Home » MAWblog » Sustainable Development » বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ও গার্মেন্টস শিল্পঃ শুধু একটি শিল্প কতদিন টেনে নিতে পারবে বাংলাদেশকে?
Sustainable Development
Written by: এস এম নাহিয়ান
01-07-2024
বাংলাদেশ ও গার্মেন্টস শিল্প, আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারে এ দুটো যেন একে অপরের সমার্থক। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে শুরু করে বিশ্বের বৃহৎ বাজারগুলোতে বাংলাদেশী পোষাকের শক্ত অবস্থান নতুন কিছু নয়। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে, বাংলাদেশীরা বিদেশ থেকে পোষাক কিনে দেশে এনে দেখেন তাতে লেখা ‘Made in Bangladesh’। বিষয়টি বোধ করি বেশির ভাগ বাংলাদেশীর জন্যই গর্বের। কিন্তু সেই গর্বের সাথে স্বস্তির কতটুকু মিশ্রণ রয়েছে তা বলা মুশকিল। বরং যতই দিন যাচ্ছে, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ততই যেন অস্বস্তির পারদটা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুরক্ষা বজায় রাখতে শুধু একটি শিল্পই কি যথেষ্ট? নাকি প্রয়োজন একাধিক শিল্পের উন্নয়ন। একটি শিল্পের উপর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশের জন্য ঠিক কতটা বিপজ্জনক? সে নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে আজকের লেখাটিতে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের পোশাক খাতে ব্যবসায়ীদের বর্তমান সমস্যা
গার্মেন্টস শিল্পের উপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা একদমই নতুন কিছু নয়। গত অনেক বছর ধরেই তৈরি পোষাক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য। কিন্তু অন্য রপ্তানি পণ্যের সাথে এর ব্যবধান যেন আকাশ পাতাল।
গত পাঁচ বছরের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাত আক্ষরিক অর্থেই পুরোপুরি গার্মেন্টস এর উপর নির্ভরশীল। গত ৫ বছরে সবসময়ই রপ্তানিতে এর অবদান ছিল শতকরা ৮০ শতাংশের বেশি। সর্বনিম্ন ছিল ৮৪.২%।
জিডিপিতে অবদানের ক্ষেত্রেও তৈরি পোষাক শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। ২০২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশে জিডিপি ছিল ৪৭০.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ৯.২৫% অবদানই ছিল গার্মেন্টস শিল্পের। এছাড়াও প্রায় ৪২ লক্ষ মানুষের কর্ম সংস্থান করে এই শিল্প। যার ভেতর প্রায় ২৬ লক্ষই নারী। সুতরাং রপ্তানি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সকল ক্ষেত্রেই গার্মেন্টস শিল্পের অনস্বীকার্য অবদান।
একক শিল্পে নির্ভরশীলতাঃ আশার আলো নাকি বিপদের চাবিকাঠি?
যেকোনো দেশের অর্থনীতিতে এতটা বিশাল অবদান রাখলে সে শিল্পের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু একক শিল্পে নির্ভরতা কতটুকু নিরাপদ সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। উপরের তথ্য উপাত্ত গুলো যেমন প্রকাশ করে গার্মেন্টস শিল্পের অমূল্য অবদান, ঠিক একই ভাবে নির্দেশ করে বাংলাদেশের অন্যান্য রপ্তানীমুখী শিল্পের সারশূন্যতা।
তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, একক শিল্পে নির্ভরযোগ্যতা কোনো দেশের জন্যই ভাল নয়। কারণ সেই একটি শিল্প যদি কোনো ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলেই সেই দেশের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হতে পারে একক শিল্পে নির্ভরশীল কিছু দেশের অর্থনৈতিক চিত্র।
একক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল কিছু দেশের গল্প
ভেনেজুয়েলা
ভেনেজুয়েলার তেল শিল্পের উপর নির্ভরশীলতা প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো। ১৯২০ এর দশকে তেলের খনি আবিষ্কারের পরেই অসংখ্য কোম্পানি ভেনেজুয়েলাতে তেল অম্বেষণে লেগে পড়ে। ১৯৩৫ সালের মধ্যে ভেনেজুয়েলার রপ্তানি আয়ের ৯০ ভাগ আসতে থাকে তেল শিল্প থেকে। অতঃপর প্রায় ১০০ বছরের শাসন আমলে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির চিত্র বদলে যায় আকাশ পাতাল। ৭০ এর দশকে তারা হয়ে ওঠে লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশ।
কিন্তু বর্তমানের চিত্রটা একদমই ভিন্ন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২০, এই ছয় বছরে তেল সহ নানা খাতে অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়েছে ভেনেজুয়েলা। ফলে ক্রমাগত হারে কমেছে দেশটির অর্থনীতির আকার। তবে তেল উত্তোলন হ্রাসের এই ধারা শুরু হয় ২০০৫ এর পর থেকেই। সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলা একটি ব্যর্থ পেট্রোস্টেটের অন্যতম উদাহরণ।
একক শিল্পের উপর প্রচন্ড ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়া আরেকটি দেশের উদাহরণ হলো নাউরু। ১৭৯৮ সালে প্রথম যখন এই দ্বীপটিকে আবিষ্কার করা হয়, তখন ব্রিটিশ জাহাজের অধিনায়ক এর নাম দেন ‘প্লেজেন্ট আইল্যান্ড’ (Pleasant Island)। প্রাকৃতি সৌন্দর্যে অপরূপ নাউরু অর্থনৈতিক ভাবেও দারুণ অবস্থানে আসতে শুরু করে তাদের খনিজ সম্পদ রপ্তানির মাধ্যমে। আর সেই সম্পদটি ছিল ফসফেট। ১৯২০ এর দশকের শুরুতে নাউরু প্রায় ২ লক্ষ টন ফসপেট রপ্তানি করতো। ১৯৪০ এর দিকে যার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় প্রায় ৪ গুণ।
কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত খনিজ উত্তোলন ভয়াবহ ফলাফল ডেকে আনে নাউরু বাসীর জন্য। পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতির পাশাপাশি ফসফেটের ভান্ডারও ফুরিয়ে আসে। আর একবিংশ শতাব্দীতে এসে এক কালের ধনী নাউরু এখন অস্ট্রেলিয়ার কারাগার হিসেবে পরিচিত। কারণ তাদের অর্থনীতির অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে, দেশটির আয়ের অন্যতম উৎস এখন নাউরুতে স্থাপন করা অস্ট্রেলিয়ান কারাগার।
এমন দুইটি দেশের ন্যায় জিম্বাবুয়ে, শ্রীলংকা, নাইজেরিয়া থেকে শুরু করে আরও নানা দেশের গল্পটা একই রকমের। একক শিল্পের উপর পরম নির্ভরতা কোনো দেশের জন্যই আদতে ভাল ফল ডেকে আনে নি।
যদিও এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, বাংলাদেশ তো কোনো খনিজ শিল্পের উপর নির্ভরশীল নয়। তাই খনিজ ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় নেই। কিন্তু একক শিল্পের উপর নির্ভরশীলতার যে ঝুঁকি, তা কিন্তু এ কথার সাহায্যে এড়ানোর সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বিশ্ব দরবারে ঠিক কতটা শক্তিশালী?
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প যে বিশ্বে অন্যতম শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্বে বাংলাদেশী তৈরি পোষাক শিল্পের অবস্থান প্রথম তিনটি দেশের মধ্যেই। কিন্তু তাই বলেই যে এ শিল্প একটি দেশের একক নির্ভরশীলতার স্থান পাওয়ার মতো শক্তিশালী, বিষয়টা এমন নয়। বরং গভীর ভাবে বিবেচনা করলে গার্মেন্টস শিল্পের বেশ কিছু ঝুকিপূর্ণ দিক রয়েছে।
আমদানি-নির্ভর শিল্প
গার্মেন্টস খাত নিজে রপ্তানীমুখী হলেও এটি একটি আমদানি নির্ভর শিল্প। অর্থাৎ এর কাঁচামালের জন্য বাংলাদেশকে নির্ভর করতে হয় বিদেশের উপর। বিশেষত চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত থেকেই কাঁচামাল আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। অর্থাৎ এই শিল্পের লাভজনকতা পুরোপুরি বাংলাদেশের হাতে নেই। বরং অন্য দেশ যদি কাঁচামালের দাম বাড়ায়, তাহলে বাংলাদেশও তৈরি পোষাকের দাম বাড়াতে বাধ্য। কিন্তু বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ টিকেই আছে এর পণ্যের স্বল্পমূল্যের কারণে। তাই হটাৎ করে দাম বাড়ানোর মতো বিলাসিতা করার সুযোগ এদেশের ব্যবসায়ীদের নেই।
পরিবর্তনযোগ্য উৎস
একটি শিল্প তখনই প্রকৃত অর্থে শক্তিশালী হয়ে থাকে যখন তাকে সহজে পরিহার করা যায় না। অর্থাৎ বাজারে যখন একটি পণ্যের উৎপাদনকারী একজনই থাকবে, তখন সেই হবে সবচেয়ে শক্তিশালী। তবে গার্মেন্টস শিল্প কোনোভাবেই তেমন শিল্পের কাতারে পড়ে না।
যদি আমরা তাইয়াওয়ানের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলেই দেখা যাবে সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে তাদের আধিপত্য। বিশ্বের বড় বড় সকল ব্র্যান্ডই চিপের জন্য টিএসএমসি (TSMC) এর উপর নির্ভরশীল। কারণ সে ধরনের শিল্প গড়ে তোলার জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এছাড়াও প্রয়োজন জটিল কারিগরি ক্ষমতা। কিন্তু তৈরি পোষাক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা একটি ভারী শিল্পের তুলনায় অনেকটাই সহজ। তাই বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্ব বাজারে অনেক দেশই আছে যেখান থেকে তৈরি পোষাক সংগ্রহ করতে পারবে বর্তমান ক্রেতারা।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান
অনেকেই মনে করে থাকেন গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশের তেমন কোনো বড় প্রতিদন্দ্বী নেই। তবে এর চেয়ে ভুল ধারনা আর হতে পারে না। বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের প্রতিদন্দ্বী এখন ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ যেমন এক সময় নানা ধরনের ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্পকে এগিয়ে নিয়েছিলো, ভিয়েতনামও ঠিক তাই করছে। শুধু নীতিমালা নয়, দক্ষতা এবং দ্রুততার দিক থেকেও ভিয়েতনাম বর্তমান এদেশ থেকে এগ্যে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের তথ্য মতে ১২টি সূচকের মধ্যে ১০টি সূচকেই বাংলাদেশ ভিয়েতনাম থেকে পিছিয়ে আছে।
বর্তমানে পরিস্থিতি এটুকু বলা যায় যে, মান বজায় রেখে আরও কম সময়ে এবং আরও কম খরচে পণ্য উৎপাদন করতে না পারলে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।
যা করণীয়
এ লেখার উদ্দেশ্য মোটেও গার্মেন্টস শিল্পকে দুর্বল করে দেখানো নয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে একটি জিনিস বুঝতে হবে যে, কোনো একক শিল্পের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া একটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক। আন্তর্জাতিক অবরোধ থেকে শুরু করে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাওয়া, যেকোনো কারণেই হটাৎ করে অথবা সময়ের সাথে সাথে দেশের রপ্তানি খাতে ফাটল ধরতে পারে। তাই গার্মেন্টস শিল্পকে সকল সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি এখন সময় এসেছে নতুন শিল্প গুলোকে রপ্তানীমুখী করার।
বাংলাদেশের এমন কিছু সম্ভাবনাময় শিল্প হলো ঔষুধ, চা, মশলা, ইত্যাদি। তবে এসবের পাশাপাশি অবশ্যই এদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল গুলোতে ভারী শিল্পের বিকাশ জরুরী। কারণ সাধারণ শিল্পায়নের যুগ পেরিয়ে বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর যুগ। এমতাবস্থায় প্রযুক্তির বিকাশ, শিল্পের বৈচিত্রতা ইত্যাদি ছাড়া একটি দেশের রপ্তানিকে দীর্ঘমেয়াদী করার স্বপ্ন দেখা বৃথা। পরিশেষে মিগুয়েল দে সার্ভান্তেস এর একটি উক্তি দিয়েই লেখাটি শেষ করতে হয় “ডোন্ট পুট অল ইয়োর এগ ইন ওয়ান বাস্কেট’।
12-11-2024
Sustainable Development
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বহু দশক ধরে বিকশিত...
Read More27-10-2024
Sustainable Development
ভারত নাকি চীন, বাংলাদেশের জন্য এ যেন এক চিরন্তন টানা...
Read More27-10-2024
Sustainable Development
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ গত কয়েক বছরে...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.