Economy
Written by: Farhan Ishrak Fahim
19-07-2023
যখন নতুন কোন প্রযুক্তি আসে, তখন এটি শিল্প খাতে বিপ্লব ঘটায়। কিছু চাকরি চলে যায় এবং কিছু নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। চাকরি খাতে যেমন তৈরি হয় নতুন সম্ভাবনা ঠিক তেমনি ব্যবসা খাতে তৈরি হয় নতুন সম্ভাবনা।
যেমন: ইন্টারনেট আসার পর খবরের কাগজের ব্যবসা লোকসানের স্বীকার হচ্ছে। আবার, এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক, গুগলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার আয় করছে।
একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র বিজ্ঞানীরা AI নিয়ে কাজ করত। কিন্তু, Chat GPT আসার পর যে কেউ এখন এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে। এটি প্রযুক্তি খাতে এক নতুন বিপ্লব নিয়ে এসেছে। আগে যেমন বলেছি নতুন প্রযুক্তি কিছু চাকরির খাত নষ্ট করে ও নতুন চাকরির খাত তৈরি করে। Chat GPT আসার পর ঠিক একই ট্রেন্ড শুরু হয়েছে।
শুধু যে এটা চাকরির ক্ষেত্রে ঘটে তাই নয়। এটি ব্যবসার ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে। এখন অনেকে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছে। আর, যাদের মাথায় সবসময় ব্যবসার নতুন আইডিয়া ঘুরপাক খায়, তাদের কাছে এটি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। চলুন জানা যাক সেরকম কিছু আইডিয়া।
যখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা আর মানুষের জীবন নিয়ে আলোচনা হয়, তখন সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে যে এটি স্বাস্থ্য শিল্পে কি ভূমিকা পালন করতে পারে। এর সঠিক ব্যবহার মানুষের জীবনের আয়ু বাড়াতে পারে।
যেমন: মানুষের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে যে সে আত্মহত্যা করবে কিনা। আবার, মানুষের শরীরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যুক্ত করে রোগীর আগে ডাক্তারকে কোন রোগের সংকেত পাঠাতে পারে। এমনকি, এসব যন্ত্র ব্যবহার করে ডাক্তার রোগীকে পর্যালোচনা করতে পারেন যে রোগীর রোগের অবস্থার উন্নতি অথবা অবনতি হচ্ছে কিনা।
আবার, ধরা যাক কোন AI chat bot কে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তাকে বিভিন্ন ঔষদের নাম ও সঠিক প্রয়োগ সেখান হল। কেউ তার রোগের লক্ষণ জানালে সে Chat bot তাকে প্রয়োজনীয় ঔষদের পরামর্শ দিতে পারে। প্রয়োজনে, তাকে ডাক্তারের সাথে সংযোগ ঘটিয়ে দিতে পারে।
যত দিন যাচ্ছে তত আমাদের জীবন ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ এর পর এটি আরও বেড়েছে। আমরা এখন অনলাইনে বিনোদন থেকে শুরু করে ব্যবসা পর্যন্ত প্রায় সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করি।
আমাদের জীবন ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে যাওয়ায় সাইবার অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফিশিং আক্রমণ, র্যানসমওয়্যার আক্রমণ ইত্যাদি ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। Statista প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে ৪৯৩.৩৩ মিলিয়ন বার র্যানসমওয়্যার আক্রমণ সংগঠিত হয়েছে।
র্যানসমওয়্যার আটকাতে পারে এমন পণ্যের পরিমাণ এখনও বাজারে বেশ নগণ্য। আর, আজকের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জগতে এর বিপুল সম্ভাবনা আছে। যদি এমন পণ্য তৈরি করা যায় যা অতি সহজে র্যানসমওয়্যার সনাক্ত ও প্রতিরোধ করতে পারবে, তাহলে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে।
এটি যে শুধুমাত্র র্যানসমওয়্যারে সীমাবদ্ধ তাই নয়। আরও বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ সংঘটিত হয়ে থাকে। ফিশিং আক্রমণের কারণে প্রায় প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ তার একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ হারান। এমনকি, এর কারণে তথ্য চুরি হয়ে থাকে। যদি এমন পণ্য তৈরি করা যায় যা নিরাপদ ও সহজে ফিশিং আক্রমণ প্রতিহত করতে পারবে, তাহলেও অনেকে উপকৃত হবে।
একদিন সকালে হঠাৎ রিং বাজছিল। ধরার পর ওপাশ থেকে এক সুন্দর কণ্ঠ বলে উঠল যে আপনি লটারি জিতেছেন। এক হাজার টাকা পাঠান। আমরা আপনার পুরস্কার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
টাকা পাঠানোর পর কোন পার্সেল আসে না। যিনি ফোন দিয়েছিলেন তার ফোন বন্ধ। অর্থাৎ, আপনি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন।
এভাবে, প্রায় বিভিন্ন মানুষ প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে। তবে, মানুষ ক্রমে সতর্ক হচ্ছে। কিন্তু, মানুষ যত সতর্ক হচ্ছে প্রতারণার রূপ দিনে দিনে পাল্টে যাচ্ছে।
আর, এখানে যদি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত কোন পণ্য অথবা সেবা নিয়ে আশা যায়, তাহলে অতি সহজে প্রতারক চিহ্নিত করা যাবে। এমনকি, এসব পণ্য ফোন আসতে দিবে না অথবা ফোনের কথা বিশ্লেষণ করে প্রতারক সনাক্ত করতে পারবে। ফলে, অনেক মানুষের টাকা ও সময় বেচে যাবে।
স্থাপত্য শিল্পে এমন কিছু সমস্যা আছে যা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অতি সহজে সমাধান করা যায়। নকশা তৈরি করা কাজ সহজতর করার জন্য বিভিন্ন AI নির্ভর পণ্য অথবা সেবা নিয়ে আসা যায়। যেমন: আমরা গুগল ডকে ভুল লিখলে শুদ্ধ বানান পরামর্শ করে। ঠিক তেমনি নকশায় কোন ভুল করলে যাতে সঠিক নকশার পরামর্শ দিতে পারে এরকম কোন সফটওয়ার নিয়ে আসা যেতে পারে।
আবার, বাড়ি নির্মাণ করার আগে কেমন নকশা করলে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে একটি সুন্দর বাড়ি নির্মাণ করা যায় তার একটি কাল্পনিক ছবি অতি সহজে যাতে তৈরি করা যায় সেরকম সফটওয়ার বা সেবা নিয়ে আশা যেতে পারে। এমনকি, বাড়ির মধ্যে আসবাবপত্র কোথায় রাখা যায় অথবা বাড়ির আকার অনুযায়ী কিরকম নকশার আসবাবপত্র তৈরি করা যেতে পারে তার কাল্পনিক নকশা তৈরি করার সেবা প্রদান করা যেতে পারে।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা একজন মার্কেটারের কাজ সহজ করে দিতে পারে। এখাতে সফল হতে অনেক অভিজ্ঞতা লাগে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অন্যের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফল হওয়া যায়।
এছাড়া, এটি ক্রেতাদের আগ্রহ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে সাহাজ্য করতে পারবে। তাছাড়া, কিরকম বিজ্ঞাপন তৈরি করা যায় সে সংক্রান্ত পরামর্শ, A/B testing ইত্যাদি সয়ংক্রিয়ভাবে করা যাবে। সুতরাং, এ সম্পর্কিত টুল নিয়ে আসলে লাভবান হতে পারেন।
AI দোকান বা ই-কমার্স ব্যবসায় নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পারে। ক্রেতার আগ্রহ সম্পর্কে দ্রুত ধারণা পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী পণ্য সুপারিশ করলে অনেক সময় ক্রেতা সে পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়। ফলে, ব্যবসা লাভবান হয়।
যদি এমন কোন পণ্য বা সেবা নিয়ে আশা যায় যা এই ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে পারবে তাহলে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান স্বানন্দে গ্রহণ করবে।
যদি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর এমন সেবা নিয়ে আশা যায় যা চাকরিদাতা ও চাকরি সন্ধানীকে সাহাজ্য করবে তাহলে এটি চাকরির বাজারে বিপ্লব নিয়ে আসতে পারে। এমন কোন সেবা তৈরি করা যেতে পারে যা চাকরি সন্ধানীদের সিভি বিশ্লেষণ করে যাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা চাকরির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তাদের সিভি নির্বাচনে সাহাজ্য করতে পারে।
আবার, এমন সেবাও নিয়ে আশা যেতে পারে যা চাকরি সন্ধানীর চাহিদা অনুযায়ী চাকরি খুজে দিতে পারবে। এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরির নোটিফিকেশন দিতে পারে। তাছাড়া, সিভি, কভার লেটার লিখে দিতে পারে এমন সেবা নিয়ে আসা যেতে পারে। চাকরির ধরণ অনুযায়ী ইন্টারভিউ প্রশ্নের তালিকা দিতে পারে যাতে অনুশীলন করা যায়।
শিক্ষাখাতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন: এরকম কোন প্লাটফর্ম আনা যায় যেখানে শিক্ষার্থীকে তার সক্ষমতা অনুযায়ী টপিকের পরামর্শ দেয়া হবে। এমনকি, সে সেখানে তার দক্ষতা যাচাই করতে পারবে। সে যাচাইএর ফলাফল অনুযায়ী তাকে উন্নতি করার জন্য পরামর্শ দেয়া হবে।
আবার, শিক্ষকদের পরীক্ষা মূল্যায়নে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এমন কোন সফটওয়ার আনা যায় যাতে সে সফটওয়ার অতি সহজে পরীক্ষা মূল্যায়ন করতে পারবে। এখনও অনেক সফটওয়ার হাতের লেখাকে বিশ্লেষণ করতে পারে না। একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে যেমন: সহজে মূল্যায়ন করা, চুরি করা হয়েছে কিনা যাচাই করা ইত্যাদি সংক্রান্ত সফটওয়ার আনা যেতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ সহজতর করার জন্য বিভিন্ন Startup নিয়ে আশা যায়। আমাদের প্রায় বিভিন্ন তথ্য বিভিন্ন সুত্র থেকে লিখতে হয়। যেমন: ছবি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমন সেবা নিয়ে আসতে পারে যা ছবি থেকে নির্ভুল তথ্য লিখতে পারবে।
আবার, ধরা যাক বিভিন্ন ফাইল সাজিয়ে রাখতে হয় যাতে সহজে খুজে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে, এমন সেবা নিয়ে আশা যায় যা ফাইলের তথ্য বিশ্লেষণ করে সয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট বিভাগ অনুযায়ী ফাইল সংরক্ষণ করবে।
আমাদের প্রায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় ও প্রতিবেদন লিখতে হয়। এমন সেবা নিয়ে আশা যেতে পারে যা বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান করবে ও সয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিবেদন লিখবে।
Supply chain শিল্পে AI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এমন সেবা নিয়ে আসা যেতে পারে যা বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে পণ্য চাহিদার পূর্বাভাস দিতে পারবে। তখন, সে অনুযায়ী পণ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যাবে।
আবার, একটি গুদামে নিয়মিত Safety stock রাখতে হয়। সাধারণ চাহিদা, পণ্য কি পরিমাণ গুদামে আছে, বছরে কি পরিমাণ পণ্য বিক্রয় হয় ইত্যাদি তথ্য বিশ্লেষণ করে কি পরিমাণ Stock রাখতে হবে AI সে পূর্বাভাস দিতে পারে। সে সম্পর্কিত সেবা নিয়ে আসা যেতে পারে।
যিনি Supply chain এ কাজ করেন তাকে নিয়মিত সরবরাহকারী মূল্যায়ন করতে হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত সেবা তাকে এ কাজে সাহায্য করতে পারে। এটি দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ করে সরবরাহকারীর কার্যক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এমনকি, সরবরাহকারীর ভুল চিহ্নিত ও সংশোধনে সাহায্য করতে পারে। এ সম্পর্কিত Startup চালু করা যেতে পারে।
আশা করি, আমাদের আজকের ব্লগ আপনাদের ভাল লেগেছে। আমাদের পরবর্তী ব্লগ পেতে Newsletter subscribe করুন। এর পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট mawbiz.com.bdএর ব্লগ সেকশনে নজর রাখতে পারেন।
16-10-2024
Economy
ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা...
Read More28-08-2024
Economy
গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে...
Read More23-05-2024
Economy
বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.