Home » MAWblog » Miscellaneous » বাংলাদেশের সংবিধানঃ ইতিহাস, সংশোধনী ও ভবিষ্যৎ
Miscellaneous
Written by: এস এম নাহিয়ান
02-12-2024
সংবিধান যেমন একটি রাষ্ট্র পরিচলনার সনদ, তেমনই তা সে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এই আইনের মূলে রয়েছে জনগণ। সংবিধানের ৭ম ধারা অনুযায়ী, সংবিধান এ দেশের জনগণের পরম অভিব্যক্তি এবং সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। তবে এই জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংশোধনী আনা হয়েছে। আবার সেসব সংশোধনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাতিলও হয়েছে পরবর্তীতে। তবে আসলেই কেমন সংশোধনী জনস্বার্থের জন্য প্রয়োজন সেসব বুঝতে হলে জানতে হবে সংবিধানের ইতিহাস, সংশোধনী ও সংশোধনীর পেছনের কারণসমূহ।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয় ১৯৭২ সালের ১১ই এপ্রিল। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন সংবিধান প্রণেতা হিসেবে খ্যাত ড. কামাল হসেন। ৩৫ সদস্যের এ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বেশিরভাগ ছিলেন জাতীয় পরিষদ অথবা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।
চিত্রঃ সংবিধান প্রণয়ন কমিটি তৈরির সময়কার নিউজ-কাটিং
সংবিধানের গঠনের উদ্দেশ্যে ১৭ই এপ্রিল থেকে ৩রা অক্টোবর বিভিন্ন বৈঠক হয়। এক্ষেত্রে জনগণের মতামত গ্রহণেরও উদ্দ্যেগ নেওয়া হয়। সেসব মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয় ৯৮টি সুপারিশ। ১২ই অক্টোবর তৎকালীন গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনেই উথাপিত হয় এ সংবিধানের বিল। ৪০৩ জনের ভেতর ৩৯৯ সদস্যের ভোট নিয়ে সংবিধানটি গৃহীত হয় ৪ঠা নভেম্বর।
তবে এ কমিটির সদস্যের বাইরেও একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বের অবদান রয়েছে এ সংবিধানে। বিশেষয়ত সংবিধানের ভাষা পর্যালোচনার দায়িত্ব পান ড. আনিসুজ্জামান, সৈয়দ আলী আহসান ও মযহারুল ইসলাম। সংবিধানের অলংকরণের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তার অধীনে ছিলে শিল্পী জনাবুল ইসলাম, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আবুল বারক আলভী ও হাশেম খান। মূল অলংকরণটি করেন শিল্পী হাশেম খান।
চিত্রঃ বাংলাদেশের সংবিধান
বাংলাদেশের সংবিধান মোট ১১ ভাগে বিভক্ত। এতে সাতটি তফসিল, ১৫৩টি ধারা বা অনুচ্ছেদ রয়েছে। সংবিধান বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লিখিত। তবে অর্থগত বিরোধ তৈরি হলে সর্বদা বাংলা সংবিধান প্রাধান্য পাবে। সংবিধানে যে সকল ভাগ রয়েছে
আজ অবধি বাংলাদেশের সংবিধানে ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, ত্রয়োদশ এবং ষোড়শ সংশোধনী সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অবৈধ পরিগণিত হয়ে বাতিল হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ সংশোধনী আলাদা ভাবে বাতিল না হলেও, সে সংশোধনীর আর কোনো সাংবিধানিক গুরুত্ব নেই। কিন্তু যেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান, সেখানে এত বার বিভিন্ন সংশোধনীর বৈধতা বাতিল হয়ে যাওয়ায় অবশ্যই কিছু প্রশ্ন উঠে। সংবিধানের সংশোধনী গুলো তাহলে কাদের স্বার্থ রক্ষায় করা হয়? সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে জনগণের যে অভিপ্রায়, তা কি বাস্তবায়িত? এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া একমাত্র সম্ভব সংবিধানের সংশোধনী সমূহ বিশ্লেষণ করলে।
তবে তার আগে দেখা নেওয়া যাক সংবিধানের সংশোধনী গুলো গৃহীত হওয়ার তারিখ ও বর্তমান অবস্থা।
সংবিধান প্রণয়নের মাত্র ৮ মাসের ভেতরেই প্রথম সংশোধনী আসে সংবিধানে। তবে সে সময়ের প্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার করার জন্য এ সংশোধনীর প্রয়োজন ছিল। এ সংশোধনীর জন্য বিল উথাপন করেন তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর। সে সময় তিন জন সদস্য ভোটদানে বিরত থাকলেও একজনও এর বিপক্ষে ভোট দেয় নি। ফলে বিলটি ২৫৪-০ ভোটে সংশোধনী হিসেবে গৃহীত হয়।
এ সংশোধনীর সাহায্যে সংবিধানের চারটি ধারাতে পরিবর্তন আনা হয়। ধারা গুলো হলো ২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২। মূলত এর সাহায্যে যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, অথবা জনজীবনে ব্যাপক অর্থনৈতিক বাধাগ্রস্থতা্র মূহুর্তে জরুরী অবস্থা জারি করার বিধান রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী পরামর্শবলে রাষ্ট্রপতি এ জরুরি অবস্থা জারি করবেন বলে বিধি হয়। তবে এবারই প্রথম সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত মতবিরোধ দেখা দেয়। বিল পাসের সময় তৎকালীন বিরোধী ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে বেরিয়ে যান। তবে তা ২৬৭-০ ভোটে পাস করা এ বিল গৃহীত হওয়া থেকে থামাতে পারে নি।
এ বিলটিও উথাপন করেন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর। এ সংশোধনীটি ছিল প্রথম সংশোধনী যার সাথে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের কার্যক্রমের সংশ্লিষ্টতা ছিল। এর মাধ্যমে মূলত মুজিব-ইন্দিরার মাঝে করা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি ইত্যাদিকে অনুমোদন দেওয়া হয়। সংবিধানের প্রথম এই তিনটি সংশোধনীর কোনটিই আদালতে চ্যালেঞ্জড অথবা বাতিল হয় নি।
চিত্রঃ ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি
স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম বিতর্কিত সংশোধনী ছিল এই চতুর্থ সংশোধনী। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনা হয়। সংসদীয় শাসন পদ্ধতিকে বাতিল করা হয়। একই সাথে সকল রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ওয়ান-পার্টি-স্টেট হিসেবে বাংলাদেশের আভির্ভাব হয়। সে সময় একক রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। রাষ্ট্রের প্রধান ও সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান রাষ্ট্রপতি। একই সাথে সৃষ্টি করা হয় উপরাষ্ট্রপতি এর পদ। এ সংশোধনীর প্রতিবাদস্বরুপ সরকার দলীয় এমএজি ওসমানী ও ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম সংসদ ত্যাগ করেন।
চিত্রঃ বাকশাল সংক্রান্ত নিউজ-কাটিং
চতুর্থ সংশোধনী অত্যন্ত বিতর্কিত হলেও একে এখনও অবৈধ ঘোষণা করা হয় নি। কিন্তু এ সংশোধনীর মাত্র ৭ মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর পর বাংলাদেশের সেনাশাসন, ও পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবাধ রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়েই চতুর্থ সংশোধনী তার সকল কার্যকারিতা হারিয়েছে। যদিও অতি সম্প্রতি এ সংশোধনী বাতিল চেয়েও উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। তবে আদতে এর আর কোনো তাৎপর্য নেই।
এর মাধ্যমে মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকান্ড থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ই এপ্রিল অবধি চলমান সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়। মুজিব পরিবার হত্যাকান্ডের বিচার নিষিদ্ধ করে খন্দকার মোশতাকের জারি করা অধ্যাদেশকে গৃহীত করা হয়।
তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি ছিল সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করা। ফলস্বরুপ সংবিধানের মূল ধারাই বদলে যায়। আবার অন্যদিকে সংবিধানের শুরুতে যুক্ত করা হয় ‘বিসমিল্লাহ’। গৃহীত সংশোধনীর মধ্যে এটিই প্রথম বাতিল হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এই সংশোধনীকে অবৈধ বলে রায় দেয়। তবে এ সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করা হলেও সংবিধানের শুরুতে থাকা ‘বিসমিল্লাহ’ বাদ দেওয়া হয় নি।
এ সংশোধনীর মাধ্যমে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচনের বিধান করা হয়। সে সময় বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিএনপির মনোনয়ন পান। এ সংশোধনী ২৫২-০ ভোটে পাস হয়।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সামরিক শাসনের দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল এরশাদ। ৮২ থেকে ৮৬ অবধি চলমান সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয় এই সংশোধনী। তার পাশাপাশি বৈধতা পায় সকল অধ্যাদেশ, ফরমান, ও আদেশ। বৈধতা হারানো সংশোধনী গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় এটি। ২০১০ সালের ২৬শে আগস্ট এটি বাতিল হয়।
অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ২, ৩, ৫ ও ১০০ তম ধারা প্রভাবিত হয়। এ সংশোধনীর অন্যতম আলোচিত পদক্ষেপ ছিল ইসমালকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এছাড়াও ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ খোলার সিধান্ত হয়। যদিও তা পরবর্তীতে হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়।
তবে মূলত এই পদক্ষেপটি ছিল তৎকালীন এরশাদ সরকারের একটি রাজনৈতিক চাল। তখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মুখর ছিল আওয়ামীলীগ বিএনপি সহ অন্যান্য দলসমূহ। সে সময় জনমনে ইতিবাচক ধারনা সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার প্রচেষ্টা হিসেবেও অনেকে চিহ্নিত করেন একে। তবে এই সংশোধনীটি বাতিল হয় নি।
এ সংশোধনীর মাধ্যমে মূলত রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়। একই সাথে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচনের সুযোগ রাখা হয়। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি পদে পর পর দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করা যাবে না, এ বিধানও পাস হয়।
এ সংশোধনীর মাধ্যমে একজন রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের ভেতর নতুন নির্বাচন আয়োজনের বিধান করা হয়। এসবের পাশাপাশি সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনকে ১০ বছরের জন্য সংরক্ষিত করা হয়।
একাদশ সংশোধনীর ব্যাপারে তেমন শোনা না গেলেও, বর্তমানের প্রেক্ষাপটে এর কিছুটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এ সংশোধনীর মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের অন্তবর্তীকালীন সরকার বৈধতা পায়। বর্তমানে বাংলাদেশ এক অন্তবর্তী সরকারের হাতেই পরিচালিত হচ্ছে।
সর্বশেষ চতুর্থ সংশোধনীর পরে দ্বাদশ সংশোধনীতে এসে তা একটি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে গৃহীত হয়। বিরল ভাবে এ সংশোধনীতে সরকারী দল ও বিরোধী দল, উভয়েরই মত ছিল। এছাড়াও এই বিলটি উথাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, যা ছিল ব্যতিক্রম। এর মাধ্যমে আবারও সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। বাদ পড়ে উপরাষ্ট্রপতির পদ।
বর্তমানের অন্যতম আলোচিত সংশোধনীটি হলো ত্রয়োদশ সংশোধনী। মূলত এটিই সেই সংশোধনী যার সাহায্যে প্রথম বারের ন্যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রুপরেখা ও বৈধতা সামনে আসে। সে সময় এই সংশোধনী আনার পেছনে আওয়ামী লীগের অন্যতম ভূমিকা ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে তাদের মাধ্যমেই এটি সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া হয়।
এর ফলে পরবর্তী সকল নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। এই সংশোধনী বাতিলের কারণে বর্তমানেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন না করে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হয়েছে।
চিত্রঃ এরশাদ বিরোধী আন্দোলন
২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী হয়। এতে মূলত সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫টি করা হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ সিধান্ত ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৭ বছরে করা। তবে এই সিধান্তও ছিল রাজনৈতিক সুবিধার জন্য। আইন অনুযায়ী সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। মূলত তৎকালীন বিচারপতি কেএম হাসানকে পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা বানানোর জন্যই এ সংশোধনী আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ করে বিরোধী দল।
পঞ্চদশ সংশোধনীও বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী। এই সংশোধনীর মাধ্যমে পূর্ববর্তী ত্রয়োদশ সংশোধনী অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়। এছাড়াও ১৯৭২ সালের আদি সংবিধানের চারটি মূলনীতি, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ও ধর্মনিরপেক্ষতা, যা জিয়াউর রহমানের আমলে বাতিল করা হয়েছিলো, তা পুর্নবহাল হয়। একই সাথে ধর্মীয় স্বাধীনতাও পুনর্বহাল হয়।
তবে মূলনীতিতে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তার পরিবারের সুযোগ সুবিধার বিধান করা হয়। সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ এর স্থলে ৫০ এ উন্নীত করা হয়। এছাড়াও ধারা ৭ এ যুক্ত হয় ৭ (ক) ও ৭ (খ)। বিরোধী দল বিএনপি এই বিল উথাপনের পর ভোট বর্জন করে। তবুও এটি ২৯১-১ ভোটে পাস হয়।
যেই সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয় সংবিধানের অভিভাবক, খোদ সেই সুপ্রিম কোর্টের জন্যই ষোড়শ সংশোধনী ছিল স্পর্শকাতর। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসরণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বিচার বিভাগের স্বতন্ত্রতা বাঁধাগ্রস্থ হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অসদাচারণ বা অসামর্থ্যের প্রেক্ষিতে সংসদের নূন্যতম দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে বিচারপতিদের অপসারণের বিধি ছিল। পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়।
কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যখন আদি সংবিধানের মূলনীতি ফিরিয়ে আনা হয়, তখনও এ ব্যবস্থা অপরিবর্তিত ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২০১২ সালের মে মাসে। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আবারও সংসদের হাতেই ফেরত যায়।
চিত্রঃ বিচারপতি এস কে সিনহা
২০১৬ সালের ৫মে হাইকোর্টের রায়ে এই সংশোধনী অবৈধ বলে ঘোষিত হয়। এমনকি পরবর্তীতে আপিল বিভাগও তা বহাল রাখে। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউকেও নাকচ করে দেয় আপিল বিভাগ। কিন্তু এরই জের ধরে তৎকালীন বিচারপতি এস কে সিনহার সাথে বিরোধ তৈরি হয় তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের। ফলস্বরুপ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের বিধি আরও ২৫ বছরের জন্য স্থায়ী করা হয়।
ভবিষ্যতে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে সংবিধানে, সে প্রশ্নের আগে আমাদের বুঝতে হবে এখন তা আদৌ সম্ভব কি না। বাস্তবতা হলো সংবিধানের সংশোধনের কোনো এখতিয়ার বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের নেই। তারা সর্বোচ্চ বিলটি উথাপন করে যেতে পারে। যা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সদস্যের দ্বারা গৃহীত অথবা বর্জন করা হবে।
সংবিধান সংশোধনের পাশাপাশি অনেকেই সংবিধান বাতিলের কথা বলছেন। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র গঠন করা ছাড়া সংবিধান সম্পূর্ণ রুপে বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের নজির বিরল। এছাড়াও এটি করার এখতিয়ার অন্তবর্তীকালীন অথবা নির্বাচিত, কোনো সরকারেরই নেই। সংবিধান বাতিলের প্রক্রিয়াকে বলে রেফারেন্ডাম যা সম্পন্ন করতে গণভোটের প্রয়োজন। সুতরাং এতটুকু নিশ্চিত যে, সংবিধান সংশোধন বা বাতিল অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হচ্ছে না।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিটি। এর প্রধান করা হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রিয়াজকে। মোট ৯ সদস্যের এই কমিশনের ইতোমধ্যে মতামত গ্রহণ শুরু করেছে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নানা মুনীর নানা মত বাগধারাটির অনুধাবন করা যায়।
নতুন সংবিধানে কি কি পরিবর্তন আসবে তা আগে থেকে বলার উপায় নেই। সবচেয়ে জোরালো কিছু দাবির মধ্যে একটি হলো দুই কক্ষ বিশিষ্ট গণপরিষদ গঠন করা। কেউ কেউ বলছেন রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের কথা, অন্য মহল বলছেন সম্পূর্ণ সংবিধানকেই ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিফলনে সংস্কারের কথা। এছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে সংবিধানের মূলনীতি গুলো নিয়ে।
অন্য যেই বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে সেটি হলো রাষ্ট্রপতির পদ ও ক্ষমতা। দাবি উঠেছে নির্দলীয় ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার কথা। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদে দুইবারের বেশি আসীন হওয়া যাবে না, এমন দাবিও উঠেছে। বর্তমান সংবিধানের ৫১ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ দায়মুক্তির অবসান ঘটানো উচিত বলে মনে করেন অনেকে। অপর দিকে রাষ্ট্রপতি ১৫ দিনের মধ্যে সম্মতি প্রদান না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাস হয়ে যাওয়ার যেই বিষয়টি, তা নিয়েও ভাবছেন অনেকে। রাষ্ট্রপতির সম্মতির গুরুত্ব বাড়িয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য বাড়ানো যায় কি না তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। এছাড়াও ন্যায়পালের পদের বিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তাও উঠে এসেছে।
চিত্রঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলি রিয়াজ
ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল বিএনপি ৬০টি সংস্কার সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দিয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিটির কাছে। অন্যদিকে জামায়াত ইসলামী পঞ্চদশ সংশোধনীর পাশাপাশি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদও বাতিল চায়। এভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি অনেক বিশ্লেষকও পত্র-পত্রিকায় তাদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করছেন। তবে সংবিধানে কি কি পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিশ্চিত ভাবে কেউই বলতে পারে না। কারণ এর সাথে শুধু জনগনের স্বার্থ নয় বরং জড়িত আছে অনেক রাজনৈতিক সমীকরণ।
লেখার এ অংশে এসে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীর ইতিহাস অনেকটাই বিতর্কিত। সংবিধান যে একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন, এর যে একটি আলাদা মর্যাদা আছে তা হয়তো সময়ে সময়ে অনেকেই ভুলে গেছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এক রাজনৈতিক দল নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী সংশোধনী এনেছেন। পরবর্তীতে ভিন্ন রাজনৈতিক দল এসে তা আবার বাতিল করেছেন। তাই সত্যিকার অর্থে জনহিতকর সংবিধান বহাল করতে হলে বাংলাদেশের রাজনীতির এই অপসংস্কৃতি বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।
১। ডেইলি স্টার
২। বিবিসি বাংলা
৪। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
৬। বিডিনিউজ ২৪
৭। বিডিনিউজ ২৪ (২)
৮। আজকের পত্রিকা
22-01-2025
Miscellaneous
প্রিন্টার কিনতে গেলে সবার প্রথমে যেই প্রশ্নটা আপনার...
Read More19-01-2025
Miscellaneous
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Artificial Intelligence) বর্তমান সময়ে...
Read More09-01-2025
Miscellaneous
ব্যবসা, অফিস অথবা ঘর, যে জন্যই প্রিন্টার কিনুন না কেন, ভাল...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
International...
03-10-2024
Miscellaneous...
30-09-2024
Miscellaneous...
20-08-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.