Economy

নেসলে কোম্পানি কিভাবে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করলো?

Written by: Farhan Ishrak Fahim

24-08-2023

নেসলে কোম্পানি কিভাবে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করলো?

আজ আমরা নেসলের ইতিহাস এবং তাদের বেড়ে ওঠার কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করব।


ইতিহাস

যখন শিল্পায়ন শুরু হয় তখন অনেক শিশু মায়ের বুকের দুধের অভাবে মারা যাচ্ছিল। সাধারনত, শিশুর জম্মের প্রথম ছয় মাস বুকের দুধ ব্যতীত অন্য কিছু খাওয়াতে নেই।

ঠিক তখনই হেনরি নেসলে ১৮৬৭ সালে নতুন এক পণ্য তৈরি করেন। তিনি এটি বুকের দুধের বিকল্প নিয়ে আসেন। তবে, তারা কখনই বলে নাই যে বুকের দুধের গুরুত্ব নেই। অবশ্যই আছে। কিন্তু, যারা এর যোগান দিতে পারছে না তারা নেসলের এটি ব্যবহার করতে পারে।

তবে, তারা এই পণ্য তৈরি করে বসে থাকে নাই। তারা আরও বিভিন্ন পণ্যে মনোযোগ দিয়েছে। তারা কফি, চকলেট, নুডুলসসহ নানা পণ্য তৈরি করে ও বিক্রয় করে।

তাদের সে সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছিল। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে Anglo-swiss Condensed Milk. তারাও দুধ বিক্রয় করে। তবে, ১৯০৫ সালে দুইটি প্রতিষ্ঠান একসাথে মিলে কাজ শুরু করে। তখনই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশে তাদের ব্যবসা প্রসার ঘটে।

কিছুদিন তাদের ভালই চলছিল। কিন্তু, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের খারাপ সময় চলে আসে। তখন তাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়। যদিও সুইজারল্যান্ড যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নাই, তারপরও তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঝুকিতে পরে যায়। তবে, সরকারের সহযোগিতায় নেসলে এই খারাপ সময় পার করতে পারে। যখন যুদ্ধ শেষ হয় ততদিনে দেখা যায় যে তাদের পণ্যের বিক্রয় আবার বেড়ে গেছে। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে সক্ষম হয়।

এমন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে তারা কেলীয়েট, পিটার এবং কোলার সুইস চকলেট প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। তখন, তারা চকলেট বানানো শুরু করে। আজ যে Kit Cat চকলেট বাচ্চা থেকে যুবসমাজ পছন্দ করে, তা তাদের তৈরি করা চকলেট।

নেসলে ১৯৩৮ সালে নেশকেফে কফি নিয়ে আসে। তার পরের বছর দিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের কাছে কফি বিক্রয় করা শুরু করে। ফলে, এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে।

প্রতিবারই দেখা যায় যে যুদ্ধের পর নেসলের লাভের খাতা হুড়হুর করে বেড়ে যায়। তারা ১৯৪৭ সালে মেগিকে কিনে নেয়। হ্যা, সে মেগী যেটা আপনি আপনার বাচ্চার টিফিনে দেন। তারা যে শুধু নুডুলস বিক্রয় করে তাই নয়। এর পাশাপাশি তারা স্যুপ, সস ইত্যাদি বিক্রয় করে।

তারা প্রতিষ্ঠান কেনার মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখে নাই। নিজেরাও কিছু বানিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নেসকুইক। তারা এটি ১৯৪৮ সালে নিয়ে আসে। এটি এমন এক ধরনের চকলেট পাউডার যা দুধের সাথে মিশে তাকে চকলেট দুধ বানিয়ে ফেলে।

আপনার কি মনে হয় যে নেসলে শুধু খাবারের শিল্পে আটকে ছিল? মোটেই না। তারা পরবর্তীতে অন্যান্য শিল্পে কাজ করেছে। যেমন: কসমেটিক ও ওষুধ শিল্প ইত্যাদি। তারা এলোড়িয়েল নামে এক কসমেটিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিংয়েছিল। তারা এলকন ল্যবরেটরিরও শেয়ার কিংয়েছিল। এটি একটি ওষুধ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান।

এভাবে, তারা ১৯০ টির বেশি দেশে বিভিন্ন শিল্পে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।  বাংলাদেশেও তাদের প্রতিষ্ঠান আছে। তারা ১৯৯২ সালে এদেশে কার্যক্রম শুরু করে। তাদের বিভিন্ন পণ্য যেমন: কিট ক্যাট, মেগী, নেসক্যাফে ইত্যাদি পণ্যের মাধ্যমে দেশে তাদের রমরমা ব্যবসা চলছে।

নেসলের বেড়ে ওঠার কৌশল

এখন আমরা এর বেড়ে ওঠার কৌশল নিয়ে আলোচনা করব। আমরা ইতিপূর্বে এর কিছু কৌশল আলোচনা করেছি। তারা ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য যেমন নতুন পণ্য নিয়ে আসার চেষ্টা করে, তার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিনে নেয় অথবা তাদের সাথে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।

তারা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে। যেমন: তাদের যাত্রা শুরু হয় ফারিন ল্যকটিন দিয়ে। শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য নিয়ে আশা হয়। আবার অন্যদিকে, মায়েরা যাতে কম সময়ের মধ্যে বাচ্চাদেরকে খাবার দিতে পারে সেজন্য নিয়ে আশা হয় মেগী নুডুলস। যদিও অবশ্য এটি তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ছিল না। তারা এটি কিনে নিয়েছিল।

নেসলে এলাকা অনুযায়ী তাদের পণ্য তৈরি করার প্রক্রিয়া ও মার্কেটিং কৌশল পরিবর্তন করে থাকে। যেখানে যে পণ্যের কাচামাল বেশি পাওয়া যায়, সেখানে সে পণ্য বেশি বিক্রয় করার চেষ্টা করে। এমনকি, তারা এলাকাভেদে ভিন্ন ভিন্ন মার্কেটিং কৌশল প্রয়োগ করে।

যেমন: তারা নাইজেরিয়াতে টিভি বিজ্ঞাপন দেখায় না। বরং, বিভিন্ন গায়ককে বিভিন্ন এলাকায় পাঠায়। তারা মানুষকে বিনোদন দিত ও পাশাপাশি পণ্যের প্রচার করত।

অন্যদিকে, সিরিয়ায় টমেটো ও গমের উৎপাদন বেশি হয়। তাই, নেসলে সেখানে নুডুলস বিক্রয় করে। কারণ, এর উৎপাদন খরচ সেখানে অন্যান্য পণ্যের চেয়ে কম। তাই, তারা এটি সেখানে বেশি বিক্রয় করে।

কথায় আছে, এক বাক্সে সব ডিম রাখা যাবে না। নেসলে ঠিক এটি করেছে। তারা বিভিন্ন শিল্পে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য পণ্য বিক্রয় করে। তারা যেমন বাচ্চাদের জন্য সেরালেক বিক্রয় করে, ঠিক তেমনি বড়দের জন্য কফি, চকলেট ইত্যাদি বিক্রয় করে। এমনকি তারা পোষা প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন পণ্য যেমন: পোষা প্রাণীদের খাবার সংক্রান্ত পণ্য বিক্রয় করে।

তারা জানে কোন ধরনের মানুষ কি ধরনের পণ্য পছন্দ করে। সে অনুযায়ী তারা প্রচারণা চালিয়ে থাকে। এমনকি, তারা বিভিন্ন বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে তাদের প্রচারণার জন্য ব্যবহার করে।

নেসলে পণ্যের প্রচারণার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। যেমন: এক সময় মেগী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করত। এছাড়াও, আরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।

আজকের যুগ প্রযুক্তির যুগ। তাই, এখন ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া প্রতিষ্ঠানের গতি নেই। নেসলে এটি ভালোভাবে জানে। তাই, তারা সোসাল মিডিয়াতে প্রচারণা চালিয়ে থাকে।

এভাবে নেসলে আজ কোটি টাকার রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ফোর্বসের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা এপর্যন্ত ৯.৭ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছে।


আশা করি, আমাদের আজকের ভিডিও আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের পরবর্তী ভিডিও পেতে আমাদের Facebook, Linkedin পেজ ও Youtube চ্যানেলে নজর রাখুন। এর পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট mawbiz.com.bd এর BizHub সেকশনে নজর রাখুন।


References

1. History of Nestlé

2. The History of Nestlé

3. 10 Key Takeaways from the Nestle Marketing Strategy

4. নেসলে - কত বড়? | How Big is Nestle

5. কোটি টাকার Marketing Strategies!

6. Nestlé Financial Summary

7. Nestle's Marketing Strategies: Building Trust, Boosting Sales

8. Case Study: Nestle’s Growth Strategy

 

Previous Post

Next Post

Related Posts

যেভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান কে বিদেশী বিনিয়োগের উপযোগী করে...

16-10-2024

Economy

যেভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান কে বিদেশী বিনিয়োগের উপযোগী করে...

ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা...

Read More
বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট নিরসন হবে কিভাবে?

28-08-2024

Economy

বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট নিরসন হবে কিভাবে?

গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে...

Read More
মুদ্রাস্ফীতির একাল সেকাল

23-05-2024

Economy

মুদ্রাস্ফীতির একাল সেকাল

বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter