নিজের বাহ্যিক অঙ্গের যত্ন নিতে এবং নিজেকে স্মার্ট হিসেবে প্রেজেন্ট করতে প্রসাধনী সামগ্রীর বিকল্প তেমন নেই। বর্তমান সময়ে মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষেরাও নিজের যত্ন নিতে এবং নিজেকে অন্যদের তুলনায় আকর্ষনীয় দেখাতে বেশ সচেতন। তাইতো মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষেরও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে হালের নতুন কসমেটিক্স পণ্য। ঠিক সে কারণেই খুব অল্প সময়ে সফলতা অর্জন সম্ভব এমন কিছু ব্যবসায়ের তালিকায় অনায়াসেই জায়গা করে নিয়েছে কসমেটিক্স ব্যবসা। আপনি যদি ব্যবসায়ে আগ্রহী হোন এবং কসমেটিক্স ব্যবসা সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেতে চান, তবে আজকের লেখাটি আপনার জন্যই! 

প্রচন্ড গরমে আমরা কোক, পেপসির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক খেয়ে থাকি। গরম থেকে রেহাই পেতে এসব খাওয়া কি বাঞ্ছনীয়? বিস্তারিত পড়ুন এই লিংকে- ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক কি খাওয়া উচিত?

কসমেটিক্স ব্যবসা

দেশ, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাইই কম বেশি সৌন্দর্যের পূজারী। অতীতের মতো বর্তমানেও মানব সৌন্দর্যের আবেদন একইরকম রয়ে গেছে। তাই সময়ের সাথে প্রাসাধনী সামগ্রীতেও এসেছে বিভিন্ন ধরন। ব্যবসায়ের চলমান গতিতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন ব্র্যান্ড এবং পণ্য। তাই কসমেটিক্স ব্যবসায়ে যেমন খুব সহজেই লাভবান হওয়া যায়, তেমনি বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে না নামলে এই ব্যবসায়ে খুব বেশিদূর আগানো সম্ভব নয়। সৌন্দর্য সচেতনতার এই সময়ে আপনি যদি কসমেটিক্স ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনাকে আগে জানতে হবে এই ব্যবসার কিছু ধাপ সম্পর্কে। 

১। পর্যাপ্ত স্টাডি করা 

বাজারে সব ধরনের কসমেটিক্সের বেশ চাহিদা থাকলেও বিশেষ কোন ধরনের পণ্যের চাহিদা বেশি তা নিয়ে পড়াশুনা করুন। কেননা আপনার পক্ষে সব ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব নয়। আগে জানুন, হালের ট্রেন্ডে ক্রেতার সর্বোচ্চ পছন্দ কি। প্রয়োজনে লিস্ট তৈরি করুন, এতে কোন পণ্য নিয়ে আপনি ব্যবসা শুরু করবেন তা নির্বাচন করতে সুবিধা হবে। মার্কেট সম্পর্কে ধারণা নিন। দেশী বিদেশী বিভিন্ন জনপ্রিয় কসমেটিক্স ব্র্যান্ড নিয়ে বিশদ পড়াশুনা করুন। তাদের ওয়েবসাইট সহ বিভিন্ন দিক এবং স্ট্রাটেজি ভালো করে মনিটাইজ করুন। প্রয়োজনে এক্সেল শীট কিংবা নোটপ্যাডে নোট নিয়ে রাখুন। এছাড়াও অনলাইন মাধ্যমগুলোতে কসমেটিক্সের বিভিন্ন দিক নিয়ে নানা ভিডিও পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় ধারনা পেতে এই ভিডিওগুলো বেশ কাজে আসতে পারে। পর্যাপ্ত পড়াশুনা বা স্টাডি ছাড়া যেকোনো ব্যবসা শুরু করাই ঝুকিপূর্ণ। 

২। কসমেটিক্সের ফর্মূলেশন বা নমুনা সম্পর্কে ধারণা রাখা

আপনার ব্যবসায়ের বিভিন্ন পণ্যে কি কি মূল উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, তা না জানা থাকলে আপনি সেই পণ্য ক্রেতাকে কিনতে আগ্রহী করবেন কিভাবে? আপনি যদি কসমেটিক্স উৎপাদনের সাথে জড়িত নাও থাকেন, তবুও আপনার এই বিষয়ে জ্ঞান থাকা উচিত। আপনি যদি কসমেটিক্স উৎপাদন করতে নয়, শুধু ব্যবসা করতে চান তাহলেও আপনার বিক্রিত পণ্যে কি কি কেমিক্যাল বা উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে তা আপনার জেনে রাখা উচিত। এতে পণ্যে নকল এবং বিভিন্ন ধরনের আইনী ঝামেলা থেকে সতর্ক থাকা যায় এবং রেহাই পাওয়া যায়।

তবে কসমেটিক্স উৎপাদনের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে চাইলে অবশ্যই একজন কেমিস্টের সাহায্য নিতে হবে। অথবা আপনি নিজে এই বিষয়ে পড়াশুনা করে ডিগ্রী নিয়ে নিজেই কেমিস্ট হিসেবে নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। 

৩। ব্যবসা বিষয়ক আইন জানা এবং তা মানা

কসমেটিক্স পণ্য যেহেতু সরাসরি আমাদের দেহের সংস্পর্শে আসে, তাই কোন কেমিক্যাল আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এবং নিষিদ্ধ তা নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন। উৎপাদন করতে চাইলে কেমিক্যাল আইন সম্পর্কে বিশদ পড়াশুনা করে নিন। দেশে কসমেটিক্সের নকল পণ্যগুলোতে নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিক্যালের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। এসব এড়াতে এবং নিজেকে আইনী ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে ব্যবসা বিষয়ক আইন নিয়ে জানার কোনো বিকল্প নেই। কসমেটিক্স আমদানীর সাথে যুক্ত হতে চাইলে কোন কোন পণ্যের উপর আমদানী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা নিয়ে জেনে নিন।

৪। পণ্য নির্বাচন করা

মার্কেট, ফর্মূলেশন এবং আইন নিয়ে যথেষ্ট পড়াশুনা শেষে আপনি এবার নিজের ব্যবসার পণ্য নিয়ে ভাবতে পারেন। যেহেতু সব পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করা সম্ভব নয়, সেহেতু পণ্য নির্বাচনে দুটি ট্রিকস ফলো করতে পারেন। 

ক) মার্কেটে খুব জনপ্রিয় এবং চলমান পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করা
খ) মার্কেটে পরিচিত নয় কিন্তু সম্ভাবনাময় এমন নতুন পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করা

এছাড়াও তৈরিকৃত লিস্ট থেকে পণ্য বাছাই করে আপনার পুঁজি, লোকবল এবং আত্মবিশ্বাসের উপর নির্ভর করে পণ্য উৎপাদন করবেন নাকি আমদানী করে ব্যবসা শুরু করবেন তা নির্ধারন করতে পারেন। 

৫। ব্যবসার ধরন নির্ধারণ করা 

কসমেটিক্স পণ্য নিয়ে শুরু করা আপনার নতুন ব্যবসাটির ধরন নির্ধারণ করুন। এই ব্যবসার বিভিন্ন ধরণ যেমন, কসমেটিক্স শপ, অনলাইন শপ, উৎপাদন কিংবা আমদানী, কোনটির সাথে আপনি যুক্ত হতে চান তা নিয়ে ভাবুন। ব্যবসার এই ধরন ঠিক করার পর কেমন পুঁজি নিয়ে আপনাকে মাঠে নামতে হবে এবং পরবর্তী ধাপ কি কি হবে সেসব বুঝতে সহজ হবে। 

আপনি যদি কেমিস্ট হয়ে থাকেন, তবে সহজেই উৎপাদনের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারেন। আমদানী সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকলে পণ্য আমদানী এবং অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে সম্যক পড়াশুনা থাকলে অনলাইনে এই বিজনেস শুরু করতে পারবেন। মোটকথা, আপনার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে আপনাকে কসমেটিক্স ব্যবসার ধরন নির্ধারন করতে হবে।

৬। পুঁজির ব্যবস্থা করা

আগেই বলেছি, এই ব্যবসায়ে পুঁজি কেমন লাগবে তা নির্ভর করবে ব্যবসার ধরনের উপর। মহল্লায় কোনো দোকানে কসমেটিক্স ব্যবসা শুরু করলে দোকান ভাড়া, ডেকোরেশন এবং পাইকারী পণ্য কেনার খরচে মধ্যম মানের পুঁজি হলেও চলে। কিন্তু আপনি যদি কসমেটিক পণ্য উৎপাদন করতে চান, তবে ল্যাব, অফিস, ফ্যাক্টরি, লোকবল সহ বিশাল বহরের একটি জায়গার দরকার পড়বে এবং স্বাভাবিকভাবেই এইক্ষেত্রে পুঁজির অংক দাঁড়াবে বিশাল। পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রেও পুঁজি নেহাতই কম লাগে না। যে ধরনের ব্যবসাই শুরু করুন না কেনো, এই ধাপে আপনার উচিত হবে ব্যবসার পুঁজি নিয়ে ভাবা এবং তা ব্যবস্থা করা। 

৭। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজ রেডি করা

ব্যবসা শুরু করবো বললেই তো দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায় না! এর জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্রের। ট্রেড লাইসেন্স, আমদানী লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় কাগজগুলো রেডি করে ফেলুন। বর্তমানে নকল কসমেটিক্স পণ্য উৎপাদন এবং বিক্রি বন্ধের জন্য আইনে কড়াকড়ি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে কসমেটিক্স ব্যবসায় ঔষধ প্রশাসনের লাইলেন্সেরও দরকার হয়।  

পরিশিষ্ট

উপরোক্ত ৭টি ধাপে কসমেটিক্স ব্যবসা কিভাবে শুরু করা যায় তা নিয়ে ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পড়াশোনা করে, মার্কেট যাচাইয়ের মাধ্যমে নতুন যেকোনো ব্যবসা শুরু করলে তাতে দ্রুত সফলতা আসার সম্ভাবনা থাকে। কসমেটিক্স ব্যবসা বেশ লাভজনক ব্যবসা। কৌশলী হয়ে সততার সাথে এই ব্যবসা শুরু করলে খুব সহজেই এই ব্যবসা দাঁড় করানো সম্ভব। 

তথ্যসূত্রঃ

Somokal
ZonakiTV