Home » MAWblog » Sustainable Development » চীন নাকি ভারত? বাণিজ্য ও উন্নয়নের সমীকরণে কাকে বেছে নেবে বাংলাদেশ?
Sustainable Development
Written by: এস এম নাহিয়ান
27-10-2024
ভারত নাকি চীন, বাংলাদেশের জন্য এ যেন এক চিরন্তন টানা পোড়ন। এদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নতির জন্য কোন দেশের সঙ্গ বেশি দরকার, সে প্রশ্নটা যেন উঠে আসে বার বার। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের এ প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করলে গড়পড়তা কি উত্তর পাওয়া যাবে, তা সহজেই ধারনা করা যায়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতি তো আর নাগরিক মনোভাবের উপর চলে না। এখানে চলে আসা নানা জটিল সমীকরণ ও একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের চিন্তা। দুই দেশের সাথেই বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ইতিহাস। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতগুলোতেও দুইটি দেশের উপস্থিতি সরব। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, অর্থনীতির অবস্থান, ভূরাজনীতি, এসব মিলিয়ে সময় এসেছে একটি বৈদিশিক নীতি ঠিক করার। আর আজকের এ লেখাতে মূলত সে প্রেক্ষিতেই ‘চীন নাকি ভারত’ সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গীর তালিকায় ভারতের অবস্থান একদম প্রথম দিকেই। ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড ইকুইটি ফাউন্ডেশন এর তথ্য অনুসারে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভারত-বাংলাদেশের ভেতর ১৪.২২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। তবে এখানেও বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির চিত্রটা স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠে।
বাংলাদেশ ভারতের জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি গন্তব্য। অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পণ্য ভারত থেকে আমদানি করে থাকে। চলুন এক ঝলকে দেখা যাক ২০২২ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানির চিত্র।
তুলার বাহিরে বাংলাদেশ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যেই পণ্যটি ভারত থেকে আমদানি করে সেটি হলো পরিশোধিত তেল ও তেলজাতীয় দ্রব্য। একই সাথে সিরিয়াল (Cereal), যন্ত্রাদি, রাসায়নিক, চিনি, গাড়ি, ট্রাক্টর, ট্রাক, প্লাস্টিক, ও ইষ্পাতের ক্ষেত্রেও ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য সঙ্গী। এসবের বাইরে বাংলাদেশের নিত্য পণ্যের বাজারেও ভারতের বেশ প্রভাব রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভারতের প্রভাবের চেয়ে বিষয়টিকে বাংলাদেশী সিন্ডিকেটের উৎপাত হিসেবে আখ্যায়িত করলেই হয়তো অধিক যুক্তিসম্মত হবে।
বাংলাদেশ ভারতের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিস্থল হলেও বাংলাদেশের রপ্তানি তালিকায় ভারতের অবস্থান ১০ম। ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির চিত্রঃ
সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যের পরিমাণ ভারতের তুলনায় অনেকটাই বেশি। আমদানি রপ্তানি দুই ভাগে ভাগ করলে বাণিজ্যের অবস্থানটা দাঁড়ায় নিম্নরুপ।
ওইসিডি (OECD) এর তথ্য অনুসারে ২০২২ সালের বাংলাদেশ-চীন আমদানি ছিল নিম্নরুপঃ
অন্যদিকে ২০২২ সালের বাংলাদেশ-চীন রপ্তানি ছিল নিম্নরুপঃ
উপরের তথ্য গুলো দেখলেই বাংলাদেশের সাথে চীন ও ভারতের বাণিজ্যের একটি প্রাথমিক চিত্র পাওয়া যায়। তবে শুধু কিছু সংখ্যা উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে কোন দেশের সাথে বাণিজ্যিক বন্ধন শক্ত করলে বাংলাদেশের লাভ, তা বোঝা কঠিন। তাই তুলনামূলক বিশ্লেষণটিকেও যদি আমদানি ও রপ্তানি দুইটি খাতে ভাগ করা হয়ঃ
আমদানি খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সঙ্গী এখন চীন। বাংলাদেশের ৩২.৪% আমদানিই করা হয়ে থাকে চীন থেকে। যা যেকোনো হিসাবেই বিশাল একটি অংশ। ২০০৯ সালের আগে যা ছিল ৪ বিলিয়ন ডলারেরও কম। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ চীনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়েছে। তবে এ নির্ভরশীলতার পেছনে বাংলাদেশের ‘লুক ইস্ট’ পলিসি কতটা প্রভাব ফেলেছে সেটিও অনেকের প্রশ্ন। বাংলাদেশের ‘লুক ইস্ট’ নীতি মূলত ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে গিয়ে বাংলাদেশকে চীনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল করে ফেলেছে, এমনটাও মনে করেন অনেকে।
তবে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতার প্রশ্নে ভারতও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। চারপাশে ভারতীয় সীমান্ত হওয়ায় স্বভাবতই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো ভারত থেকেই আমদানি করা হয়।
কিন্তু আমদানির ধরনের এই দুইটি দেশের ভেতরে কিছুটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। প্রযুক্তিগত ভাবে চীন এগিয়ে থাকায় শিল্প-পর্যায় ও ভোক্তা-পর্যায়, দুই ক্ষেত্রেই চৈনিক পণ্যের চাহিদা বেশি। কোভিড-১৯ মহামারির সময় ভারত থেকে সীমিত পরিসরে আমদানি সুযোগ থাকলে চীন থেকে আমদানি ভয়াবহ ভাবে ব্যহত হয়। ফলে ছোটো খাটো পণ্য থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারিজ, সকল পর্যায়েই এর বৈরি প্রভাব পড়ে।
অন্যদিকে ভারতীয় পণ্যের প্রভাবটা বাংলাদেশের খাদ্যের বাজারে বেশি প্রকট। এমনকি বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় এখন ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা। ডিম থেকে শুরু করে নানা ধরনের পণ্যের দাম ভারতীয় পণ্য আমদানির উপরেই নির্ভরশীল। আবার একই কথা উলটো দিক থেকেও খাটে। ভারত পেয়াজের মতো পণ্য রপ্তানি বন্ধ করায় বাংলাদেশের বাজারে তার আকষ্মিক প্রভাব হয়তো অনেকেরই মনে আছে।
মোট কথা হলো, আমদানি শতাংশের ক্ষেত্রে বর্তমানে চীন যেমন বড় সঙ্গী, ঠিক তেমনই এর প্রভাব দেশের বৃহৎ মাপের শিল্প খাতে প্রবল। অন্যদিকে ভারতের প্রভাবও ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সব মিলিয়ে বলা যায়, ভবিষ্যতে এই দুইটি দেশই বাংলাদেশের শক্তিশালী বাণিজ্য সঙ্গী হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের দিক থেকে ভারতের অবস্থান চীন থেকে এগিয়ে। তবে বাংলাদেশের তৃতীয় রপ্তানীস্থল হলেও, ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের রপ্তানি তালিকায় ১০ম। কিন্তু ভারতে রয়েছে বাংলাদেশের বেশ বড় রপ্তানি বাজার তৈরির সুযোগ। ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত রাজ্য গুলো হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বিশাল বাজার। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন চুক্তির সঠিক ব্যবহার। বর্তমান চুক্তিসমূহ অনুসারে ভারতীয় পণ্যের জন্য বাংলাদেশ ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিলেও, বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির তেমন সুযোগ নেই। কিন্তু এই ট্রানজিটের বিনিময়ে রপ্তানির সুযোগ নিশ্চিত করতে পারলে ভারতের বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার বেড়ে যাবে বহুগুণ।
এক্ষেত্রে প্রয়োজন চুক্তির স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ মাথায় রাখা। ২০১২-১৩ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বেড়েছে তিন গুণ। ৫.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫.৯৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ১.৯৮ বিলিয়ন ডলার।
তুলনামূলক ভাবে চীনে রপ্তানি বাজার বাড়ানো কিছুটা কঠিন। কারণ ভারতের ক্ষেত্রে দ্বৈত চুক্তির মাধ্যমে সরাসরি নানা পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সরাসরি সীমান্ত না থাকায় চীনের সাথে সে সুযোগ কম। এছাড়াও চীনে রপ্তানি বাজার ধরতে হলে প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ বেশ কিছু পণ্যে ১০০% শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে, কিন্তু তবুও প্রতিযোগিতা খুব একটা সহজ হয় নি।
চীনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি হলো কাপড়। একই সাথে আছে ফেব্রিক, মাছ, জুতা, চামড়াজাতীয় পণ্য, ইত্যাদি। চীনা কাপড় বাজারে বাংলাদেশের দখল এখন ০.০২% এর কাছাকাছি। কিন্তু চীনের বাজার এতটাই বড়, বাংলাদেশ যদি চীনা বাজারের মাত্র ১% ও ধরতে পারে, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২৭ বিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। অথচ বর্তমানে চীনে বাংলাদেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয় মাত্র ১ বিলিয়নের আশে পাশে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ এর একটি গবেষণা মতে দেখা যায়, চীন এমন অনেক পণ্য আমদানি করে থাকে যা বাংলাদেশের রপ্তানি তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তা চীনে রপ্তানি হয় না। এক্ষেত্রে ‘রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট’ এর ডঃ এমএ রাজ্জাক এর মতে, বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্পের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ও পণ্যের নিম্ন মান এর কারণ। অর্থাৎ চীনে রপ্তানি বাড়াতে চাইলে বাংলাদেশের একাধিক ‘ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ করা যেমন জরুরী, তেমনই উচিত পণ্যের মান বৃদ্ধি করা।
ব্যবসায়িক স্বার্থ কোন দেশের সাথে বেশি, সে প্রশ্নের উত্তর শুধু যে ব্যবসার পরিমাণের উপর নির্ভর করে তা কিন্তু নয়। এর বাইরেও সবচেয়ে বেশি যেই বিষয়টি প্রভাব ফেলে সেটি হলো বিনিয়োগ। আর বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই চীনের অবস্থান ভারতের অনেক উপরে।
চীনের ‘গোয়িং গ্লোবাল’ (Going Global) নীতির পর থেকেই সারা বিশ্ব জুড়ে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বিপুল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে সারা বিশ্বজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি চ্যানেলে চীনা বিনিয়োগের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১.৭৮ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশে ২৭.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে চীন।
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আসার মাধ্যম মূলত তিনটি।
(১) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান,
(২) ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ও
(৩) কনসেশন লোন।
এই তিন মাধ্যমে আসা বিনিয়োগের অধিকাংশ বিনিয়োগের অঙ্গীকার করা হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু খাতে। সে খাত গুলো হলো এনার্জি, পরিবহন, ও অবকাঠামো। কিন্তু অঙ্গীকার করা হলেও এক যুগে দেশে এসেছে অঙ্গীকার করা বিনিয়োগের মাত্র ৭.৩%। যা ডলারের অংকে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে অঙ্গীকারবদ্ধ বিনিয়োগে বাংলাদেশ ভিয়েতনাম থেকে এগিয়ে থাকলেও, বাস্তবে গৃহীত বিনিয়োগের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে।
ইনফোগ্রাফিক্সঃ টিবিএস
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ মূলত বেড়ে যায় ২০১৮ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বাংলাদেশ ভ্রমণের পরে। ‘১৮ অর্থবছরে চীনা বিনিয়োগ আসে ৫০৬.১৩ মিলিয়ন ডলার। ‘১৯ অর্থবছরে যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে দাঁড়ায় ১.১৬ বিলিয়ন ডলারে। সে বছর বাংলাদেশে ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের দিক থেকে প্রথমবারের মতো চীন সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে আসে।
এর পূর্বে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও ভারতের বিনিয়োগই বেশি পেতো বাংলাদেশ। যা আসতো পেট্রোলিয়াম, টেক্সটাইল, ব্যাংকিং ও টেলিযোগাযোগ শিল্পে। তবে এসব খাতের বাইরেও আরও একাধিক খাতে আছে চীনা বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে চীনারা বেশি মনোযোগ দিয়েছে পাওয়ার, স্টিল, ভারী যন্ত্র ইত্যাদি খাতে। সব মিলিয়ে বলা চলে, বাংলাদেশের উন্নয়নে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় সাথী এখন চীন।
বাংলাদেশ ভারতের কাছের দেশ হলেও, চীনের তুলনায় এদেশে ভারতের বিনিয়োগ অনেকটাই কম। এর পেছনে মূলত ভারতের অর্থনৈতিক সক্ষমতাই দায়ী। এখন অবধি বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগের অঙ্গীকার ৩ বিলিয়ন ডলারের মতো। কিন্তু তার ভেতর কতখানি বিনিয়োগ আসলেই এসেছে তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরের বিনিয়োগের মাত্রা দেখলে এ সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাওয়া যায়। সে অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রাপ্ত মোট ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ছিল ১.৩৭ বিলিয়ন ডলার। আর তার ভেতরে ভারতীয় বিনিয়োগ ছিল ১৫.৭ মিলিয়ন ডলার। যা সে বছরের মোট বিনিয়োগের মাত্র ১.১৫%। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে ভারতের অঙ্গীকার করা বিনিয়োগ বাস্তবায়নের হার চীনের তুলনায় আরও কম।
বিনিয়োগের জন্য পছন্দের খাতের ক্ষেত্রে অবশ্য চীন ও ভারতের কিছুটা মিল রয়েছে। শক্তি, অবকাঠামো, উৎপাদন, যোগাযোগ ইত্যাদি খাতেই ভারতের অধিক আগ্রহ।
আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ যতটা না নির্ভর করে কোনো দেশের বিনিয়োগ ক্ষমতার উপর, তার থেকে অনেক বেশি নির্ভর করে আঞ্চলিক ভূরাজনীতির উপর। ভারত ও চীন, দুইটি দেশের জন্যই বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ।
চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে বাংলাদেশ হতে পারে দ্বারপ্রান্ত। বিশেষত বঙ্গোপসাগর ঘেষা অঞ্চলে চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব খর্বে ভারত সর্বদা সচেষ্ট। ঠিক এখানেই চীনের বিশেষ নজরে থাকে বাংলাদেশ। এদেশে বিপুল চীনা বিনিয়োগের এটি একটি অন্যতম কারণ। এমনকি এদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে বিনিয়োগের সুযোগকে শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে দেখে না চীন। বরং দেখে ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, বাংলাদেশের তিস্তা বাধ উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা নাড়িয়ে দেয় ভারতকে। আবার সমসাময়িক সময়ে ভারত মংলা বন্দলের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। যা নিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ এর বক্তব্য তির্যক না বললে কম বলা হবে। চীনাদের মতে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রজেক্টে বিনিয়োগের সুযোগ বাংলাদেশের বিদেশনীতিকে প্রতিফলিত করে।
একই ধরনের নীতি শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও অবলম্বন করেছে চীন। তবে সেদেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা যাচাই না করেই ঋণ দেওয়ায় যা হওয়ার তাই হয়েছে। হাম্বানটোটা বন্দর চলে গেছে চীনের হাতে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও চীনের একই অভিসন্ধি আছে কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেক বিশেষজ্ঞ।
ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক প্রভাব, দু ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের প্রভাব রয়েছে। বিশেষত বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা ভারতের আভন্ত্যরীণ ব্যবসা বাণিজ্য নয়, বরং নিরাপত্তা বিধানও নিশ্চিত করে। অপর দিকে ভূরাজনৈতিক প্রভাব রক্ষায় ভারতের বাংলাদেশকে প্রয়োজন। কারণ এই দুই দেশের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করলে দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের প্রভাব বিস্তার সম্ভব নয়।
ব্যবসা -বাণিজ্য ও উন্নয়নে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী সঙ্গী কে হবে, সে প্রশ্নের রাজনৈতিক পরিবেশের প্রশ্নটাও কিছুটা উঠে আসে। সমসাময়িক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বেশ ভালই বিপন্ন বোধ করছে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা। এতে করে ভবিষ্যত বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা অবশ্যই প্রভাবিত হবে।
অপর দিকে চীনের ক্ষেত্রে মোটেও তা নয়। তাই অন্তত রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় দীর্ঘমেয়াদী সঙ্গী হিসেবে চীনকে নিঃসন্দেহে ভারতের উপরে স্থান দেওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায়, ভারত ও চীন দুটিই বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সঙ্গী। বাংলাদেশ এমন কোনো অবস্থানে নেই যে একটি দেশকে ছেড়ে অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হবে। তাই দীর্ঘমেয়াদে যেকোনো একটি দেশকে চয়ন না করে, নিজের স্বার্থ অনুযায়ী দুই দেশের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে বাংলাদেশের জন্য সেরা পন্থা।
তথ্যসূত্র
১। অবজার্ভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি (১)
২। অবজার্ভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি (২)
৩। অবজার্ভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি (৩)
৪। অর্গানাইজেশন ফর রিসার্চ অন চায়না অ্যান্ড এশিয়া
৫। বাংলাদেশ চায়না ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন
৬। মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, ইন্ডিয়া
৭। ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড ইকুইটি ফাউন্ডেশন
১০। দ্যা হিন্দু
১৪। সিডলি অস্টিন
১৫। দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (২)
১৬। ডিডব্লিউ
১৭। ৯ড্যাশলাইন
12-11-2024
Sustainable Development
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বহু দশক ধরে বিকশিত...
Read More27-10-2024
Sustainable Development
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ গত কয়েক বছরে...
Read More29-09-2024
Sustainable Development
রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশ্বজুড়ে...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.