Home » MAWblog » International » আরব বিশ্বের ব্যবসাসমূহঃ বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবক
International
Written by: এস. এম. নাহিয়ান
05-12-2023
‘আরব বিশ্বের ব্যবসা’ কথাটি শুনলেই যেন মানসপটে ভেসে ওঠে খনিজ তেল ব্যবসার কথা। খুব স্বভাবতই সারা বিশ্বের মানুষ আরব বিশ্বকে চেনে এর খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য্যের জন্য। কিন্তু খনিজ সম্পদভিত্তিক ব্যবসার বাইরেও বর্তমানে আরব বিশ্বে গড়ে উঠছে নানা ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তবে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই আরব বিশ্ব বলতে মূলত মধ্যপ্রাচ্যকেই বুঝে থাকেন। এক্ষেত্রে খুব একটা দোষ দেওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই আরব বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। আর আজকের লেখাতে তাই তুলে ধরা হয়েছে আরব বিশ্বের নানা ব্যবসা সম্পর্কে। যা কিনা নিঃসন্দেহে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ও ব্যবসাকে প্রভাবিত করছে প্রতিনিয়ত।
আরব বিশ্ব কথাটি শুনে সবাই মূলত মধ্যপ্রাচ্যকে ভাবলেও বস্তুত আরব বিশ্বের আকার এর চেয়ে অনেক বড়। যদিও নির্দিষ্ট কোনো ভৌগলিক সংজ্ঞা স্বীকৃত নয়, তবে সাধারণত আরব লীগের সদস্য দেশগুলোর ভৌগলিক অঞ্চলকেই আরব বিশ্ব বলা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এ অঞ্চলের অধিভুক্ত দেশের সংখ্যা ২২টি, জনসংখ্যা ৪৫ কোটিরও বেশি এবং নমিনাল জিডিপি প্রায় ২.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এটিকে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বললে মোটেও ভুল হবে না। কিন্তু এই আরব বিশ্বের অধিকাংশ বৃহৎ ব্যবসায়ের কেন্দ্রই হলো মধ্যপ্রাচ্য। বিশ্বজোড়া এই ব্যবসা গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হলে তাই মধ্য প্রাচ্যের কথাই উঠে আসবে বার বার।
আরব বিশ্বের ব্যবসার কথা শুনলেই যেমন তেল ব্যবসার কথা মাথায় আসে, বাস্তবেও সবচেয়ে বৃহৎ আরব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি একটি খনিজ তেল কোম্পানি। সৌদি আরামকো নামক প্রতিষ্ঠানটিকে গোটা বিশ্ব ‘আরামকো’ নামেই চেনে। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যা সৌদি আরবের জাতীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাৎসরিক রেভিনিউ এর দিক থেকে এটিই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
আরামকো এর অপরিশোধিত তেলের রিজার্ভ ২৭০ বিলিয়ন ব্যারেল এরও বেশি। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলন করা কোম্পানি। ফলস্বরুপ ২০২২ সালের শুধু মাত্র সেকেন্ড কোয়ার্টারে আরামকো এর লাভ ছিল প্রায় ৪৮.৪ বিলিয়ন ডলার। এর সদর দপ্তর সৌদি আরবের দাহরানে অবস্থিত হলেও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাইড্রোকার্বন নেটওয়ার্কের মালিকানা এই কোম্পানিটির। তবে আজকের এই সুবিশাল পর্যায়ে আসার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ পথ। এর যাত্রা প্রথম শুরু ১৯৩৩ সালে। প্রায় ৫ বছর কোনো তেলের সন্ধান না পাওয়া গেলেও ১৯৩৮ সালে দাহরানেই খুঁজে পাওয়া যায় তৎকালীন প্রতিষ্ঠানের প্রথম তেলের খনি। এর পর থেকে একে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।
তবে তেল বাণিজ্যের প্রভাব শুধু মাত্র অর্থনীতিতেই বিদ্যমান নয়। বরং ঐতিহাসিক ভাবেই এটি যেন ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই কোম্পানিটিও এই প্রক্রিয়ার ব্যাতিক্রম নয়। ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের পরপরই সৌদি সরকার এই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানটির ২৫% মালিকানা কিনে নেয়। ১৯৭৪ সালেই সরকারি মালিকানা শতকরা ৬০ ভাগে উত্তীর্ণ হয় এবং ১৯৭৬ সালের মধ্যে এটি শত ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। পরবর্তীতে গালফ যুদ্ধ সহ আরও নানা ধরনের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছে। তেলের বৈশ্বিক দামের উপর এর বিপুল প্রভাব একে নিঃসন্দেহে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
তালিকার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটিও অন্য কোনো দেশের নয় বরং সৌদি আরবেরই একটি পাবলিক প্রতিষ্ঠান, সাবিক। সাবিক এর পূর্ণ রুপ হলো ‘সৌদি আরব ব্যাসিক ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন’। ১৯৭৬ সালে আরামকোকে সম্পূর্ণ রুপে রাষ্ট্রায়ত্ত করার পরেই একটি রাজকীয় আদেশের মাধ্যমে সাবিক এর ভিত্তি স্থাপন হয়। আর বর্তমানে সাবিকের ৭০% মালিকানাও আরামকো এর হাতে।
মূলত উত্তোলনকৃত খনিজ তেলের উপজাত থেকে নানাবিধ কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য তৈরির লক্ষ্যেই সৌদি সরকার সাবিক স্থাপন করে। প্রধানত রাসায়নিক দ্রব্যাদি, পলিমার, সার ইত্যাদি উৎপাদনের মাধ্যমে সাবিকের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সৌদি আরবের ধাতু শিল্পেও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একই সাথে এটি সৌদি আরব এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক কোম্পানি।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরামকো এর মতো এতটা শক্তিশালী প্রভাব না ফেলতে পারলেও রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও পলিমার খাতে এর প্রভাব অনস্বিকার্য। মূলত এই প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব সৌদি সরকারের দূরদর্শিতাকেই নির্দেশ করে। কারণ উৎপাদিত খনিজ তেল এমন একটি পণ্য যার উপজাতসমূহেরও মূল্য অনেক। আর সেই উপজাতসমূহকে সঠিক ভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে এই শিল্পে খুব সহজেই একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। যার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে সৌদি সরকার। ফলস্বরুপ শুধু খনিজ তেল শিল্প নয় বরং এর সহকারী শিল্প গুলোতেও সৌদি আরবের প্রভাব আজ আকাশচুম্বী।
হোল্ডিং কোম্পানি হলো এমন এক ধরনের কোম্পানি যেটি মূলত অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনা বেচার সাথেই জড়িত থাকে। অতঃপর এ ধরনের কোম্পানি গুলো সে সকল শেয়ারের মাধ্যমে ওই সকল কোম্পানির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এক্ষেত্রে অনেক গুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের হোল্ডিং কোম্পানি একটি হতে পারে। আবার একটি হোল্ডিং কোম্পানি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয় করে রাখতে পারে।
তেমনই একটি হোল্ডিং কোম্পানি হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানি’। বিশ্বের সমগ্র সম্পদের বেশ বড় একটি অংশ মধ্য-প্রাচ্যের হাতে সীমাবদ্ধ। তাই স্বভাবতই সেই সম্পদের বিশাল অংশ ব্যবহৃত হয় বিশ্বব্যাপী নানা ধরনের ব্যবসাতে বিনিয়োগের কাজে। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির অধীনে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪২২ টি। কৃষি, শিল্প, শক্তি, জ্বালানী, খাদ্য, স্বাস্থ্য, বিনোদন, প্রযুক্তি থেকে শুরু করে প্রায় সকল খাতেই রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির অবস্থান। এত গুলো খাতের সংস্পর্শে থাকার কারণে কোম্পানিটির বিনিয়োগ কোনো একটি খাতের উপর নির্ভরশীল নয়। ১৯৯৮ সালে চালু হওয়া প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম হোল্ডিং কোম্পানি। বিনিয়োগের সুবিধার জন্য এটিও একটি পাবলিক কোম্পানি হিসেবে তালিকা বদ্ধ।
যেকোনো অঞ্চলের ব্যবসা নিয়েই কথা বলতে গেলেই ব্যাংকিং খাতের কথা চলে আসে। মধ্য প্রাচ্যও এর ব্যতিক্রম নয়। এত বিশাল অর্থে-সম্ভারের প্রাচুর্য্যে স্বভাবতই গড়ে উঠেছে বেশ বড় কিছু ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। তবে তুলনামূলক ভাবে কিউএনবি গ্রুপ বেশ পুরোনো। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই ব্যাংকটির প্রথম দুই বছরে কর্মী সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫ জন। কিন্তু বর্তমানে এটি কাতারের সর্ববৃহৎ বহুজাতিক বাণিজ্যিক ব্যাংক।
তিনটি উপমহাদেশের ৩১টি দেশ জুড়ে অবস্থিত কিউএনবি গ্রুপের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী এর মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২৭ বিলিয়ন ডলার। তবে এই বৃহৎ ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মালিকানাও মূলত রাষ্ট্রের হাতে। কারণ এর ৫০% শেয়ারের মালিক কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথোরিটি যা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। কাতার সহ সমগ্র মধ্যে প্রাচ্যের ব্যাংকিং খাতেই এর প্রভাব ব্যাপক। তবে এ অঞ্চলে শুধু কিউএনবি গ্রুপ নয়, বরং একই পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট আবু ধাবি ব্যাংকের মতো বড় কিছু প্রতিষ্ঠান।
মধ্য প্রাচ্য সহ সমগ্র আরব বিশ্বের যেই গুটি কয়েক সেবা ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছে, তার মধ্যে এমিরেটস গ্রুপ অন্যতম। বিমান যাত্রায় ‘প্রিমিয়াম’ শব্দটির পরিপূরক যেন এমিরেটস এয়ারলাইনস। তবে এমিরেটস এয়ারলাইনস ছাড়াও এমিরেটস গ্রুপে রয়েছে আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই গ্রুপটির আয় ছিল প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। একই অর্থ বছরে এর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৭২.১৪ বিলিয়ন ডলার।
এমিরেটস গ্রুপের ভেতর প্রধানত এমিরেটস এয়ারলাইনস এবং ডিনাটা (dnata) সার্ভিসই সবচেয়ে সুপরিচিত। ডিনাটা মূলত একটি এভিয়েশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১২ঁ৬টি বিমানবন্দরে এভিয়েশন সার্ভিস প্রদান করে থাকে। তবে একই সাথে এমিরেটস গ্রুপের আছে ডিনাটা ট্রাভেল এজেন্সি। রয়েছে মারহাবা লাউঞ্জ সার্ভিস, মালামাল পরিবহনের জন্য এমিরেটরস স্কাইকার্গো। শুধু তাই নয়, পাইলট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, ট্যুরিস্টদের সাইটসিয়িং, ক্যাটেরিং সার্ভিস থেকে শুরু করে আরও নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমিরেটস গ্রুপ। তবে নিঃসন্দেহে এমিরেটস গ্রুপের মুকুটটা পড়ে আছে এমিরেটস এয়ারলাইন্স। অন্তত বিমান সেবা খাতের দিক থেকে এটি পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের সাথে পাল্লা দিতে পারে। এই তালিকার সকল প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এটিও একটি সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এর প্যারেন্ট কোম্পানি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ দুবাই। তবে একটি কথা না উল্লেখ করলেই নয়। এয়ারলাইন্স ব্যবসার দিক থেকে আরব আমিরাতই সমস্ত আরব বিশ্বে প্রথম। এ অঞ্চলের দ্বিতীয় সেরা এয়ারলাইন্স হলো ইতিহাদ এয়ারলাইন্স। সেটির মালিকানাও আমিরাত সরকারের হাতেই।
এডি পোর্টস গ্রুপ হলো আবু ধাবি কেন্দ্রিক একটি বন্দর ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান হলো আবু ধাবি ডেভলপমেন্টাল হোল্ডিং কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানটিও মূলত একটি সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৮.৫ বিলিয়ন দিরহাম। ২০০৬ সালে চালু হওয়া প্রতিষ্ঠানটির পূর্ববর্তী নাম ‘আবু ধাবি পোর্টস কোম্পানি’ থাকলেও বর্তমান নাম এডি পোর্টস গ্রুপ।
সময়ের সাথে সাথে আরব বিশ্ব, বিশেষত মধ্য প্রাচ্য অঞ্চলের বন্দর ও পরিবহন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। কারণ আর কিছুই নয়, এই অঞ্চলের বিশাল খনিজ সম্পদ। এই অঞ্চল থেকে উত্তোলিত খনিজ সম্পদসমূহ সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মেটায়। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণের খনিজ সম্পদ পরিবহনের জন্য প্রয়োজন বিশাল পরিবহন ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হলো সামুদ্রিক বাণিজ্য। আর ঠিক সেজন্যই বর্তমানে সমগ্র মধ্য প্রাচ্য জুড়ে গড়ে উঠছে একাধিক বন্দর। এডি পোর্টস এর অধীনে সমগ্র সংযুক্ত আরব আমিরাত জুড়েই ১০টি বন্দর ও টার্মিনাল রয়েছে। তবে এটি শুধু বন্দর ব্যবসা নয় বরং তার সাথে লজিস্টিকস ব্যবসাতেও বিশাল প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। পণ্য পরিবহনের জন্য প্রতিটি বন্দরই রেল, রোড সহ একাধিক মাধ্যমের সাহায্যে সংযুক্ত। সব মিলিয়ে সামগ্রিক ভাবেই এই অঞ্চলে এডি পোর্টস গ্রুপের একটি আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ সমগ্র অঞ্চলটিই পণ্য পরিবহনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। তাই স্বভাবতই এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বন্দর ও পরিবহন ব্যবস্থার সৃষ্টি দূরদর্শীতার পরিচয় রাখে।
আরব বিশ্বের ব্যবসা সমূহের কথা বলতে গেলে প্রধানত খনিজ সম্পদের নামটিই উঠে আসে। খনিজ সম্পদে ভরপুর হওয়ায় ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চল, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘ বহু বছর যাবতই সুবিধা লাভ করছে। শুধু তাই নয়, খনিজ তেলের উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করাটা হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের অন্যতম এক ভূরাজনৈতিক অস্ত্র।
তবে এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয় বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয়। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে প্রাইভেট কোম্পানি গুলো সর্ববৃহৎ হলেও এই অঞ্চলের সকল বড় বড় প্রতিষ্ঠানই সরকারি মালিকানাধীন। এর সাথে খনিজ সম্পদের বেশ বড় একটি সংযোগ আছে। যুগে যুগে খনিজ ব্যবসার লাভের অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ায় সেই বিপুল অর্থ দিয়ে সহজেই অন্য ব্যবসাতে বিনিয়োগ করা গেছে। বিপুল বিনিয়োগের ফলে খুব সহজেই আরও বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠান সফলতার মুখ দেখেছে। আর ঠিক সেজন্যই খনিজ ব্যবসার পাশাপাশি অন্যান্য খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোও প্রধানত সরকারি।
এছাড়া আরব বিশ্বের অধিকাংশ ব্যবসায়ই মূলত কাঁচামাল ও জ্বালানি নির্ভর। অর্থাৎ সারা বিশ্বের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর সামর্থ্য থাকলেও আরব বিশ্ব নতুন পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছে। বিশেষত যন্ত্রাদি তৈরি, ব্যবহার থেকে শুরু করে সর্বোপরি তৈরি পণ্যের বাজারে বরাবরই এ অঞ্চলের ভূমিকা কম। ফলস্বরুপ বিশ্বের অন্য অনেক অঞ্চলেই এ অঞ্চলের জ্বালানি ব্যবহার করে নানা ধরনের শিল্প গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদনের দিক থেকে মধ্য প্রাচ্য তথা আরব অঞ্চল যতটুকু স্বাবলম্বী হতে পারতো, তার তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে আছে বলা চলে। এছাড়াও ভূরাজনৈতিক কারণে অধিকাংশ আরব দেশের সাথে ইজরায়েলের বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু গবেষণা, ও উৎপাদন দক্ষতার কারণে ইজরায়েলের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলে ভালো অবস্থান স্থাপন করেছে। এর একমাত্র সমাধান হতে পারে আরবদের নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।
এক্ষেত্রে দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের উৎপাদন ভিত্তিক শিল্প দ্রুত চালু করা বাঞ্চণীয়। কারণ কোনো খনিজ সম্পদই অফুরন্ত নয়। উদাহরণস্বরুপ, শুধু মাত্র সৌদি আরবের দৈনিক তেল উত্তোলনের পরিমাণ ১০.৮ বিলিয়ন ব্যারেন। অর্থাৎ সৌদি আরব যদি এই হারে তেল উত্তোলন করতে থাকে এবং নতুন কোনো খনির সন্ধান না পায়, সেক্ষেত্রে আগামী ২৬ বছরের মধ্যেই তাদের তেলের ভান্ডার শেষ হয়ে যাবে। এই একই কথা প্রায় প্রতিটি আরব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর তারই ফলস্বরুপ, ব্যাংকিং, উড়োজাহাজ, প্লাস্টিক, বন্দর ও পরিবহন সহ নানা খাতে আরবদের শিল্পায়ন প্রতিয়মান। এক্ষেত্রে তাদের বিশাল অর্থ সম্পদের সঠিক বিনিয়োগই হতে পারে ভবিষ্যত রক্ষার সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।
সমগ্র পৃথিবীর যেই চালিকা শক্তি, খনিজ তেল, শুধু মাত্র সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সারা বিশ্বের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আরব বিশ্ব। ভূরাজনৈতিক ভাবে এতটা সমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এ বিশ্বের বুকে কমই আছে। যুগে যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলের মনিষীদের অবদান নেহায়েত কম নয়। তবে বর্তমান বিশ্বে আরব অর্থনীতি প্রায় পুরোটাই খনিজ পদার্থ নির্ভর। তবে আশা করা যায় উৎপাদন ও সেবা খাতে আরবদের যেই পদচারণা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে।
24-11-2024
International
আধুনিক পৃথিবীতে যে নির্বাচনটি বিশ্বের উপর সবচেয়ে বেশি...
Read More21-11-2024
International
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বিশ্বের অন্যতম প্রধান...
Read More14-11-2024
International
সত্য নাদেলা মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.