অনেক সময় আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ সুখকর হয় না। কর্মীদের সহায়তা ও তাদের মানসিকতা উন্নয়নে অনেক প্রতিষ্ঠান অবহেলা করে থাকে। তবে, একজন সাংগঠনিক নেতা পারেন কর্মীদের সহায়তা প্রদান ও মানসিকতার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সফলতা নিয়ে আসতে পারেন। এই ব্লগে আলোচনা করা এক উত্তম সাংগঠনিক নেতার রূপ, বৈশিষ্ট্য ও তার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

সাংগঠনিক নেতা কি?

সাংগঠনিক নেতা হচ্ছেন এমন ব্যক্তি যার দলের সবাইকে নিয়ে একটি স্বপ্ন থাকবে, এই স্বপ্ন দলের মধ্যে সবাইকে জানাতে হবে, সবাইকে  উৎসাহিত করবে যে লক্ষ্যটি পূর্ণ করা সম্ভব এবং তিনি সবাইকে অনুপ্রাণিত করবেন। তিনি সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন। তিনি তার দলের সদস্যগণের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করবেন।

যদি আমি একটি  সংগঠনের নেতা হতে চাই তাহলে আমাকে অবশ্যই দলের সদস্যদের কথা শুনতে হবে। তাদের চাহিদা বুঝতে হবে। তাহলে, আমি অতি সহজে তাদেরকে অতি সহজে অনুপ্রাণিত ও উৎশাহিত করতে পারব, তাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে পারব এবং দলের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।

নেতৃত্বের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

যিনি নেতা হন তার মধ্যে পাঁচটি উপাদান থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি না থাকলে তিনি সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। যেমন:

১. তিনি ভাল যোগাযোগ দক্ষতার অধিকারী হন।

২. নিজেকে ও দলের অন্যদের জানতে হবে।

৩. কৌশলের সাথে দল পরিচালিত করতে হবে।

৪. নেতৃত্বের গুণ সর্বদা চর্চা করতে হবে।

৫. সর্বদা সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে।

ভাল সাংগঠনিক নেতার বৈশিষ্ট্য

একজন ভাল সাংগঠনিক নেতার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন:

• একজন নেতা অন্যের জন্য কাজ করেন।
• তিনি সবসময় চেষ্টা করেন যাতে দলের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
• তিনি দলকে স্বপ্ন দেখান।
• তিনি সবাইকে নিয়ে কোন কার্য সম্পাদন করেন।
• তিনি দলের প্রশংসা করে থাকেন।
• দলের ভুলের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন।
• তিনি জানেন কোন পথে কাজ করলে সফল হওয়া যাবে।
• তিনি অন্যকে পথ প্রদর্শন করেন।
• তিনি সৎ হন।
• তিনি তার দায়িত্বের কিছু অংশ দলের কোন এক সদস্যকে অর্পণ করেন যাতে তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হয়।
• সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।

সাংগঠনিক নেতার রূপ

সাংগঠনিক নেতার বেশ কয়েকটি রূপ আছে। এটি আট ভাগে বিভক্ত। যথা:

1. Servant leader: Servant leader নিজেকে নেতা মনে না করে সেবক মনে করেন। তিনি একদিকে নিজে কাজ করেন। অন্যদিকে, তার অনুসারিগণকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
2. Visionary leader: Visionary leader একটি স্বপ্ন লালন করেন। তিনি তাঁর অনুসারিগণকে সে স্বপ্ন দ্বারা অনুপ্রাণিত করেন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেন।
3. Democratic leader: Democratic leader যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় সকলের মতামত গ্রহণ করেন। তারপর, সে মত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
4. Coaching leader: Coaching leader তার অনুসারীগণের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করেন। তিনি তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেন। কেউ কোন কাজে ভুল করলে তাকে শাস্তি না দিয়ে তার ভুল শুধড়ানোর সুযোগ দেন। ফলে, সকলে তার দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ লাভ করে।
5. Transactional leader: Transactional leader এমন নেতা যিনি কাজের গুণ অনুযায়ী তার অনুসারিগণের প্রতি আচরণ নির্ভর করে। যদি তারা কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করে তাহলে পুরস্কৃত হয়। আর, কাজে ব্যর্থ হলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়।
6. Transformational leader: Transformational leader তার অনুসারীগণকে বিভিন্ন কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। তারা এমন অনুপ্রাণিত হয় যে তারা তাদের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কাজ করেন।
7. Bureaucratic leader: Bureaucratic leader সাধারনত প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের নিয়মের বাইরে কোন কাজ করেন না। তিনি কোন প্রকার ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন না।
8. Mindful leader: Mindful leader সাধারনত বর্তমান নিয়ে কাজ করেন। এরা অতীতে কি ঘটেছিল অথবা ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা নিয়ে চিন্তা করেন না। বর্তমানে যে কাজ করছেন সে কাজে মনোযোগ দেন।

মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা

যদি কেউ নেতা হতে চান তাহলে তাকে অবশ্যই মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তিনি নিম্নলিখিত কৌশল অবলম্বন করে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেন:

• বিভিন্ন আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা।
• বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা।
• বিভিন্ন কার্য সম্পন্ন করার জন্য সৃজনশীল প্রক্রিয়া অবলম্বন করা।
• সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা না করে সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা।
• তিনি কাজে নতুনত্ব নিয়ে আসেন।
• নিজে যা বিশ্বাস করে তা করে ও অন্যকে করার উপদেশ দেয়।
• অন্যকে যা করতে বলে তা সে নিজেও করে।
• সর্বদা সত্য কথা বলে।
• সর্বদা ইতিবাচক মনোভাব থাকতে হবে।
• অন্যের কথা শুনতে হবে।
• অন্যের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে।
• মানুষকে সহযোগিতা করার মানসিকতা থাকতে হবে।
• নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত রেখে যেতে হবে।
• কাজের প্রশংসা করতে হবে।
• কেউ কাজে ব্যর্থ হলে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।

নেতৃত্বের পদক্ষেপ

একটি প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব প্রদানে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। যেমন:

• প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
• এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
• প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে দলের জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
• দলের লক্ষ্য নির্ধারন করার পর দলের সদস্যের সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে।
• লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনা সঠিকভাবে দলের কাছে তুলে ধরতে হবে।
• কে কোন কাজ করবে, কেন করবে, কখন করবে, কোথায় করবে, কিভাবে করবে ইত্যাদি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে হবে।
• কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা তা তত্তাবধায়ন করতে হবে।
• কেউ কাজে ব্যর্থ হলে তাকে তার ভুল চিহ্নিত করে সে ভুল শুধড়িয়ে কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে।
• নতুন কাজ নেতা নিজে করে দলের অন্যান্য সদস্য কে শেখাবে।
• সর্বদা দলকে সহযোগিতা করতে হবে।

আশা করি, আমাদের আজকের ব্লগ আপনাদের ভাল লেগেছে। আমাদের পরবর্তী ব্লগ পেতে Newsletter subscribe করুন। এর পাশাপাশি mawbiz.com.bd এর ব্লগ সেকশনে নজর রাখুন।


Tareq Ahmed কে আন্তরিক ধন্যবাদ!