Home » MAWblog » Miscellaneous » পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার: প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে একটি ঐতিহাসিক যাত্রা
Miscellaneous
27-04-2025
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, যা বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন, প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ বৌদ্ধ ঐতিহ্যের একটি মূর্ত প্রতীক। এটি কেবলমাত্র একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়; বরং এটি শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং ধর্মের মেলবন্ধনের এক অসাধারণ নিদর্শন। পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর একটি এবং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার হিসেবে স্বীকৃত।
এই ব্লগে আমরা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, স্থাপত্যশৈলী, আকর্ষণীয় দিক, এবং ভ্রমণ তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, যা সোমপুর বিহার নামেও পরিচিত, উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত। এটি নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের নির্মাণ ৮ম শতকের দিকে পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল-এর শাসনামলে শুরু হয়। তিনি এই বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ এশিয়ার বৌদ্ধ শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে। সোমপুর বিহার তখনকার সময়ের অন্যতম প্রধান বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র ছিল, যেখানে তিব্বত, চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আসতেন।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের স্থাপত্যশৈলী দক্ষিণ এশিয়ার বৌদ্ধ স্থাপত্যের এক অনন্য উদাহরণ। এটি একটি বৃহৎ চতুষ্কোণাকার বিহার, যার কেন্দ্রবিন্দুতে একটি প্রধান মঠ রয়েছে।
- বিহারের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিশাল মঠটি ৭০ ফুট উঁচু।
- মঠের প্রতিটি দিকে সিঁড়ি এবং ত্রিকোণাকার টেরাকোটা ফলক রয়েছে।
- ফলকে নানা ধরনের পৌরাণিক কাহিনি, ধর্মীয় চিত্র এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুটে উঠেছে।
- প্রধান মঠের চারপাশে ছোট ছোট সন্ন্যাসী কক্ষ রয়েছে, যা প্রায় ১৭৭টি।
- এগুলোতে তৎকালীন সন্ন্যাসীরা বাস করতেন এবং শিক্ষার কাজ করতেন।
- বিহারের দেয়াল এবং মঠে ব্যবহার করা টেরাকোটা ফলকে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি এবং ধর্মীয় দৃশ্য চিত্রিত করা হয়েছে।
- এসব ফলক তৎকালীন সমাজের দৈনন্দিন জীবন এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকে ফুটিয়ে তুলেছে।
- বিহারটি চারদিক দিয়ে উঁচু প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা প্রতিরক্ষা এবং সুরক্ষার জন্য নির্মিত হয়েছিল।
পাহাড়পুর বিহার শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়; এটি তৎকালীন বৌদ্ধ ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল।
- এটি মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারকেন্দ্র ছিল।
- এখানে তিব্বত, চীন এবং ভারত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে বৌদ্ধ দর্শন ও শাস্ত্র অধ্যয়ন করত।
পাহাড়পুর বিহার ছিল তৎকালীন দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি কেন্দ্র।
- এটি বৌদ্ধ ধর্ম এবং প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতিকে একীভূত করার একটি মঞ্চ ছিল।
টেরাকোটা ফলক এবং বিহারের স্থাপত্য তৎকালীন শিল্পকলার উৎকর্ষতাকে প্রকাশ করে।
- বিহারের মূল মঠটি এবং তার চারপাশে সন্ন্যাসীদের কক্ষগুলোর স্থাপত্যশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে।
- এর প্রতিটি কোণায় ঐতিহাসিক গল্প এবং ধর্মীয় চিহ্ন লুকিয়ে আছে।
- বিহারের দেয়ালে স্থাপিত টেরাকোটা ফলকগুলোতে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি, প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সাংস্কৃতিক চিত্র ফুটে উঠেছে।
- বিহার সংলগ্ন একটি ছোট জাদুঘর রয়েছে, যেখানে বিহার থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
- এখানে আপনি প্রাচীন মুদ্রা, পাত্র, ভাস্কর্য এবং অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে পাবেন।
- বিহারের চারপাশের সবুজ গ্রামীণ পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে এক অনন্য শান্তি দেবে।
- ঢাকা থেকে নওগাঁ পর্যন্ত বাসে বা ট্রেনে যেতে হবে।
- নওগাঁ থেকে পাহাড়পুর পর্যন্ত সরাসরি রিকশা, সিএনজি বা মোটরসাইকেলে যাতায়াত করা যায়।
- ঢাকা থেকে সরাসরি জয়পুরহাট বা নওগাঁ পর্যন্ত ট্রেনে যাওয়া যায়। এরপর সেখান থেকে পাহাড়পুর যেতে পারবেন।
পাহাড়পুর ভ্রমণের জন্য বছরের যেকোনো সময়ই ভালো, তবে শীতকাল (অক্টোবর থেকে মার্চ) বিশেষ উপযুক্ত।
- শীতকালে আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে, যা ঘুরে দেখার জন্য আদর্শ।
- বর্ষাকালে বৃষ্টি বিহারের পরিবেশকে আরো মনোরম করে তোলে।
পর্যাপ্ত সময় নিন:
পুরো বিহার কমপ্লেক্স ঘুরে দেখতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
১। গাইডের সহায়তা নিন:
বিহারেরইতিহাসএবংপ্রতিটিনিদর্শনেরপেছনেরগল্পজানতেএকটিস্থানীয়গাইডনিতেপারেন।
২। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
বিহার এবং তার আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেতন থাকুন।
৩। পানি এবং হালকা খাবার নিন:
দীর্ঘ ভ্রমণের সময় সঙ্গে পানি এবং কিছু হালকা খাবার রাখুন।
পাহাড়পুর বিহার বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের স্থাপত্য এবং নিদর্শন রক্ষার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
- নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ।
- অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং জাদুঘরের সম্প্রসারণ।
পাহাড়পুর বিহার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান, যেখানে তারা প্রাচীন বাংলার ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়; এটি বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য, ধর্মীয় শিক্ষা, এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি জীবন্ত উদাহরণ। এখানে ভ্রমণ আপনাকে প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার সুযোগ দেবে।
আপনার পরবর্তী ভ্রমণ পরিকল্পনায় পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারকে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং উপভোগ করুন একটি ঐতিহাসিক যাত্রা, যেখানে প্রতিটি ইট এবং পাথরে লুকিয়ে আছে অতীতের গল্প।
28-04-2025
Miscellaneous
বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক...
Read More28-04-2025
Miscellaneous
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম...
Read More27-04-2025
Miscellaneous
বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটা, যা পরিচিত...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
International...
24-11-2024
International...
03-10-2024
Miscellaneous...
30-09-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.