Home » MAWblog » Miscellaneous » ড. মুহাম্মদ ইউনুস: শৈশব থেকে নোবেল পুরস্কার জয় পর্যন্ত এক কিংবদন্তির জীবনগাথা
Miscellaneous
30-09-2024
ড. মুহাম্মদ ইউনুস, একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা এবং মানবসেবী, যিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। তার এই অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তবে এই মহামানবের পথচলা সহজ ছিল না। তার শৈশব, শিক্ষাজীবন, ক্যারিয়ারের সূচনা এবং সফলতার ইতিহাস সবই এক অনুপ্রেরণামূলক অধ্যায়।
শৈশব ও প্রাথমিক জীবন
জন্ম ও পরিবারঃ
মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজী দীন মোহাম্মদ ছিলেন একজন সফল সোনার কারিগর ও ব্যবসায়ী, এবং মা সফেরা খাতুন ছিলেন সমাজসেবী। ইউনুস ছিলেন তার পরিবারের তৃতীয় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে মানবিক গুণাবলি পরিস্ফুটিত হয়েছিল, বিশেষ করে তার মা মানুষের সেবা করার শিক্ষা দিয়েছিলেন, যা তার পরবর্তী জীবনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল।
শিক্ষাঃ
মুহাম্মদ ইউনুসের প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রামে শুরু হয়। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। শৈশব থেকেই তিনি পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করতেন। তার শিক্ষাজীবনের সাফল্য এবং নতুন কিছু শেখার আগ্রহ তাকে ভবিষ্যতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে সহায়ক হয়েছিল।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল
উচ্চশিক্ষা ও প্রারম্ভিক ক্যারিয়ার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষাঃ
মুহাম্মদ ইউনুস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পিএইচডি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন,’ যা তার পরবর্তী কর্মজীবনে দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।
শিক্ষকতা ও ক্যারিয়ারের শুরুঃ
পিএইচডি সম্পন্ন করার পর ড. ইউনুস যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তার শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার ইচ্ছা তাকে আবার বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে।
গ্রামীণ ব্যাংক এবং ক্ষুদ্রঋণের ধারণা
যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যঃ
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ড. ইউনুস উপলব্ধি করেন যে দেশের বিশাল সংখ্যক জনগণ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করছে এবং তাদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তিনি গ্রামীণ অঞ্চলে গিয়ে দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি দেখতে পান যে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষেরা বিশেষ করে মহিলারা খুবই ক্ষুদ্র পরিমাণ ঋণের অভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারছে না, অথচ এই ঋণ তাদের জীবন বদলে দিতে পারে।
ক্ষুদ্রঋণের ধারণার উদ্ভবঃ
ড. ইউনুসের মনে একটি নতুন ধারণা জন্ম নেয়—ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দরিদ্র মানুষকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করা। ১৯৭৬ সালে তিনি নিজ উদ্যোগে মাত্র ২৭ ডলার ঋণ দিয়ে শুরু করেন, যা ছিল গ্রামীণ নারীদের একটি ছোট ব্যবসা চালু করার জন্য। তার এই উদ্যোগকে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন, এবং এতে অভূতপূর্ব সাফল্য আসে। তিনি বুঝতে পারেন যে ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার একটি কার্যকর উপায়।
গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের কর্মশালায় ডঃ ইউনুস
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাঃ
এই উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ড. ইউনুস ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন **গ্রামীণ ব্যাংক**। এই ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা। বিশেষ করে নারীদের উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে অনেক দরিদ্র পরিবার দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।
নোবেল পুরস্কার জয়
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিঃ
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের এই উদ্যোগ দ্রুতই আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পায়। তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য হতে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংক শুধু বাংলাদেশে নয়, বরং অন্যান্য দেশেও দারিদ্র্য বিমোচনের একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে অনুসরণ করা হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রাষ্ট্রনেতারা তার কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কারঃ
২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করে। নোবেল কমিটি তার ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পকে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারা উল্লেখ করে যে, "দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানো" ড. ইউনুসের লক্ষ্য ছিল এবং তার কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার একটি অনন্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন
নোবেল পুরস্কার-পরবর্তী জীবন
সামাজিক ব্যবসাঃ
নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ড. ইউনুস আরও বৃহত্তর সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি **সামাজিক ব্যবসার** ধারণা প্রবর্তন করেন, যা মূলত লাভের উদ্দেশ্য ছাড়াই মানুষের সমস্যার সমাধান করার একটি উদ্যোগ। তার মতে, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার জীবনের অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো **বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার**, **অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম**, এবং **কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল**।
উপসংহারঃ
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের জীবনগাথা এক অসামান্য অধ্যায়। তিনি শুধু একজন সফল অর্থনীতিবিদই নন, তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছেন। তার ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নে তার অবদান তাকে ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী করে রেখেছে।
ড. ইউনুস আমাদের শিখিয়েছেন যে, একক উদ্যোগ এবং সংকল্প মানুষকে দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে পারে, এবং সামান্য একটি প্রচেষ্টাই বিশ্বকে পরিবর্তন করতে সক্ষম।
28-11-2024
Miscellaneous
সংবিধানকে বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। সরকার...
Read More20-11-2024
Miscellaneous
শিশুদের মনোরঞ্জন এবং শেখার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হল...
Read More31-10-2024
Miscellaneous
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.