নেতৃত্ব আমাদের জীবনের একটি গুণ। এটি ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা অনেক সময় মনে করি যে আমরা অন্যকে নেতৃত্ব দিব।

কিন্তু, আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে আপনি নিজেকে নেতৃত্ব দিতে পারেন? হ্যা, ঠিক শুনেছেন। নিজের জীবনের হাল ধরার জন্য নিজেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। এই ব্লগে নেতৃত্ব কি, নিজে কিভাবে নিজের নেতা হওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

নেতৃত্ব কি?

প্রথমে জানা যাক নেতৃত্ব বলতে কি বুঝানো হয়। নেতৃত্ব হচ্ছে এমন গুণ যার মাধ্যমে তার দলের সদস্যকে কোন কাজের জন্য দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। সে শুধু নির্দেশনা দিয়ে বসে থাকে না। তার পাশাপাশি তাদেরকে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করে যাতে তারা পূর্ণ উদ্যমে কার্য সম্পাদন করে।

এটি মাঝেমধ্যে অনেকের ক্ষেত্রে পদবী হতে পারে। তবে, পদবির চেয়ে এটি একটি গুণ যা যে কারোর মাঝে থাকতে পারে। এটি সে সৃষ্টিগতভাবে পেয়ে থাকে অথবা বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে গিয়ে আয়ত্ত্ব করে।

একজন ব্যক্তি সমাজের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানের নেতা হতে পারেন। যেমন: সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। তিনি তার অনুসারিগণকে একটি পরিষ্কার দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও যন্ত্রপাতি দিয়ে থাকেন।

নেতৃত্বের বিভিন্ন তত্ত্ব

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নেতৃত্বের তত্ব দিয়েছেন। তার মধ্যে কিছু তত্ত্ব নিচে আলোচনা করা হল:

• The Great Man Theory: The Great man Theory’র মূল বক্তব্য হচ্ছে মানুষ জন্মগতভাবে নেতৃত্বের গুণ পেয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে সে গুণ বিকাশ লাভ করে। প্রাচীন গ্রিসে এর গবেষণা হয়। তাদের মতে এই গুণ অর্জন করা যায় না। এটি মানুষ  জন্মগতভাবে লাভ করেন। যিনি নেতা হন তার মধ্যে কিছু গুণ দেখা যায়। যেমন: অন্যদের চেয়ে লম্বা হতে হবে, শক্তিশালী হবে, সে দেখতে সুন্দর হবে, সে সুন্দর ও উত্তম বাচনভঙ্গির অধিকারী হবে, বুদ্ধিমান হবে, জ্ঞানী হবে, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারবে ইত্যাদি।
• Behavior Theory: Behavior Theory এর মতে নেতৃত্বের গুণ থাকলে হবে না। ভাল ব্যবহার করতে হবে। সে মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাদের দুঃখ-কষ্টে পাশে দাড়াবে। তাদেরকে সবসময় অনুপ্রাণিত করবে। ফলে, একসময় অন্যান্য মানুষ তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেন।
• Fellowship Theory: Fellowship Theory অনুযায়ী একজন অনুসারী থাকতে হবে। নেতৃত্ব গুণ ও ভাল ব্যবহার করলে হবে না। তার ব্যবহারে মানুষকে প্রভাবিত হতে হবে ও তাকে অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে তিনি নেতা হতে পারবেন না।
• Situational Theory: Situational Theory অনুযায়ী মানুষ বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে গিয়ে নেতৃত্বের গুণ অর্জন করেন। তার নেতৃত্বের ভূমিকা কোন গুণ, বয়স বা পদবির উপর নির্ভর করে না। বরং, পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন।

একজন মানুষ নেতা হতে গেলে তাকে উপরোক্ত তত্ত্বে আলোচিত গুণ থাকতে হবে। এর কোনটিকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। বরং, প্রত্যেকটি তত্ত্ব গ্রহণ করতে হবে।

নেতৃত্বের গুণ

নেতৃত্ব মুখে বললেই হবে না। তার কিছু গুণ থাকতে হবে। যেমন:

• মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
• অন্যকে তার লক্ষ্য পূরণ করতে সাহায্য করে।
• নিজেকে কাজে পারদর্শী হতে হবে।
• সহযোগিতার মনোভাব থাকতে হবে।
• ভাল ব্যবহার করতে হবে।
• নিজে স্বপ্ন দেখে ও অন্যকে স্বপ্ন দেখতে সহযোগিতা করে।
• অন্যের কাজের প্রশংসা করতে হবে।
• বিভিন্ন কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

স্ব-নেতৃত্ব প্রদান

আমরা যেমন অন্যকে নেতৃত্ব দেই, তাকে অনুপ্রাণিত করি, তার লক্ষ্য পূরণে সহযোগিতা করি ঠিক তেমনি আমরা নিজের লক্ষ্য পূরণে নিজেকে নেতৃত্ব দিতে পারি। আমরা নিজেকে বিভিন্নভাবে নেতৃত্ব দিতে পারি। যেমন:

• নিজে যা করতে চাই তাতে লেগে থাকা
• অন্যের সমালোচনা পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে লেগে থাকতে হবে
• কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে থেমে না গিয়ে তার মোকাবেলা করে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে
• নিজের কাজে মনোযোগ দিতে হবে
• নিয়মিত নতুন কিছু শিখতে হবে
• নিজেকে প্রশিক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যকেও প্রশিক্ষণ দিতে হবে

স্ব-নেতৃত্বের  স্তম্ভ

স্ব-নেতৃত্বের কিছু স্তম্ভ আছে। যেমন:

• নিজেকে জানতে হবে।
• নিজের লক্ষ্য, সম্পদ, শক্তি, দুর্বলতা, ঝুঁকি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে।
• কেন করছি তা জানতে হবে।
• লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কি করতে হবে তা জানতে হবে।
• কোন কোন দক্ষতা অর্জন করতে হবে তা জানতে হবে।
• আমাকে কি জানতে হবে, কি জানি এবং কি জানি না সেটা নির্ণয় করতে হবে।
• তারপর, যা জানি না তা জানতে হবে।
• আমার যে জ্ঞান ও সম্পদ আছে তা ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে।

নিজে কিভাবে নিজের নেতা হতে পারি?

আমরা নিজে নিজের নেতা হতে পারি। নিজে নিজের নেতা হওয়ার প্রক্রিয়া নিচে আলোচনা করা হল:

• জীবনের একটি লক্ষ্য বা স্বপ্ন থাকতে হবে।
• নিজের SWOT analysis করতে হবে।
• নিজের সফলতা কল্পনা করা যে স্বপ্ন পূর্ণ হলে নিজের কাছে কেমন লাগবে।
• স্বপ্ন পূর্ণ করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
• প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
• নিয়মিত নতুন কিছু শেখার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
• অঙ্গভঙ্গি ঠিক করতে হবে যাতে দেখে মানসিক-শারীরিকভাবে শক্তিশালী মনে হয়।
• চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে।

আশা করি, আমাদের এই ব্লগ আপনাদের ভাল লেগেছে। আমাদের পরবর্তী ব্লগ পেতে Newsletter subscribe করতে পারেন। তার পাশাপাশি mawbiz.com.bd এর ব্লগ সেকশনে নজর রাখতে পারেন।


Tareq Ahmed কে আন্তরিক ধন্যবাদ!