Home » MAWblog » Miscellaneous » বিনোদন খাতঃ নিছক সময় কাটানোর মাধ্যম নাকি এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার?
Miscellaneous
Written by: এস এম নাহিয়ান
14-07-2024
সিনেমা, মুভি, ফিল্ম, চলচিত্র - যেই নামেই ডাকা হোক না কেন যুগে যুগে মানুষের বিনোদনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী হয়ে উঠেছে এটি। ২০২৪ সালে এসে সোনালী পর্দার সোনালী জগত দেখতে এখন আর বড় স্ক্রিনের সামনে বসতে হয় না। বরং আপনার ঘরের টিভি কিংবা হাতের ফোন, এসবই যেন বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিনোদন গ্রহণের মাধ্যমের যতই পরিবর্তন হোক, সিনেমার আবেদন কিন্তু কখনই হারিয়ে যায় নি। বরং যুক্ত হয়েছে সোনালী পর্দার নতুন নতুন রুপ। একই সাথে বিনোদন জগতে যুক্ত হয়েছে নানা মাত্রা। এখন সিনেমার পাশাপাশি শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি, মিউজিক ভিডিও, সিরিজ সব কিছুর জন্যই গড়ে উঠেছে আলাদা আলাদা শিল্প। তৈরি হয়েছে অসংখ্য কর্মসংস্থান, সৃষ্টি হয়েছে নানা পেশার। এমনকি ‘বিনোদন রপ্তানি’ হয়ে উঠেছে অনেক দেশের বৈদিশিক আয়ের উল্লেখযোগ্য উৎস। আর সেই দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রেখেই বিনোদন খাতের দারুণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে লেখা হয়েছে আজকের লেখাটি।
বিনোদন খাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
শিল্প-সাহিত্য আমাদের মনের খোরাক যোগায়, এটি সত্যি। কিন্তু এই শিল্প-সাহিত্য অনেকের বেঁচে থাকার খোরাকও যোগায়, সেটিও সত্যি। মনন চর্চার পাশাপাশি অর্থনৈতিক চর্চাও শিল্পীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈকি। আর এই অর্থনৈতিক হিসাবের কথা যখন চলে আসে তখন নিশ্চিত ভাবে অনেকের মনে ভেসে ওঠে সর্বজনবিদিত তারকাদের বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিকের কথা। কিন্তু এক-দুই জন তারকার পারিশ্রমিকের উপর ভিত্তি করে একটি খাতের অর্থনৈতিক অবদান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই।
যদি বৈশ্বিক পর্যায়ে দেখা হয় তবে শুধু সিনেমা শিল্পের বাজার প্রায় ৭৯.২২ বিলিয়ন ডলার। স্ট্যাটিস্টা এর হিসাব মতে ২০২৯ সালের মধ্যে যা ছাড়াতে পারে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সীমানা। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে আসলে শিল্প খাতের অবদান কত, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। এক্ষেত্রে সিনেমা, সঙ্গীত ইত্যাদি নানা শিল্পের আলাদা আলাদা তথ্য না থাকলেও, সামষ্টিক ভাবে বিনোদন খাতের একটি চিত্র তুলে ধরা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র
এক্ষেত্রে প্রথমেই থাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হলিউড। তবে ইউএস ব্যুরো অফ ইকোনোমিক অ্যানালাইসিস এর তথ্য অনুসারে গত ছয় বছরে বিনোদন খাতের অর্থনৈতিক অবদান অনেকটা নিম্নরুপ।
তথ্যসূত্রঃ ইউএস ব্যুরো অফ ইকোনমিক অ্যানালাইসিস
অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যে হলিউড সহ আমেরিকার এই বিশাল বিনোদন খাতও যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে মাত্র ১ শতাংশ অবদান রাখে। অন্তত বিগত বছর গুলোর তথ্য তাই বলে। এছাড়াও ২০২০ ও ২০২১ সালের সংখ্যা গুলো দেখলেই এই খাতে করোনার করাল থাবা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। তবে যদি একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা যায় তাহলে আরও একটি বিষয় চোখে পড়ে। ১ শতাংশ যতটা কমই মনে হোক না কেন, এটিও মনে রাখতে হবে যে প্রতিবছর আমেরিকান অর্থনীতি বাড়ছে। আর তার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে বিনোদন খাতের আকার।
২০১৮ সালে যা ছিল ২২৭ বিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে তা প্রায় ৯০ বিলিয়ন বেড়ে ৩১৭ বিলিয়ন ডলার। আর এর মাঝে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভাগটাও নেহায়েত ফেলনা নয়। ২০১৯ সালে ২৩৬.৯ বিলিয়ন ডলারের ভেতর ৪৩ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ আয় করে শুধু হলিউড।
বাংলাদেশ
তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চিত্রটা কিছু অন্যরকম। বিশেষত বিনোদন রপ্তানি বা সিনেমা রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো আয় নেই। বরং এদেশে হলিউড, বলিউড থেকে শুরু করে কোরিয়ান, জাপানিজ মুভিরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জিডিপিতে বিনোদন খাতের অবদান তুলনামূলক কিছুটা বেশিই বলা চলে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সর্বনিম্ন অবদান ছিল ৫.২৪ শতাংশ। করোনা সত্ত্বেও তা বেড়েই চলেছে এবং গত অর্থ বছরে এর শতকরা হার ৬.৩৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে যেখানে অর্থনৈতিক অবদান ছিল ৩৭৭২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি, ৬৮৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের বিনোদন খাতের জিডিপিতে অবদান ও মোট টাকার পরিমাণ, দুটোই বাড়ছে।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০২৩ - অর্থ মন্ত্রণালয়
বিনোদন রপ্তানিতে সফলতার গল্প
পৃথিবীর সেরা বিনোদন খাতের সাথে বাংলাদেশের বিনোদন খাতের তুলনা করলে অনেক গুলো পার্থক্যই উঠে আসে। মান, জনপ্রিয়তা, রেভিনিউ এর পাশপাশি আরও যেই বিষয়টিতে আকাশ পাতাল পার্থক্য সেটি হলো রপ্তানি। অনেকেই মনে করেন শুধু কারখানাতে উৎপাদিত পণ্যই রপ্তানি করা যায়। অথচ সেবা ও বিনোদন খাত বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম রপ্তানি খাত। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলিউড। কিন্তু আজকের লেখায় থাকছে অতি স্বল্প সময়ে বিশ্ব দরবারে নিজেদের স্থান করে নেওয়া কোরিয়ান বিনোদন খাতের গল্প।
বিনোদন রপ্তানির রোল মডেলঃ দক্ষিণ কোরিয়া
সমসাময়িক সময়ে বিনোদন রপ্তানির রোল মডেল যদি কেউ হয়ে থাকে তবে সেটি দক্ষিণ কোরিয়া। তবে এই ধারার শুরু হটাৎ করেই নয়। ২০১০ এর দশক থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার কে-পপ সারা বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা অর্জনের দিকে এগোচ্ছিল। ২০১২ সালে সাই এর ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ ভাইরাল হওয়ার পর পরই কে-পপ এর জনপ্রিয়তার পালে হাওয়া লাগে। আর বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর কয়েকটি কে-পপ ঘরানার। ২০২০ সালে কে-ড্রামা এবং কে-পপ এর রপ্তানি মূল্য ছিল যথাক্রমে ৬৯২.৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ৬৭৯.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে বিনোদন রপ্তানি যে শুধু বিনোদন রপ্তানিতে থেমে থাকে না, তারও সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই কোরিয়ান শিল্প। কারণ যেকোনো অঞ্চলের শিল্প সেই অঞ্চলের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় ধারক ও বাহক। তাই স্বভাবতই যখন কেউ একটি অঞ্চলের শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হবে তখন সেই অঞ্চলের সংস্কৃতির প্রতিও আকৃষ্ট হবে। আর ঠিক সেটিই ঘটেছে কোরিয়ান সংস্কৃতির এর ক্ষেত্রে।
২০২২ সালে কে-বিউটি তথা কোরিয়ান বিউটির বাজারের পরিমাণ ছিল ২১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈশ্বিক জনপ্রিয়তাও ছিল তুঙ্গে। আমেরিকান নিউজ অ্যান্ড হোয়ার্টন স্কুল এর বৈশ্বিক তালিকা অনুযায়ী সাংস্কৃতিক প্রভাবের দিক থেকে ২০২২ সালে কোরিয়ার অবস্থান ছিল ৭ম। অথচ ২০১৭ সালেই যা ছিল ৩১তম। একটি কোরিয়ান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ২০১৭ থেকে ২০২২ এর মধ্যে এই খাতে ১ লক্ষ ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
শুধু ড্রামা, সঙ্গীত কিংবা রূপচর্চা নয়, রন্ধনশৈলীর ক্ষেত্রেও বাড়ছে কোরিয়ার জনপ্রিয়তা। ২০২০ সালে শুধু কোরিয়ান রন্ধন জাতীয় পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার। এমনকি ২০১৭ সালের তুলনায় বিশ্বের নানা দেশে কোরিয়ান রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বেড়েছে অত্যন্ত ৮ গুণ। কোরিয়ান নানা ধরনের খাবার যেমন কিমচি, বুলগগি, বিবিম্বাপ ইত্যাদি এখন বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পাওয়া যায়। এমনকি বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজধানী ঢাকার একাধিক স্থানে রয়েছে কোরিয়ান রন্ধনশৈলীর রেস্তোরাঁ।
বৈশ্বিক ফ্যাশন খাতেও কোরিয়ার প্রভাব বাড়ছেই। কে-বিউটির কল্যাণে বিশ্বের তাবৎ বড় বড় ব্র্যান্ড, যেমনঃ গুচ্চি, শ্যানেল, লুইস ভু’টন নিয়মিত কোরিয়ান বিভিন্ন তারকাদের ফ্যাশন শো’তে ব্যবহার করছে। আর এ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে মূলত কে-পপ এবং কে-ড্রামার জনপ্রিয়তার সুত্র ধরে। একই সাথে সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের দিক থেকেও কোরিয়ার অবস্থান এখন তুঙ্গে।
আর আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রাষ্ট্রের অবস্থান শক্ত করতে তার ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচিতির গুরুত্ব যে অমর, তা কে না জানে।
বিনোদন খাতের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
বিনোদন খাতের যে শুধু অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে বিষয়টি সেরকমও নয়। বরং রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব। বিশেষ করে এক্ষেত্রে সিনেমা শিল্পের সবচেয়ে বড় অবদান উল্লেখযোগ্য।
এক্ষেত্রে একটি চমৎকার উদাহরণ হতে পারে ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া টপ গান মুভিটি। কথিত আছে এ মুভিটি মুক্তি পাওয়ার পরে আমেরিকান নৌবাহিনীতে যোগদানের হার ৫০০% অবধি বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও সে ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু মিলিটারি ডট কমের তথ্য অনুসারে ৫০০% না হলেও এই বৃদ্ধির হার ছিল অন্তত ৮%। এমনকি ১৯৮০ এর দশকে যখন প্রেসিডেন্ট রোনান্ড রিগ্যান ক্ষমতায় আসলেন তখন থেকেই হলিউডের সাথে রাজনীতির যোগসূত্র খুজছে বিশেষজ্ঞরা। শুধু রাজনীতি নয়, পররাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে জনমত সংগ্রহ কিংবা প্রভাবিত করার ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখে থাকে হলিউড।
আরও সহজ করে বললে, জনমনে শত্রুপক্ষের একটি ধারনা তৈরি করার ক্ষেত্রে সিনেমার জুড়ি মেলা ভার। কোল্ড ওয়্যার চলাকালীন প্রায় সকল মুভি, সিরিজ, এবং গেমে শত্রুপক্ষ হিসেবে অবধারিত ভাবে রাশিয়াকে খুঁজে পাওয়া যেত। সময়ের সাথে সাথে সেই স্থান দখল এখন করেছে চীন।
হলিউডের ন্যায় আমাদের পাশের দেশ ভারতও কম নয়। বিশেষত সমসাময়িক বলিউড মুভি গুলোর ভেতর স্পষ্টতই একটি নির্দিষ্ট ঘরানার জাতীয়তাবাদের ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে, অর্থনীতির পাশাপাশি আরও বৃহৎ বিষয়াবলীতেও সিনেমা এবং সর্বোপরি বিনোদন খাতের দৃড় প্রভাব রয়েছে। আর বৃহৎ বিষয়াবলীর পাশাপাশি ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণার মত ক্ষুদ্র বিষয়েও যে সিনেমা অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তা বলাই বাহুল্য।
শেষকথা
এই লেখার শেষ অংশে এসে এইটুকুই বলা যায় যে, বিনোদনকে নিছক সময় পার করার মাধ্যম হিসেবে দেখলেই চলবে না। বরং দেখতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে। সর্বোপরি ভাবতে হবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিনোদন খাতের অবদান নিয়ে। বাঙালী সংস্কৃতি বহিঃবিশ্বে আবেদন সৃষ্টি করবে না এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ বাঙালী সংস্কৃতির অন্যান্য উদাহরণ, যেমন নকশি কাথা, কুটির শিল্পের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে সারা বিশ্বে। সেগুলোও বাঙালী সংস্কৃতিরই অংশ।
তাহলে প্রশ্ন করতে হয় যে, সিনেমা, সঙ্গীত এসব কেন নয়? সত্যি বলতে সমস্যাটি বাঙালী সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতায় নয়। বরং বাঙালী সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে একটি গ্রহণযোগ্য সংস্কৃতি এমনটা ভেবে নিয়েই আগাতে হবে আমাদের বিনোদন শিল্পকে। তারই পাশাপাশি এ শিল্পকে ঠিক কিভাবে আধুনিকতার মিশেলে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা যায়, সেটিই হলো আগামীর চ্যালেঞ্জ।
31-10-2024
Miscellaneous
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সূচনার শুরুটা বস্তুত...
Read More22-10-2024
Miscellaneous
ব্রেন ড্রেইন (Brain Drain) হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দক্ষ,...
Read More30-09-2024
Miscellaneous
ড. মুহাম্মদ ইউনুস, একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ,...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.