।হোসেন মিয়াকে ফাঁকি দিয়ে সে টাকা চুরি করে।হয়ত দু’আনার বেশি ফাঁকি দেবার সাহস নেই বলেই হোসেন মিয়া তাকে বিশ্বাস করে।শুধু সাহসের অভাবে নয়,দু’আনার বেলায় কুবেরের যে বিবেক চুপ করে থাকে ,পাঁচ টাকার বেলায় তাই গর্জন করে উঠে।
এভাবেই রাসু,ধনঞ্জয়,পীতম মাঝি,গনেশকে নিয়ে জেলেপাড়ায় তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার গল্প এগোতে থাকে।
কিন্তু কুবেরের মনে অচেনা রহস্যময় ভালোবাসা ঝাপটা দেয় হঠাৎ হঠাৎ।মালার বোন কপিলার হাসি তাকে দিশেহারা করে।অন্ধকারে যে বাস করে,মৃদু আলোতে তার চোখ ঝলসিয়ে যায়,চোখ ঝলসানো আলোতে সে হয় অন্ধ।কপিলার দুরন্তপনা,তার মধ্যে থাকা চিরন্তন ছলনাময়ী নারী কুবেরকে করেছে আকৃষ্ট,তার একঘেয়ে জীবনে এনেছে বৈচিত্রের জোয়ার।এই সাহসী কুবের-ই আবার বড্ড ভীরু।
সমাজ ভেঙ্গে অজানা ভালবাসার দিকে হাত বাড়াতে সাহস হয় না কুবের মাঝির।কপিলা যখন কুবেরকে বলে-আমারে নিবা মাঝি লগে?তখন কপিলার সেই আহ্বানকে বরণ করার সাহস হয় না কুবেরের।আবার সেই কুবের-ই যেন বড্ড বোকা।গ্রামের হিংসাত্বক কূটকাঁচালে ফেঁসে কি করে যে তাকে ময়নাদ্বীপের জালে জড়াতে হয়,সে ধরতে পারে না।
কপিলার মাঝি তাকে ধরে রাখে কিনা,তাকে নিয়ে ময়নাদ্বীপের পথে পাড়ি দেয় কিনা তা জানতে ডুব দিতে হয় পদ্মা পাঁড়ের মানুষগুলোর সরল কিন্তু অজানা জীবনের গভীরে। অনুভব করতে হয় প্রতিটা চরিত্রকে।
এ গল্প কুবেরের লড়াইয়ের গল্প,এ গল্প হতদরিদ্র পদ্মানদীর মাঝির প্রতিদিনের গল্প।এ গল্প শুধু কেতুপুরে সীমাবদ্ধ থাকে না।পদ্মা নদী পেরিয়ে,দেশ ও জাতির গণ্ডি পেরিয়ে এ গল্প ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে যারা জীবন সংগ্রামের একেকজন সৈনিক ।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বস্তুবাদীটা,মার্ক্সবাদী মনোভাব আর ফ্রয়েডীয় দর্শনের সার্থক রূপান্তরের আরেক নাম ‘পদ্মানদীর মাঝি’ ।
“ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে,এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না ” -যেন জাদুকরী একটা লাইন।
বুক রিভিউ:পদ্মা নদীর মাঝি || বিজিত্রা তাসনুভা ঊষা
বিজিত্রা তাসনুভা ঊষা হলিক্রস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।