Community

প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি যে কর্মমুখী শিক্ষা গুলো হতে পারে গুরুত্বপূর্ন

Written by: সুরাইয়া জামান

25-02-2024

প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি যে কর্মমুখী শিক্ষা গুলো হতে পারে গুরুত্বপূর্ন


মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পরেই আসে শিক্ষা। শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞানলাভের একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলী বিকশিত হয়। নৈতিক এবং সামাজিক বিকাশের পাশাপাশি শিক্ষার অন্যতম প্রধান একটি লক্ষ্য হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে জীবনযাত্রার মান ঊর্ধ্বমুখী করা। 

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠদানের মাধ্যমে যে শিক্ষা প্রদান করা হয়, তা হচ্ছে পুঁথিগত শিক্ষা। আর পুঁথিগত শিক্ষা কাজের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে বাস্তবায়িত করার নামই হচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষা। সহজ করে বলতে গেলে, যেকোনো কর্মক্ষেত্রে সফল হতে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের সাথে দক্ষতা অর্জনই হচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষা। 

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কর্মহীনতা বা  বেকারত্ব সমস্যা। জীবনের একটি দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশুনা করে, ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ডিগ্রী অর্জন করেও জনসংখ্যাস্ফীতির জন্য এ দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা হতাশাজনক এবং একইসাথে আশঙ্কাজনকও বটে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যাচ্ছে, দেশে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী বেকারের অভাব না হলেও কোনো নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ জনবলের বেশ অভাব। অর্থাৎ, প্রচলিত শিক্ষার হার বাড়লেও, কয়েক যুগ আগের থেকে দেশে শিক্ষিত মানুষের হার বাড়লেও রয়ে গেছে দক্ষ জনগোষ্ঠীর অভাব, যা কর্মমুখী শিক্ষার প্রভাব ছাড়া পূরণ করা প্রায় অসম্ভব। 

দেশ ডিজিটাল হবার সাথে সরকারী এবং বেসরকারি বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোকবলের অভাবও যেন প্রবল হচ্ছে। চাকরীর বাজারে আজ ডিগ্রীর পাশাপাশি দক্ষতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষেত্রে ডিগ্রী নয়, বরং দক্ষতাই হচ্ছে চাকরীর মূল যোগ্যতা। তাই ব্যক্তিগত কিংবা পেশাগতভাবে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। আজ আমরা এই লেখার মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ন কিছু কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপারে জানবো। 

বেকারত্ব সমস্যা দূর করতে এবং জনদক্ষতা বাড়াতে কর্মমুখী শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ইংরেজি শেখার সেরা ১০টি উপায় পড়ুন এই লিংকে- ইংরেজি শেখার সেরা ১০টি উপায়




ফ্রিল্যান্সিং

বর্তমান সময়ে কর্মমুখী শিক্ষা হিসেবে বেকারত্ব দূরীকরণে ফ্রিল্যান্সিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কম্পিউটারের বেসিক ব্যবহার জানা থাকলে ট্রেনিং এবং দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের অনেক ধরন এবং ক্ষেত্র আছে। এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, কপিরাইটিং, ভিডিও এডিটিং, ফটোগ্রাফি, বিজনেস কনসাল্টিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ইভেন্ট প্ল্যানিং ইত্যাদি। এর মধ্যে নিজের আগ্রহের সাথে খাপ খায় এমন ধরন বেছে নিয়ে সেটার উপর দক্ষতা অর্জন করা যায়। প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়ার কারনে চাকরীর বাজারে কিংবা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে এসবে দক্ষ এবং এক্সপার্ট মানুষের বেশ চাহিদা রয়েছে। সরকারী ভাবে উপজেলা পর্যায়ে ফ্রি প্রশিক্ষণ এবং ফ্রি ল্যাপটপ বিতরণের সুবিধা প্রদানে ফ্রিল্যান্সিং এ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে এবং এর পরিধি দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। 


নার্সিং

অসুস্থ মানুষকে সেবাদান খুবই মহৎ একটি কাজ। আগে থেকেই সাধারণত এই কাজকে মানুষ বেশ সম্মান এবং গর্বের চোখে দেখে থাকে। তবে বর্তমানে স্বাস্থ্যখাতে নার্সিং পেশার গুরুত্ব বাড়ছে। তাই এই বিষয়ে পড়াশুনা করে নার্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছেন অনেকেই। আশার কথা হচ্ছে, মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও দিন দিন এই পেশার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। উচ্চমাধ্যমিকের পর তিন কিংবা চার বছর মেয়াদী কোর্স ছাড়াও এক বছর মেয়াদী ট্রেনিং এর সুযোগ রয়েছে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন মেডিকেল প্রতিষ্ঠানে। এখানে চাকরীর সুযোগও রয়েছে প্রচুর। অভিজ্ঞতা এবং স্পেশালাইজেশনের মাধ্যমে এই পেশায় অনেক দূর যাওয়া সম্ভব। কর্মমুখী শিক্ষা হিসেবে নার্সিং বেশ চমৎকার এবং সম্ভাবনাময় পেশা।

 


আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালন

যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে আধুনিক পদ্ধতিতে স্বল্প পরিসরে হাঁস-মুরগি পালন কর্মমুখী শিক্ষার এক অনন্য বাস্তবায়ন। বেকারত্ব কিংবা দারিদ্র্য দূরীকরণে বর্তমানে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। উত্তরোত্তর সফলতা অর্জনের জন্য সরকারীভাবে জেলা পর্যায়ে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ট্রেনিং। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক এবং বেসরকারী সংস্থা থেকে ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ লোন। আধুনিক পদ্ধতিতে পালনের ব্যবস্থা করায় এর দ্বারা পরিবেশের ক্ষতি হবার সম্ভাবনাও কম। 

 



হস্তশিল্প

নকশী কাঁথা, শীতল পাটি, কাঠের পুতুল, শখের হাঁড়ি, বাঁশের ঝুড়ি, পাটের পুতুল, বেতের তৈরি নানান আসবাবপত্র হচ্ছে হস্তশিল্পের বিভিন্ন পণ্য। বহমান বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী এসব পণ্য সাধারণত সৌখিন মানুষেরা কিনে থাকে। স্বল্প পুঁজিতে অল্প পরিসরে বাড়িতে বসেই হস্তশিল্পের কাজ করা যায়। তবে বর্তমানে এসব পণ্যের চাহিদা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পৌঁছে গেছে বলে সরকারীভাবে বিভিন্ন উদ্যোগে নারীদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে হস্তশিল্প অর্থনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এইসব কর্মদক্ষতা আয়ত্ব করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গুলোতে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, কিংবা স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য হস্তশিল্পের মতো কর্মমূখী শিক্ষার গুরুত্ব অতুলনীয়।


কুটির শিল্প

বর্তমানে চামড়া উৎপাদন, রেশম বয়ন, তুলা বয়ন, আচারের মতো ছোট আকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি কুটির শিল্পগুলো্র বাস্তব প্রণয়নের মাধ্যমে কর্মমূখী শিক্ষার প্রসার ঘটছে। মধ্যম পুঁজিতে স্বল্প পরিসরে শুরু করা এইসব শিল্পে কর্মরত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের বেকারত্ব দূর হবার সাথে তাদের দক্ষ এবং যোগ্য হিসেবে তৈরি হবার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক না কেন, কর্মক্ষম মানুষেরা নিজেদের অন্ন, বস্ত্রের চাহিদা পূরণ করতে পারছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই শিল্পগুলো সম্পর্কে মানুষের মাঝে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। শিক্ষিত অনেকেই বাইরের চাকরি ছেড়ে বেছে নিচ্ছেন এই পেশা। নিজেদের পরিবেশে খাবার তৈরি করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা করছেন এবং ঘরে বসেই অনেকের কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি নিজে ভালো ইনকাম করছেন। 


দর্জি পেশা

আমাদের পরিধেয় বানাতে আমরা সবসময় ছুটি দর্জির কাছে। ফ্যাশন সচেতনতার এই সময়ে সবাই বিভিন্ন ডিজাইনের পোষাকে নিজেকে দেখতে পছন্দ করি। তাই আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে দর্জির দক্ষতার উপর। দিনদিন এই পেশায় দক্ষ মানুষের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে দক্ষতার দিক থেকে এগিয়ে থাকা দর্জিরা বিভিন্ন পোষাক কারখানার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করে থাকে। তাই এই পেশাকে এখন আর ছোট করে দেখবার সুযোগ নেই। ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং নেওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোষাক হাউজে দর্জিদের ভালো বেতনে চাকরীর সুযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ভাসমান মৎস্য চাষ

ড্রাম, বাঁশ, নেট এবং জিআই পাইপ দিয়ে তৈরি জালের বুননে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন, এমন গল্প আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। এসব শুধু গল্প নয়, নিজস্ব জলাশয় কিংবা পুকুর না থাকায় আফসোস না করে অনেক বুদ্ধিমান বেকারই এখন বেছে নিচ্ছেন ভাসমান মাছ চাষ। তবে এর জন্যেও প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ। উপজেলা পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় এর মাধ্যমে সরকারীভাবে এসব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। আমিষের চাহিদা পূরণে এবং বেকারত্ব দূরীকরণে বিশেষ কার্যকরী এই কর্মমুখী শিক্ষা বেশ সম্ভাবনাময়।


অটোমোবাইল সার্ভিসিং

শহর এবং উপ-শহর এলাকা গুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ জ্যাম দেখেই বোঝা যায়, এ দেশে আর যাই হোক, গাড়ির অভাব নেই! ব্যক্তিগত যান কিংবা জনযান, ফিট রাখতে এর মালিকদের নির্দিষ্ট সময় পরপর সার্ভিসিং করাতে হয়। তাই দিন দিন গাড়ি সার্ভিসিং এর ব্যবসা বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজে ব্যবসা শুরুর পাশাপাশি এখানে অন্যের কর্মসংস্থানের সুযোগও করে দেওয়া যায়। এটা বেশ লাভজনক ব্যবসা। গাড়ি সার্ভিসিং এর কাজ বা ব্যবসা শুরুর আগে অবশ্যই অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোর্স এবং প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত। স্বল্প শিক্ষিত কিংবা বেকার যে কেউ এই কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে নিজের অবস্থা পরিবর্তন করতে সক্ষম হতে পারে। 


পরিশিষ্ট

 

উৎপাদনশীলতা এবং স্বনির্ভরতা বাড়াতে, শিক্ষার্থীদের কর্মের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে, কর্মস্থলে সফলভাবে এগিয়ে যেতে, অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে, সর্বোপরি দেশের বেকারত্ব সমস্যা কমাতে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে বড় ডিগ্রীধারী বেকার যুবকদের জন্য উপজেলা পর্যায়ে সরকারীভাবে বিভিন্ন কর্মমুখী শিক্ষার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে এই জাতিকে আরো দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে। 


Previous Post

Next Post

Related Posts

বাংলাদেশের কোরবানির গরুঃ ঈদের সময়ে এই ব্যবসার অর্থনীতি

27-06-2024

Community

বাংলাদেশের কোরবানির গরুঃ ঈদের সময়ে এই ব্যবসার অর্থনীতি

প্রতিবছর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে বাংলাদেশে কোরবানির গরুর...

Read More
কোরবানি ঈদের যত প্রস্তুতি

10-06-2024

Community

কোরবানি ঈদের যত প্রস্তুতি

বছরঘুরে আবারো দোর-গোড়ায় ঈদ-উল-আজহা। জিলহজ্জ মাসের ১০...

Read More
এই অভ্যাস যাদের আছে, তাদের উপার্জন কি বেশি?

31-05-2024

Community

এই অভ্যাস যাদের আছে, তাদের উপার্জন কি বেশি?

আমেরিকান লেখক ক্যারোলিন মাইসের মতে, যেকোনো মুভমেন্ট বা...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter