Economy
Written by: এস এম নাহিয়ান
28-08-2024
গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা কথাই হয়েছে। ১ দশক পূর্বে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২২.৪ বিলিয়ন ডলার। ১০ বছর পর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২৫.৮ বিলিয়ন ডলার। মাঝের সময়টাতে ২০২০ এর মার্চ থেকে ২০২১ এর আগস্ট, এই সময়টা ছিল যেন স্বর্ণযুগ। রিজার্ভের পরিমাণ ৩২.৪ বিলিয়ন ডলার থেকে হয়ে ওঠে ৪৮.১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এর পর রিজার্ভের যে পতন, তা যেন আর ঠেকানো সম্ভব হয় নি। ১০ বছর পরে বাংলাদেশ যেন ঘুরে ফিরে সেই একই অন্ধকার গলিতে দাঁড়িয়ে আছে।
গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ফরেইন রিজার্ভের চিত্র (ট্রেডিং ইকোনোমিকস)
কিন্তু আদতে কেন রিজার্ভ নিয়ে এত মাথা ব্যাথা! আর রিজার্ভ বলতে বার কেন ডলারের নামই উঠে আসে। রাজনৈতিক এই অস্থিরতার মাঝে অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখা কি আদৌ সম্ভব। সর্বোপরি এ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে কি করণীয় আছে বাংলাদেশ সরকার। চলুন জানা যাক এরকম জটিল কিছু প্রশ্নের সহজ কিছু উত্তর।
বইয়ের ভাষায় বলতে গেলে, ফরেইন রিজার্ভ হলো এমন সম্পদের সমষ্টি যা ভিন্ন দেশের মুদ্রায় সংরক্ষিত। কিন্তু চলুন বইয়ের ভাষা বাদ দিয়ে বিষয়টি আরেকটু সহজ করে বোঝা যাক। মূলত একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট ভিন্ন দেশের কত মুদ্রা সংরক্ষিত আছে তার একটি হিসাব হলো ফরেইন রিজার্ভ। এর সঠিক নাম হলো ফরেইন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ।
ফরেইন রিজার্ভ যে শুধু অন্য দেশের ব্যাংক নোট হয়ে থাকে তা নয়। ব্যাংক নোটের বাইরেও ভিন্ন দেশে অবস্থিত বিভিন্ন সম্পদ, সে দেশের বন্ড, ট্রেজারি বিল ইত্যাদির মাধ্যমেও ফরেইন রিজার্ভ গড়ে তোলা সম্ভব।
ফরেইন রিজার্ভ কেন জরুরী সে প্রশ্নের উত্তর খোজার আগে শুধু আরেকটি প্রশ্ন ভাবুন। টাকা কেন জরুরী? জ্বী, ঠিক ধরেছেন! জিনিস-পত্র ক্রয় করতে একজন ব্যক্তির কাছে যেমন টাকা জরুরী। একটি রাষ্ট্রের কাছেও অন্য দেশ হতে পণ্য ক্রয় বা সেবার মূল্য পরিশোধের জন্য ফরেইন রিজার্ভ জরুরী।
বিনিময় প্রথার বদলে মানুষ যেরকম মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করেছে, ঠিক একই ভাবে চালু হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা। আর এ মুদ্রা ব্যবস্থায় এখন অবধি একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে আমেরিকান ডলার। আর তাই আন্তর্জাতিক বেশিরভাগ বাণিজ্য এখনও ডলারেই হয়ে থাকে। আর তাই ফরেইন রিজার্ভ বলতে মূলত একটি দেশের ডলার রিজার্ভকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
ফরেইন রিজার্ভ কমা ও বাড়া, সবই নির্ভর করে মূলত ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের উপর। এই ব্যালেন্স অফ পেমেন্টকে সোজা বাংলায় বলা যায় আয়-ব্যায়ের হিসাব। আপনি যদি আয়ের থেকে ব্যয় বেশি করেন তাহলে স্বভাবতই আপনার অর্থ-বিত্ত কমবে। ঠিক একই ভাবে, একটি দেশের রপ্তানি আয়ের থেকে আমদানি ব্যয় বেশি হলে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট হয়ে যায় নেগেটিভ। ফলস্বরুপ ফরেইন রিজার্ভও কমে যায়।
মূলত ফরেইন রিজার্ভ রাখাই হয় এজন্য। যাতে সাময়িক ভাবে কোনো রাষ্ট্রের আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হলে রিজার্ভের মাধ্যমে সে ব্যয় মেটানো যায়। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের অবস্থা আসলে ঠিক কী?
বাংলাদেশ বরাবরই একটি আমদানি নির্ভর রাষ্ট্র। অর্থাৎ আমাদের রপ্তানির চাইতে আমদানি বেশি। ফলস্বরুপ এদেশের ব্যালেন্স অফ পেমেন্টও ঋণাত্নক। প্রতি অর্থ বছর শেষে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ঋণাত্নকই থাকে। কিন্তু তাই বলে সবসময়ই এ দেশের রিজার্ভ নিম্নমুখী বিষয়টি তা নয়। ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের এই সমস্যা দূর করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। মূলত প্রবাসী আয়ের জোরেই বাংলাদেশের রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল থাকে।
তবে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভের উৎস নিয়ে কথা বলতে হলে একটি শিল্পের নামই বার বার সামনে আসবে। সেটি তৈরি পোষাক বা রেডি-মেড গার্মেন্টস শিল্প। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ে গার্মেন্টশ শিল্পের অবদান দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
২০১৮ থেকে ২০২২, এই ৫ বছরের ভেতর চার বছরেই রপ্তানি আয়ের গার্মেন্টস শিল্পের অবদান ৮৫% এর উপরে। কিন্তু রপ্তানি আয়ে শুধু এই একটি শিল্পের একক আধিপত্য কি আদৌ বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক?
ওয়ারেন বাফেটের খুব দারুণ একটি উক্তি আছে। উক্তিটি হলো ‘Don’t put all your eggs on a single basket’। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেন সেটিই ঘটেছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প যতই শক্তিশালি হোক না কেন, মাত্র একটি শিল্পের উপর এত নির্ভরতা মারাত্নক ঝুঁকির। কারণঃ
একটি শিল্পের প্রতিযোগিতা নির্ভর করে সেই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও দক্ষতার উপর। তৈরি পোষাক এমন একটি শিল্প যেখানে খুব কম দক্ষতার প্রয়োজন হয়। কাঁচামাল ও বেশ সহজলভ্য। ফলে এ শিল্পে প্রতিযোগিতাও অনেক। বিশেষত কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলো বাংলাদেশের খুব বড় প্রতিদ্বন্দী হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোষাকের চাহিদার প্রধান কারণ এর স্বল্প মূল্য। আর এই স্বল্প মূল্যের পেছনে প্রধান কারণ সস্তা শ্রম। কিন্তু সস্তা শ্রম কোনো দীর্ঘমেয়াদী হাতিয়ার নয়। সময়ের সাথে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হলে শ্রমিকদের মজুরিও বাড়বে। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পোষাকের চাহিদাও কমবে।
এছাড়াও ব্যবসায়িক ও নীতিগত নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে ভিয়েতনাম খুব দ্রুতই বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। এরকম চলতে থাকলে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল বই শক্তি হবে না।
বাংলাদেশে তৈরিকৃত বেশিরভাগ পণ্য বেশ সাধারণ পোষাকের কাতারে পড়ে। এছাড়াও পোষাকের নতুন ধরন তৈরি করা অথবা ফ্যাশন উদ্ভাবন এ অঞ্চল থেকে ঘটে না। বিভিন্ন বহিঃদেশীয় প্রতিষ্ঠানের গতানুগতিক ধারাতেই চালিত হয় এ দেশের গার্মেন্টস শিল্প। কিন্তু একটি শক্তিশালী শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে এমন ধারা নেতিবাচক। উৎপাদনের পাশাপাশি ডিজাইন এও উৎপাদক দেশের অবদান/প্রভাব থাকা অত্যন্ত জরুরী।
গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত। কিন্তু একই সাথে এটি চূড়ান্ত ভাবে আমদানি নির্ভর। এই শিল্পের কাঁচামাল আনতে হয় বিদেশ থেকে। ফলে ডলার আয় হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ব্যয় ও হয়। এত বছরেও দেশীয় কাঁচামালের কোনো উৎস তৈরি করা যায় নি।
যেহেতু অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি কৃত, তাই গার্মেন্টস শিল্প খুব ভালভাবেই বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ ভূরাজনৈতিক বা প্রাকৃতিক, যেকোনো কারণবশত সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হলে তার বিশাল প্রভাব পড়তে পারে এই শিল্পে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প কিছু নির্দিষ্ট বাজারের উপর অতিরিক্ত নির্ভশীল। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইটালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি, ক্যানাডা, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এ সকল দেশেই মূলত বাংলাদেশের পোষাক রপ্তানি হয়। অর্থাৎ আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার। কিন্তু ভূরাজনৈতিক কারণে যেকোনো ধরনের অবরোধ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নিমিষে ধংস্ব করে দিতে পারে।
লেখার আগের অংশটি পড়ে হয়তো আপনাদের মনে হতে পারে আমরা গার্মেন্টস শিল্পের বিরোধীতা করছি। বিষয়টি মোটেও তা নয়। গার্মেন্টস শিল্প এ দেশের রপ্তানি খাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এই একটি শিল্পের বাইরেও আরও বেশ কিছু শিল্প রয়েছে যা রপ্তানিমুখী করা সম্ভব। যেমনঃ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় খাতকে বলা চলে ঔষুধ খাত। বাংলাদেশী ঔষুধ কোম্পানি গুলো বিশ্বমানের ঔষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের ঔষুধ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ নাইজেরিয়া ও ভিয়েতনাম বছরে ঔষুধ আমদানি করে ৮৫৯ মিলিয়ন ডলার ও ১,৭৭৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি। সেখানে বাংলাদেশের ঔষুধ আমদানির পরিমাণ ২৭৫ মিলিয়ন ডলারের মতো। এছাড়াও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ সহ অন্তত ১০০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশী ঔষুধ রপ্তানি হয়। ফলে এর গুণগত মান নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (WTO) থেকে গৃহীত সুবিধা অনুসারে বাংলাদেশ ২০৩৩ সাল অবধি ট্রিপস (TRIPS) সুবিধা পেয়ে থাকবে। ট্রিপস হলো ডব্লিউটিও এর একটি বিশেষ চুক্তি যার পূর্ণরুপ ‘Agreement on Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights’। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশ ২০৩৩ অবধি বিনা প্যাটেন্ট ফিতে ঔষুধ উৎপাদন করতে পারবে। আর ঠিক সেজন্যই বিদেশী ঔষুধের তুলনায় দেশীয় ঔষুধের দাম কম। সঠিক রপ্তানিনীতির মাধ্যমে এই শিল্পের রপ্তানি তাই বৃদ্ধি করা যাবে বহুগুণ।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের হার্ডওয়্যার তৈরি করতে বাংলাদেশ এখনো অক্ষম। কিন্তু সফটওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রে এদেশ পিছিয়ে নেই কোনো অংশেই। বর্তমানে বাংলাদেশের আইটি শিল্পের আকার বছরে মাত্র ১.৮৪ বিলিয়ন ডলার। স্বাভাবিক গতিতে ২০২৯ সালে যা হতে পারে ৩.৩ বিলিয়ন ডলারের অধিক।
কিন্তু এই বৃদ্ধির হারকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। এ শিল্পের উন্নতির জন্য প্রয়োজন নেই বড় লগ্নির। প্রয়োজন নেই ভারী যন্ত্রপাতির। প্রয়োজন নেই বিশাল ফ্যাক্টরির। প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। আর সেই মানবসম্পদ যথেষ্ট পরিমাণেই বাংলাদেশে বিদ্যমান।
কিন্তু ইন্টারনেটের গতির ধীরতা, ইন্টারনেটের নিশ্চয়তার অভাব, আইটি পণ্যে অতিরিক্ত এবং অযৌক্তিক ট্যাক্স মন্থর করে রেখেছে এই শিল্পের গতি।
যেকোনো শিল্প গড়ে ওঠার জন্য আগে সেই শিল্প সম্পর্কিত দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়। সেরকমই একটি শিল্প হলো জাহাজ নির্মাণ শিল্প। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশ বর্তমানে খুব বড় নাম নয়। কিন্তু জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। এ খাতে তাই বাংলাদেশের বেশ ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও ইউরোপের যেসকল দেশে আগে জাহাজ ভাঙা শিল্প ছিল, পরবর্তীতে সে সকল দেশই জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সফল হয়েছে। সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক একটি শিল্প হওয়ায় এতে প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ একসময় ছিল কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের মাটিতে ফলে না এমন ফল কমই আছে। কিন্তু পৃথিবীর সকল অঞ্চল এরকম নয়। বিশেষত ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশেই শুধু কয়েক প্রকারের ফল ও সবজি চাষ হয়ে থাকে। ট্রপিকাল ফ্রুটের চাহিদা সেসকল দেশে ব্যাপক। আর প্রক্রিয়াজাত এমন কৃষি পণ্যের দামও অনেক।
তবে এ শিল্পের বড় চ্যালেঞ্জ হলো গুণগত মান রক্ষা। সঠিক গুণগত মান রক্ষা না হলে বাজার সৃষ্টির বদলে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। কিন্তু সঠিক ভাবে এই শিল্পকে গড়ে তুলতে পারে এদেশের খুব সহজলভ্য ফল-ফলাদি বেশ উচ্চমূল্যে রপ্তানি করা সম্ভব।
একসময় পাট ছিল বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানী পণ্য। পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ। সেই সোনালী দিন আজ কালের গর্ভে বিলীন। পাটকল গুলো বন্ধ। কিন্তু পাটজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বে কিন্তু কমে নি। সারা বিশ্বে বর্তমানে পরিবেশ সহায়ক পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। তাই পাটকে শুধু পাটজাত পণ্য হিসেবে বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করলে হবে না। রপ্তানি করাতে হবে পরিবেশ সহায়ক সেরা বিকল্প হিসেবে।
পাটের সাহায্যে পণ্যের পাশাপাশি পলিথিনের বিকল্পও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু কোনো অজানা কারণে এই আবিষ্কার আজও বিপুল পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে না। অথচ এই একটি পণ্যই হতে পারে সারা বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্য দুষণের বিরুদ্ধে অন্যতম চাবিকাঠি। তাই পরিবেশ রক্ষাকারী পণ্য হিসেবে পাটজাত পণ্যকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
এইসব শিল্পের বাইরেও আরও বেশ কিছু সম্ভাবনাময় শিল্প বাংলাদেশে বিদ্যমান। আর শুধু গার্মেন্টস শিল্পের উপর সকল চাপ দেওয়ার বদলে এসব শিল্প হতে পারে বাংলাদেশের শক্তিশালী বিকল্প।
রপ্তানি আয় বৃদ্ধি যেকোনো দেশের ফরেইন রিজার্ভ বাড়ানোর সবচেয়ে বড় উপায়। কিন্তু এর বাইরেও কি কি উপায় অনুসরণ করলে হতে পারে রিজার্ভ সংকটের নিরসন?
বিদেশী অর্থায়নে দেশের উন্নয়নের সুবিধা বহুমুখী। তবে বিদেশী অর্থায়ন পেতে হলে আগে অবশ্যই তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে আইন প্রণেতাদের। বাংলাদেশের ট্যাক্স আইন, কোম্পানি মালিকানা আইন সহ নানা ধরনের আইন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগবান্ধব নয়। এ ধরনের আইন সংস্কার সহ বিনিয়োগের জন্য ওয়ান স্টপ সেবা, হয়রানি মুক্ত পরিবেশ, এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা অত্যন্ত জরুরী।
প্রবাসী বাঙালীদের অনেকেই কিছু টাকা জমিয়ে দেশে বাড়ি বা জমি কেনার পরিকল্পনা করেন। আবার অনেকেই চেষ্টায় থাকেন বিদেশী স্থায়ী সম্পদ গড়ার। এক্ষেত্রে বৈদিশিক মুদ্রার সাহায্যে দেশে সম্পদ কিনলে রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো বা বাতিল হতে পারে একটি বড় অনুপ্রেরণা। এর মাধ্যমে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার হার আরও বাড়বে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বন্দর চার্জ থেকে শুরু করে অন্যান্য চার্জসমূহ বৈদিশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় উৎস। বিদেশী জাহাজের পাশাপাশি দেশীয় রপ্তানিকারকদেরও এ সব চার্জ ডলারে পরিশোধের ব্যাপারে উৎসাহিত করা যেতে পারে। সঠিক ডিসকাউন্টের সাহায্যে এ বিষয়টির গ্রহণযোগ্যতাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
যেকোনো শিল্পের ক্ষেত্রেই দেশীয় পর্যায়ে কাঁচামাল উৎপাদনের পথ খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ আমদানি নির্ভর রপ্তানী শিল্পে আয়ের পাশাপাশি ব্যয়ও হয়। ফলে ফরেইন রিজার্ভ কমে যায়।
বাংলাদেশ যেই বিশাল সংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করে তার ভেতর অদক্ষ ও আধা-দক্ষ জনশক্তিই বেশি। কিন্তু একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার, বিল্ডার, অথবা নার্স একজন অদক্ষ নির্মাণ শ্রমিকের থেকে অনেক বেশি আয় করতে সক্ষম। দেশে অনেকগুলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও প্রশিক্ষণ গুলো কতটুকু কার্যকরী সে ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সহায়তা একান্ত কাম্য।
দিন শেষে বলা যায়, বাংলাদেশের মতো বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশে জনসম্পদই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। এদেশের ফরেইন রিজার্ভও গড়ে ওঠে খেটে খাওয়া গার্মেন্টস শ্রমিক এবং প্রবাসীদের টাকায়। কিন্তু একক শিল্পের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এখন প্রয়োজন একাধিক শিল্পে উন্নয়ন। একই সাথে প্রয়োজন নীতিগত ও কাঠামোগত পরিবর্তন। তাহলেই শুধু এ দেশকে ফরেইন রিজার্ভ ও অন্যান্য সকল দিকে উন্নত করে তোলা সম্ভব।
16-10-2024
Economy
ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা...
Read More23-05-2024
Economy
বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...
Read More09-04-2024
Economy
পবিত্র রমজান মাস জুড়ে রোজা পালনের মাধ্যমে দেহের...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.