Economy
Written by: এস এম নাহিয়ান
01-02-2024
রাজ্য বা রাষ্ট্র ধারনার প্রচলন থেকেই আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যের ধারনা বিদ্যমান। আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, যে নামেই ডাকা হোক না কেন, যুগে যুগে মানব সভ্যতা গঠনে এর ভূমিকা অপরিসীম। আর আদিকাল থেকে বাংলার এই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে গভীর ভাবে লিপ্ত। বিশেষ করে প্রাচীন নৌবাণিজ্যের ইতিহাসে বাংলার নাম বেশ ভাল ভাবেই বিদ্যমান। আদিকাল থেকে বাংলা একটি রপ্তানি নির্ভর অঞ্চল হলেও বর্তমানে সেই চিত্রটি ভিন্ন।
বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাল্লাটি মূলত আমদানির দিকেই ঝুকে আছে। বরাবরই বাংলাদেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণটি বেশি থাকে। আমদানি রপ্তানির ভেতর এই সম্পর্ককে পোষাকি ভাষায় বলে ব্যালেন্স অফ ট্রেড। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বরাবরই ডেফিসিট অফ ট্রেড বা আমদানি-রপ্তানির অসমতা বিদ্যমান। তবে এদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই কোন কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির সম্পর্ক দৃড় তা জানতে হবে। কারণ এর প্রভাব শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নয় বরং দেশীয় ব্যবসাতেও বিদ্যমান। তাই আজকের লেখাতে রপ্তানি খাতের ৫টি এবং আমদানি খাতের ৫টি, বাংলাদেশের সাথে সুদৃড় ব্যবসায়িক সম্পর্ক বিদ্যমান এমন মোট ১০টি দেশের কথা উল্লেখ করা হলো।
যেসব দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্পর্ক বিদ্যমান
একটি দেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানি যত বেশি হয়, দেশটির অর্থনৈতিক সক্ষমতা তত বৃদ্ধি পায়। দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি। তবে নিম্নোক্ত দেশ গুলোর সাথে এদেশের রপ্তানি সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান।
বাংলাদেশের তৈরি পোষাকের সবচেয়ে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। জিএসপি সুবিধা বাতিলের কারণে মাঝে রপ্তানির হার কিছুটা কমে গেলেও ধীরে ধীরে আবার তা বাড়ছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ৮.৭২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। এর মধ্যে প্রধান পণ্যগুলো ছিল ‘নিট মেন’স স্যুট’ (১.৮ বিলিয়ন ডলার), ‘নন-নিট ওমেন’স স্যুট’ (১.১৫ বিলিয়ন ডলার), ‘নিট সোয়েটার’ (৭০৩ মিলিয়ন ডলার)। গত ২৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ গড়ে বার্ষিক ৬.৮১% হারে বৃদ্ধি পেয়েছেও। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১.৫৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২১ সালে তা হয়ে দাঁড়ায় ৮.৭২ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি বেশি হয়ে থাকে। সেগুলো হলো জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি ও পেনিসিলভিয়া। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ স্ক্রাপ আয়রন, সয়াবিন, তুলা, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, ভ্যাকসিন, টক্সিন কালচার, গ্যাস টারবাইন ইত্যাদি আমদানি করে থাকে।
রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই জার্মানির অবস্থান। ২০২১ সালে বাংলাদেশী পণ্যের ১৬.১ শতাংশ রপ্তানি হয় জার্মানিতে যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ০.৭% শতাংশ কম। জার্মানিতে রপ্তানির ক্ষেত্রেও এককভাবে তৈরি পোষাক শিল্প এগিয়ে রয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে প্রেরিত পণ্যের ১৬.৮% হলো ‘নিট টি-শার্ট’ (১.৪১ বিলিয়ন ডলার)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ‘নট সোয়েটারস’ যার পরিমাণ ছিল ১৪.৫% (১.২২ বিলিয়ন ডলার)। ১৩.১% নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ‘নন-নিট মেন’স স্যুট’ যার মূল্যমান ছিল ১.০৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও নিট ও নন-নিট ওমেন’স স্যুট এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১০.৬% ও ৯.৪২%। মূল্যমান ছিল ৮৮৭ মিলিয়ন ও ৭৮৮ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে বাংলাদেশ জার্মানিতে মোট ৮.৩৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে।
রপ্তানির দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আরেক ইউরোপীয় দেশ স্পেন। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৬.৯৫% রপ্তানি হয় স্পেনে। যার ভেতর ১৬.৭% ‘নিট টি-শার্ট’, ১৬.৪% ‘নন-নিট ওমেন’স স্যুট’, ১৩.৬% ‘নিট সোয়েটার’ ও ৯.৭৬% ‘নন-নিট মেন’স স্যুট’। ২০২১ সালে যথাক্রমে এই পণ্যগুলোর রপ্তানিমূল্য ছিল ৬০১ মিলিয়ন ডলার, ৫৮৯ মিলিয়ন ডলার, ৪৮৮ মিলিয়ন ডলার ও ৩৫১ মিলিয়ন ডলার।
স্পেনের প্রায় সমপরিমাণ রপ্তানি করা হয় আরেকটি ইউরোপীয় দেশ, যুক্তরাজ্যে। এক সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের দখলদার এই দেশটি বাংলাদেশে থেকেই তাদের অধিকাংশ পোষাক ক্রয় করে। এর মধ্যে ‘নিট টি-শার্ট’, ‘নিট সোয়েটার’, ‘নন-নিট ওমেন’স স্যুট’ ও ‘নিট ওমেনস’স স্যুট এর পরিমাণ যথাক্রমে ১৫.৬%, ১২.৫%, ১২.২% ও ১১.২%। এসব পণ্যের মোট মূল্যমান যথাক্রমে ৫১৩ মিলিয়ন ডলার, ৪১২ মিলিয়ন ডলার, ৪০০ মিলিয়ন ডলার ও ৩৬৯ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মোট ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করে। অপরদিকে একই সালে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৪৬ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে প্রধান আমদানিকৃত পণ্য ছিল স্ক্র্যান আয়রন, গাড়ি ও বিমানের যন্ত্রাংশ।
তালিকায় সবার শেষে আছে পোল্যান্ড। এই দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত পণ্যের মোট ৫.৬৯% যায়। যার মূল্যমান ২০২১ সালে ছিল ২.৯৪ বিলিয়ন ডলার। আর চারটি দেশের মতই এই দেশটিও বাংলাদেশ থেকে মূলত তৈরি পোষাক ক্রয় করে। যার মধ্যে ‘নিট টি-শার্ট’ ১৬.২%, ‘নন-নিট ওমেন’স স্যুট’ ১৪.৫%, ‘নিট সোয়েটার ১২.৮% ও ‘নন-নিট মেন’স স্যুট’ ১০.৪%। এগুলোর মূল্যমানও যথাক্রমে ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার, ৪২৬ মিলিয়ন ডলার, ৩৭৬ মিলিয়ন ডলার ও ৩০৬ মিলিয়ন ডলার।
যেসব দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের আমদানি সম্পর্ক বিদ্যমান
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমদানির চাইতে রপ্তানি সবসময়ই গুরুত্ব পায়। কিন্তু তাই বলে আমদানিকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ নিজ দেশ সেসব প্রয়োজন মেটতে অক্ষম, সে সব বস্তুই আমদানি করতে হয়। এছাড়াও রপ্তানিও বহুলাংশে আমদানির উপরেই নির্ভরশীল। নিম্নে বাংলাদেশ যেই পাঁচটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করে সেগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো।
চীন নিঃসন্দেহ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক পার্টনারের একটি। ২০২১ সালে বাংলাদেশ চীন থেকে আমদানি করে ২৪.১ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩১.৫%। এ আমদানির মধ্যে সিঙ্ঘভাগ হলো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও পোষাক শিল্পের কাঁচামাল। বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ মিলিয়ে আমদানির ১০.৯% পূরণ হয়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তুলা যার পরিমাণ ১০.২%। এরপরে যথাক্রমে আছে ইলেট্রনিক্স পণ্য,নিটেড ফ্যাব্রিক্স, ম্যান-মেড স্ট্যাপল ফাইবার, ম্যান-মেড ফিলামেন্ট, খনিজ জ্বালানী ও তেল এবং প্লাস্টিকস। যথাক্রমে এগুলোর আমদানি মূল্য হলো ২.৬২ বিলিয়ন ডলার, ২.৪৬ বিলিয়ন ডলার, ২.৩২ বিলিয়ন ডলার, ১.৮৫ বিলিয়ন ডলার, ১.৪ বিলিয়ন ডলার, ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার ও ১.২২ বিলিয়ন ডলার।
পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতের সাথে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বরাবরই হয়ে থাকে। ভারত থেকেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমদানি পণ্য তুলা। যা কিনা পোষাক শিল্পের কাঁচামাল। ২৬.৬% তুলার পরপরই আছে সিরিয়াল (Cereal) যার পরিমাণ মোট আমদানির ১৬.৫%। তৃতীয় অবস্থানে আছে বিভিন্ন খনিজ জ্বালানী ও তেল। চতুর্থ অবস্থানে আছে গাড়ি ও ট্র্যাক্টর। এদের পরিমাণ যথাক্রমে ৮.৭২% ও ৬.৪৮ %। মূল্যের দিক থেকে এগুলোর মূল্য যথাক্রমে ৩.৭৪ বিলিয়ন, ২.৩২ বিলিয়ন, ১.২৩ বিলিয়ন ও ৯১৩ মিলিয়ন ডলার।
চীন ও ভারতের তুলনায় বাকি সকল দেশ থেকেই বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ খুবই কম। তৃতীয় স্থানে থাকা সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশ মোট আমদানির ৪.৬১% আমদানি করে থাকে। যার ভেতর খনিজ জ্বালানী, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, ইলেক্ট্রনিক্স, রঙ ও ভার্নিশ, প্লাস্টিকস অন্যতম। এগুলো পরিমাণ যথাক্রমে ৪৬.৮%, ১২.৯%, ৪.৭৮% ও ৪.০৭%। আমদানি মূল্যমানঃ ১.৬৫ বিলিয়ন, ৪৫৬ মিলিয়ন, ২৪৮ মিলিয়ন, ১৬৯ মিলিয়ন ও ১৪৪ মিলিয়ন।
ইন্দোনেশিয়ার সাথে বাংলাদেশের আমদানি সম্পর্ক বাকি তিনটি দেশের মতো নয়। ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশের প্রধান আমদানিকৃত পণ্য হল এনিমেল অথবা ভেজিটেবল ফ্যাট। মোট আমদানির ৪৭.৪% এই ফ্যাট। পরবর্তী আমদানি গুলো যথাক্রমে খনিজ জ্বালানী, ম্যান-মেড স্ট্যাপল ফাইবার, বিভিন্ন খনিজ, ও তুলা। এসব দ্রবাদির পরিমাণ যথাক্রমে ১৫.৮%, ৬.৪৭%, ৫.৭৮% ও ৪.৩৯%। মূল্যমান ৪৬১ মিলিয়ন, ১৮৯ মিলিয়ন, ১৬৯ মিলিয়ন ও ১২৮ মিলিয়ন ডলার।
ইন্দোনেশিয়ার পর চতুর্থ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই লেখায় ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের বদলে জাপান স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২.৯৭% আমদানি হয় জাপান থেকে। যার মাঝে ২৯.৫% হলো লোহা ও স্টিল। ২১.৯% যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ ও ১৮.৭% গাড়ি। এসবের মূল্যমান যথাক্রমে ৬৭২ মিলিয়ন, ৪৯৯ মিলিয়ন এবং ৪২৬ মিলিয়ন ডলার।
শেষকথা
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত আমদানি নির্ভর অর্থনীতি। প্রতি বছরই বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির পার্থক্য বেশ বড় মাপের হয়ে থাকে। কিন্তু এর মধ্যেও বাংলাদেশ তার বৈদিশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখার চেষ্টা করছে। এখানে সবচেয়ে বেশি যেই বিষয়টি লক্ষ্যণীয় সেটি হলো কোন দেশের সাথে কি আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুধু মাত্র বাণিজ্য নয়। বরং অনেক ধরনের আন্তর্জাতিক সমীকরণের ফলাফল। তাই কোনো একটি ভূ-রাজনৈতিক কারণেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর পড়তে পারে ব্যাপক প্রভাব। ঠিক যেমনটি প্রভাব আমরা আরব বিশ্বের অর্থনীতি তে দেখেছি। আর তাই একজন ব্যবসায়ী অথবা গ্রাহক হিসেবে সকলেরই তাই দায়িত্ব, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা। যাতে করে বাংলাদেশের সাথে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক সমীকরণ গুলো সহজেই বোঝা যায়।
১। ওইসি (OEC)
16-10-2024
Economy
ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা...
Read More28-08-2024
Economy
গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে...
Read More23-05-2024
Economy
বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.