Home » MAWblog » Miscellaneous » বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতের বিবর্তন: রক থেকে ফোক ফিউশন
Miscellaneous
18-09-2024
বাংলাদেশের সঙ্গীতের বিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা দেশের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
১৯৭০ ও ৮০-এর দশকের রক মিউজিকঃ
ব্যান্ড সঙ্গীতের শুরুতে, ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে রক মিউজিকের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। সেই সময়ে এলআরবি, ওয়ারফেজ, এবং সোলসের মতো ব্যান্ডগুলো রক ও হার্ড রক সুরের মাধ্যমে দেশের সঙ্গীতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রারম্ভিক যুগে, এই ব্যান্ডগুলো দেশীয় সঙ্গীতের ধারায় বৈচিত্র্য ও গতিশীলতা নিয়ে আসে। তাদের গানগুলোর মধ্যে গিটার সলো, জোরালো ড্রামস, এবং প্রগতিশীল লিরিক্স ছিল অন্যতম আকর্ষণ।
ছবিঃ বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের শুরুর দিকের কিছু পরিচিত মুখ
১৯৯০-এর দশকের ফোক ফিউশনঃ
এরপর আসে ফোক ফিউশনের যুগ। এ সময়ে আয়ুব বাচ্চু, জেমস, এবং লোকাল ব্যান্ড নগর বাউলের মতো শিল্পীরা বাংলাদেশের লোকজ সঙ্গীতের সাথে রকের মেলবন্ধন ঘটায়। এই ধরণের সঙ্গীতে বাংলা লোকজ সুর, যেমন ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, এবং বাউল গান, আধুনিক যন্ত্রপাতির সাথে মিশে এক অনন্য ধারা সৃষ্টি করে। এর ফলে তরুণ প্রজন্ম তাদের সঙ্গীতে নিজেদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের প্রতি আগ্রহী হতে শুরু করে।
আধুনিক সঙ্গীত ও ডিজিটাল যুগঃ
বিগত দশকগুলিতে, ডিজিটাল মিডিয়ার উত্থান বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। ইউটিউব, স্পটিফাই, এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নতুন নতুন ব্যান্ড এবং শিল্পীরা তাদের সঙ্গীত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। এতে আধুনিক ও ইলেকট্রনিক সঙ্গীতের সাথে বাংলার ফোক সুরের মিশ্রণে এক নতুন ধারা দেখা যায়। এখনকার শিল্পীরা যেমন চিরকুট, শূন্য, আর্টসেল ইত্যাদি ব্যান্ড ফোক ও রকের সাথে জ্যাজ, ব্লুজ, এবং হিপ-হপের মতো বিভিন্ন সঙ্গীতধারা মিশিয়ে নতুন ধারার সৃষ্টি করছে।
ছবিঃ আর্টসেল ব্যান্ডের সদস্যরা
সঙ্গীতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবঃ
বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে এই বিবর্তন কেবল সঙ্গীতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলোকেও প্রতিফলিত করে। ব্যান্ড সঙ্গীতের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু, যেমন স্বাধীনতা, মানবাধিকার, এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন, গানের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেশের জনগণ সঙ্গীতের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতের বিবর্তন এখনও চলছে। তরুণ প্রজন্ম নতুন ধারায় কাজ করছে এবং স্থানীয় সুরের সাথে বৈশ্বিক ধারার মেলবন্ধন ঘটিয়ে নতুন সঙ্গীতধারার সৃষ্টি করছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহজলভ্যতার কারণে তারা বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে। ভবিষ্যতে, বাংলাদেশের সঙ্গীতে আরও নতুন নতুন ধারার সৃষ্টি হবে, যা দেশীয় সংস্কৃতি ও বিশ্বজনীনতার মিশ্রণে আরও সমৃদ্ধ হবে।
এভাবে, রক থেকে ফোক ফিউশন এবং বিভিন্ন ধারার মিশ্রণে বাংলাদেশের সঙ্গীত জগৎ নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছে এবং সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে।
বাংলা র্যাপ: সঙ্গীতের নতুন ধারা
বাংলা র্যাপ বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতে একটি নতুন এবং উত্তেজনাপূর্ণ ধারা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০০০-এর দশক থেকে এই ঘরানার বিকাশ শুরু হয়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সমাজের বাস্তবতা, জীবনযাত্রা, এবং ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ ঘটানোর মাধ্যম হিসেবে র্যাপ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইতিহাস ও বিকাশঃ
বাংলা র্যাপের সূচনা মূলত পশ্চিমা র্যাপ মিউজিকের প্রভাব থেকে। ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীতজগত থেকে উঠে আসা এই ধারা ধীরে ধীরে মেইনস্ট্রিমে জনপ্রিয়তা পায়। পায়েস, ব্ল্যাক জেড, এবং চক্রবালির মতো ব্যান্ড এবং শিল্পীরা বাংলা র্যাপের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছবিঃ র্যাপ ব্যান্ডদল ‘স্টোইক ব্লিস’
থিম ও বিষয়বস্তুঃ
বাংলা র্যাপের গানের মূল থিম সাধারণত সমাজের অসঙ্গতি, রাজনীতি, সামাজিক ইস্যু, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে। তরুণ শিল্পীরা তাদের গানের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন দিককে তুলে ধরে এবং পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। বাস্তব জীবনের কাহিনি এবং শক্তিশালী লিরিক্স বাংলা র্যাপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আধুনিক যুগঃ
বর্তমানে, বাংলা র্যাপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউটিউব, স্পটিফাই, এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলা র্যাপ বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে। এছাড়া, ডিজিটাল প্রযোজনার সহজলভ্যতার কারণে নতুন শিল্পীরা সহজেই তাদের গান প্রকাশ করতে পারছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনাঃ
বাংলা র্যাপের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এই ঘরানা তরুণদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা ও পরিবর্তনের ইচ্ছা জাগিয়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে, বাংলা র্যাপের আরও নতুন নতুন ধারা এবং বিষয়বস্তুর উদ্ভব হবে, যা আমাদের সঙ্গীতজগতে বৈচিত্র্য ও গভীরতা যোগ করবে।
ছবিঃ বর্তমান সময়ের আলোচিত র্যাপার হান্নান
বাংলা র্যাপ এখন শুধু সঙ্গীতের একটি ঘরানা নয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠকে তুলে ধরে এবং সমাজে পরিবর্তনের আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতের বিবর্তন পরিসংখ্যানের মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
**রক মিউজিকের উত্থান:** ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে এলআরবি, ওয়ারফেজ, এবং ফিডব্যাকের মতো ব্যান্ডগুলোর অ্যালবাম বিক্রির সংখ্যা লক্ষাধিক ছিল। এলআরবি-এর "ফেরারি মন" অ্যালবামটি সেই সময়ের সবচেয়ে বিক্রিত অ্যালবামগুলির একটি।
- **ফোক ফিউশন জনপ্রিয়তা:** ২০০০-এর দশকে ফোক ফিউশন ব্যান্ডগুলোর ইউটিউব ভিডিওর ভিউ সংখ্যা লক্ষাধিক থেকে মিলিয়নের বেশি হয়। চিরকুটের "ক্যান্ডি ক্রাশ" এবং নগর বাউলের "লেইস ফিতা লেইস" গানগুলো অনলাইনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
- **ব্যান্ড সংখ্যা বৃদ্ধি:** ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংখ্যা ছিল ৫০-এর কম। বর্তমানে, ছোট-বড় মিলিয়ে এই সংখ্যা ৩০০-এর বেশি।
- **ডিজিটাল মাধ্যমের প্রভাব:** স্পটিফাই, ইউটিউব, এবং অন্যান্য স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশি শিল্পীদের গান এখন বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে। ডিজিটাল স্ট্রিমিংয়ের কারণে, গানের বাজারে এখন দেশের বাইরেও প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
ছবিঃ শিরোনামহীন ব্যান্ডের মত বর্তমানে অনেক ব্যান্ডই ডিজিটাল প্লাটফর্মে গান রিলিজ দিয়ে থাকে
এই পরিসংখ্যানগুলো সঙ্গীতের বিভিন্ন ঘরানার বিকাশ এবং এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রমাণ দেয়। সঙ্গীতজগতের এই বিবর্তন শুধুমাত্র দেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্যই নয়, বরং দেশের সাংস্কৃতিক প্রগতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের রাজস্ব আয় বেশ উল্লেখযোগ্য। ২০০০-এর দশক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ব্যান্ডগুলোর আয় বিভিন্ন উৎস থেকে এসেছে, যেমন অ্যালবাম বিক্রি, কনসার্ট টিকিট বিক্রি, ডিজিটাল স্ট্রিমিং, এবং ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ।
**অ্যালবাম বিক্রি:** ১৯৯০-এর দশক এবং ২০০০-এর শুরুর দিকে ব্যান্ড অ্যালবাম বিক্রি থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১০-২০ লাখ টাকা আয় করত। এলআরবি, ওয়ারফেজ, এবং অন্যান্য জনপ্রিয় ব্যান্ডের অ্যালবামগুলি লক্ষাধিক কপি বিক্রি হতো।
**কনসার্ট আয়:** বর্তমানে, একটি জনপ্রিয় ব্যান্ডের কনসার্ট আয়ের পরিমাণ ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে, বড় শহরগুলির কনসার্ট থেকে আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হয়।
ছবিঃ কন্সার্টে গান পরিবেশন করছে ৪ দশক স্তেজ মাতানো ব্যান্ড ‘ওয়ারফেইজ’
**ডিজিটাল স্ট্রিমিং ও স্পনসরশিপ:** ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম যেমন ইউটিউব, স্পটিফাই, এবং অ্যাপল মিউজিক থেকে আয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি, ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ এবং বিজ্ঞাপন চুক্তি থেকেও আয় বেড়েছে।
এভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গীত জগৎ রক থেকে শুরু করে ফোক ফিউশন এবং বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছে এবং ভবিষ্যতেও এই বিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকবে।বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীত এখন শুধু সৃজনশীলতার মাধ্যম নয়, বরং একটি লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়েছে, যা অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
28-11-2024
Miscellaneous
সংবিধানকে বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। সরকার...
Read More20-11-2024
Miscellaneous
শিশুদের মনোরঞ্জন এবং শেখার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হল...
Read More31-10-2024
Miscellaneous
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.