Print World

Environment

তিস্তা একটি দুঃখের নাম - ভূরাজনীতি, না হওয়া চুক্তি ও একটি নদীর মৃত্যু

Written by: এস এম নাহিয়ান

25-08-2024

তিস্তা একটি দুঃখের নাম - ভূরাজনীতি, না হওয়া চুক্তি ও একটি নদীর মৃত্যু


‘তিস্তা একটি নদীর নাম’, ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত বিখ্যাত সে সিনেমার নামের সাথে এ লেখার শিরোনামের মিল থাকলেও, দৃশ্যপটের কোনো মিল নেই । এক সময় শুধু নদীর নাম থাকলেও এখন যেন এটি এক দুঃখের নাম। তবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী নিয়ে দুঃখ নতুন কিছু নয়। প্রতিবেশী ভারতের তীব্র বন্ধুসুলভ আচরণে বাংলাদেশে প্রবাহিত প্রায় সব কয়টি নদীরই উজানে রয়েছে বাঁধ। তিস্তাও তার ব্যাতিক্রম নয়। 

তবে অন্য সকল নদী থেকে তিস্তা কিছুটা হলেও আলাদা। কারণ নদীহত্যার নির্মম চিত্র তিস্তার মতো অন্য কোনো নদীতে এতটা ফুটে ওঠে না। তবে এটি মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশের তিস্তাকে হত্যা করা মানে শুধু নদীহত্যা নয়। বরং এ নদীর উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নির্ভরশীল দুই কোটিরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকাকে ধংস্বের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া। সেই কাজটিই হয়ে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। আজকের লেখা তাই সেই মৃত তিস্তাকে নিয়ে। যাতে একের পর এক বাঁধ দিয়ে করা হয়েছে কুক্ষিগত। এবং যাতে লঙ্ঘন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক নদী আইনের সকল আইনী মূলধারা। 


তিস্তা নদী 

তিস্তা সমস্যা নিয়ে জানার আগে তিস্তা নদী সম্পর্কে কিছু খুব সাধারণ তথ্য জানা প্রয়োজন। এ তথ্য গুলো আপনাকে এ নদীর বিস্তৃতি ও ভুপ্রকৃতি অনুধারব করতে সাহায্য করবে।

১। বাংলাদেশে প্রবাহিত আরও অনেক নদীর মতই তিস্তা নদীর উৎপত্তি হিমালয়ে। উত্তর সিক্কিমের ‘সো লামো’ (Tso Lhamo) লেক থেকে এ নদীর জন্ম। 

চিত্রঃ তিস্তার জন্মথান ‘সো লামো’ লেক। 

২। ‘সো লামো’ লেকের উচ্চতা ৫,৩৩০ মিটার। কিন্তু চাঙ্গু (Changu), ইয়ুমথাং (Yumthang) ও ডংকিয়া (Dongkia) রেঞ্জের আরো বেশ কিছু পাহাড়ী নদী এসে তিস্তায় মেশে। তাই ‘সো লামো’ লেকের অবস্থান মোটামুটি ৫,৩৩০ মিটারে হলেও তিস্তা নদীর অববাহিকা শুরু হয় ৮,৫৯৮ মিটার উচ্চতা থেকে। 

৩। এসকল নদীর মাঝে বাম দিক থেকে আগত নদীগুলোর উৎপত্তি তুলনামূলক ছোট হিমবাহ থেকে। এমন কিছু নদী হলো ‘লাচুং চু’ (Lachung Chhu) , ‘চাকুং চু’ (Chakung Chhu), ‘ডিক চু’ (Dik Chhu), ‘রানি খোলা’ (Rani Khola), ও ‘রাংপো চু’ (Rangpo Chu)।

কিন্তু ডান দিক থেকে আগত নদীগুলোর উৎস তুলনামূলক স্থায়ী ও বড় আকারের হিমবাহ। তাই এসব নদীতে পানির পরিমাণ ও স্রোত দুটিই বেশি। এ নদী গুলো হলো ‘জেমু চু’ (Zemu Chhu), ‘রাংইয়ং চু’ (Rangyong Chhu), ও ‘রাঙ্গিত নদী’ (Rangit River)। 

৪। সমতলের কাছাকাছি এসে এ নদীর নাম তিস্তা হয়েছে‘ত্রিস্রোতা’ থেকে। ত্রি স্রোতা অর্থ তিন স্রোত। ১৭৮৭ সালের পূর্বে তিস্তার গতিপথ ছিল জলপাইগুড়ি শহরের দক্ষিণে। সে সময় নদীটি তিনটি ধারায় প্রবাহিত হতো। এ তিনটি ধারার পূর্বেরটি ছিল করোতোয়া, মাঝে ছিল আত্রাই এবং পশ্চিমে ছিল পুনর্ভবা নদী। 

১৭৮৭ সালের প্রচন্ড ভূমিকম্পের ফলে তিস্তা নদীর গতিপথ পালটে যায়। এরপর থেকে সেটি জলপাইগুড়ির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। অতঃপর বাংলাদেশের ভেতর এসে মিলিত হয় ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর সাথে। 


চিত্রঃ জেমস রেনেল এর ১৭৭৬ সনে তৈরি ম্যাপ যেখানে তিস্তা মিলিত হয় গঙ্গায়। ১৭৮৭ সনের বন্যায় এর গতিপথ পরিবর্তন হয়  (উইকিমিডিয়া কমনস) 

৫। ৪১৪ কিলোমিটার লম্বা এই নদীর ১৫১ কিলোমিটার সিক্কিমে, ১৪২ কিলোমিটার পশ্চিম বঙ্গে এবং ১২১ কিলোমিটার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। 

লম্বায় ৪১৪ কিলোমিটার হলেও এ নদীর অববাহিকার আয়তন ১২,১৫৯ বর্গ কিলোমিটার। যার ভেতর ১০,১৫৫ বর্গ কিলোমিটার ভারতে এবং ২০০৪ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশে অবস্থিত। 


৬। বাংলাদেশের অববাহিকার আয়তন সবচেয়ে কম হলেও এ নদীর উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শতকরা হিসেবে ৭১ ভাগ বাংলাদেশে, ২৭ ভাগ পশ্চিম বঙ্গে এবং মাত্র ২ ভাগ মানুষ সিক্কিমে বসবাস করেন। 

এ তথ্যগুলো থেকে বোঝা যায় যে তিস্তা নদী বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বহমান একটি নদী। এ নদী পাহাড়ী অঞ্চলে যেমন সরু ও তীব্র স্রোতস্বিনী, সমতলে তেমনই বিস্তৃত ও বিশাল জলাধার। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার মানুষ এ নদীর উপর সরাসরি নির্ভরশীল। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীলের সংখ্যা বাংলাদেশেই বেশি। সে হিসেবে এ নদীর উপর বাংলাদেশের অধিকার কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু বাস্তবে কি তার প্রতিফলন ঘটে? 

তিস্তার বাঁধসমূহ 

তিস্তা নদীর বাঁধ নিয়ে সকলেই হয়তো অবগত। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে এ নদীতে আসলে কয়টি বাঁধ। বাংলাতে এক কথায় সকল স্থাপনাকে বাঁধ বললেও ব্যবহার অনুযায়ী ইংরেজিতে এর নানা প্রকারভেদ রয়েছে। তবে ড্যাম, ব্যারেজ, আর পাওয়ার প্রজেক্ট; যে নামেই ডাকা হোক না কেন তিস্তা নদীতে বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ বাঁধের সংখ্যা ১১টি। ঠিকই পড়ছেন, একটি দুইটি নয় বরং ১১টি! 

খুব সংক্ষেপে যদি এ বাঁধগুলোর একটি তালিকা করি তবে সেটি হবে এরকমঃ

 

বাঁধের নাম 

অবস্থান 

উৎপাদন  

তিস্তা ফিফথ ড্যাম 

গ্যাংটক, সিক্কিম 

৫১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

২।

তিস্তা থার্ড ড্যাম 

মঙ্গন, সিক্কিম 

১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

৩।

তিস্তা লো ড্যাম ৩ 

কালিম্পং, পশ্চিম বঙ্গ 

১৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

৪।

তিস্তা লো ড্যাম ৪ 

কালিম্পং, পশ্চিম বঙ্গ

১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

৫।

তিস্তা ব্যারেজ 

গজলডোবা, জলপাইগুড়ি, পচিম বঙ্গ। 

৯ লক্ষ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্য, ৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

৬।

তিস্তা সেচ প্রকল্প 

হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট 

৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের লক্ষ্য

৭।

তিস্তা সিক্সথ ড্যাম 

গ্যাংটক, সিক্কিম 

৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

৮।

রাঙ্গিত থার্ড ড্যাম 

সিক্কিম 

৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

৯।

গাটি হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্ট 

পাকইয়ং, সিক্কিম 

১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

১০।

ডিকচু রিভার হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট 

গ্যাংটক, সিক্কিম

৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 

১১।

মধ্য ভারত পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড 

গ্যাংটক, সিক্কিম 

৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ 


লক্ষণীয় যে, এই ১১টি বাঁধের ১০টির অবস্থানই ভারতে। যার ভেতর ৯টিই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত। সিক্কিম রাজ্যে তিস্তা নদী এবং এর বিভিন্ন শাখা নদীর তীব্র স্রোতস্বিনী প্রকৃতিই এর মূল কারণ। আর এই স্রোতের কারণ অতি স্বল্প দূরত্বে নদীর অববাহিকার উচ্চতার পরিবর্তন। মাত্র ১০০ কিলোমিটারের ভেতরে এ নদীর অববাহিকা ৮,৫৯৮ মিটার থেকে নেমে আসে মাত্র ২১৩ মিটারে। ফলস্বরুপ তিস্তা নদী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য আদর্শ এক স্থান। 


চিত্রঃ স্রোতস্বিনী তিস্তা (দ্যা ডেইলি স্টার, ২০১৯ ) 


কিন্তু এটিও লক্ষ্যণীয় যে, ভারতের এত গুলো বাঁধ পানি পেলেও, বাংলাদেশের তিস্তা সেচ প্রকল্প পর্যাপ্ত পানির ছিটে ফোটাও পায় না। আর তার মূলে রয়েছে পশ্চিম বঙ্গের গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ। 

গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ 

পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা তিস্তা বারেজ ভারতীয় প্রান্তে তিস্তার ওপর শেষ বাঁধ। এটি ভারতের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প। এই প্রকল্পের সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গের ৬টি জেলায় ৯ লক্ষ ২২ হাজার জমি সেচ করার চেষ্টা হয়ে থাকে। এ ব্যারেজের কাজ শুরু হয় ১৯৭৫-৭৬ সালের দিকে। ১৯৮৮ সালের মধ্যে ব্যারেজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই নির্মাণ প্রকল্পে খরচ হয়েছিলো তৎকালীন সময়ের ৪৬০ মিলিয়ন ডলার। এরপর থেকেই বাংলাদেশের জন্য অন্যতম সমস্যা হয়ে ওঠে এই গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ। 


চিত্রঃ গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ, পশ্চিম বঙ্গ। 


তিস্তা সেচ প্রকল্প, বাংলাদেশ 

ভারতের ন্যায় বাংলাদেশও তিস্তার উপর বাঁধ নির্মাণ করে। যা পরিচিত তিস্তা সেচ প্রকল্প নামে। বাংলাদেশের এ ব্যারেজটি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা থেকে নিলফামারী জেলার ডিমলাতে বিস্তৃত।  এ পয়েন্টটি ডালিয়া পয়েন্ট নামেও সুপরিচিত।

তবে এই ব্যারেজটি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিলো সেই ব্রিটিশ আমলে। খরা-পিড়িত অঞ্চলে সেচের জন্য ১৯৩৭ সালে এর প্রাথমিক পরিকল্পনার ছক আকা হয়। মূল পরিকল্পনা হয় পাকিস্তান আমলে, ১৯৫৩ সালে। তবে শেষ অবধি উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯০ সালে। 

সৌদি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, আবুধাবি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় সেসময় খরচ হয়েছিলো ২৫০০ কোটি টাকা। ১৯৯০ এর ৫ আগস্ট কার্যক্রম শুরু হয় ব্যারেজটির। কিন্তু বর্তমানে পানির অভাবে এর কার্যক্রম অনেক সময়েই থমকে থাকে।  

বাংলাদেশের তিস্তা হত্যা 

ভারতের গজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজের ন্যায় বাংলাদেশও সেচ কার্যক্রমে ব্যারেজ নির্মাণ করেছে। কিন্তু তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যাটি হলো বাংলাদেশ ভাটির দেশ, এবং ভারত উজানের। 


তাই গজলডোবা ব্যারেজ তৈরি করার পরই বাংলাদেশের তিস্তা নদী ক্রমাগত ধুকতে থাকে।  ১৯৭৮-৭৯ থেকে ১৯৯৮-৯৯ অবধি তিস্তা ব্যারেজ থেকে পানি নিষ্কাষণের হিসাব দেখলেই তা বোঝা যাবে। 


সূত্র: ফকরুল অ্যান্ড হিগানো (২০০৩)


উপর্যুক্ত চার্টটি দেখলেই বোঝা যায় এই বাঁধ নির্মাণের সাথে সাথেই তিস্তার পানি আশংকাজনক ভাবে কমেছে। চার্টটির শেষ সময়কাল, ১৯৯৮-৯৯ সালে পানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৬ কিউমেক। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরীপ অনুসারে গজলডোবা বাঁধ নির্মাণের পূর্বে ডালিয়া পয়েন্টে পানির গড় বাৎসরিক প্রবাহ ছিল ৬,৭১০ কিউসেক। বাঁধ নির্মাণের পরে ১৯৯৫ সালের দিকে তা নেমে আসে ২,০০০ কিউসেক এ। এমনকি ক্ষরার সময়ে তা কমে আসে ১,৫০০ কিউসেক থেকে এমনকি ২০০-৩০০ কিউসেক অবধি। 


সূত্রঃ (দ্যা ডেইলি স্টার, ২০২২) 


এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাংলাদেশের কৃষিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ‘আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা ইন্সটিটিউ’ এ বিষয়ে একটি গবেষণা করে। এতে জানা গেছে তিস্তার পানির অভাবে বাংলাদেশে বোরো ধানের উৎপাদন কমেছে প্রতি বছরে ১৫ লক্ষ টন। যা দেশের সামগ্রিক ধান উৎপাদনের ৯%! তাদের গবেষণা মতে ২০৫০ সালের মধ্যে কমার এই হার পৌছাবে ১৪% এ।  


তবে এতে যে শুধু বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়। বরং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ এরও। ভারতের তিস্তা বাঁধের পর তিস্তা অববাহিকার বাংলাদেশ অংশে পানির স্তর কমেছে ১০ মিটার এরও বেশি। 


আলোচিত তথ্য উপাত্ত গুলো বেশ পুরোনো হলেও সমসাময়িক সময়ে অবস্থার কোনো উন্নতি হয় নি। বরং হয়েছে অবনতি। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের এ স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে এক পদযাত্রাও হয়। কারণ সে সময় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পানির সম্পূর্ণ প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছিলো। বাংলাদেশের প্রতিবাদের পরে কিছুটা পানি ছাড়লেও পরবর্তী সময়ে একই ধারা বজায় রেখেছে ভারত। অবস্থার ভয়াবহতা বোঝাতে নিচের একটি চিত্রই যথেষ্ট। 


চিত্রঃ ধু ধু তিস্তা (ওআরএফ, ২০১৬) 


উপরের ছবিটি প্রকাশিত হয় অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর ২০১৬ সালের একটি রিপোর্টে। ছবির ফটোগ্রাফার মায়া মিরচন্ডানি (Maya Mirchandani)। তার ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন গজলডোবা বাঁধের এক প্রান্তে শুকিয়ে খা খা করছে তিস্তা নদী। পানির চেয়ে যেন বালুর আধিক্যই বেশি। 


চলুন দেখা যাক আরেকটি ছবি। একই ফটোগ্রাফারের তোলা একই রিপোর্টের এই ছবিটিতে রয়েছে একজন মানুষ আর একটি লোহার পোল। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও ছবিটি আসলে তিস্তার বুকে তোলা। বর্ষার সময় এই পোলটি বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা হিসেবে কাজ করে। অনেকসময় পোলটির অনেক উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হয়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে তিস্তার বাংলাদেশ অংশ এমনই শুকনো খটখটে থাকে। অথচ সে সময়ই খরা হয়। আর এ সময়টিতেই কৃষি কাজে সবচেয়ে বেশি পানির দরকার। 




চিত্রঃ মৃত নদী  (ওআরএফ, ২০১৬) 

তিস্তা চুক্তি ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যার্থতা 

এই তিস্তাকে ঘিরে চুক্তির প্রচেষ্টার শেষ নেই বাংলাদেশের। পরিহাসের বিষয় হলো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও সময়ে সময়ে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু আজও তিস্তা চুক্তি ও তিস্তার পানি, দুটোই যেন সোনার হরিণ। তবে এই তিস্তা চুক্তির সম্পূর্ণ ইতিহাস জানতে চাইলে ঘুরে দেখতে হবে অনেক পেছনে। 

সাল ১৯৫১

১৯৫১ সালে প্রথমবারের মতো তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের মাঝে। একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। যদিও চুক্তিটি ছিল ‘ইন্ডিয়া- ইস্ট পাকিস্তানি এগ্রিমেন্ট অন দ্যা শেয়ারিং অফ দ্যা গ্যাঙ্গেস ওয়াটারস’ - অর্থাৎ গঙ্গা তথা পদ্মার পানি নিয়ে। কিন্তু এ চুক্তির ভেতর অন্তর্ভুক্ত ছিল তিস্তার নদীও। সমতার ভিত্তিতে পানি বন্টনের সমঝোতা হয় তখন। 

সাল ১৯৭২ 

সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশ। ভারতের সাথে প্রায় ৫৪টি আন্তঃদেশীয় নদী রয়েছে বাংলাদেশের। তাই এ সকল নদীর পানি বন্টন ও অন্যান্য বিষয়ে সিধান্ত নেওয়ার জন্য গঠিত হয় ‘যৌথ নদী কমিশন’। যা ছিল ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব চুক্তির অন্তর্গত। 


সাল ১৯৮৩

অন্তবর্তীকালীন ভাবে তিস্তার পানি বন্টনের সমঝোতা হয়। ১৯৮৫ সাল অবধি ভারতের পাওয়ার কথা ছিল ৩৯% পানি, আর বাংলাদেশের ৩৬% পানি। এবং বাকি ২৫% পানি নদীর নাব্যতা বজায় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে বরাদ্দ ছিল। 

সাল ১৯৮৪

হাইড্রোলজিকাল তথ্য অনুসারে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় অংশের পানির বন্টন পুনঃবিন্যাস করা হয়। সে সময় ভারত পেত ৪২.৫% পানি এবং বাংলাদেশ পেত ৩৭.৫ %। বাকি ২০% রাখা হয় অলিখিত বা নদীর জন্য। 

সাল ১৯৯৭

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের তিস্তা সেচ প্রকল্প স্থাপনের পর ১৯৯৬ সালে গঙ্গা/পদ্মার ফারাক্কা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তারপরেও টিপাইমুখ বাঁধ, ভারতের রিভার লিংকিং প্রজেক্ট, তিস্তা, ফেনী, মানু, মুহুরি, ধরলা, দুধকুমার ইত্যাদি নদীর পানি বন্টন নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা তিক্ততা চলছিল। পানি বন্টন সমস্যা নিরসনে সে সময় নতুন করে গঠিত হয় নদী বিষয়ক ‘যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটি;। 

সাল ২০০৪

একই সমস্যা নিরসনে আবারও গঠিত হয় ‘জয়েন্ট টেকনিক্যাল গ্রুপ’। সে সময় তারা তিস্তার পানি বন্টন ও খরা মৌসুমে পানি ভাগ নিয়ে একটি ড্রাফটও তৈরি করে। কিন্তু ২০০৫ সালে এই গ্রুপের চতুর্থ মিটিং এর পরে তারা তাদের ব্যার্থতা ঘোষণা করে। সে বছরেই ‘যৌথ নদী কমিশন’ তাদের ৩৬ তম মিটিং এ ঘোষণা করে যে, খরা মৌসুমে দুই দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি নদীতে নেই। তাই সমতার ভিত্তিতে চুক্তিই হতে পারে একমাত্র সমাধান। 

সাল ২০০৭ 

যৌথ নদী কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ আবারও চুক্তির প্রস্তাবনা তোলে। এ সময় নদীর ৮০ ভাগ পানি সমান সমান ভাগ করার কথা বলা হয়। কিন্তু সে সময় ভারত তা মানে নি। 

সাল ২০১১

তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফর করেন। এর পূর্বে ২০১০ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীই তিস্তা সমস্যার দ্রুত সমাধানে পৌছানোর লক্ষে একটি যৌথ বিবৃতি দেন। এরই আলোকে ২০১১ সালে ১৫ বছরের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরের পরিকল্পনা হয়। এ চুক্তিতে ভারতের জন্য ৪২.৫% এবং বাংলাদেশের জন্য ৩৭.৫% পানি বন্টনের কথা ছিল।  


কিন্তু বাঁধ সাধে পশ্চিম বঙ্গ ও তাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। ২০১১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে মমতা ব্যানার্জীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মূহুর্তে তা বাতিল করেন মমতা ব্যানার্জী। আর ভারতীয় সংবিধানের ধারা ২৫৩ অনুযায়ী আন্তঃদেশীয় নদী ও পানি-চুক্তির ব্যাপারে রাজ্য সরকারের স্বাধীনতা রয়েছে। তাই সেবার ভেস্তে যায় তিস্তা চুক্তি। 


সাল ২০১৫

ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসেন বাংলাদেশ সফরে। সে সময়ে ছিটমহল চুক্তি সম্পাদিত হলেও হয়নি তিস্তা চুক্তি। মমতা ব্যানার্জী সেবার মোদীর সঙ্গ নিলেও তিস্তার ব্যাপারে ছিলেন একেবারেই নিশ্চুপ। 


পরবর্তীতে ২০১৭ সালে হাসিনার ভারত সফর, ২০১৯ সালে পুনঃসফরেও চেষ্টা করা হয়েছে তিস্তা চুক্তির। কিন্তু মমতা ব্যানার্জীর অনড় অবস্থানের কারণে সম্ভব হয় নি সে চুক্তি। পরবর্তীতে তিস্তা নদী শাসন ও পুনর্জীবিত করার জন্য চীনের সাথেও ১ বিলিয়ন ঋণ নিয়ে আলোচনা করে বাংলাদেশ। সে আলোচনা ভারতকে বেশ অস্বস্তিতে ফেললেও শেষ পর্যন জল কোনো দিকেই গড়ায় নি। আর তাই আজও শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি গজলডোবা পেরিয়ে আর বাংলাদেশে গড়াচ্ছে না।  


কিন্তু বন্যা মৌসুমে পানি ছাড়তে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাই সময়ে সময়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশীদের। বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে বাংলাদেশীদের দুর্ভোগ পুরোপুরি প্রাকৃতিক নয়। কারণ পানি না দিয়ে নদীর নাব্যতা কমিয়ে নদীকে প্রায় হত্যা করে বাংলাদেশে বন্যার আশংকা বহুগুণে বাড়িয়েছে ভারত। যে কারণে সামান্য পানি প্রবাহ হতেই পানি উপচে পড়ে নদীর দুই পাড়ে। আর দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহ, যেমন  লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা ভেসে যায় বন্যায়। 


কেন পশ্চিম বঙ্গের সমস্যা 

লেখার এ অংশে এসে বিষয়টি পরিষ্কার যে, গজলডোবা বাঁধের কারণেই বাংলাদেশ তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত। আর এ সমস্যাটি যতটি না প্রাকৃতিক, তার থেকে বেশি রাজনৈতিক। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের তিস্তার পানির সাহায্যে প্রায় ৯ লক্ষ ২২ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অপরিদিকে বাংলাদেশও ৭ লক্ষ হেক্টর জমি সেচে তিস্তার পানি ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু এ পরিমাণ সেচ প্রদানের জন্য প্রতি সেকেন্ডে প্রয়োজন ১,৬০০ কিউবিক মিটার পানি। কিন্তু খরা মৌসুমে তা অনেক সময় ১৫০-২০০ কিউবিক মিটারেও নেমে আসে। 


চিত্রঃ তিস্তার পানিতে পশ্চিম বঙ্গের সেচ দেওয়া জমি, জলপাইগুড়ি। (ওআরএফ, ২০১৬) 

তাই পশ্চিম বঙ্গ সরকার নিজেদের অভ্যন্তরীন প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ক্রমাগত বঞ্চিত করছে বাংলাদেশকে। এক্ষেত্রে তাদের কিছু খোঁড়া যুক্তিও রয়েছে। যেমন, বাংলাদেশের তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু হওয়ার পর এদেশে বছরে তিনটি ফসলী মৌসুম সম্ভব হয়েছে। তাই এর চেয়ে বেশি পানির উপর বাংলাদেশের অধিকার নেই। কিন্তু ২০১৪ এর পর থেকে খরা মৌসুমে যে পানির পরিমাণ থাকে শূণ্য, সে ব্যাপারে পশ্চিম বঙ্গ পুরোপুরি নিশ্চুপ। 

সমস্যার পেছনে কি শুধুই পশ্চিম বঙ্গ? 

উপর্যুক্ত লেখাটি পড়ে মনে হতেই পারে যে তিস্তা সমস্যার জন্য শুধু পশ্চিম বঙ্গ সরকার দায়ী। কথাটি অনেকাংশে ঠিক হলেও, পুরোপুরি ঠিক নয়। কেন্দ্রীয় সরকার যতই বাংলাদেশের সাথে চুক্তিতে সমর্থ হোক না কেন, মূল সমস্যাটি নদীর আরও উজানে। 


মূল সমস্যার পেছনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার 

খেয়াল করুন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বরাবরই গজলডোবা পয়েন্টে যে পরিমাণ পানি আসবে তার উপর ভিত্তি করে পানি বন্টন চুক্তিতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু সিক্কিমে অবস্থিত অন্যান্য বাঁধের কারণে গজলডোবাতেই যে প্রয়োজনীয় পানির প্রবাহ নেই, সে ব্যাপারে কেন্দ্র নিশ্চুপ। ‘ওয়াটার পলিসি’ শীর্ষক জার্নালের একটি গবেষণা পত্রে ভারতের উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে সহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করার সম্ভাবনা আলোচনা করা হয়। 

চিত্রঃ তিস্তা নদীর অববাহিকায় ভারতের স্থাপিত, চলমান, এবং ভবিষ্যৎ বাঁধ সমূহের অবস্থান (রহমান অ্যান্ড মামুন, ২০২০) 


২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, তিস্তা অববাহিকায় ভারত সরকার আরও ১২টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর কাজ চলমান রেখেছে। এছাড়াও আরও ২৭টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এক সিক্কিম থেকেই অন্তত ৫০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এছাড়াও রয়েছে রিভার লিংকিং প্রজেক্টের পরিকল্পনা। এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে তিস্তা ও গঙ্গা (বাংলাদেশের পদ্মা) থেকে আরও বিপুল পরিমাণ পানি ভারতের খরা-কবলিত অন্যান্য অঞ্চলে খালের সাহায্যে প্রবাহিত করা হবে। ফলে বাংলাদেশের পানি সমস্যা আরও তীব্র ভাবে প্রকট হবে।


সিক্কিম বাসীর অবস্থান

সিক্কিমে ভারত সরকারের এ বিপুল কর্মযজ্ঞে যে সিক্কিম বাসীর খুব একটি মত রয়েছে তা নয়। বরং সিক্কিমে বসবাসরত লেপচাদের কাছে নদী ও নদীর পানি হলো প্রকৃতি ও ধর্মের প্রতীক। বিশেষ করে তিস্তার একটি শাখা নদী ‘রাঠং চু’ (Rathong Chu) তাদের ধর্মগুরু পদ্ম সম্ভা এর পরম পবিত্র ভূমি। 

এ কারণেই ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল অবধি ৯১৫ দিন ব্যাপী পালাক্রমে অনিদির্ষ্টকালের জন্য অনশন কর্মসূচি পালন করে তারা। 


চিত্রঃ ২০০৭ সালে অনশনরত লেপচা (হরি অধিভরকর, ২০০৭) 


ফলস্বরুপ রাজ্য সরকার বাধ্য হয় অন্তত ৭টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজ বন্ধ করতে। কিন্তু ২০১১ সালে সিক্কিমের ভূমিকম্পের পরে লেপচাদের মনে আরও দৃড় ধারনা চেপে বসে। তাদের বিশ্বাসে পবিত্র নদীসমূহতে মনুষ্য হস্তক্ষেপই এমন দুর্যোগের কারণ ছিল। 


ধর্মীয় অনুভূতির বাইরে অনেক পরিবেশবাদীও সিক্কিমে এই অতিরিক্ত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। সবচেয়ে পরিহাসের বিষয় হলো, সিক্কিমে উৎপাদিত বিপুল বিদ্যুতের খুব সামান্য অংশ, শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ প্রয়োজন হয় সিক্কিম বাসীর। এর বাইরে পুরোটাই পাঠানো হয় ভারতের অন্যান্য রাজ্যে। 

শেষকথা ও যা করণীয় 

 

পরিশেষে এটুকুই বলা যায় যে, তিস্তায় একের পর এক বাঁধ প্রদান আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আন্তর্জাতিক সকল কনভেনশন ও আইন অনুযায়ী, কোনো আর্ন্তজাতিক নদীতেই আরেক দেশের ক্ষতি হয় এমন উপায়ে কোনো বাঁধ দেওয়া যাবে না। অথবা পানি অন্য খাতে প্রবাহিত করা যাবে না। সে প্রেক্ষিতে ভারতের এই প্রতিটি বাধই অবৈধ। বিশেষত গজলডোবা বাঁধ খরার সময়ে বন্ধ করে রাখা হঠকারিতার চূড়ান্ত। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে গমন সহ অন্যান্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পানি পাওয়ার আশা যে চিরজীবন দুরাশাই থেকে যাবে, তা বলা বাহুল্য। 

তথ্যসূত্র

১। (Sarder, 2021)
২। (Rahman and Mamun, 2020

৩। (Roy and Chandra, 2014

৪। (OFR, 2016

৫। (Mukherjee and Saha, 2013)  

৬। (Akter and Khatun, 2022)

৭। (Raisul, 2024)

৮। (Islam, 2022)

৯। (Lockett and Trust, 2023)

১০। (Hoque, 2023)

১১। (Mondol and Islam, 2017)

১২। (Islam, 2019

১৩। (Mamun, 2024

১৪। (Gambhir, 2021

১৫। (ClearIAS et al., 2024)

১৬। (Singh, 2024

১৭। (Byjus et al., 2024

Previous Post

Next Post

Related Posts

বাঁধের বিপরীতে বাঁধ - কতটা যুক্তি আর কতটা আবেগ?

30-08-2024

Environment

বাঁধের বিপরীতে বাঁধ - কতটা যুক্তি আর কতটা আবেগ?

বাংলাদেশে প্রবেশ করা আন্তর্জাতিক নদী আর তার উপর বাঁধ, এ...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter