Home » MAWblog » Sustainable Development » বাংলাদেশে শিক্ষা সংস্কার কি জরুরি?- ভবিষ্যতের জন্য চ্যালেঞ্জ
Sustainable Development
Written by: সুরাইয়া জামান
12-06-2024
বলা হয়ে থাকে, শিক্ষা যেকোনো জাতির উন্নয়নের মূল ভিত্তি। একটা বাড়ির মূল ভিত যত মজবুত হয়, কাঠামোগতভাবে সেই বাড়ি তত মজবুত এবং উন্নত হয়। একইভাবে যেকোনো জাতির উন্নয়ন এবং অগ্রগতির জন্য দেশের কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রয়োজন এর মূল ভিত অর্থাৎ শিক্ষার উন্নয়ন। বিগত বছরগুলোতে আমাদের দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে উন্নয়ন এবং অগ্রশীলতার মধ্যে দিয়ে কাজ করে গেছে তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং প্রশংসনীয়। তবে শুধু কাঠামোগত উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া প্রায় অর্থহীন। তাই সার্বিকভাবে দেশের ভালো এবং উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। শুধুমাত্র বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমেই তা সম্ভব। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ এবং সংস্কার নিয়ে আজকের আলোচনা।
শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ
শিক্ষার মানঃ বাংলাদেশের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় এখনও অনেক পিছিয়ে- একথা অস্বীকার করার জো নেই। মানহীন এই শিক্ষাব্যবস্থার যাতাকলে পড়ে অনেক মেধা হারিয়ে যাচ্ছে অতলে। এটা ঠেকাতে খুব দ্রুতসময়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর দিকে মনযোগ দিতে হবে।
শিক্ষার সুযোগ: এদেশে শিক্ষার সুযোগ এখনো সবার জন্য সমানভাবে উপলব্ধ নয়। দেশের দরিদ্র ও গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষার সুযোগ এখনো সীমিত। দূরত্বের কারণে এখনো অনেক শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আসতে পারে না। ফলে তারা পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়ে এবং একসময় আগ্রহ হারিয়ে শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়ে।
শিক্ষার ব্যয়: সময়ের সাথে শিক্ষার ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। দারিদ্রতার কারণে অনেক শিশু ইচ্ছা থাকার পরেও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে না।
শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা: শিক্ষাব্যবস্থার সাথে আধুনিক বিশ্বের চাহিদার তেমন সামঞ্জস্যতা নেই একথা অনস্বীকার্য। টেকনিক্যাল এবং বাস্তব জ্ঞানসম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, “শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত করতে হলে শিক্ষার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, “শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে পাঠ্যক্রমকে আধুনিক বিশ্বের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে এবং পাঠদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।”
বাংলাদেশে শিক্ষা সংস্কার
শিক্ষা সংস্কার নিয়ে আমাদের দেশে সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো শেষ নেই। শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তাদের রীতিমতো গিনিপিগ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সংস্কারের নামে এধরনের নানা কর্মকান্ডে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী প্রায় সবাইই নাজেহাল। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে শিক্ষা সংস্কারের একটি সম্ভাব্য মডেল হতে পারে এরূপঃ
ক) প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করে তা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
খ) বিষয়গত পড়াশুনোর আগে ভাষা, যোগাযোগ, গণিত, মূল্যবোধ প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি জলবায়ু-প্রাণ-পরিবেশের টেকসই জ্ঞান, পরিচ্ছন্নতা ও রিসাইক্লিং, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলাগত আইনি জ্ঞান ও চর্চা, পারস্পরিক যোগাযোগ এবং মৌলিক বিজ্ঞান ইত্যাদি গুরুত্ব সহকারে পড়াতে হবে।
গ) মাতৃভাষার পর কর্মমুখী অন্তত দুইটি ভাষা শেখাতে হবে। তবে এটা দেশের সব শিশুর জন্য প্রযোজ্য নয়। জাতীয় চাহিদা অনুযায়ী সংখ্যা নির্ধারণ করে নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।
ঘ) স্কুল মূল্যায়নের উপর জোর দিতে হবে। সফটওয়্যার ডেটাবেইস ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করতে হবে যা স্কুলশিক্ষক ও বহিরাগত শিক্ষক মিলে তৈরি করবেন।
ঙ) মনস্তাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক বাঁধা সরানোর লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত করতে হবে।গণিত, পদার্থ, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি, অ্যাকাউন্টিং, সামাজিক, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক নৈতিকতা বাধ্যতামূলক ভাবে শেখানো হবে। বিষয়গুলোতে বিজ্ঞান, ব্যবসা, মানবিক নামক কোনো ভাগাভাগি থাকবে না।
চ) গুরুত্ব সহকারে কোডিং-প্রোগ্রামিং সহ প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রচলন শুরু করতে হবে।
ছ) পেশামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করতে হবে যেন বিভিন্ন ধারার কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বৃহত্তম সংখ্যক যোগ্য, দক্ষ, উৎপাদনক্ষম, উন্নত-চরিত্র-বলসম্পন্ন কর্মী সৃষ্টি হয়।
জ) উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বাদ দিয়ে দক্ষতা বিষয়ক বিভিন্ন টেকনিক্যাল এবং বাস্তব জ্ঞানসম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।
ঝ) বাজেট স্বল্পতা হটিয়ে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ইউনেস্কোর ঘোষণা অনুযায়ী একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য বাজেটের ২০% অন্তত শিক্ষার জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষা বাজেট দেওয়া হয় মূল বাজেটের মাত্র ১০-১১%!
ঞ) আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। শিক্ষকদের জন্য শিক্ষাবিষয়ক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। পেশাগত উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের মাঝে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি না করতে পারলে, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি না করতে পারলে কোনোভাবেই উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা লাভ সম্ভব নয়।
ট) গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ঠ) দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট মেধা বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে এধরনের মডেল কার্যকর করতে পারলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা কোন ক্ষেত্রে নিজেকে এগিয়ে নেবে সে ব্যাপারে তাদের উপর চাপ প্রয়োগের ঘটনা হ্রাস পাবে।
পরিশেষ
যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষা ব্যবস্থা সেই মান্ধাতা আমলেরই রয়ে গেছে। তাই সরকারের উচিত হবে শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা এবং বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ায় সেটা ভালোভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তার তদারকি করা। মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগ, যথাযথ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে খরচ, সুশাসন, তদারকি আর সর্বোপরি দক্ষতা ও নিষ্ঠা না থাকলে ভালো উদ্যোগও সফলভাবে বাস্তবায়িত হয় না।
তথ্যসূত্রঃ
27-10-2024
Sustainable Development
ভারত নাকি চীন, বাংলাদেশের জন্য এ যেন এক চিরন্তন টানা...
Read More27-10-2024
Sustainable Development
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ গত কয়েক বছরে...
Read More29-09-2024
Sustainable Development
রোবটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশ্বজুড়ে...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.