অজ্ঞাতনামা-Movie review
চলচ্চিত্র: অজ্ঞাতনামা (THE UNNAMED)
ধরণ : জীবনধর্মী
রচনা ও পরিচালনা: তৌকির আহমেদ
প্রযোজনা: ফরিদুর রেজা সাগর ও ইবনে হাসান খান
পরিবেশক: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম
দেশ: বাংলাদেশ
ভাষা : বাংলা
দৈর্ঘ্য: ১০০ মিনিট
শ্রেষ্ঠাংশে: ফজলুর রহমান বাবু, মোশাররফ করিম, শহীদুজ্জামান সেলিম, আবুল হায়াত, নিপুণ আক্তার, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ।
মুক্তি: ১৯ আগস্ট, ২০১৬
আইএমডিবি রেটিং: ৯/১০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৯.৫/১০
কাহিনিসংক্ষেপ: সুবগাছা গ্রামের আছিরউদ্দিন প্রামাণিক রমজান দালালের সহায়তায় ভাগ্যন্নোয়নের লক্ষ্যে নাম,পরিচয় গোপন করে একই গ্রামের শেখ আব্দুল ওয়াহাবের পাসপোর্টে মধ্যপ্রাচ্যে গমন করে। শেখ আব্দুল ওয়াহাব থাকে ইতালিতে। রমজান দালাল এইভাবে গ্রামের অনেককেই অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাঠায়। অনেককে আশা দিয়ে রাখে যেমন বিউটি নামের এক বিধবাও রমজান দালালের মাধ্যমে বিদেশে যেয়ে নিজের পোড়াকপাল পরিবর্তনের আশা নিয়ে দিনযাপন করে। বিদেশে কর্মরত আছিরের দীর্ঘদিন যাবত কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। তার পরিবার এই নিয়ে উদ্বিগ্ন।এরই মধ্যে কালুখালী থানার ওসি কুদ্দুস বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ফোন পায় যে, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শেখ আব্দুল ওয়াহাব এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তার লাশ বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। তার পরিবারকে যেন খবরটা জানানো হয় এবং লাশটি সংগ্রহ করা হয়। ওসি কু্দ্দুস তার দল ফরহাদ এবং আরো দুজনকে নিয়ে বৃষ্টির রাতে সুবগাছার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তবে সেখানে ঘটে বিপত্তি। শেখ আব্দুল ওয়াহাবের পিতা জানায় তার ছেলে বেঁচে আছে এবং সে মধ্যপ্রাচ্যে না ইতালিতে থাকে। এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা ওয়াহাবের সাথে কথা বলে পাসপোর্ট সংক্রান্ত ব্যাপারটি জানতে পারে এবং রমজান দালালকে ধরে আনে।এরপর তারা নিশ্চিত হয় যে, লাশটি ওয়াহাবের নয়, আছিরের এবং আছিরের বাড়িতে গিয়ে দুঃসংবাদটি জানায়। খবর শোনার পর আছিরের পিতা, কেফায়েত উদ্দিন প্রামাণিকের যেন মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না। সে হতভম্বের মত শুধু চেয়ে থাকে।এরপর পদে পদে নানা জটিলতা অতিক্রম করে লাশ যখন বাড়িতে আনা হয় তখন লাশ গোসলের সময় আবিষ্কৃত হয় যে, লাশটি আছিরের না। লাশটি এমন কারো যে বাংলাদেশী না৷ শুরু হয় অজ্ঞাতনামা সেই লাশ নিয়ে নতুন বিপত্তি। লাশটি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বারডেম হাসপাতাল এবং সবশেষে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু কেউই দায়িত্ব নিতে চায় না। লাশের কোনো সুরাহা হয় না। এদিকে লাশ পঁচে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে।এভাবে কাহিনি এগিয়ে যেতে থাকে। লাশটি কার? লাশটির কি কোনো সুরাহা হয়েছিল জানতে হলে দেখতে হবে অজ্ঞাতনামা।
প্রতিক্রিয়া: প্রবাসীরা নিজেদের ভাগ্যন্নোয়নের লক্ষ্যে, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে শত কষ্ট, প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিদেশে পাড়ি জমায়। সেখানে যেয়ে তারা যে খুব ভালো থাকে তা নয়। অনেককেই করতে হয় অমানুষিক পরিশ্রম। অনেকেই হয় মালিকের অত্যাচারের শিকার। এসব বেশিরভাগ হয় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে।দালালেরা নিজ স্বার্থের জন্য সরল স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোর সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। বিদেশ বিভূঁইয়ে প্রবাসীদের উপর অত্যাচারের চিত্র নতুন নয়৷ তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেও অনেক সময় সাহায্য পায় না। হতভাগ্য অবহেলিত মানুষগুলো যারা দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় অবদান রাখে বিদেশে কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলেও তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। লাশটি হয় চরম অবহেলার শিকার। রাষ্ট্র কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা সবদিক থেকে নিঃস্ব পরিবারটিকেই যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়।পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। প্রবাসী এই হতভাগ্য মানুষগুলোর মর্মস্পর্শী গল্প বলে এই চলচ্চিত্র। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ব্যক্তিদের দুর্নীতি, ঘুষ আদান-প্রদানের চিত্রও সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এই চলচ্চিত্রে।এছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম,দায়িত্ব থেকে গা ঝাড়া মনোভাব ফুটে উঠেছে। সবশেষে মর্মান্তিক কাহিনির আড়ালে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ও সচেতনতামূলক শিক্ষা। সে শিক্ষার মধ্যে একটি হলো দালালের মাধ্যমে নয়,বৈধ পন্থায় বিদেশে গমন করা এবং আরেকটি না হয় আপনারা চলচ্চিত্রটি দেখে বুঝে নিয়েন। একঘেয়ে প্রেম পিরীতির গল্প বাদ দিয়ে একটি অন্যরকম গল্প দেখে খুবই ভালো লেগেছে। গল্প বলার ধরণ, সিনেমাটোগ্রাফি,পরিচালনা ইত্যাদি সবকিছুই খুব সুন্দর ছিল শুধু মনে হয়েছে চলচ্চিত্রের গানের ব্যাপারে আরেকটু মনোযোগী হলে ভালো হত। এই চলচ্চিত্রে কিছু বাঘা বাঘা অভিনেতা অভিনেত্রী ছিল এবং সবার অভিনয় অসাধারণ ছিল। সবার অভিনয় এত ন্যাচারাল ছিল যেন মনেই হচ্ছিল না এটা অভিনয়। সকল চরিত্রের মধ্যে কেফায়েতউদ্দিন প্রামাণিক (ফজলুর রহমান বাবু) এবং রমজান দালাল (শহীদুজ্জামান সেলিম) এই দুটি চরিত্র অভিনয়ের মুন্সিয়ানায় অনবদ্য ছিল।
পুরস্কার ও সম্মাননা: ২০১৬ সালের ১৭ মে ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাণিজ্যিক শাখায় প্রদর্শিত হয়।এছাড়া চলচ্চিত্রটি "ইতালির গালফ অফ ন্যাপলস ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে" ২১ মে প্রদর্শিত হয় এবং জুরি স্পেশাল মেনশন পুরস্কার অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি ৮৯তম একাডেমি পুরস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগের মনোনয়নের জন্য বাংলাদেশ থেকে নিবেদন করা হয়।এটি ৪১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, খলচরিত্রে অভিনেতা ও কাহিনিকার মোট ৩টি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।
সবশেষে এটাই বলবো, সেরা বাংলা চলচ্চিত্রের তালিকা করলে নিঃসন্দেহে অজ্ঞাতনামা উপরের দিকে থাকবে। অজ্ঞাতনামা দেখুন এবং প্রবাসীদের বেদনাময় জীবনের একটি অধ্যায় জানুন।
অজ্ঞাতনামা-Movie review || Halima Akter Tanny
Halima Akter Tanny is studying at Khulna University in Business Administration Discipline. She's a student of Honor's 4th year. Her passion is reading, writting. Specially, she likes to write reviews about books & movies. She's achieved 1st/2nd/3rd position in several review competitions.
অজ্ঞাতনামা-Movie review || Halima Akter Tanny
Halima Akter Tanny is studying at Khulna University in Business Administration Discipline. She's a student of Honor's 4th year. Her passion is reading, writting. Specially, she likes to write reviews about books & movies. She's achieved 1st/2nd/3rd position in several review competitions.