Home » MAWblog » Miscellaneous » ভারতের সামরিক শক্তি আসলে কতটুকু?
Miscellaneous
Written by: এস এম নাহিয়ান
17-09-2024
প্রতিবেশী দেশ ভারত। দুই দেশের মানুষের মনোভাব যাই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের সমীকরণে ভারতকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিছুদিন আগেও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সে দেশের সামরিক বাহিনীকে বাংলাদেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তাই ভারতকে নিয়ে ভাবতে হলে ভারতের সামরিক বাহিনীকে নিয়ে ভাবতেই হবে। বৈশ্বিক ভাবে সামরিক সক্ষমতার চতুর্থ অবস্থান থাকা ভারত বরাবরই তাদের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। তবে চিত্র শত্রু পাকিস্তানকে পেছনে ফেলার পর ভারতের সামরিক উন্নয়নের পালে কিছুটা ভাটা পড়ে। কিন্তু চীনের প্রচন্ড গতিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এখন ভারতকে বেশ অস্বস্তিকর অবস্থানেই ফেলেছে। বিশেষত ভারতের সাথে পাকিস্তানের পার্থক্যটা যেমন পরিষ্কার, চীনের সাথেও ভারতের পার্থক্যটা তেমনই পরিষ্কার। তাই গত কয়েক বছরে ভারতের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো।
অনেকে মনে করেন শুধু মাত্র কয়টি ট্যাংক, কয়টি যুদ্ধবিমান আছে, তা দিয়েই একটি দেশের সামরিক শক্তি বোঝা সম্ভব। কিন্তু তেমনটি হলে এত বিশ্লেষণের প্রয়োজন হতো না। একটি দেশের সামরিক শক্তি মানে শুধু তার অস্ত্র-সম্ভার নয়। বরং এর সাথে হিসাবে আনতে হয় দেশটির জনসম্পদ, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, ঝুকিপূর্ণ বর্ডার, নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা, পরিবহন ব্যবস্থা, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা, কূটনৈতিক অবস্থান, এ সকল কিছুই। আর আজকের লেখাটি এ সকল জিনিস মাথায় রেখেই সাজানো হয়েছে।
বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা ১৪৩ কোটির কিছুটা বেশি। এর ভেতর প্রতিবছর সামরিক বয়সে পৌছাচ্ছে প্রায় ২ কোটি ৩৮ লক্ষের মতো মানুষ। যা মোট জনসংখ্যা ১.৭%। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের জনসংখ্যার দিকে তাকালে চিত্রটা অনেকটা নিম্নরুপ।
জনসম্পদ সমস্যাকে বাংলাদেশ সহ এশিয়ার ঘনবসতি পূর্ণ দেশগুলোকে হালকা করে দেখা হয়। কিন্তু সমসাময়িক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে দুই দেশকেই যুদ্ধ করার মতো মানুষ খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে এটুকু পরিষ্কার যে, যেকোনো যুদ্ধ শুরু হলে ভারতের অন্তত লোকসংখ্যা নিয়ে সমস্যায় পোহাতে হবে না। এবং একই কথা তার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষদের ক্ষেত্রেও খাটে।
যুদ্ধ শুরু করাটা সহজ। কিন্তু সেই যুদ্ধ চালিয়ে নিতে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে একটি দেশের অর্থনীতির উপরে। প্রতিটি যুদ্ধের পরেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের মুদ্রাস্ফীতি চূড়ান্ত রকমের বেড়ে যায়। এমনকি বিশ্ব যুদ্ধ গুলোর পরে যুদ্ধের খরচ সামলাতে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতেই বিশাল পরিবর্তন এসেছিলো। যদি আমরা ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থান দেখিঃ
এ ধরনের সংখ্যাভিত্তিক তথ্য দেখে আসলে বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে ধারনা পাওয়াটা বেশ কঠিন। তবে যুদ্ধাবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভাটা পড়বে ভারতের ফরেন রিজার্ভে। সামরিক বাজেটের দিক থেকে ভারত চতুর্থ হলেও এর বড় একটি অংশ খরচ হয় ভারতের যুদ্ধাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণে। কারণ ভারতের পুরো সামরিক বাহিনীতে যেমন রয়েছে রাশিয়ান যুদ্ধাস্ত্র, তেমনই রয়েছে আমেরিকান ও পশ্চিমা সামগ্রী। বিভিন্ন ধরনের ফ্লিটে বিভিন্ন ধরনের রক্ষাণাবেক্ষণের প্রয়োজন। এটি একটি বিশাল খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে লেখার পরবর্তী অংশে।
একই সাথে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। কিন্তু এই দুই দেশের ভেতরে ব্যবসার পরিমাণ বাৎসরিক ৮৭ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক। যুদ্ধাবস্থায় এই ব্যবসায় ভাটা পড়লে দুই দেশই ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীণ হবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ছোট খাটো যুদ্ধ ভারত ভালই সামাল দিতে পারলেও, বড় যুদ্ধ হতে পারে অর্থনৈতিক পঙ্গুত্বের কারণ।
ভারতীয় তিন বাহিনী গুলোর মধ্যে প্রথাগত ভাবে সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বেশি বাজেটের অংশীদার। তাই তাদের সরঞ্জামাদির তালিকাটাও বেশ লম্বা। সংক্ষেপে যদি একটি চিত্র তুলে ধরতে চাইঃ
সূত্রঃ গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার
কিন্তু শুধুমাত্র কিছু সংখ্যাই কি একটি দেশের সামরিক সক্ষমতা বোঝাতে যথেষ্ট? উত্তর হলোঃ মোটেই না।
এশিয়ার ভেতর ভারতের ট্যাংকবহরের স্থান চীনের পরেই। তাদের ৪,৬১৪টি ট্যাংকের ভেতর ১৬৫৭টি ট্যাংকই রাশিয়ান টি-৯০। তবে এই ট্যাংকগুলোর ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ নীতি অনুসারে ভারতেই তৈরি করা। তাই একে ডাকা হয় ‘টি-৯০ ভিস্মা’। বেজ মডেলের বাইরেও ভারতের রয়েছে ‘টি-৯০ এমএস ভিশ্মা’ এবং সবচেয়ে আধুনিক মডেলের ‘টি-৯০ মার্ক থ্রি’। অর্থাৎ সহজ কথায়, টি-১৪ আর্মাটা বাদে ভারতের মেইন ব্যাটল ট্যাংক এবং রাশিয়ান মেইন ব্যাটল ট্যাংক বহরের গুণগত মানের খুব বেশি পার্থক্য নেই। এছাড়াও ভারতের বহরে রয়েছে ‘টি-৭২ অজেয়’ এবং ‘অজেয় মার্ক ২’। এছাড়াও রয়েছে ভারতের নিজের তৈরি ট্যাংক ‘অর্জুন’। যদিও এই ট্যাংকের পারফর্মেন্স নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজেরাই সন্তুষ্ট নয়।
এর বাইরেও ভারতের বহরে আছে ‘বিএমপি-২’ ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল, প্রায় ১১ ধরনের আর্মড পারসোনাল ক্যারিয়ার, ট্যাংক ডেস্ট্রয়ার, সাপোর্ট ভেহিকল, আনম্যান্ড ভেহিকল ইত্যাদি।
আর্টিলারি তথা গোলন্দাজ। বলা হয়, গোলন্দাজ হলো যুদ্ধক্ষেত্রের ভাগ্যবিধাতা। ভারতের আর্টিলারি ভান্ডারের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ‘কে৯ বজ্র’। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ক্রয়কৃত এই সেলফ-প্রপেলড আর্টিলারি গুলো অ্যাসেম্বল করা হয়েছে ভারতে। এছাড়াও ‘টোওড আর্টিলারি’ রয়েছে ৬-৭ ধরনের। রয়েছে রকেট আর্টিলারি। চলছে নিজস্ব অ্যাডভান্স টোওড আর্টিলারি, মাউন্টেড গান সিস্টেম এর ট্রায়াল।
ভারতীয় বিমান বাহিনী বর্তমানে রাশিয়ান এবং পশ্চিমা মিশেলের একটি মিশ্র বাহিনী। এক ঝলকে ভারতীয় বিমান বাহিনীঃ
ফাইটারের দিক থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনী এখনও রাশিয়া নির্ভর। যদিও ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ নীতিতে এই বাহিনীর প্রধান ফাইটার, সু-৩০ এমকেআই ভারতেই নির্মাণ করা হয়েছে। রাশিয়ান ফাইটার হলেও এর এভিওনিক্সে ভারত ব্যবহার করেছে ইজরায়েলী সিস্টেম। যা এক বিরল উদাহরণ বটে। এছাড়াও যুদ্ধবিমান রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও ভারতীয় বিমান বাহিনী রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল নয়। বর্তমানে ২৬০টি সু-৩০ ভারতের বিমান বাহিনীতে সার্ভিসে আছে।
২০২২ সালে ভারত তাদের রাশিয়া প্রীতি থেকে সরে এসে প্রথম বারের মতো আমদানি করে ফ্রান্সের ‘ড্যাসল্ট রাফাল’। ফ্রান্সের তৈরি এই অমনিরোল ফাইটারটি পৃথিবীর সেরা ৫টি যুদ্ধবিমানের একটি। আপাতত ৩৬টি রাফাল ভারতের বহরে থাকলেও ভবিষ্যতে এগুলোকেও ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ নীতিতে তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। উল্লেখ্য যে, এই রাফাল গুলোকে প্রথম মোতায়েন করা হয়েছিলো বাংলাদেশের খুব কাছে, হাসিমারা এয়ারবেজে। যার অবস্থান ভারতের চিকেন’স নেকে।
এছাড়াও ভারতীয় বিমান বাহিনীতে রয়েছে ৪৯টি ‘ড্যাসল্ট মিরাজ ২০০০’। রয়েছে ১৩৯টি ‘জাগুয়ার’। ভারতের বহুল সমালোচিত ‘ফ্লাইং কফিন’ হিসেবে কুখ্যাত মিগ-২১ এর বহর অবসরে পাঠানোর পর সে স্থান নিচ্ছে হাল তেজাস। যদিও অনেক ভারতীয় তেজাসকে সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বলে দাবি করেন। কিন্তু বাস্তবে এর ইঞ্জিন, এভিওনিক্স, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ গুলো পশ্চিমা দেশ গুলো থেকে আমদানি করা।
যেকোনো সক্ষম বিমান বাহিনির জন্য এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মূলত উড়ন্ত রাডার যা সম্পূর্ণ বিমান বাহিনীর সমন্বয় রক্ষার্থে অসামান্য ভূমিকা রাখে। ভারতের বহরে রয়েছে ‘নেত্র এমব্রায়ার ১৪৫’, ‘ইএল/ডব্লিউ-২০৯০ বেরিভ এ-৫০’ এর মতো আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম। এছাড়াও আকাশে অবস্থানরত বিমানকে তেল প্রদানের জন্য রয়েছে ‘ইলুশিন ২-৭৮’ এরিয়াল রিফুয়েলিং বিমান।
এসবের বাইরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমানগুলোর অধিকাংশ পশ্চিমা ঘরানার। অন্যদিকে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ভারতের বানানো বিমান। হেলিকপ্টারের ক্ষেত্রেও সেই নীতিতে চলার চেষ্টা করছে ভারত। কিন্তু এখনও ভারতের হেলিকপ্টার ফ্লিট মূলত রাশিয়ান।
ভারতীয় সেনা বাহিনীর পর নিজস্ব ক্ষেত্রে ভারতীয় নৌ বাহিনীর অবস্থানই শক্তিশালী। এর গোড়াপত্তনের ইতিহাস ৪১২ বছরের পুরোনো। তবে বর্তমান ভারতীয় নৌ বাহিনী গঠিত হয় ১৯৫০ সালে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৬৪,০০০ হাজার।
ভারতীয় নৌ বাহিনীর পতাকাবাহী জাহাজ হিসেবে রয়েছে প্রাক্তন ‘এডমিরাল গরশোকভ ক্লাস’ রাশিয়ান বিমানবাহী রণতরী। বর্তমানে এর নাম আইএনএস বিক্রমাদিত্য। এছাড়াও ২০২২ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হয় আরেকটি বিমানবাহী রণতরী আইএনএস ভিক্রান্ত।
বর্তমানে ভারতীয় নৌ বাহিনীর রয়েছে ভিশাখাপত্তম, কলকাতা, দিল্লি ও রাজপুত ক্লাসের ডেস্ট্রয়ার। এর ভেতর প্রথম তিনটি শ্রেণীর ডেস্ট্রয়ার যথেষ্ট শক্তিশালী বলা যায়। এছাড়াও রয়েছে শিভালিক ক্লাস, তালওয়ার ক্লাস ফ্রিগ্রেট।
ভারতের দুইটি বিমানবাহী রণতরীর বদৌলতে রয়েছে বেশ বড় একটি এয়ার ফ্লিট। যার মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করছে রাশিয়ান ‘মিগ-২৯কে’ ফাইটার। মেরিটাইম পেট্রলের জন্য রয়েছে বোয়িং পি-৮। যা অত্যন্ত কার্যকরী এন্টি-সাবমেরিন বিমান। এছাড়াও রয়েছে ‘ডর্নিয়ার ২২৮’, ‘নরম্যান বিএন-২’।
হেলিকপ্টার হিসেবে আছে ‘হাল ধ্রুব’, ‘ক্যামোভ কা-২৭’, ‘ওয়েস্টল্যান্ড সী কিং’, ‘হাল চেতাক’, ‘এসএইচ-৬০ সিহক’। এছাড়াও ভারতীয় নৌ বাহিনীর রয়েছে বেশ শক্তিশালী ড্রোন বহর। যাতে রয়েছে আমেরিকান এমকিউ-৯ রিপার।
ভারতীয় নৌ বাহিনীর সবেধন নীলমণি বলা চলে ‘আরিহান্ত ক্লাস’ সাবমেরিনকে। এটি ভারতের নিজের তৈরি একটি এসএসবিএন বা ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন। এ ধরনের সাবমেরিন প্রয়োজনে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাগরে ডুব দিতে পারে। প্রয়োজনে ভেসে উঠে পারমাণবিক আক্রমণ করে ভয়াবহ ধংস্বলীলা চালাতেও সক্ষম এ ধরনের সাবমেরিন। বর্তমানে মাত্র ৬টি দেশের কাছে এ ধরনের সাবমেরিন রয়েছে। দেশগুলো হলো, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও সর্বশেষে ভারত। কিন্তু ট্রায়ালে থাকা অবস্থাতে লজ্জাজনক অবস্থায় পড়ে এই ভারতীয় ‘আরিহান্ত ক্লাস’। হ্যাচজনিত দুর্ঘটনায় সাবমেরিনের ভেতর পানি ঢুকে নানা ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে এই ক্লাসের আরও একটি সাবমেরিন ট্রায়ালে আছে।
এছাড়াও ভারতের বহরে রয়েছে ১৬টি ডিজেল-ইলেক্ট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিন। এগুলো হলো যথাক্রমে কালভেরি ক্লাস (যা ফ্রান্সের স্করপিয়ন ক্লাসের ভারতীয় ভার্সন), সিন্ধুঘোষ ক্লাস (রাশিয়ান কিলো ক্লাসের ভারতীয় ভার্সন), ও শিশুমার ক্লাস (জার্মান টাইপ-২০৯/১৫০০ এর ভারতীয় ভার্সন)।
ভারতের বিমান ও সেনা বাহিনীর রয়েছে কয়েক স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
দূরপাল্লাঃ বর্তমানে ভারতের একমাত্র দূরপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা হলো রাশিয়ান এস-৪০০।
মধ্যমপাল্লাঃ মধ্যমপাল্লার জন্য ভারতের রয়েছে রয়েছে বারাক-৮, আকাশ, স্পাইডার, এস-১২৫, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা,
স্বল্পপাল্লাঃ স্বল্পপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষার মধ্যে রয়েছে ওএসএ-একে-এম স্যাম, শিলকা রাডার গাইডেড এন্টি-এয়ারক্রাফট ওয়েপন সিস্টেম, এল৭০ এন্টি এয়ারক্রাফট গান, স্ট্রেলা এন্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল সিস্টেম ইত্যাদি।
এছাড়াও ভারতের ডিআরডিও এর অধীনে ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম তৈরির কাজ চলমান আছে।
সাধারণ ব্যালিস্টিক মিসাইলের মধ্যে বর্তমানে সার্ভিসে রয়েছে ‘পৃথ্বী’ মিসাইল। এছাড়া ক্রুজ মিসাইলের মধ্যে ব্রাক্ষ্মস এর বিভিন্ন ভার্সন ভারতীয় বাহিনীতে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
তবে ভারতের পরমাণু শক্তির বাহক হলো ‘অগ্নি। ‘অগ্নি-১’ থেকে ‘অগ্নি-৫’, ১২০০ কিলোমিটার থেকে ৮,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জের পারমাণবিক অস্ত্র পরিবহনে সমর্থ ব্যালিস্টিক মিসাইল রয়েছে ভারতের ভান্ডারে। নিঃসন্দেহ যা ভারতের সর্বোচ্চ মারণাস্ত্র।
লেখার শুরুতেই বলেছি যে, শুধু মাত্র সামরিক অস্ত্রের তালিকা দেখে একটি দেশের সামরিক সক্ষমতা যাচাই করা যায় না। এক্ষেত্রে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক রয়েছে।
পুরো লেখা জুড়েই একটি লেখা বার বার উঠে এসেছে। সেটি হলো ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’। ভারত পৃথিবীর চতুর্থ সামরিক শক্তি হলেও তারা এখনও বৃহৎ ভাবে বিদেশী অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিশাল কেনাকাটার পাশাপাশি তারা প্রযুক্তি সংগ্রহের ব্যাপারেও পটু। আর তাই তাদের অধিকাংশ সামরিক সরঞ্জাম বিদেশী প্রযুক্তির হলেও তার একটি বড় অংশ দেশীয় ভাবে তৈরি। যা ভারতের সামরিক সক্ষমতাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সাহায্য করছে।
ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অনেক। ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে জয় পায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী। এছাড়াও হায়দ্রাবাদ, দাদরা ও নগর হাভেলি, গোয়া দখলের অপারেশন সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে ভারতীয় সেনা বাহিনী। তবে ১৯৬২ সালে চীনের হাতে পরাজয়ের স্বাদ ভালভাবেই মেলে ভারতের। এছাড়াও উত্তর-দক্ষিণ ভারতে ১৯৬৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলে আসা বিচ্ছিনতাবাদী শক্তির সাথেও অনেকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।
তাদের ঝুলিতে রয়েছে ১৯৬৫ সালের ভারত পাক যুদ্ধ, ১৯৭১ সালে পশ্চিম ফ্রন্টে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ, পূর্ব ফ্রন্টে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে ১৪ দিনে যৌথ অপারেশন, ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিয়াচেন গ্লেসিয়ার দখল, অপারেশনের ব্লু স্টারের মাধ্যমে শিখ জাতীয়তাবাদীদের শক্ত হাতে দমনের অভিজ্ঞতা।
এছাড়াও সিশিলস, শ্রীলংকা ইত্যাদি বহিরাগত ভূমিতেও ভারতীয় সেনাদের পদার্পণ ঘটেছে। যদিও শ্রীলংকাতে তামিল টাইগারদের কাছে বেগতিক হয়ে পড়ে ভারতীয় বাহিনী। সর্বশেষে কারগিল যুদ্ধ ছিল ভারতের শেষ বড় মাপের যুদ্ধ। এর বাইরে পাকিস্তানের সাথে নানা ধরনের বর্ডার স্কিরমিশ লেগেই থাকে ভারতের। সহজ ভাষায়, মাউন্টেন ওয়ারফেয়ার, জাঙ্গল ওয়ারফেয়ার, ডেজার্ট ওয়ারফেয়ারে যথেষ্ঠ অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত ভারতের সামরিক বাহিনী।
ভারতের কূটনৈতিক সক্ষমতাও নেহায়েত ফেলে দেওয়ার মতো না। ব্যবসায়িক দিক বাদ দিলেও সামরিক ক্ষেত্রেই এর যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে। যেই এস-৪০০ ক্রয়ের জন্য তুরুষ্ককে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরির প্রজেক্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, সেই একই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভারতও ব্যবহার করে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমেরিকা কখনোই খুব একটা উচ্চ-বাচ্য করে নি। এমনকি এত বিপুল পরিমাণ রাশিয়ান অস্ত্র ব্যবহারের পরেও ভারত পশ্চিমা অস্ত্রের সহজ ক্রেতা। মূলত ভারতের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সূত্রগুলো ভারতকে এ অবস্থান এনে দিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে কূটনৈতিক অবস্থান কেমন হবে, তা নির্ভর করবে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তার উপরে।
পরিশেষে বলা যায়, ভারতের সামরিক বাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী একটি বাহিনী। কিন্তু এ বাহিনীর সক্ষমতার পাশাপাশি দুর্বলতাও কম নয়। মূলত রাজনৈতিক দুর্বলতা, উচ্চ পর্যায় থেকে বারংবার নীতিগত পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এছাড়াও নিজ দেশে তৈরি পণ্য ব্যবহারে জোরদার হলেও, অনেক সময়ই আশানুরুপ ফলাফল পাওয়া যায় না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বর্তমানে কোনো প্রতিবেশী দেশের সাথে পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতকে বহুবার ভাবতে হবে। কারণ পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, যেকোনো একটি দেশে সামরিক আগ্রাসন চালানো মানে চীনের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। ভারতের বিশাল আকার যেমনই জন্য সুবিধা, তেমনটি অসুবিধাও বটে। বিশেষত ভারতের সামরিক শক্তির প্রধান অংশ খরচ করতে হয় চীন ও পাকিস্তান বর্ডারে। তাই দক্ষিণ পূর্ব দিকে অধিক মনোযোগ দেওয়া ভারতের জন্য কাল হয়েও দাঁড়াতে পারে।
31-10-2024
Miscellaneous
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত...
Read More22-10-2024
Miscellaneous
ব্রেন ড্রেইন (Brain Drain) হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দক্ষ,...
Read More30-09-2024
Miscellaneous
ড. মুহাম্মদ ইউনুস, একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ,...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.