Home » MAWblog » Miscellaneous » নার্সারি রাইমসের লুকানো গল্পগুলো!
Miscellaneous
Written by: Shaila Sharmin
24-08-2022
আমার ছোট্ট মেয়েটা দুই বছরে পড়ল ।
তার এই ছোট্ট দু’বছরের জীবনের এক বছর কেটে গেছে লক ডাউনে।সে সময় বেচারা ঘরের বাইরের পৃথিবীটা তেমন দেখতে পারেনি।ঐ সময়টা তার কেটেছে ইউ টিউবের যত নার্সারি রাইমস শুনে আর দেখে।মাঝখান থেকে আমি একই গান বারবার শোনার বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছি বলে মনে হয়।
Five little ducks দিনে বিশবার করে শুনে হাসিমুখে মেয়েকে খাওয়ানো আমার কাছে এখন ডালভাত।
মাঝে বাসায় ইলেকট্রিক কাজ করানোর জন্য ইলেকট্রিশিয়ানকে এলো।এদেশে ছোটখাটো কাজ করানোর জন্য হ্যান্ডিম্যান পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার।তাদের এ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া আর প্রধান মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত প্রায় সমান।
যাই হোক ,অনেক খুঁজে পেতে একজনকে পাওয়া গেলো।সে প্রায় তিন ঘন্টা কাজ করে একই গান পঁচিশ তিরিশ বার শোনার পর বলল,
-তুমি কি সারাদিন এই নার্সারি রাইমস শোন??
আমি হেসে বললাম,
-আমার কোন উপায় নাই রে ভাই!
তারপর হঠাৎ করে মনে হলো,এই গানের ভয়ে ভদ্রলোক যদি আর না আসে পরে,তাহলে তো মহা বিপদ।ভয়ে ভয়ে বললাম,
-তোমার অসুবিধা হলে টিভি বন্ধ করে দিচ্ছি !
সে হেসে বলল,
-Don’t worry!!আমার বাসায় তিন বছর আর সাত বছরের দুজন আছে,যারা আমাকে টিভির রিমোট ধরতেই দেয় না।
শুনে মনে একটু হলেও শান্তি পেলাম।যাক বাবা!আমাদের মতো আরো অত্যাচারিত মা’বাবা পৃথিবীতে তাহলে আরো আছে।
ভাবলাম,নার্সারি রাইমসের কিছু বই কিনি অনলাইন থেকে।মেয়ের বই পড়ার অভ্যাসটাও তৈরি হবে আর একই গান বারবার শোনা থেকে কিছুটা সময় হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।আমাজনে বই খুঁজতে যেয়ে খুবই অবাক হয়ে দেখলাম কিছু বই আছে,যেসব বইগুলো “Dark history of nursery rhymes “ নিয়ে লেখা।
নার্সারি রাইমসের আর কি dark history থাকতে পারে!জানতে খুব আগ্রহ হলো। আজকাল এই ইন্টারনেটের যুগে কোন কিছু জানতে হলে ঘরে বসেই জানা যায়,কোথাও যেতেও হয় না বা কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না।নইলে আমার মতো অলস প্রকৃতির মানুষের এতো জ্ঞান আহরন করা অসম্ভব হতো।
যাই হোক ,শুরু হলো আমার তদন্ত।
শুরু করলাম Humpty Dumpty দিয়ে।আমার মনে হয় না ,এমন কেউ আছে যে ছোটবেলায় এই কবিতা নার্সারিতে পড়ে নাই।আমাদের সবার প্রিয় হামটি ডামটি ওয়াল থেকে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো ,যাকে আর কেউ জোড়া দিতে পারলো না।
কিন্তু বিষয়টা অতো সহজ নয়।
১৪৮৩ সালে ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন তৃতীয় রিচার্ড (King Richard III)তার ঘোড়ার নাম ছিল “wall”। ১৪৮৫ সালে রাজা Battle of Bosworth এর যুদ্ধে তার ঘোড়া মানে “Wall” এর পিঠ থেকে পড়ে যান এরপর শত্রপক্ষের সৈন্যরা তার গলা কেটে ফেলে।এর ফলে তার মৃত্যু হয়।
এজন্যই বলা হয়েছে ,
All the kings horses and all the kings men
Couldn’t put Humpty together again!!
বেচারা Humpty Dumpty আসলে রাজা তৃতীয় রিচার্ড!
২. “Jack and Jill went up the hill
To fetch a pale of water
Jack fell down and broke his crown
And Jill came tumbling after “!!
ছোটবেলায় যখন পড়েছি ,তখন ভাবতাম নিশ্চয়ই আমার আর ভাইয়ার মতো দুষ্ট দু’ভাইবোন পানি আনতে গিয়ে পড়ে ব্যথা পেয়েছে।
কিন্তু কবিতার পেছনে ঘটনাটা কিন্তু এতো মিষ্টি নয়।
ফরাসি বিপ্লবের শেষ রাজা ছিলেন ষোড়শতম লুই(King Louis the 16th).অসন্তুষ্ট জনসাধারণের বিপ্লব দেখে রাজা দেশের বাইরের সাহায্য চায়।এতে জনগন ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গ্রেফতার করে আর দেশদ্রোহিতার অপরাধে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়।এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হতোএক বিশেষ চেয়ার।সেই চেয়ারে বসিয়ে স্বয়ংক্রিয় ব্লেড দিয়ে মাথা কাটার পর মাথাটা একটা বালতিতে পড়ে যেতো।
এরপর রাজার স্ত্রীকেও একই অপরাধে একই ভাবে মাথা কেটে ফেলা হয়।
এই কবিতায় রাজা ষোড়শ লুই আর তার রানী মেরীর মাথা কেটে ফেলার কথা বলা হয়েছে।
কি ভয়ংকর ,তাই না??
৩. Eine Meenie Miney Mo
Catch a tiger by its toe!!
ছোট শিশুদের খেলার সময়কার খুব পছন্দের একটা কবিতা।কিন্তু কবিতাটির দ্বিতীয় লাইনের শব্দচয়নে একটু পরিবর্তন করা হয়েছে।tiger নয়,শব্দটি ছিল n***r!!
মধ্যযুগের আমেরিকায় যখন ক্রীতদাস বেচাকেনা করা হতো ,তখন তাদেরকে পা দেখে পছন্দ করা হতো।
যদিও শব্দ বদল হয়েছে,তারপরেও ভীষন বর্নবিদ্বেষী কবিতা ,তাই নয় কি??
৪. Ring-a -ring-a-roses
A pocket full of posies
Atishoo Atishoo
We all fall down!!
কবিতাটি শুনতে ভালো লাগলেও এটা তৈরি হয়েছে তেরশ শতকের প্লেগ মহামারীকে নিয়ে।”রিং অফ রোজ “বলতে বোঝানো হয়েছে প্লেগ রোগের প্রধান উপসর্গ লাল লাল চাকা চাকা দাগ।pocket full of posies বলা হয়েছে প্লেগ রোগীর গায়ের দূর্গন্ধকে ।Atishoo মানে হাঁচিকাশি দেয়া।আর we all fall down বলতে বাকি রাখে না যে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।
ঘটনা জানলে সত্যিই গা শিউরে ওঠার মতোই কবিতা!
৫. Do you know the Muffin man?
The muffin man, the muffin man
Do you know the muffin man
Who lives on drurey lane!!
লন্ডনের ড্ররি লেনে একজন Baker থাকতো যার নাম ছিল ফেড্রিক টমাস লিনউড ।সে একজন সিরিয়াল কিলার ,যার শিকার হয়েছিলো ১৫ জন ছোট ছোট নিরীহ শিশু।১৫৮৯ থেকে ১৫৯৮ এই সময়কালে সে মাফিনকে সুতোর সাথে বেঁধে লোভ দেখিয়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে তাদেরকে খুন করতো।তার অনেক নামের মধ্যে এক নাম ছিল Drury Land dicer আর Muffin man!!
ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়!!
৬. "London bridge is falling down
My fair lady !!"
লন্ডন ব্রীজের এই কবিতাটি নিয়ে অনেক রকম গল্প প্রচলিত আছে।প্রথমত,ধারনা করা হয়,ভাইকিংরা এক সময় ইংল্যান্ড দখল করতে গিয়ে ব্রীজটির ভেঙে ফেলে।আর Fair lady বলতে ভার্জিন মেরিকে বোঝানো হয়েছে,যিনি ব্রীজটি আবার মেরামত করে দিয়েছেন।আবার কথিত আছে যে,তৎকালীন সময়ে বিশ্বাস করা হতো যে কোন ব্রীজ তৈরি করতে হলে মানুষের জীবন উৎসর্গ করতে হয়।সে কারনে সেতুটির মূল কাঠামোতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে বন্দী করে চাবি ছুঁড়ে ফেলা হতো নদীতে।
তাই কবিতাটির আগের সংস্করনের এক লাইনে লেখা হয়েছিল,
“Take the key and lock her up”!!
তবে কবিতার নতুন সংস্করনে এরকম কিছু নেই আর মূল কাঠামো তে এমন কোন কিছু পাওয়া যায়নি।
হতে পারে সব কল্পকথা আবার হতেও পারে কিছুটা সত্যি ! কে জানে!
৭. Baa baa, black sheep
have you any wool?
Yes Sir, Yes Sir ! three bags full.
এই কবিতাটি মধ্যযুগের উলের উপর জনগনকে যে কর দিতে হতো,সেই করপ্রথা বা “heavy taxation of wool” বর্ননা করে।১২৭৫ থেকে প্রায় ১৫০০ সাল পর্যন্ত উলের উপর ট্যাক্স বা কর দিতে হতো।দিতে হতো রাজাকে,এরপর চার্চকে আর যা বাকি থাকতো ,তা দিয়ে নিরীহ কৃষকরা জীবিকা চালাতো।
এজন্যই বলা হয়েছে ,
one for the master
One for the dame
One for the little boy who lives down the lane!!
১৯৮৬ সালে “Black sheep” শব্দটিকে ইংল্যান্ডের প্রেস “বর্নবাদী কবিতা হিসাবে আখ্যায়িত করে। ১৯৯৯ সালে বারমিংহাম সিটি কাউন্সিলে বর্নবাদী “ব্ল্যাক”শব্দটি নিয়ে কিছু অভিভাবক বাচ্চাদের জন্য উৎকন্ঠা প্রকাশ করে।কিন্তু কাউন্সিল থেকে এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় নাই।
২০০৬ সালে অক্সফোর্ডশায়ারে দু’টা নার্সারি তে শিশুদের জন্য “ব্ল্যাক “ শব্দটি পরিবর্তন করে “rainbow sheep/happy/sad sheep জাতীয় অন্য বিশেষন ব্যবহার করতে শুরু করে।
২০১৪সালে অষ্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশেও কবিতাটি নিয়ে একই বিতর্কের কথা শোনা যায়।
ছোটবেলায় আমার মা এই কবিতাটি প্রায়ই বলতো,
“খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো ,বর্গী এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে,খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরালো,পান ফুরালো,খাজনার উপায় কি?
আর ক’টা দিন সবুর করো ,রসুন বুনেছি।”
মূলত,এই কবিতাটি আমাদের দেশের অসহায় কৃষকদের কিভাবে কর প্রথায় পিস্ট হতো,সেটাই বর্ননা করেছে।কখনো ধান,কখনো পান,কখনো মসলা বিক্রি করে তারা খাজনা প্রদান করতো।
আমাদের বাংলা বর্নমালার প্রথম অক্ষর “অ ‘’ থেকেই আমরা ছোট শিশুদের ভয় পেতে শিখাই।
আমাদের বর্নমালার বইতে লেখা,
ঐ অজগর আসলো তেড়ে
আমটি আমি খাবো পেড়ে
ইঁদুরছানা ভয়ে মরে
ঈগল যদি ছোঁ মারে!”
আমি নিজেই এই বর্নমালার কবিতা পড়ে বাংলা শিখেছি।এখন আমি নিজেকে প্রশ্ন করি,আমার মেয়েকে আমি কি এই কবিতাই শেখাবো,নাকি শেখাবো নতুন কিছু?
একবার ভাইয়ার বাসায় বেড়াতে গেলাম,তখন ভাইয়ার মেয়েরা অনেক ছোট ।তিন/চার বছর বয়স।
ডুপ্লেক্স বাসার নিচতলায় গল্প করছি,মেয়েরা উপরতলায় ঘুমাচ্ছে।
হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম ,
-উপরতলায় বাচ্চারা ঘুম থেকে উঠে গেলে ভয় পাবে না?
ভাইয়া আত্নবিশ্বাসের সাথে বলল,
-না ।ভয় পাবে না।
আমি ওদের ভয় পেতে শিখাই নি।
কথাটা আমাকে খুব ভাবনায় ফেললো।
আসলেই তো! শিশুদের খাবার সময়,ঘুমাবার সময় ডাইনি বুড়ি,রাক্ষস ক্ষোক্কসের ,দৈত্য দানো অথবা পরিবারের সবচেয়ে রাগী মানুষটির গল্প বলে আমরাই ভয় দেখাই,ভয় পেতে শিখাই।
শিশুরা ভয় পেতে জানে না।ওদের নরম কোমল মনে ছোটবেলা থেকে আমরাই ভয়ের বীজ বুনি।
ছয় মাস বয়সী শিশুর হাতেও এখন স্মার্ট ফোন!
বাচ্চারা বইতে কি পড়ছে ,মোবাইলে কি দেখছে,ইউ টিউব ,টিকটকে কি শিখছে ,বাবা মা হিসাবে আমরা কি সবসময় খেয়াল করি?
প্রতিটি শিশুর শৈশব যেন আদরে ,আনন্দে ,নির্ভয়ে কাটে আমাদেরই উচিত তা নিশ্চিত করা।
সুকান্ত ভট্টাচার্য যেমন বলেছেন,
“চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব-তবে আজ যতক্ষন দেহে আছে প্রান
প্রানপণে পৃথিবীর সরাবো জন্জাল
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ॥”
31-10-2024
Miscellaneous
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত...
Read More22-10-2024
Miscellaneous
ব্রেন ড্রেইন (Brain Drain) হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দক্ষ,...
Read More30-09-2024
Miscellaneous
ড. মুহাম্মদ ইউনুস, একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ,...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.