Community
Written by: এস এম নাহিয়ান
12-11-2024
যত সময় যাচ্ছে, বাংলাদেশীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনের প্রবণতাটা ততই বাড়ছে। ইউনেস্কো এর তথ্যমতে, শুধু ২০২৩ সালেই দেশ ছেড়েছে ৫২,৭৯৯ শিক্ষার্থী। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস এর তথ্য মতে, ২০০৮ সালে বিদেশে শিক্ষার্থী গমনের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬,৬০৯ জন। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে বিদেশ গমনের পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণ।
এত শিক্ষার্থীরা কোথায় যাচ্ছে সে প্রশ্নের জবাবে প্রথমেই উঠে আসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম। ২০২৩ সালে সেখানে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী গিয়েছে ১১,১৫৭ জন। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়িয়ে জমিয়েছে ৮,৫২৪ জন, যুক্তরাজ্যে ৬,৫৮৬ জন, কানাডাতে ৫,৮৩৫ জন, মালয়েশিয়াতে ৫,০৪৬ জার্মানিতে ৪,৯৮৭ জন, অস্ট্রেলিয়াতে ৪,৯৮৭ জন ও জাপানে ২,৬০৬ জন। এর পরে রয়েছে ভারত, কোরিয়া ও সৌদি আরব। অনেকে একে মনে করেন ব্রেইন ড্রেইনের চূড়ান্ত। তবে এসব দেশ পছন্দ করার ক্ষেত্রে অনেক গুলো কারণ সামষ্টিক ভাবে কাজ করে। তার ভেতর সবচেয়ে বড় কারণগুলো হলোঃ স্কলারশিপ সুবিধা, শিক্ষাব্যয়, আবাসনের খরচ, পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ, ভবিষ্যতে স্থায়ী বসবাস পাওয়ার সম্ভাবনা, ইত্যাদি।
কিন্তু এর বাইরেও বেশ কিছু দেশ রয়েছে যারা সম্পূর্ণ অথবা আংশিক স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। অন্য সকল দিক বিবেচনায়ও যথেষ্ট সুবিধাজনক। কিন্তু তবুও শিক্ষার্থীদের অনেকেই হয়তো জানেন না সে সকল সুযোগের কথা। তাই আজকের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে সেরকমই কিছু দেশের কথা।
স্নাতক পর্যায়ে খুব কম দেশই পূর্ণ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। তার ভেতর একটি হাঙ্গেরি। শুধু টিউশন ওয়েভার নয়, তার পাশাপাশি জীবন-যাপনের খরচের ক্ষেত্রেও অবদান রাখে হাঙ্গেরির স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি মূলত সরকারি পর্যায়ের একটি স্কলারশিপ যা হাঙ্গেরির ‘ফরেইন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড’ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হয়। বর্তমানে প্রায় ৯০টি দেশের সাথে তাদের চুক্তি রয়েছে। এর ভেতর বাংলাদেশ একটি।
‘Stipendiu Hungaricum Scholarship’ এর আওতায় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যে সকল সুবিধা পেয়ে থাকেঃ
১। বিনা বেতনে পড়ালেখাঃ সকল টিউশন ফি মওকুফ করা হয়ে থাকে।
২।মাসিক ভাতাঃ মাসিক ৪৩,৭০০ হাঙ্গেরিয়ান ফরিন্ট (১১০ ইউরো সমপরিমাণ) ভাতা। এ ভাতা ডিগ্রি শেষ না হওয়া অবধি বছরের ১২ মাসই দেওয়া হয়ে থাকে।
৩। থাকার সুবিধাঃ থাকার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ডর্মিটরি সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ডর্মিটরি বুক হয়ে গেলে অথবা কেউ না নিলে তাকে মাসিক ৪০,০০০ হাঙ্গেরিয়ান ফরিন্ট ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, হাঙ্গেরির বাসা ভাড়া অনুযায়ী এই ভাতায় সম্পূর্ণ ভাড়া নাও হতে পারে।
৪। মেডিকেল ইন্স্যুরেন্সঃ হাঙ্গেরিয়ান আইন অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য বছরে ৬৫,০০০ ফরিণ্ট দেওয়া হয়ে থাকে।
স্কলারশিপের আবেদন করতে যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজনঃ
১। অনলাইন আবেদন পত্রঃ ইংরেজিতে সঠিক ভাবে পূরণ করা আবেদন পত্র। সাথে অনধিক ২ বছরের পুরোনো ছবি।
২। মোটিভেশন লেটারঃ আপনি কেন হাঙ্গেরিতে পড়তে চাচ্ছেন, নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিষয়টি কেন আপনার জন্য সঠিক, কেন আপনি স্কলারশিপের যোগ্য, এ সংক্রান্ত নূন্যতম ১ পৃষ্ঠার একটি মোটিভেশন লেটার।
৩। ভাষা দক্ষতাঃ যে ভাষায় পড়ালেখা করতে হবে সে ভাষায় আপনার দক্ষতার প্রমাণ। ইংরেজির ক্ষেত্রে TOEFL অথবা IELTS স্কোর।
৪। সার্টিফিকেটঃ স্নাতক পর্যায়ের জন্য উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেটের স্ক্যান করা কপি। যদি সার্টিফিকেট ইংরেজি ব্যাতীত অন্য ভাষায় হয়ে থাকে, তবে তার সত্যায়িত ইংরেজি অনুবাদ।
৫। ট্রান্সক্রিপ্টঃ পূর্ববর্তী সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেটের ট্রান্সক্রিপ্ট তথা নম্বরপত্র।
৬। পাসপোর্টঃ পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
৭। মেডিকেল সার্টিফিকেটঃ পার্টনার কান্ট্রি (আবেদনকারীর নিজের দেশ) কর্তৃক নির্ধারিত প্রার্থীদের মেডিকেল সার্টিফিকেট।
চিত্রঃ হাঙ্গেরির একটি বিশ্ববিদ্যালয়
হাঙ্গেরির আবেদন শুরু হয়ে থাকে জানুয়ারিতে। আবেদনের সময়কাল সম্পর্কে এক ঝলকে জেনে নিতে নিচের চিত্রটি দেখুনঃ
শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। দেশীয় সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের প্রয়োজন থাকলে তা সম্পন্ন করবে। ।
টেম্পাস পাবলিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি হাঙ্গেরিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন। এক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত কাগজপত্রের স্ক্যান করা কপি জমা দিতে হবে।
টেম্পাস পাবলিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক সকল আবেদন যাচাই বাছাই। নির্ধারিত আবেদন সমূহ পার্টনার দেশে প্রেরণ করা হবে।
পার্টনার দেশের (বাংলাদেশ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আবেদন যাচাই বাছাই এবং সুপারিশ করা হবে।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সকল আবেদন শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রেরণ করা হবে।
এ পর্যায় পর্যন্ত আসতে পারা শিক্ষার্থীদের ১৫ এপ্রিলের পূর্বে মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে
মে মাসের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ তাদের পছন্দকৃত আবেদন গুলোকে টেম্পাস পাবলিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবে।
টেম্পাস পাবলিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক ভাবে স্কলারশিপ বরাদ্দ।
টেম্পাস ফাউন্ডেশনের বোর্ড অফ ট্রাস্টি কর্তৃক সিধান্ত গ্রহণ। জুন মাসের ভেতরেই শিক্ষার্থীদের ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হয় এবং আগস্টের ১ তারিখের পূর্বেই স্কলারশিপ গ্রহণ করা অথবা না করার সিধান্ত জানাতে হয়।
ভিসা প্রক্রিয়া
হাঙ্গেরিতে স্কলারশিপের জন্য আবেদনের লিংকঃ Apply - Stipendium Hungaricum
ইউরোপীয় দেশ গুলোতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের যাওয়ার যতটা আগ্রহ রয়েছে, চীনের ক্ষেত্রে ততটা নেই। কিন্তু বর্তমানে চীনা স্কলারশিপ গুলো যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং এর প্রথম ১০টির মধ্যে প্রথম ৫টিই চীনে অবস্থিত। চীনের অনেক ধরনের স্কলারশিপ সুবিধা থাকলেও, আজকে আমরা বিস্তারিত জানবো সবচেয়ে সুবিধাজনক স্কলারশিপটি নিয়ে। সেটি হলো ‘সিএসসি’ বা চাইনিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল স্কলারশিপ। তবে এটিকে ‘সিজিএস’ তথা চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ ও বলা হয়ে থাকে।
এই স্কলারশিপের মূল দায়িত্বে থাকে চাইনিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল। ‘সিল্ক রোড স্কলারশিপ’, ‘ফরবিডেন সিটি স্কলারশিপ’, ‘গ্রেট ওয়াল প্রোগ্রাম’, ‘ইইউ প্রোগ্রাম’, ‘মেরিন স্কলারশিপ’, ‘ডব্লিউএমও প্রোগ্রাম’, ‘পিআইএফ প্রোগ্রাম’, ইত্যাদি নানা প্রোগ্রামের স্কলারশিপের মূল দায়িত্বে থাকে এই কাউন্সিলের হাতেই।
সিএসসি স্কলারশিপকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। ভাগ অনুযায়ী সুবিধাও কম বেশি হয়ে থাকে। নিচে বিভিন্ন টাইপের ক্ষেত্রে কি কি সুবিধা থাকে তা উল্লেখ করা হলো।
১। রেজিস্ট্রেশন ফিঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ মওকুফ।
২। থাকার ব্যবস্থাঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মিটরি/হলে থাকার ব্যবস্থা। সাধারণত এক রুমে দুইজন থাকেন।
৩। মেডিকেল ইনস্যুরেন্সঃ সকল শিক্ষার্থীর জন্য সাধারণ মেডিকেল ইনস্যুরেন্স।
৪। স্টাইপেন্ডঃ মাসিক ২,৫০০ থেকে ৩,৫০০ ইউয়ান। যা সাধারণ ৩৫০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলার সমমূল্যের হয়ে থাকে।
১। রেজিস্ট্রেশন ফি
২। থাকার ব্যবস্থা
৩। মেডিকেল ইনস্যুরেন্স।
এছাড়াও রয়েছে টাইপ সি স্কলারশিপ যাতে সুযোগ-সুবিধা আরও কম।
চিত্রঃ চাইনিজ ডর্মিটরি
সিএসসি স্কলারশিপ পেতে হলে শিক্ষার্থীদের কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সেগুলো হলোঃ
১। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হওয়া
২। অন্য যেকোনো চীনা স্কলারশিপ না থাকা
৩। স্নাতকের ক্ষেত্রে বয়স ২৫ এর নিচে হওয়া
৪। স্নাতকে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে নূন্যতম উচ্চমাধ্যমিক অথবা সমমানের ডিগ্রি থাকা।
সিএসসি স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য নিম্নোক্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
১। নোটারিকৃত সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট
২। মেডিকেল ফর্মঃ আবেদনের সময় একটি অফিসিয়াল মেডিকেল ফর্ম অথবা ‘ফরেইনার ফিজিজ্যাল এক্সামিনেশন ফর্ম’ দাখিল করতে হবে। ফর্মটিতে অব্যশই একজন ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সীল এবং যেই প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন, তার সীল থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনের তারিখ থেকে ৬ মাসের অধিক পুরোনো কোনো ফর্ম গ্রহণযোগ্য হবে না।
৩। সিভিঃ নিজ যোগ্যতা সম্বন্ধে বিস্তারিত সিভি। ইংরেজি অথবা চাইনিজে।
৪। লেটার অফ রেকমেন্ডেশনঃ শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত দুইজন শিক্ষকের কাছ থেকে লেটার অফ রেকমেন্ডেশন।
৫। TOEFL অথবা IELTS স্কোরঃ আপনার পড়াশোনার বিষয়ে যদি ইংরেজিতে হয় তাহলে ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণস্বরুপ এর যেকোনো একটি স্কোর প্রয়োজন হবে। তবে অনেক চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তা দরকার হয় না।
৬। স্টাডি প্ল্যানঃ আপনার পড়াশোনার উদ্দেশ্য, বিভিন্ন সময়ের লক্ষ্যমাত্রা সম্বলিত স্টাডি প্ল্যান স্নাতক পর্যায়ে আবেদনের ক্ষেত্রে জরুরী।
৭। পাসপোর্টের অনুলিপি
এসবের বাইরেও চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপকের কাছ থেকে ‘আক্সেপ্টেন্স লেটার’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘এডমিশন লেটার’ থাকলে স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ বেড়ে যায় বহুগুণে।
চিত্রঃ পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়
সিএসি স্কলারশিপের জন্য আবেদনের সময়সীমা সাধারণত ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে কম সময়ের জন্য নিজস্ব সময়সীমাও ঠিক করে। আবেদনের প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে অনেকটা এরকমঃ
১। প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপকদের তালিকা থেকে আপনার লক্ষ্যের সাথে যায় তেমন কিছু বিষয় ও সে বিষয়ের অধ্যাপকদের ইমেইল বের করুন।
২। অধ্যাপকদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার প্রোফাইলের সাহায্যে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন কেন তার আপনাকে গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে তিনি রাজি হলে তাকে ‘সুপারভাইজর রিকোয়েস্ট লেটার’ পাঠান। যদি আপনার ‘অ্যাক্সেপ্টেন্স লেটার’ এসে পড়ে তাহলে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ অনেকটাই বেড়ে যাবে।
৩। ‘চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ লগইন’ পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন শুরু করুন। সেখানে প্রথমেই কোন ধরনের স্কলারশিপ চান তা ঠিক করতে পারবেন।
৪। নতুন নীতি অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী ‘টাইপ এ’ থেকে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ‘টাইপ বি’ থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থাৎ একই সময়ে সর্বোচ্চ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে। টাইপ ‘এ’ আবেদনের ক্ষেত্রে তা চাইনীজ অ্যাম্বাসির মাধ্যমে করতে হবে। আর টাইপ ‘বি’ এর ক্ষেত্রে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করতে হবে
৫। ‘ফিজিক্যাল এক্সামিনেশনি রেকর্ড ফর ফরেইনারস’ ফর্ম পূরণ করে অন্যান্য মেডিকেল রিপোর্ট সহ আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
৬। আবেদনের এই পর্যায়ে এসে উপরে উল্লিখিত সকল কাগজপত্র নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সত্যায়িত করে আপলোড করতে হবে।
সব মিলিয়ে চীনা স্কলারশিপ গুলো যথেষ্ট ভাল। অনেকেই ইউরোপ ছাড়া কোনো দেশে যাবেন না তা ঠিক করেন। কিন্তু, চীনা স্কলারশিপ একেবারেই অবহেলা করা বোকান্তির নামান্তর মাত্র। চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ ইনফরমেশন সিস্টেমের লিংকঃ Register | 来华留学管理信息系统
তৃতীয় যেই স্কলারশিপটি নিয়ে কথা বলবো সেটি হলো তুর্কিয়ে বুরস্লারি স্কলারশিপ। হাঙ্গেরি ও চীনের মতো এটিও তুরুষ্কের রাষ্ট্রায়ত্ত স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। ২০১২ সালে শুরু হওয়া এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামটি সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তার পেছনে একটি কারণ বলা চলে এই স্কলারশিপের নানা রকম সুবিধা। আরেকটি কারণ হলো তুরুষ্কের চমৎকার আবহাওয়া ও সংস্কৃতি। এ প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত তুরুষ্কের ২০৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০৯১টি প্রোগ্রাম।
সুবিধার উপর ভিত্তি করে স্নাতক পর্যায়ের স্কলারশিপের তালিকা করলে তুর্কিয়ে স্কলারশিপ প্রথম দিকেই থাকবে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও গবেষণা স্কলারশিপ সকল কিছুর জন্যই তুরুষ্কের সরকার নিম্নোক্ত সুবিধা দিয়ে থাকেঃ
১। টিউশন ফি সুবিধাঃ স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বিষয়ে বিনা বেতনে পড়ালেখা।
২। মাসিক ভাতাঃ স্নাতক পর্যায়ের জন্য মাসিক ভাতার পরিমাণ ৩,৫০০ তুর্কিশ লিরা।
৩। তুর্কি ভাষা শিক্ষাঃ তুর্কি ভাষা শেখার জন্য এক বছর মেয়াদী বাধ্যতামূলক কোর্স।
৪। থাকার সুবিধাঃ বুলস্লারি স্কলারশিপ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য সরকারি ভাবে পরিচালিত ডর্মিটরির সুবিধা রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা চাইলে বাহিরে নিজস্ব ব্যবস্থাতেও থাকতে পারে।
৫। হেলথ ইন্স্যুরেন্সঃ এই ইনস্যুরেন্স এর অধীনে শিক্ষার্থীরা সাধারণ চিকিৎসাসমূহ সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে পেয়ে থাকে। বেসরকারি হাসপাতালেও সাধারণ চিকিৎসায় ছাড় পেয়ে থাকে।
৬। বিমানের টিকেটঃ শিক্ষা কার্যক্রমের শুরু এবং শেষে একবার তুরষ্কে যাওয়া এবং একবার ফেরত আসার বিমান টিকেট দেওয়া হয়ে থাকে।
তুর্কিয়ে স্কলারশিপের শর্তসমূহ প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
১। একাডেমিক ফলাফলঃ স্নাতক পর্যায়ে বুলস্লারি স্কলারশিপ পেতে হলে পূর্ববর্তী পরীক্ষায় অন্তত ৭০% নম্বর পাওয়া বাধ্যতামূলক
২। বয়সঃ স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২১ বছর।
৩। জাতীয়তাঃ তুর্কি ব্যাতীত যেকোনো জাতীয়তার নাগরিক আবেদন করতে পারবেন।
১। নিজস্ব একাউন্ট খোলাঃ তুর্কিয়ে স্কলারশিপ সকল কার্যক্রমই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে ‘তুর্কিয়ে স্কলারশিপ্স ইনফরমেশন সেন্টার’ এর নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে। তাই আবেদন করতে হলে প্রথমেই এ ওয়েবসাইটে নিজের একটি একাউন্ট খুলতে হবে।
এক্ষেত্রে জাতীয়তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুবই সাবধান হতে হবে। কারণ একবার ভুল জাতীয়তা নির্বাচন করলে তা আর ঠিক করা যায় না।
২। তথ্য ও ছবি প্রদানঃ আবেদনের এ ধাপে সকল কাগজপত্র ও তথ্যাদি আপলোড করতে হবে। আপলোডের ক্ষেত্রে সকল কাগজ পিডিএফ ফরম্যাটে এবং সকল ছবি জেপিজি অথবা পিএনজি ফরম্যাটে থাকতে হবে। এ ধাপে আবেদনকারীর নিজস্ব তথ্য, পারিবারিক তথ্য, অ্যাকাডেমিক তথ্য, চাকরির তথ্য, এক্সট্রা-কারিকুলার ও ভলান্টিয়ারিং, সকল কিছুর তথ্যই প্রয়োজন হয়।
৩। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম নির্ধারণঃ আবেদনের এ ধাপে তুরুষ্কের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কি কি বিষয়ে পড়তে চান তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। বুলস্লারির সাইটে থাকা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে বিষয়ে নাম সার্চ করেই কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সে বিষয় রয়েছে তা দেখতে পারবেন। এ সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে মূল আবেদনের পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় সমূহ পছন্দ করে নেওয়া ভাল।
৪। লেটার অফ ইন্টেন্ট লেখাঃ নিজস্বতা রক্ষা করে একটি লেটার অফ ইন্টেন্ট লিখুন। এ লেটারটিতে মূলত আপনি যেসব বিষয়ে পড়তে চান, তা কেন পড়তে চান, তা কিভাবে আপনার পূর্ববর্তী পড়ালেখা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের সাথে প্রাসঙ্গিক তা ব্যখ্যা করতে হয়। এর পাশাপাশি কেন আপনি সে বিষয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য যোগ্য, তাও ব্যখ্যা করতে হয়।
৫। আবেদন জমাঃ এ ধাপে সকল তথ্য ঠিক আছে কি না তা যাচাই বাছাই করে আবেদন সম্পন্ন করুন।
তুর্কিয়ে স্কলারশিপের জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র বাধ্যতামূলক।
১। আপনার পরিচয়পত্র। তা হতে পারে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট
২। আবেদনকারীর ১ বছরের অনধিক পুরোনো ছবি
৩। অংশগ্রহণকৃত জাতীয় পরীক্ষাসমূহের ফলাফল
৪। পূর্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেটসমূহ
৫। ট্রান্সক্রিপ্ট
এর বাইরেও একাধিক কাগজপত্র সকল ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়ে থাকে।
১। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল। যেমন GRE, GMAT, SAT ইত্যাদি।
২। যদি নিজস্ব ভাষা ব্যাতীত অন্য কোনো ভাষা জেনে থাকেন তার প্রমাণ। ইংরেজির ক্ষেত্রে IELTS বা TOFEL।
৩। এছাড়াও প্রাসঙ্গিক কর্ম অভিজ্ঞতা কিংবা ভলান্টিয়ারিং অভিজ্ঞতা থাকলেও তা এ ধরনের স্কলারশিপ পেতে সহায়ক।
বুলস্লারি আবেদনের লিংকঃ Türkiye Bursları Sisteme Giriş Ekranı
ফিনিশ শিক্ষা ব্যবস্থাকে পৃথিবীর সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার গুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়। ফিনিশ স্কলারশিপের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই স্কলারশিপের জন্য আলাদা করে আবেদন করতে হয় না। সকল শিক্ষার্থী স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হন।
ফিনল্যান্ডের প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব স্কলারশিপ ব্যবস্থা রয়েছে। তাই আপনি কেমন সুবিধা পাবেন তা নির্ভর করছে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করছে তার উপর। তবে মোটা দাগে সকল প্রতিষ্ঠানই টিউশন ফি এর সুবিধা দিয়ে থাকে।
১। টিউশন ফিঃ যেহেতু সবাইকেই এই স্কলারশিপের জন্য বিবেচনা করা হয়ে থাকে, তাই ফিনিশ স্কলারশিপের সুবিধা মূলত টিউশন ফি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ব্যাচেলর প্রোগ্রামের ৪ বছরের জন্যই এ সুবিধা থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় বছরে এ সুবিধা পেতে হলে প্রথম বছরে নূন্যতম ৫৫-৬০ ইসিটিএস (ECTS) ক্রেডিট অর্জন করতে হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফিনল্যান্ডে বসবাসের খরচ শিক্ষার্থীর নিজেরই বহন করতে হয়।
স্কলারশিপের দায়িত্বে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ থাকায় শর্তাবলীও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করে। একেক বিশ্ববিদ্যালয় একেক ধরনের শর্ত দিয়ে থাকে। সাধারণ যে সকল শর্ত থাকেঃ
১। হাই স্কুল ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটঃ এক্ষেত্রে হাই-স্কুল ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট বলতে বাংলাদেশের উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের সার্টিফিকেটকে বোঝানো হচ্ছে। কেমন ফলাফল গ্রহণযোগ্য তা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
২। ভর্তি পরীক্ষাঃ কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাও নিয়ে থাকে।
৩। ভাষা দক্ষতার প্রমাণঃ ইংরেজিভাষী না এমন দেশের শিক্ষার্থীদের IELTS, TOFEl, PTE, ইত্যাদি সার্টিফিকেট থাকা বাঞ্চণীয়।
আবেদনের সময়সীমাও মূলত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণ তারিখ গুলো হলোঃ
ফিনিশ স্কলারশিপের জন্য আবেদন দুই ভাবে করা যায়। প্রথমটি হলো একক আবেদন। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা আবেদন করতে হয়। আরেকটি পদ্ধতি হলো যৌথ আবেদন। এক্ষেত্রে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ৬টি প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। এ লেখায় মূলত যৌথ আবেদন নিয়েই আলোচনা করা হচ্ছে। আবেদন ধাপসমূহ অনেকটা নিম্নরুপ
আবেদনের সময়সীমা থাকাকালীন ওয়েবসাইটের ‘ফিল ইন অ্যাপ্লিকেশন’ বাটনে ক্লিক করলেই আবেদনের ফর্মে চলে যাওয়া যায়। তবে এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীর কোনো একাউন্ট থাকে না। ফলে ফিনিশ স্কলারশিপের আবেদন ড্রাফট আকারে সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই। একবারে আবেদন করতে হয়।
তবে প্রয়োজনীয় অংশ গুলো পূরণ করে আবেদন করলে ফিরতি মেইলে আবেদন নতুন করে সম্পাদনার একটি লিংক থাকে। সে লিংক ব্যবহার করে আবেদন সম্পাদনা করা যেতে পারে।
আবেদনের এই ধাপে অনধিক ৬টি প্রোগ্রাম নির্ধারণ করা যাবে। এক্ষেত্রে কোন ৬টি প্রোগ্রাম আপনার জন্য সেরা তা আগেই নির্ধারণ করে নিন।
এই ধাপে আপনার নাম, পরিচয় পত্রের নম্বর, ইমেইল সহ আরও সকল ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হয়।
এই ধাপে আপনার শিক্ষা জীবনের প্রাসঙ্গিক সকল তথ্য প্রদান করতে হয়। একই সাথে সকল সার্টিফিকেট ট্রান্সক্রিপ্ট এসবের পিডিএফ / জেপিজি ইত্যাদি আপলোড করতে হয়।
এ সকল ধাপ পার করার পরে আবেদনটি জমা দিন। যৌথ আবেদনের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র একটি আবেদনই গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যদি আপনি একাধিক আবেদন করে থাকেন তাহলে শুধু সর্বশেষ আবেদনটিই গ্রহণযোগ্য হবে।
ফিনিশ স্কলারশিপ সম্পর্কে জানার জন্য সবচেয়ে ভাল সাইটটি হলো স্টাডিইনফো। এ সাইট থেকেই মেয়াদ থাকাকালীন সময়ে ফিনিশ স্কলারশিপের আবেদন সম্পন্ন করা যায়।
শেষ অবধি বলা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অনেক মেধা থাকলেও, অধিকাংশ শিক্ষার্থী অল্প কয়েকটি দেশেই ঘুরে ফিরে আবেদন করে। এতে করে যেমন নষ্ট হয় নানা সুযোগ, তেমন করেই বাড়ে হতাশা। ইতোমধ্যে অভিবাসন সমস্যা দেখা দেওয়া বিভিন্ন দেশে ভীড় না বাড়িয়ে, নতুন দেশ গুলো হতে পারে তুলনামূলক ভাল ঠিকানা।
১। দ্যা সেন্টার
২। ডেইলি স্টার
৪। সিএসসি
18-11-2024
Community
খাবার শুধু পেটের খিদে মেটানোর মাধ্যম নয়; এটি আমাদের...
Read More17-10-2024
Community
বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং হলো যেকোনো ব্যবসার...
Read More27-06-2024
Community
প্রতিবছর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশে কোরবানির গরুর...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.