Home » MAWblog » Miscellaneous » বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের বৈচিত্র্য, একাল-সেকাল ও অন্যান্য
Miscellaneous
Written by: এস এম নাহিয়ান
31-10-2024
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকেই। এমনকি ব্রিটিশ আমল থেকেই ব্রিটিশ বিভিন্ন ব্যান্ড অনুষ্ঠান করেছে ঢাকার মাটিতে। সেসবের নেপথ্যে ছিল ঢাকার নবাব পরিবার। জারি, সারি, কীর্তন, শ্যামা, ভাটিয়ালির ভীড়ে সেই ব্যান্ড সঙ্গীত কিন্তু হারিয়ে যায় নি। বরং সময়ের সাথে সাথে হয়েছে আরও শক্তিশালী, পেয়েছে জনপ্রিয়তা। বর্তমানের ত7রুণ সমাজের কাছে অন্য যেকোনো ঘরানার চেয়ে ব্যান্ড সঙ্গীতই বেশি প্রিয়, সে কথাও হলফ করে বলা যায়।
তবে বৈচিত্র্যের এই দেশে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের ব্যান্ডেরও বিকাশ ঘটেছে। ব্যান্ড সঙ্গীতের তেমনই কিছু প্রধান ধারা ও সেসব ধারার বাংলাদেশী ব্যান্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই মূলত আজকের লেখাটি।
রক (Rock)
প্রথমে ব্যান্ড সঙ্গীতের যেই মূল ধারাটি নিয়ে কথা বলবো, সেটি আর কিছুই নয়, রক! রক সঙ্গীতের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৫০ এর দশকে অবশ্য এ ধরনের সঙ্গীত পরিচিত ছিল ‘রক অ্যান্ড রোল’ (Rock and roll) নামে। সে সময় উত্থান এলভিস প্রিসলি, জন লেননদের মতো রথী মহা রথীদের। বছর দশেক ঘুরতেই ১৯৬০ এর দশকে ‘রক অ্যান্ড রোল’ আন্তর্জাতিক রুপ পায় ‘রক’ নামে।
ছবিঃ জন লেনন ও এলভিস প্রিসলি
রক সঙ্গীতের অসংখ্য ধরন থাকলেও এ লেখায় বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আলোচনা করা হয়েছে মূলত ছয়টি ধরন নিয়ে।
১। ক্ল্যাসিক রক (Classic Rock)
‘ক্লাসিক’ শব্দটিই যেমন পুরোনো কিছুকে নির্দেশ করে, ‘ক্লাসিক রক’ এর ক্ষেত্রেও মূলত শুরুর দিকের রক সঙ্গীতকেই নির্দেশ করা হয়ে থাকে। সঙ্গীতের ন্যায় উন্মুক্ত জিনিসকে সংজ্ঞায়িত করাটা দুষ্কর। তবে কিছু সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘৬০, ‘৭০, ও ‘৮০ এর দশকে হওয়া রক সঙ্গীতই ক্লাসিক রক।
এক্ষেত্রে বিশ্ব মঞ্চে দাপট দেখিয়ে বেড়িয়েছে ‘রোলিং স্টোনস’, ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’, ‘কুইন’। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। স্বাধীনতার পরে প্রথম ব্যান্ড কোনটি তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে প্রথম কনসার্ট করা ব্যান্ড ছিলো ‘আন্ডার গ্রাউন্ড পিস লাভারস।’ ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করা এই ব্যান্ডটি বাংলাদেশের ক্ল্যাসিক রক ঘরানার প্রথম। সে বছরেই সাজেদ উল আলমের হাত ধরে চট্টগ্রামে জন্ম নেয় ‘সোলস’। বাংলাদেশের মূল ধারা সঙ্গীতের সাথে এখন অবধি সম্পৃক্ত ব্যান্ড গুলোর মধ্যে ‘সোলস’ই সবচেয়ে পুরাতন।
ছবিঃ নগরবাউল জেমস
৭০ এর দশকে আরও জন্ম নেয় ‘মাইলস’ (১৯৭৯), ‘নগরবাউল’ (১৯৭৭), ফিডব্যাক (১৯৭৭), ইত্যাদি। সে ধারা ৮০ ও ৯০ এর দশকে চলমান রাখে অবস্কিউর (১৯৮৫), আর্ক (১৯৯১) ইত্যাদি। মূলত সে সময়ের গান গুলোকেই মূল ধারা ক্লাসিক রক বলা যেতে পারে। সে সময় ‘সোলস’ এর মতো কিছু ব্যান্ড অনেকটা দেশী সূরের মাধ্যমে মন জয় করেছে। আবার পাশ্চাত্যের সুর বিস্তার পেয়েছে মাইলস, এলআরবি, নগরবাউলেদের মধ্যে দিয়ে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্লাসিক রক ব্যান্ড গুলোকে অনুসরণ করলে বাঙালী সুরের সাথে পাশ্চাত্য সুরের একটা অদ্ভূত সুন্দর সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
অল্টারনেটিভ রক ঘরানাটার শুরু মূলত ‘৯০ এর দশকে। সে সময়ে বৃহৎ বৃহৎ রক ব্যান্ডগুলোর ধারা থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েই জন্ম অল্টারনেটিভ রক এর। আর সেজন্যই নামটি ‘অল্টারনেটিভ’। বরং এ সকল রক ব্যান্ডের মিল ছিল ‘৮০ এর দশকের কলেজ রক ব্যান্ডগুলোর সাথে। মূলত গিটারের আধিক্য সম্পন্ন এ গান গুলো অনেক সময় পপ মেলোডির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। সে সময়কার কিছু অল্টারনেটিভ রক ব্যান্ড যেমন ‘নির্ভানা’ , ‘গ্রিন ডে’ এর গান এখনও এদেশীয় তরুণদের প্লে-লিস্টে রয়েছে।
বাংলাদেশের অল্টারনেটিভ রকের সবচেয়ে বড় নামটি হলো ‘ব্ল্যাক’। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া এই গানটিতে রয়েছে তাহসান, জন কবীরের ন্যায় পরিচিত মুখ। মাঝে বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য এই ব্যান্ড বন্ধ থাকলেও গত ১০ মে আবারও সঙ্গীত পরিবেশন করতে দেখা গেছে ব্ল্যাককে। এছাড়াও অল্টারনেটিভ রকের অন্যান্য ব্যান্ড হিসেবে রয়েছে শূন্য (২০০৭), নেমেসিস (১৯৯৯), আর্বোভাইরাস (২০০১), কনক্লুশন, রিকল, লালন, অবস্কিউর এদের নাম। ১৯৯৮ এর কাছাকাছি সময়ে আরও ছিল ওয়্যার, ক্লোভার মাইন্ডস, স্প্যাংকিং মংকিস এসব ব্যান্ড। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো সফল হয় নি। এ নতুন পুরোনো এ সকল ব্যান্ডের ভেতর নেমেসিস, শূন্য এবং আর্বোভাইরাস, এই তিনটি নামই বেশি শোনা যায় বাংলাদেশী তরুণদের মুখে।
ছবিঃ নেমেসিস ব্যান্ড
ইন্ডি রকের জন্ম অল্টারনেটিভ রকের কিছুটা আগে, ‘৮০ এর দশকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ও নিউজিল্যান্ডের ব্যান্ড গুলোর মাধ্যমে। প্রথমে ‘ইন্ডি রক’ দ্বারা বোঝানো হতো মুলত স্বতন্ত্র ভাবে রেকর্ড করা গানসমূহকে। কিন্তু ‘৯০ দশকের শেষে এসে যে সকল ব্যান্ড এ ধরনের গান করে, তাদেরকেই বলা হতে লাগলো ইন্ডি রক।
ইন্ডি রক নিজেই রক সঙ্গীতের একটি ভাগ হলেও, এর নিজেরও আবার ভাগের শেষ নেই। গ্রেবো, ম্যাথ রক, মিডওয়েস্ট ইমো, নয়েজ পপ, পোস্ট-পাংক রিভাইভাল এমন নানা ধরনের ভাগে কালে কালে বিভক্ত হয়েছে ইন্ডি রক। সব যে সবসময় জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে তাও নয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে চিন্তা করতে গেলে ইন্ডি রক ব্যান্ড গুলো হলো - ইন্ডালো, মেঘদল, লেভেল ফাইভ, বাগধারা, আরেকটা রক ব্যান্ড, কনক্লুশন, ফিরোজ জং, স্মুচেস ইত্যাদি। এর মাঝে মেঘদলের জনপ্রিয়তাই সবার চেয়ে উপরে। এর পাশাপশি ‘আরেকটা রক ব্যান্ড’ এর গানও ২০১৯-২০ এর দিকে বেশ সাড়া ফেলেছিলো।
পাংক রক এর কথা বলতে হলে আবার ফিরে যেতে হবে ১৯৫০ এর দশকের ‘রক অ্যান্ড রোল’ সঙ্গীতে। এই ‘পাংক রক’ ব্যান্ড সমূহকে অনেক সময়ই ধরা হয় রক সঙ্গীতের করপোরেট কালচারের প্রত্যাখানকারী হিসেবে। তার পাশাপাশি পাংক রকে ছিল স্ট্রিং-হেভি পপের আধিপত্য। গান গুলোও ছিল অন্যান্য রক থেকে বেশি উদ্দীপক ও দ্রুত লয়ের। পাংক রক গায়কদের নিয়মটিই ছিল ‘ডিআইওয়াই’ (DIY) বা ‘ডু ইট ইয়োরসেলফ (Do it Yourself)।
বাংলাদেশের পাংক রক ব্যান্ড গুলোর মধ্যে বেশ বড় নাম হলো ‘সাবকনশাস’ (Subcnscious)। ১৯৯৮ সালে মগবাজারে এই ব্যান্ড স্থাপন করেন লুকাস আলমগীর (ড্রামার) ও জোহান আলমগীর (ভোকাল)। ২০০২ সালে বাজারে আসে তাদের প্রথম এলবাম। এছাড়াও আরও কিছু পাংক রক ব্যান্ড হলো কসমোপলিটন থিওরি, সুইসাইডাল পাম্পকিন।
৫। প্রোগ্রেসিভ রক (Progressive Rock)
প্রোগ্রেসিভ রক এর নামের মতই বিভিন্ন ধরনের এক্সপেরিমেন্টাল ও উচ্চাকাঙ্খী কম্পোজিশনে বিশ্বাসী। সাথে রয়েছে সুরের বৈচিত্রতা। সাধারণ রক অ্যান্ড রোল ব্যান্ড গুলোর মতই প্রোগ্রেসিভ ব্যান্ড গুলো গিটার, ব্যাস, ড্রামস, কিবোর্ডস ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে। কিছু কিছু প্রোগ্রেসিভ রক ব্যান্ডের গানে ছোঁয়া পাওয়া যায় জ্যাজ ও ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীতের।
তবে বাংলাদেশের প্রোগ্রেসিভ রকের পথিকৃত বলা যায় আর্টসেলকে। এই ব্যান্ডের ‘অন্য সময়’ ও ‘অনিকেত প্রান্তর’ অ্যালবাম বাংলাদেশি হেভি মেটাল জগতে ব্যাপক সারা ফেলে। তবে আর্টসেলের মতো আরও কিছু ব্যান্ডের অবদান অনেক। যার ভেতর অর্থহীন ও ওয়ারফেজ অন্যতম। এছাড়াও এদেশীয় প্রোগ্রেসিভ রক ব্যান্ড গুলোর মধ্যে মেসিয়ানিক এরা, নোভা এর নাম উল্লেখযোগ্য।
৬। সাইকেডেলিক রক (Psychedelic Rock)
সাইকেডেলিক রক মূলত এমন এক ধরনের রক যার পেছনে ছিল হ্যালুসিনেজন, বা মাদকের প্রভাব। ‘৬০ এর দশকে আমেরিকা জুড়ে হিপি জনতা বিশাল আকার ধারন করে। তাদের ভেতর এলএসডি জনিত মাদক অতি মাত্রায় জনপ্রিয় ছিল। আর তারই প্রভাব পড়ে রক মিউজিকের এই ভাগটিতে। মূলত মাদক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই গানের যে সুর, তাই পরিচিতি পায় সাইকেডেলিক রক। তবে বর্তমানে সময়ে এই ধরনের রক মানেই যে মাদক দ্বারা প্রভাবিত, বিষয়টি তা নয়। মূলত সে সময় উদ্ভাবিত সুরগুলোই অনুসরণ করা হয় বর্তমানের সাইকেডেলিক রকে।
বাংলাদেশের সাইকেডেলিক রক ব্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতমঃ হাইওয়ে ও কার্নিভাল। এর মধ্যে কার্নিভাল মূলত এক্সপেরিমেন্টাল সাইকেডেলিক রক বাজিয়ে থাকে। তারাই এই ধরনের বাংলাদেশি ব্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও রয়েছে সোনাল বাংলা সার্কাস, ফিলিংস, ভেরিয়াস, মেঘদল, শিরোনামহীন,
চিত্রঃ ‘৬০ এর দশকের হিপ্পি ব্যান্ড
ব্যান্ড সঙ্গীতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্বিধা তৈরি হয় মেটাল ও রকের মধ্যে। রকের জন্ম ‘৫০ এর দশকে হলেও মেটাল এর আভির্ভাব মূলত ‘৬০ ও ‘৭০ এর দশকে। তবে মূল পার্থক্য এদের গানের ধরনে। রকের তুলনায় মেটাল ব্যান্ড গুলোর সাধারণত আরও আক্রমণাত্নক এবং শক্তিশালী ধরনের সুর ব্যবহার করে থাকে। মেটাল ব্যান্ড গুলোর সবচেয়ে বড় কিছু বৈশিষ্ট্য হলো তুলনামূলক দ্রুত সলো গিটার, কিছুটা ডিস্টর্টেড (Distorted) গিটার, উগ্র ড্রামিং ও উগ্র ভোকাল। এছাড়া সুরের জটিলতার দিক থেকেও মেটাল অনেকটা এগিয়ে।
মেটাল ব্যান্ড গুলোর মধ্যে ‘হেভি মেটাল’ এর নামই বেশি শোনা যায়। তবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হেভি মেটাল ব্যান্ড সমূহ, যেমন মেটালিকা, ব্ল্যাক সাব্বাথ, আয়রন মেইডেন, ড্রিম থিয়েটারের মতো ব্যান্ডের সাথে বাংলাদেশী ব্যান্ড গুলোর রয়েছে বিস্তর তফাত।
বাংলাদেশের হেভি মেটাল ব্যান্ড গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ ওয়ারফেজ (১৯৮৪), ক্রিপ্টিক ফেইট (১৯৯৩), আর্টসেল (১৯৯৯), রকস্ট্রাটা (১৯৯১), অ্যাশেস (২০০৮), ইন ঢাকা (১৯৯০), ওয়েভস, পাওয়ারসার্জ (২০০৭), স্টেন্টোরিয়ান (২০০১), ডি-ইলুমিনেশন (২০১০), ভাইবস, মেকানিক্স, স্কেয়ারক্রো, প্লাসমিক নক। এক্সেনেমি, মেন্টোরা, ।
চিত্রঃ আর্টসেল ব্যান্ড
উল্লিখিত ব্যান্ড গুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো এবং এখন অবধি প্রচন্ড জনপ্রিয়তার সাথে টিকে থাকা ব্যান্ডটি হলো ওয়ারফেজ। ১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়ার জনপ্রিয়তা ২০২৪ সালে এসেও কমে নি এক বিন্দুও। এমনই আরেকটি ব্যান্ড আর্টসেল। মূলত এই দুইটি ব্যান্ডটি বাংলাদেশ ভিত্তিক হেভি মেটালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। তবে অনেক আগে শুরু করলেও ইন ঢাকা এবং রকস্ট্রাটা বর্তমানে হারিয়ে গেছে। এর বাইরে নতুন ব্যান্ড গুলোর মধ্যে অ্যাশেস বেশ ভাল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২। থ্র্যাশ মেটাল (Thrash Metal)
থ্র্যাশ মেটালকে বলা চলে হেভি মেটাল এরও আরও আক্রমণাত্নক রুপ। একে এক কথায় থ্র্যাশও বলা হয়। সাধারণত এই গান গুলোতে দ্রুত প্রিকার্সিভ বিট, লো-রেজিস্টার রিফস, এবং শ্রেডিং স্টাইলের লিড গিটার ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের থ্র্যাশ মেটাল ব্যান্ড গুলো হলোঃ থ্র্যাশ, পাওয়ারসার্জ, H2SO4, ওরাটর, নওয়াবস অফ ডেস্ট্রাকশন। এগুলোর মধ্যে ২০১১ সালে শুরু করা ‘থ্র্যাশ’ ব্যান্ডটি বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। এছাড়াও একই সালের H2SO4 ব্যান্ডটিও মোটামুটি জনপ্রিয়।
৩। ডেথ মেটাল (Death Metal)
থ্র্যাশের মতো ডেথ মেটালও হেভি মেটালের এক ধরনের ভাগ। থ্র্যাশ মেটালে যেমন দ্রুত লয়ের বাজনা ব্যবহৃত হয়, ডেথ মেটালে ঠিক তা নয়। বরং কিছুটা নিচের দিকে টিউন করা গিটার এবং ভারী গলার গ্রাউলিং (Growling) এই ধরনের গানের প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য।
বাংলাদেশে ডেথ মেটাল ধরনের গান করে থাকে সে ধরনের ব্যান্ড খুব বেশি নেই। তবে এসব ব্যান্ডের মধ্যে স্যাটানিক, আয়নিক বন্ড ট্রেইনরেক ও সিভিয়ার ডিমেনশিয়া এর নাম উল্লেখযোগ্য। ২০১৮ সাল বাংলাদেশের ডেথ মেটাল ব্যান্ড গুলোর জন্য একটি বড় সাল। সে বছর বিশ্বের অন্যতম মেটাল ফেস্টিভাল “ওয়াকেন ওপেন এয়ার’ এর জন্য মনোনয়ন পায় বাংলাদেশী পাঁচটি মেটাল ব্যান্ড, এর ভেতর বেশির ভাগই ছিল ডেথ মেটাল। সেই পাঁচটি ব্যান্ড ছিল আয়োনিক বন্ড, কার্মা, ট্রেইনরেক, ইনফিডেল ও টর্চার গোরগ্রাইন্ডার।
গ্রাঞ্জ (Grunge)
গ্রাঞ্জ সঙ্গীতের সূত্রপাত মূলত হার্ড রক এবং অল্টারনেটিভ রক থেকে। ‘৮০ ও ‘৯০ এর দশক জুড়ে এই ধরনের গান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তবে গ্রাঞ্জ মিউজিক সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষত সিয়াটল ও ওয়াশিংটনে। এমনকি এই ধরনের গানের অপর নাম হয়ে গিয়েছিলো ‘সিয়াটল সাউন্ড’। এসব ব্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল নির্ভানা। নির্ভানার ‘স্মেলস লাইক টিন স্পিরিটি’ গানটি এখনও ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু ‘গ্রাঞ্জ’ ধারার পরিণতি ছিল কিছুটা ভিন্ন। ব্রিটপপ সহ আরও কয়েক ধরনের গানের জনপ্রিয়তার আড়ালে ‘৯০ এর দশকের মাঝামাঝি কিছুটা পেছনে পড়ে যায় গ্রাঞ্জ।
চিত্রঃ নির্ভানা
বাংলাদেশে গ্রাঞ্জ ব্যান্ড গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্ল্যাক ও আফটারম্যাথ। এর মাঝে ব্ল্যাক নিয়ে আগেই বলেছি। আফটারম্যাথ ব্যান্ডটির জন্ম ২০০৭ এ। অল্টারনেটিভ গ্রাঞ্জ ধরানার এই ব্যান্ডটির প্রথম গান ছিল ‘সূর্যাপেক্ষা’। ২০২১ সালে এর শেষ অ্যালবাম ‘জেদ’ মুক্তি পায়।
ফিউশন (Fusion)
ফিউশন বলতে মূলত বোঝায় যেকোনো দুই ধারার সঙ্গীতের সংমিশ্রণ। সে হিসেবে রক এর জনক খোদ ‘রক অ্যান্ড রোল’ নিজেই এক ধরনের ফিউশন। তবে বাংলাদেশের ফিউশন ব্যান্ড গুলো মূলত সাউথ এশিয়ান ফিউশনের সদস্য। এ ধরনের সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য হলো বিদেশী তালের সাথে দেশীয় সুরের চমৎকার সংমিশ্রণ। ফলে এ ধরনের গান আধুনিক প্রজন্মকে অনেক সময়ই নিজের শিকড়ের দিকে আকৃষ্ট করে। এ দেশে রক থেকে ফোক ফিউশন, সব কিছুরই বিকাশ ঘটেছে।
তারই প্রমাণ দেয় বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুইটি ফিউশন ব্যান্ড - চিরকুট ও শিরোনামহীন। শিরোনামহীন যাত্রা শুরু করে ১৯৯৬ সালে, চিরকুট ২০০২ সালে। এছাড়াও তালিকায় থাকে ফিডব্যাক ও লালন ব্যান্ড। লালন ব্যান্ডের জন্ম ২০০১ সালে নিগার সুলতানা সুমির হাত ধরে। খুলনা ভিত্তিক এই গানটি করতো ফোক, রক ও ফিউশন মিউজিক।
শেষ কথা
বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের অসংখ্য ব্যান্ডদের সবাইকে তুলে ধরা একটি দুষ্কর কাজ। তাই এই লেখায় চেষ্টা করা হয়েছে মূলত রক ও মেটাল ঘরানার ব্যান্ড গুলোকে। তবে বাংলাদেশের খুব কম নির্দিষ্ট কোনো ধরন অনুসরণ করে। বরং বেশিরভাগ ব্যান্ডই একই সাথে কয়েক ধরনের গান করে থাকে। তবে এটুকু বলা যায় যে, বাঙালীর সংস্কৃতির সাথে হালের ব্যান্ড সঙ্গীতের সংমিশ্রণটা কিছুটা কঠিন হলেও, একবিংশ শতাব্দীর এ পর্যায়ে এসে ব্যান্ড সঙ্গীত বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের সবচেয়ে খুঁটি গুলোর একটি।
তথ্যসূত্রঃ
১। মাস্টারক্লাস (১)
২। মাস্টারক্লাস (২)
৩। মাস্টারক্লাস (৩)
৪। মাস্টারক্লাস (৪)
৫। মাস্টারক্লাস (৫)
৬। ব্রিটানিকা (১)
৭। ব্রিটানিকা (২)
৮। ব্রিটানিকা (৩)
৯। ডিডাব্লিউ
১০। রোর বাংলা
১১। প্রথম আলো
28-11-2024
Miscellaneous
সংবিধানকে বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। সরকার...
Read More20-11-2024
Miscellaneous
শিশুদের মনোরঞ্জন এবং শেখার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হল...
Read More22-10-2024
Miscellaneous
ব্রেন ড্রেইন (Brain Drain) হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দক্ষ,...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.