Print World

Economy

যেভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান কে বিদেশী বিনিয়োগের উপযোগী করে তুলবেন

Written by: এস এম নাহিয়ান

16-10-2024

যেভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান কে বিদেশী বিনিয়োগের উপযোগী করে তুলবেন


ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। ব্যবসা না থাকলে যেমন বিনিয়োগ থাকতো না, তেমনই বিনিয়োগ না থাকলেও ব্যবসার অস্তিত্বও সৃষ্টি হতো না। সৃষ্টির শুরু থেকে এই নীতি বলবৎ থাকলেও, সময়ের সাথে সাথে বদলেছে ব্যবসাতে বিনিয়োগের ধরন। একটা সময় ছিল, যখন মানুষ তার জমানো টাকা থেকেই ব্যবসা শুরু করতো। এরপরের ভরসাস্থল হতো নিকটাত্মীয় কিংবা কাছের বন্ধু-বান্ধব। অতঃপর ১৬৬৮ সালে স্টকহোমে শুরু হলো আধুনিক ব্যাংকিং প্রথা। তারই সাথে বিনিয়োগের পুরো ধারনাটাই যেন বদলে গেল। 

পরবর্তী শতক গুলোতে বিনিয়োগের ধরন, সুযোগ ও মাত্রা, সবই যেন বিকশিত হলো নতুন করে। আর একবিংশ শতাব্দীতে এসে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ যেন ডাল ভাতের মতো সহজ বিষয়। কিন্ত এই সহজ বিষয়টিই আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। আবার এই সহজ বিষয়টিই সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে হতে পারে অসম্ভব জটিল। 

কেন প্রয়োজন বিদেশী বিনিয়োগ? 

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন কি না, তা নির্ভর করবে আপনার ব্যবসার ধরন, পরিপক্কতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার উপর। তবে এই যে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে এত মাতামাতি, তা আসলে কেন? 

১। মূলধন সুবিধা

সকল ধরনের বিনিয়োগের ন্যায়, বিদেশী বিনিয়োগেও সবচেয়ে বড় সুবিধা ‘মূলধন’। আপনার ব্যবসার জন্য যদি মূলধন প্রয়োজন হয়ে থাকে, তবে বিদেশী বিনিয়োগ হতে পারে একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। প্রশ্ন হলো, এক্ষেত্রে তাহলে বিদেশ থেকে আগত বিনিয়োগের উপরেই এত জোর দেওয়া হচ্ছে কেন। তার কারণ হলো, বিদেশী বিনিয়োগে এমন বেশ কিছু সুবিধা থাকে যা দেশীয় বিনিয়োগে থাকে না।

২। গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি 

উন্নত দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রতিষ্ঠান গুলোর বিনিয়োগ পাওয়ার হার অনেক কম। আর ঠিক সেজন্যই এদেশ গুলো থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান সমূহ বড় মাপের বিদেশী বিনিয়োগ পেয়ে থাকে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও এক ধাপে অনেকটা বৃদ্ধি পায়। 

৩। নতুন বাজারে প্রবেশ 

 বিদেশী বিনিয়োগ মানেই নতুন বাজারের সম্ভাবনা। অনেক ক্ষেত্রেই যে দেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে সে দেশেই পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হয়। 

৪। প্রযুক্তি ও দক্ষতা অর্জন 

বিনিয়োগের সাথে সাথে নীতিগত ভাবেই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি লেনদেনের সম্পর্ক তৈরি হয়। যদি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নিজেই হয় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তাহলে দুই প্রতিষ্ঠানের ভেতর প্রযুক্তি ও দক্ষতা স্থানান্তরের একটি সুযোগ থাকে। যেমন ভারতের ‘মারুতি উদ্যোগ’ এ জাপানের সুজুকি করপোরেশনের বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০০৭ এ সৃষ্টি হয়েছে ‘মারুতি সুজুকি’। ২০২৪ এ এসে ভারতের রয়েছে বিশাল দক্ষ জনশক্তি এবং উল্লেখযোগ্য অটোমোবাইল প্রযুক্তি। 



দেশীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগ উপযোগী করার উপায় 

বিদেশী বিনিয়োগের সঠিক ব্যবহার যে ব্যবসার জন্য দারুণ সহায়ক, তা নিয়ে আশা করি আর সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনা বাস্তবিকই কঠিন। তাই লেখার এ অংশে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে আমরা ধাপে ধাপে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করেছি। 


আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি 

গ্রহণযোগ্যতা একটি সার্বিক বিষয়। যেকোনো একটি বিষয়ে ভাল করলেই কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রহণযোগ্যতা পায় না। বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাজারের ক্ষেত্রে আরও সত্যি। তবে গ্রহণযোগ্যতা তৈরির বিষয়টিকে মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।  

১। কোর এক্টিভিটিজ

কোর এক্টিভিটিজ দিয়ে মূলত একটি ব্যবসায়ের উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, পণ্যের সার্বিক পরিষেবা এসব বিষয়কে বোঝায়। ধরা যাক আপনি একটি ফল ও কৃষিজ পণ্য রপ্তানিকারক ব্যবসার মালিক। এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে যে সকল ফল ও কৃষিজ পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে তার গুণগত মান সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। যেহেতু এ ধরনের পণ্যের বাজার সাধারণত পশ্চিমা দেশ গুলো, তাই স্বভাবতই আপনার ক্রেতা চাবেন আপনার পণ্য সম্পূর্ণ খাঁটি হয়। দ্বিতীয় আপনার পণ্যের প্যাকেজিং, পরিবহন, ও গ্রাহকের হাতে যখন পৌছাচ্ছে তখন তার প্রাপ্ত সেবা, সব কিছুই কিন্তু সার্বিক ভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতার উপাদান। 


অর্থাৎ এক কথায় বললে, আপনি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করতে যা যা করবেন তা সবই আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে। 

২। সার্টিফিকেশন 

বর্তমান বিশ্বে শুধু ব্যবসায়িক সুনাম গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। যেহেতু বিনিয়োগের বিস্তারত পরিচিত জন, স্থানীয় ব্যাংকিং, দেশীয় গন্ডী ছাড়িয়ে চলে গেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, তাই এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির। এক্ষেত্রে শিল্পের খাত ও প্রতিষ্ঠানের আকারের উর্ধ্বে নির্বিশেষে কিছু সার্টিফিকেশন সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। 

আইএসওঃ ৯০০০ সিরিজ (ISO: 9000 Series) 


আইএসওঃ ৯০০০ সিরিজের যাত্রা শুরু ১৯৮৭ সাল থেকে। ইন্টারন্যাশল স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অর্গানাইজেশন (International Standardization Organization) এর টেকনিক্যাল কমিটির হাত ধরে এই কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্র্যাক্টিসের সূচনা ঘটে। 

খুব সহজ ভাষায় বললে, আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তা সে যেকোনো পণ্যই উৎপাদন করুক না কেন, গুণগত মান রক্ষার্থের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী তার একটি নির্দেশনা এই সার্টিফিকেট। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসার জন্যই বর্তমানে এই সার্টিফিকেট অনেকটা আবশ্যক বিষয়। 

আইএসওঃ ১৪০০০ সিরিজ (ISO:14000 Series) 

আইএসওঃ ৯০০০ সিরিজের সফলতার পরে ১৯৯৬ সালে আইএসওঃ ১৪০০০ নামক আরেকটি নীতিমালা প্রণয়ণ করে আইএসও। আইএসওঃ ৯০০০ যেমন পণ্যের গুণগত মান সংশ্লিষ্ট, আইএসওঃ ১৪০০০ ঠিক তেমনই পরিবেশের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত। 



বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে শুধু পণ্যের মান মোটেও যথেষ্ঠ নয়। সেই পণ্যের মান অর্জনে পরিবেশের উপর কতটা প্রভাব ফেলা হয়েছে সেটিও এই দশকের সবচেয়ে মূখ্য বিষয়। আর ঠিক সেজন্যই বর্তমানে আইএসও ৯০০০ঃ এর মত আইএসওঃ ১৪০০০ সার্টিফিকেট অত্যন্ত জরুরী। 


তবে এর বাইরে শিল্প ভিত্তিক নানা ধরনের সার্টিফিকেশনও বর্তমানে ব্যবসায়িক গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম অঙ্গ। গার্মেন্টস শিল্প এবং জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের এমন নির্দিষ্ট শিল্পভিত্তিক কিছু সার্টিফিকেটও বর্তমানে বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। 


লিড (LEED) সার্টিফিকেট  

বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। তাই বাংলাদেশের অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিই এখন ব্যবসায়িক সুবিধা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অতিরিক্ত নানা সার্টিফিকেশনের দিকে ঝুঁকছে। 

এ বছরের মে মাস অবধি বাংলাদেশে ‘ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল’স লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়র্নমেন্টাল ডিজাইন - লিড’ (United States Green Building Council’s (USGBC) leadership in energy and environmental design - Leed) সার্টিফিকেট পাওয়া গার্মেন্টসের সংখ্যা ২১৭টি। আর এসবই করা হচ্ছে বৈদিশিক ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য। 

এইচকেসি সার্টিফিকেশন অফ কমপ্লায়েন্স (HKC Certification of Compliance) 

২০২৩ সালের ২৬ তারিখ বাংলাদেশ হংকং কনভেশনকে র‍্যাটিফাই করে। এর মাধ্যমে এই কনভেনশনটি পরিণত হয় একটি আন্তর্জাতিক আইনে। এই আইন অনুযায়ী সকল জাহাজ ভাঙ্গা / পুনর্ব্যবহার ইয়ার্ডকে নূন্যতম পরিবেশবান্ধব এবং শ্রমিকবান্ধব হতে হবে। 

তারই প্রেক্ষিতে বর্তমানে বাংলাদেশের শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডগুলো অতি দ্রুত ‘হংকং কনভেনশন কমপ্লায়েন্স’ সার্টিফিকেট যোগাড় করছে। যা তাদের ব্যবসায় টিকিয়ে রাখা এবং বিনিয়োগের প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখবে। 

বিভিন্ন বিজনেস সামিটে অংশগ্রহণ 

শুধু গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করলেই হবে না, বৈদিশিক বিনিয়োগ পেতে হলে আপনার অবস্থানটাও আরও শক্ত করে জানান দিতে হবে। বৃহৎ প্রতিষ্ঠান গুলো সাধারণত তাদের আকারের কারণেই অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে সুপরিচিত থাকেন। কিন্তু একজন নতুন উদ্যোক্তার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করাটা স্বপ্নের মতো। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল উপায় হতে পারে বিভিন্ন দেশে আয়োজিত বিজনেস সামিট গুলো। তেমনই কিছু সামিট হলোঃ 

১। এশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট সামিট 
২। ইমপ্যাক্ট সামিট এশিয়া 
৩। স্ল্যাশ, হেলসিংকি 
৪। ওয়েব সামিট 
৫।স্টার্টআপ উইথআউট বর্ডারস, ইত্যাদি 

এ ধরনের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সামিট গুলো সাধারণত বছরের একেক একেক সময়ে, একেক দেশে হয়। এ ধরনের সামিটে সরাসরি যোগদান করাটাও বেশ খরুচে ব্যাপার। তাই অনেকেই প্রাথমিক ভাবে অনলাইনে যুক্ত হোন বা কাছাকাছি কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দিন শেষে প্রত্যেক উদ্যোক্তার জন্যই এ ধরনের সামিট শিক্ষা ও সুযোগের স্বর্গরাজ্য। 

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের বোঝানো 

বৈদিশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যতটুকু প্রভাব রাখতে, ঠিক ততটাই প্রভাব রাখবে আপনার দেশের অবস্থা। বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বৈদিশিক বিনিয়োগ না পাওয়ার একটি বড় কারণ এ দেশের সার্বিক বিনিয়োগ অবস্থা বা ‘ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট’। 

তবে খারাপ দিক গুলোর পাশাপাশি কিছু ভাল দিকও রয়েছে। অথবা বলা উচিত, যতটুকু ভাল দিক রয়েছে ততটুকুই এমন ভাবে উপস্থাপন করা উচিত যাতে তা বিদেশী বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করে। 

করপোরেট ট্যাক্স সুবিধা

বাংলাদেশে নতুন স্থাপিত কোম্পানির জন্য স্থান ও সেক্টরভেদে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী ট্যাক্স সুবিধা। এ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য। ‘ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৪, সেকশন ৪৬বি অনুযায়ী জুলাই ১, ২০১৯ সাল থেকে জুন ৩০, ২০২৪ এর মধ্যে স্থাপিত কোম্পানিগুলো এই ট্যাক্স সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। 

সেক্টরসমূহ 

বিভিন্ন সেক্টরসমূহের মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান, কৃষি যন্ত্রাদি, বিমান মেরামত ও মেইন্টেনেন্স, কৃত্রিম ফাইবার, অটোমেটিক ব্রিকস, অটোমোবাইল, অটোমোবাইল পার্টস, রোবোটিক ডিজাইন ও পার্টস, ইলেক্ট্রিক পণ্য, বাই-সাইকেল, বায়ো-সার, কৃষি ভিত্তিক বায়োটেকনোলজি, বয়লার, কম্প্রেশর, ট্রান্সফর্মার, আসবাবপত্র, ঘরোয়া পণ্য (ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, ওভেন ইত্যাদি), কীটনাশক, লেড টিভি, ফল ও কৃষিজ পণ্য, মোবাইল ফোন, ন্যানোটেকনোলজি, পেট্রো-কেমিক্যাল, ঔষুধ, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং, টেক্সটাইল মেশিনারি, টিস্যু গ্রেডিং, খেলনা, টায়ার, ইত্যাদি। অর্থাৎ আপনার প্রতিষ্ঠান যদি এসব পণ্য উৎপাদন করে থাকে তাহলে তা ট্যাক্স সুবিধার আওতায় পড়বে। 

ব্যবসার স্থান

ট্যাক্স সুবিধা সেক্টরের পাশাপাশি আপনার প্রতিষ্ঠানের স্থানের উপরেও নির্ভর করবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য পাচ বছর মেয়াদী ট্যাক্স সুবিধা প্রযোজ্য। তবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি জেলায় ভিন্ন ট্যাক্স সুবিধা প্রযোজ্য। 


অন্যদিকে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, ও বরিশাল বিভাগের জন্য রয়েছে ১০ বছরের ট্যাক্স সুবিধা। এসব সুবিধা বছর প্রতি ১০% হারে কমতে থাকে। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছরে আপনার ট্যাক্স সুবিধা ৯০% হলেও ১০ম বছরে তা হবে ১০%। 

আমদানি শুল্ক সুবিধা

উৎপাদনের প্রধান যন্ত্রাদী আমদানির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সেক্টরের জন্য রয়েছে শুল্ক মুক্তি। এছাড়াও রপ্তানি পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত বেশ কিছু কাঁচামাল আমদানিতেও রয়েছে শুল্ক মুক্তি। 

রপ্তানিমূখী শিল্পের সুবিধা

আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি হয়ে থাকে রপ্তানি নির্ভর, তাহলে রয়েছে আরও অনেক ট্যাক্স সুবিধা। এক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৮০% পণ্য যদি রপ্তানি হয়ে থাকে, তাহলে সেটি রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে যে সকল সুবিধা পাবেনঃ 


১। ৫০% আয়কর রেয়াত 

২। তামাকজাতীয় পণ্য রপ্তানিতে ০% শুল্ক সুবিধা

৩। গার্মেন্টস শিল্পের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা

৪। ডিউটি ড্রব্যাক 


বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধাসমূহ

বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থেও বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এ সংক্রান্ত মুখ্য আইনটি হলোঃ ‘দ্যা ফরেইন প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট (প্রমোশোন অ্যান্ড প্রটেকশন) অ্যাক্ট ১৯৮০’। এ আইন অনুযায়ী 


১। কোনো বিদেশী বিনিয়োগকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যথাপযুক্ত মূল্যায়ন ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত করা যাবে না। অর্থাৎ রাষ্ট্রের দিক থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কোনো ভয় নেই। 

২। স্থানীয় ও বৈদিশিক বিনিয়োগকারীদের সমান হারে সুবিধা প্রদান। 

৩। বৈদিশিক বিনিয়োগকারীরা বিনা বিধায় তাদের দেশের নাগরিকদের ওয়ার্ক পার্মিট ইস্যু করতে পারবে। 

৪। বিদেশী শেয়ারহোল্ডাররা চাইলে তাদের শেয়ার এদেশীয় শেয়ারহোল্ডারদের বিক্রি করতে পারবে। 

৫। বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রয়োজন বোধে তার মূলধন বিনিয়োগ ও লাভ বিদেশে প্রেরণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে নীতিগত কোনো বাঁধা নেই। 

৬। ১০০% বৈদিশিক বিনিয়োগেও বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান চালানো বৈধ। 

৭। ১০০% বৈদিশিক বিনিয়োগ সম্পন্ন অথবা জয়েন্ট ভেঞ্চার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো বাংলাদেশের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্টক মার্কেটে অংশ নিতে পারবে। প্রয়োজনে আইপিও ইস্যু করতে পারবে। 

৮। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজনে স্থানীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে পারবে। 

৯। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ্দের নিরাপত্তা রয়েছে। 


মূলত এ সকল সুবিধাই বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান। এগুলোকে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে পারলে তা হতে পারে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট। 


অসুবিধা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীকে আশ্বস্ত করুন 

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা যেমন রয়েছে, অসুবিধাও তেমন অনেক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অসুবিধা গুলো ছিল নিষ্কণ্টক জমি। ইপিজেড নির্মাণের মাধ্যমে সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে এখনও পরিবহন, লজিস্টিকস খাতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এছাড়াও রাজনৈতিক পরিবেশ, আইনী জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তর্জাতিক পরিষেবার অভাব এগুলো বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনেকটাই নিরুৎসাহিত করে। 



তাই আপনার ব্যবসা খাতে কি কি অসুবিধা রয়েছে তা প্রথমেই চিহ্নিত করুন। অতঃপর সেসব সমস্যা মোকাবেলায় নিজস্ব একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। পরিকল্পনাটি আপনার সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সাথে শেয়ার করুন। এর মাধ্যমে তারা আশ্বস্ত হবেন যে আপনি তাদের সমস্যা নিয়ে অবগত আছেন এবং সে নিয়ে মাথাও ঘামাচ্ছেন। 


শেষকথা 

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বিদেশী বিনিয়োগ উপযোগী করে তোলার উপায় গুলো আশা করি ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়েছে। এ উপায় সমূহকে বস্তুত একটি ‘রুপরেখা’ হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করা যায়। কিন্তু এ রুপরেখার বাইরেও প্রতিটি শিল্পের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে রয়েছে আলাদা আলাদা মাপকাঠি। তাই বৈদিশিক বিনিয়োগ আনতে সফল হতে হলে প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। 

তথ্যসূত্রঃ 

১। বিডা

২। স্টার্টআপ ভয়েজার 

৩। আইএসও (১)

৪। আইএসও (২) 

৫। ঢাকা ট্রিবিউন

৬। গ্রিন বিল্ডিং ইনফরমেশন 

৭। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন 

৮। ইয়োথ পলিসি ফোরাম 
৯। ইত্তেফাক

Previous Post

Next Post

Related Posts

বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট নিরসন হবে কিভাবে?

28-08-2024

Economy

বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট নিরসন হবে কিভাবে?

গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে...

Read More
মুদ্রাস্ফীতির একাল সেকাল

23-05-2024

Economy

মুদ্রাস্ফীতির একাল সেকাল

বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...

Read More
ঈদের অর্থনীতিঃ বাংলাদেশের যত ব্যবসা ঈদে

09-04-2024

Economy

ঈদের অর্থনীতিঃ বাংলাদেশের যত ব্যবসা ঈদে

পবিত্র রমজান মাস জুড়ে রোজা পালনের মাধ্যমে দেহের...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter