আমাদের সবসময় বিভিন্ন কারণে দলের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। একজন নেতা যদি সঠিকভাবে যোগাযোগ না করতে পারেন তাহলে কর্মপরিবেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া, ভাল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের সকলের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে।

যদি দলের সাথে যথাযথ যোগাযোগ না করা হয় তাহলে তারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য না বুঝতে পারে। এতে কাজ করা কষ্টকর হয়ে যেতে পারে। একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতার পিছনে ভাল যোগাযোগের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

এই ব্লগে একজন নেতা তার দলের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবেন ও কোন কোন ভুল এড়িয়ে যাবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাড়তি উপহার হিসেবে আছে কর্মস্থলে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি লাভের উপায়।

সঠিক যোগাযোগ করার সুফল

একটি প্রতিষ্ঠানে নেতা হতে গেলে তাকে অবশ্যই যথাযথ ভাবে তার দলের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। দিনশেষে এটি দল ও নেতার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। ফলে, প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্যে পৌছাতে পারে ও লাভবান হয়। একটি প্রতিষ্ঠানে নেতার কেন তার সদস্যের সাথে ভালভাবে যোগাযোগ করতে হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হল:

• আগেই যেমনটা বলেছি যে উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা নেতা ও দলের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে।
• দলের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি কম হয়।
• দলের প্রত্যেকে দলের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ করে।
• যেহেতু প্রত্যেকে উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা অন্তরে লালন করে, ফলে প্রত্যেকের কাজের মাঝে সমন্বয় বজায় থাকে।
• যথাযথ যোগাযোগ রক্ষা করা গেলে কাজের মধ্যে ভুল কম হয়।
• দলের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
• প্রতিষ্ঠানে সৃজনশীলতা উৎসাহিত হয়।
• নতুন নতুন কর্মপন্থা উদ্ভাবিত হয় যা সময় ও খরচ সাশ্রয় করতে পারে।
• দলের নেতা অন্যদের সাথে কথা বলে, তাদের মতামত গ্রহণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

যোগাযোগের যে ভুল এড়িয়ে যেতে হবে

একজন নেতা প্রতিষ্ঠানে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানে সঠিক যোগাযোগ দক্ষতা প্রয়োগ করা উচিত। যদি তিনি সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে না পারেন, তাহলে তার দলের সাথে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আগে আলোচনা করা যাক আমরা কি ভুল করি যা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। যেমন:

• আমরা অনেক সময় সকলের সাথে একভাবে যোগাযোগ করি। এটা না করে যিনি যেভাবে যোগাযোগ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তার সাথে সেভাবে যোগাযোগ করতে হবে।
• আমরা অনেক সময় নিজে যা ভাবি সেটা সঠিক মনে করি। এরকম মনোভাব এড়িয়ে চলতে হবে।
• সবসময় দলের কাছে থেকে সমালোচনা গ্রহণ করতে হবে।
• তারা কি পছন্দ করছে, কি করছে না বা আমার কি ভুল হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করতে হবে।
• যেমন তেমনভাবে নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে দলের সদস্যগণের সাথে আলোচনা করতে হবে।
• যে কোন সময় যে কোন কিছু বলা যাবে না।
• পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে।
• দুর্বোধ্য ভাষা পরিহার করতে হবে।
• সহজ ভাষায় কথা বলতে হবে।
• পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
• অন্যের কথা শুনতে হবে।
• সকল প্রকার যোগাযোগের পিছনে কোন না কোন কারণ থাকতে হবে।
• অকারণে কথা বলা যাবে না।

দলের সাথে সঠিক যোগাযোগ পন্থা

এখন কথা বলা যাক একজন নেতার তার দলের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা উচিত। এর ব্যত্যয় ঘটলে তিনি তার দলকে তার লক্ষ্য ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হতে পারেন। যেমন:

• অল্প কথায় তার উদ্দেশ্য বা নির্দেশ তার দলকে জানাতে হবে।
• কোন কিছু বলার পর নিশ্চিত হতে হবে অন্যজন তা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে কিনা।
• তাদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
• তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
• Emotionally intelligent হতে হবে।
• পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে।
• মনোযোগের সাথে কথা শুনতে হবে।
• প্রশংসা করতে হবে।
• একাধিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে।
• সকলের সাথে একরকম যোগাযোগ না করে পদবী, সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী যোগাযোগ করতে হবে।
• আপনার বার্তা যাতে সকলের কাছে সহজবোধ্য হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
• যোগাযোগ করার সময় ইতিবাচক মনমানসিকতা নিয়ে কথা বলতে হবে।
• কথা বলার সময় সতর্কতার সাথে শব্দচয়ন নির্বাচন করতে হবে।
• কোন কাজের সমালোচনা করার সময় অন্য কোন গুণের প্রশংসা করে কাজের সমালোচনা করতে হবে।
• সমালোচনা করার পর আবার উৎসাহিত করতে হবে।
• সমালোচনা করার সময় ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করতে হবে।
• অন্যদিকে, প্রশংসা করার সময় সবার সামনে করা উচিত।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যুক্তি নাকি আবেগ?

আমাদের অন্যকে কোন দায়িত্ব অর্পণ করার সময় এটা বুঝাতে হয় যে কাজটি কেন গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি, আমরা প্রতিষ্ঠানে কোন পরিবর্তন আনতে গেলেও নানা বাধার সম্মুখীন হই। যদি আমি এটা পরিষ্কার ব্যাখ্যা করতে পারি যে আমি যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তা প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন উপকারী তাহলে সে পরিবর্তন নিয়ে আশা সহজ হয়ে যায়।

এটা যেমন যুক্তি দিয়ে করতে হয় আবার অনেক সময় আবেগপূর্ণ কথাবার্তা বলতে হয়। যেমন: কোন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করতে হলে এর উপকারিতা- অপকারীতা ব্যাখ্যা করা জরুরী। তাহলে, মালিকপক্ষ ও সাধারণ কর্মচারী উভয়ে সে প্রযুক্তি সাদরে গ্রহণ করে।

আবার, অনেক সময় আবেগী কথাবার্তা বলতে হয়। যেমন: আমরা কোন একটি কাজ করতে চাচ্ছি। কিন্তু, পর্যাপ্ত পরিমাণে যন্ত্রপাতি নেই। অনেকে কাজে অনীহা বোধ করছে। তখন, আমরা আবেগী বক্তব্য দিয়ে দলের সদস্যকে অনুপ্রাণিত করতে পারি। ফলে, তিনি যে যন্ত্রপাতি আছে তা নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজে ঝাপিয়ে পরে।

দুশ্চিন্তা এড়ানোর উপায়

আমরা অনেক সময় কাজের মাঝে বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তায় পরি। তবে, এটি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। তাহলে সফলতার সাথে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারব। আমরা নিম্নোক্ত উপায়ে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি:

• যা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব তা নিয়ন্ত্রণ বা ভিন্নভাবে করার চেষ্টা করব।
• যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করব না।
• অন্যের সাথে আলোচনা করলে সহজে সমাধান পাওয়া যায়।
• আপনি মুসলমান হলে অজু করতে পারেন।
• কোন কাজের কারণে দুশ্চিন্তা অনুভূত হলে কাজ থামিয়ে দিন।
• কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নিন।
• আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
• বিরতি নেয়ার পর পুনরায় আবার কাজ শুরু করুন।
• নিয়মিত ফলমূল খেতে হবে।
• পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।

আশা করি, আমাদের আজকের ব্লগ আপনাদের ভাল লেগেছে। আমাদের পরবর্তী ব্লগ পেতে Newsletter subscribe করুন। এছাড়া নজর রাখতে পারেন mawbiz.com.bdএর ব্লগ সেকশনে।

Tareq Ahmed কে আন্তরিক ধন্যবাদ!