Print World Header Banner

International

ট্রাম্প বনাম বাইডেন: চীনের উপর শুল্ক নীতির পার্থক্য কোথায়?

28-04-2025

ট্রাম্প বনাম বাইডেন: চীনের উপর শুল্ক নীতির পার্থক্য কোথায়?

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিগত এক দশকে বৈশ্বিক রাজনীতির সবচেয়ে উত্তপ্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক (tariff) নীতি—যা একসময় কেবল অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা ছিল, এখন তা পরিণত হয়েছে প্রযুক্তিগত, কৌশলগত এবং ভূরাজনৈতিক লড়াইয়ে।

এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি অধ্যায় হলো—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (২০১৭-২০২১) এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (২০২১-বর্তমান)-এর শাসনামল। দুই প্রেসিডেন্টই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ করলেও তাদের ব্যবহৃত কৌশল ও উদ্দেশ্যের মধ্যে আছে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য।

এই ব্লগে আমরা বিশ্লেষণ করব:

- ট্রাম্প ও বাইডেনের চীনবিষয়ক শুল্ক নীতির মূল বৈশিষ্ট্য

- শুল্ক আরোপের কারণ ও উদ্দেশ্য

- প্রভাব ও ফলাফল

- বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রতিফলন

- বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ: “America First” পলিসির বাস্তব প্রয়োগ

২০১৮ সালে শুরু হয় “Tariff War” বা “শুল্ক যুদ্ধ”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাস করতেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অতিরিক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে কিন্তু একইসঙ্গে নিজস্ব বাজারকে মার্কিন কোম্পানির জন্য সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। তাই তিনি “America First” নীতির অংশ হিসেবে চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ শুরু করেন।

প্রধান পদক্ষেপগুলো:

- $৩৭০ বিলিয়ন মূল্যের চীনা পণ্যের উপর ১০%–২৫% শুল্ক

- চীনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর আলাদা শুল্ক

- প্রযুক্তি খাতে চীনা কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা (Huawei, ZTE)

- “Phase One” ট্রেড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২০ সালে, কিন্তু তা আংশিক বাস্তবায়িত হয়

ট্রাম্পের যুক্তি ছিল:

“আমরা চীনের দ্বারা শোষিত হচ্ছি। তাদের শুল্ক আছে, কিন্তু আমাদের নেই। এটা বন্ধ করতে হবে।”

বাইডেনের শুল্কনীতি: ভারসাম্য, কূটনীতি ও কৌশলগত চাপ

জো বাইডেন ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই আশা করেছিলেন যে, ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক হয়তো তুলে নেওয়া হবে। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, বাইডেন শুল্ক না কমিয়ে বরং কিছু ক্ষেত্রে নতুনভাবে প্রয়োগ করছেন, কিন্তু একটি “মাল্টিলেটারাল (বহুপাক্ষিক)” কৌশলের অংশ হিসেবে।

বাইডেনের কৌশলগত বৈশিষ্ট্য:

১। চীনের বিরুদ্ধে কোয়ালিশন তৈরি করা
→ Quad, G7, NATO-এরসঙ্গেচীনেরপ্রযুক্তিমানবাধিকারইস্যুতেঐক্যগঠন

২। Supply Chain Diversification
→ চীন-নির্ভরতা কমিয়ে ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে উৎস সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ

৩। Selective Tariff Adjustments
→ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও সামরিক পণ্য খাতে শুল্ক বজায় রাখা
→ কিছু কনজ্যুমার গুডসে শুল্ক হ্রাসের চিন্তা (মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমাতে)

৪। IRA ও CHIPS Act-এর মাধ্যমে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো
→ বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রিক ভেহিকেল খাতে

How Canada is impacted by Trump's sweeping tariff plan | Radio-Canada.ca

ট্রাম্প বনাম বাইডেন: তুলনামূলক পার্থক্য

বিষয়

ডোনাল্ড ট্রাম্প

        জো বাইডেন

শুল্ক নীতি উদ্দেশ্য

চীনের আমদানি কমানো, ঘাটতি হ্রাস

কৌশলগত চাপ, প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা

শুল্কের ব্যাপ্তি

ব্যাপক, প্রায় $৩৭০ বিলিয়ন পণ্যে

আংশিকভাবে রক্ষণ, কিছুতে ছাড়

কৌশল

এককভাবে যুদ্ধ ঘোষণা (bilateral)

মিত্র নিয়ে চাপ প্রয়োগ (multilateral)

চুক্তির প্রচেষ্টা

Phase One ট্রেড ডিল (আংশিক সফল)

কূটনৈতিক যোগাযোগ সীমিত

মানবাধিকার/হংকং/ তাইওয়ান ইস্যু

তুলনামূলক কম গুরুত্ব

উচ্চমাত্রায় গুরুত্ব, নিষেধাজ্ঞা


এই শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব কী হয়েছিল?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে:

- আমদানিকৃত চীনা পণ্যের দাম বেড়ে যায় → ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত

- ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পায়

- কৃষকদের জন্য সরকারকে দিতে হয় বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ

চীনের অর্থনীতিতে:

- রপ্তানি হ্রাস পেলেও চীন বিকল্প বাজার খুঁজে নেয়

- Belt and Road Initiative (BRI) প্রকল্পের গতি বাড়ায়

- প্রযুক্তি স্বনির্ভরতার দিকে মনোযোগ দেয় (Made in China 2025)

বিশ্ব অর্থনীতিতে:

- Supply chain disruption

- বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে

- ইউরোপ ও এশিয়ায় চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধের প্রভাব পড়ে

২০২৫ সালের নির্বাচন ও সম্ভাব্য পরিবর্তন

আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি ট্রাম্প পুনরায় জয়লাভ করেন, তাহলে তিনি আবারও অত্যন্ত কঠোর শুল্ক নীতি গ্রহণ করতে পারেন। তার সাম্প্রতিক বক্তব্য অনুযায়ী:

“চীনের বিরুদ্ধে ৬০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবো... এটা দরকার দেশের নিরাপত্তার জন্য।”

অন্যদিকে, বাইডেন প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে শীতল যুদ্ধের কৌশল অনুসরণ করলেও সাংঘাতিক বাণিজ্যযুদ্ধ এড়িয়ে চলছে।

বাংলাদেশের জন্য এর গুরুত্ব ও সম্ভাবনা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিও, সুযোগও তৈরি করেছে।

সুযোগসমূহ:

- যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি গার্মেন্টস, প্রযুক্তি সামগ্রী চীনের পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে আমদানিতে আগ্রহী

- “China Plus One” স্ট্র্যাটেজির কারণে বাংলাদেশ একটি বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠছে

- রপ্তানি বৈচিত্র্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণের সম্ভাবনা বাড়ছে

ঝুঁকিসমূহ:

- চীন থেকে কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা থাকায় supply chain ব্যাহত হতে পারে

- মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো কোনো প্রযুক্তি বা যন্ত্রাংশ আমদানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে

- ডলারের সংকট ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের চাপ বাড়তে পারে

উপসংহার: ভিন্ন রূপে একই যুদ্ধ?

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যিক সংঘাত একদম শেষ হয়নি—শুধু কৌশল পাল্টেছে।
ট্রাম্প জোর করে চাপ দিয়েছিলেন, বাইডেন কৌশলে ঘিরে ফেলছেন।

একদিকে শুল্ক বাড়িয়ে সরাসরি চ্যালেঞ্জ, আরেকদিকে প্রযুক্তি ও চিপের দুনিয়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই—এই দুই পথেই চীনকে দমন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে:

এই দুই সুপার পাওয়ারের সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতিকে কতটা অস্থির করে তুলবে? এবং বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো কিভাবে নিজেদের অবস্থান রক্ষা করবে?

এখন প্রয়োজন—বুদ্ধিদীপ্ত কূটনীতি, বহুমুখী রপ্তানির নীতি এবং প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা।

Previous Post

Next Post

Related Posts

কেন ভারতের সাত বোন বাংলাদেশের উপরে নির্ভরশীল ?

17-04-2025

International

কেন ভারতের সাত বোন বাংলাদেশের উপরে নির্ভরশীল ?

‘সেভেন সিস্টারস ভারতের একটা ল্যান্ডলকড অঞ্চল। তাদের...

Read More
ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেন্ট কি? রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে...

20-03-2025

International

ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেন্ট কি? রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে...

আজকের বিশ্বে যদি আপনার ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে...

Read More
ইলন মাস্ক কিভাবে ট্রাম্প প্রশাসনে এত প্রভাবশালী

18-03-2025

International

ইলন মাস্ক কিভাবে ট্রাম্প প্রশাসনে এত প্রভাবশালী

বিশ্বের এক নম্বর ধনী ইলন মাস্কের নাম শোনে নি, এমন মানুষ...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter