Home » MAWblog » International » আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিমন্ডলে নিজ সংস্কৃতি ও ভাষার অমর গুরুত্ব
International
Written by: এস এম নাহিয়ান
21-02-2024
২১শে ফেব্রুয়ারি, এ যেন প্রতিটি বাঙালীর রক্তে মিশ্রিত একটি দিন। ১৯৯৯ সাল থেকে ইউনেস্কো কর্তৃক এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও বাঙালীর হৃদয়ে এর তাৎপর্য বহু আগে থেকেই বিদ্যমান। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত সহ আরও অনেকেই। সে দিনটি যেন ছিল পশ্চিম-পাকিস্তানের সকল অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালীর ক্রোধের জ্বলন্ত বহিঃপ্রকাশ। ভবিষ্যতে ঘটতে যাওয়া রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের প্রথম স্ফুলিঙ্গ ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারী। আর ২১শে ফেব্রুয়ারির মাধ্যমেই বাঙালী জাতীয়তাবাদের চেতনা সকল বাঙালীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যার সর্বশেষ ফলাফল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ।
২১শে ফেব্রুয়ারিকে সারা বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রথম উদ্যোগটা ছিল বাংলাদেশেরই। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো এর ৭ম সাধারণ সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকেই এটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। তবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২০০২ সালে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তথা ২১শে ফেব্রুয়ারির ইতিকথা প্রায় সকল বাঙালীরই জানা। তবে ভাষা আন্দোলনের শুরুটা মোটেও ১৯৫২ সালে নয়। বরং ১৯৪৭ সালে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা নির্বাচনের সিধান্ত গৃহীত হওয়ার পর থেকেই এই আন্দোলনের বীজ বোপিত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি প্রথম বারের মতো পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি ব্যবহারের দাবি জানানো হয়। এ দাবি জানান কুমিল্লার কৃতী সন্তান আইনজীবি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সাল থেকেই এ বিষয়ক আন্দোলন ও তা নিশ্চিহ্নের নিমিত্তে পশ্চিম-পাকিস্তানের গ্রেপ্তার কার্যক্রম চলতেই থাকে। এমনকি ১৯৪৮ সালে স্বয়ং আলি মোহাম্মদ জিন্নাহও রাষ্ট্রভাষা উর্দুর করার কথা বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রদের থেকে প্রত্যাখিত হন। ১৯৪৮ থেকে চলা এ আন্দোলনের সর্বোচ্চ রুপ দেখা যায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। সেদিন ১৪৪ ধারা থাকা সত্ত্বেও বাঙালী ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে নেমে আসে। ফলস্বরূপ নিজ ভাষার অধিকার রক্ষায় জীবন দিতে হয় ভাষাশহীদদের। যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম এক বিরল ঘটনা।
মানুষের সামগ্রিক জীবনযাপনের প্রণালী হলো সংস্কৃতি। অর্থাৎ আমরা ও আমাদের আশেপাশে যা, তাই সংস্কৃতি। সংস্কৃতির এই সহজ সংজ্ঞা থেকেই যেন এর সাথে ভাষার সংযোগটা খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের যে মাধ্যম, তাই ভাষা। আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে ভাষার অস্তিত্ব নেই। সংস্কৃতির আবির্ভাব ও বিকাশ ঘটেছে সামগ্রিক ভাবে। কিন্তু এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ভাষার মাধ্যমে। তাই যুগে যুগে মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির সৃষ্টিতে ভাষার অবদান সবচেয়ে বেশি। আর সংস্কৃতি ও ভাষার এই পরিপূরক ধর্মই ভাষাকে দেয় এক বিশেষ স্থান। বিশেষত ১৯৫২ সালে বাঙালীর ভাষা রক্ষার সংগ্রাম শুধু ভাষাকে রক্ষা করার জন্য ছিল না। বরং সেটি ছিল সামগ্রিক বাঙালী সংস্কৃতিকে রক্ষা-প্রচেষ্টার এক মূর্ত প্রতিচ্ছবি। সেই বাঙালী সংস্কৃতি ও বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রস্ফুটিত রুপই হলো স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের মূল ভিত্তি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।
অতঃপর একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাঙালীর সংস্কৃতি ও বাঙালীর ভাষা সর্বদাই সর্বক্ষেত্রে এই প্রভাব বজায় রেখেছে। সেটি রাষ্ট্র বাংলাদেশের বিকাশধারায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, ঠিক তেমনই ভূমিকা রেখেছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে দৃড় ভাবে ফুটিয়ে তুলতে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা যে ঐ দেশের অবস্থানকে আরও দৃড় করে, তা বলাই বাহুল্য।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটি দেশের অবস্থান বা অস্তিত্ব বলতে সকল ক্ষেত্রে এর সার্বিক অস্তিত্বকেই বোঝায়। তবে সার্বিক বিশ্লেষণের বদলে ব্যবসায়িক পরিমন্ডলের বিশ্লেষণই বোধ করি এই মাধ্যমের পাঠকদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বৈশ্বিক দরবারে বেশ কয়েকটি দেশের সংস্কৃতি ও ভাষার প্রভাব নিয়েই এ অংশে আলোচনা করা হলো।
ব্যবসায়িক পরিমন্ডলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো দেশের সংস্কৃতি ও ভাষার প্রভাব নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রথমেই আসে কোরিয়ার কথা। কারণ সমসাময়িক সময়ে উত্তর-কোরিয়ার সাংস্কৃতিক আধিপত্য খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব অনুভব করতে বেশি দূরের উদাহরণ টানার প্রয়োজন নেই, খোদ বাংলাদেশই যথেষ্ট। বিশেষত ‘কেপপ (KPop)’ খ্যাত কোরিয়ান সঙ্গীত শিল্প ও ‘কেড্রামা’ এর প্রভাব এখন বিশ্বজুড়েই বিদ্যমান। স্ট্যাটিস্টা এর তথ্যমতে, ২০২১ সালে এই শিল্পের রপ্তানিমূল্য ছিল ৭৭৫.৩ মিলিয়ন ডলার। সারা বিশ্বজুড়ে কেপপ এবং কেড্রামা এর এই বিপুল জনপ্রিয়তাই উত্তর-কোরিয়ার সাংস্কৃতিক বিজয়কে নির্দেশ করে। তবে এই শিল্পের মূল্য শুধু ডলারের অংক মাপা সম্ভব নয়। কারণ সংস্কৃতি ও ভাষার প্রভাব টাকার মূল্য থেকেও অনেক সুদূরপ্রসারী। কোরিয়ান সঙ্গীত ও নাটক শিল্পের কারণে উত্তর-কোরিয়ার পরিচিতি আজ বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কোরিয়ার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে বই কমায় নি।
জাপানের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত আধিপত্য এতটা তীব্র ভাবে না বোঝা গেলেও এর বিস্তৃতি ব্যাপক। শুধুমাত্র অ্যানিমে শিল্প থেকেই ২০২২ জাপানের রপ্তানি আয় ছিল ৯.৭২ বিলিয়ন ডলার। যা যেকোনো হিসাবেই অনেক বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানিরা অর্থনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক সকল দিক থেকেই পীড়িত হয়েছিলো। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জাপানি অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার পর তাদের দ্বিতীয় যুদ্ধটা ছিল সাংস্কৃতিক। পরাজিত শক্তির গ্লানি কাটিয়ে জাপান এখন বিশ্বের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রভাবক। একই সাথে তাদের ভাষার পরিচিতি ও আধিপত্যও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে জাপানীরা খুবই গর্বিত। ফলে তাদের সাথে ব্যবসা করতে গেলেও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি দুইটিকেই সম্মান দিতে হয়। আর এটি সম্ভব হয়েছে তাদের ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত স্বকীয়তার জন্যই।
ভাষাগত আধিপত্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ ইংল্যান্ড। যদিও ইংল্যান্ড আলাদা কোনো রাষ্ট্র নয় বরং যুক্তরাজ্যের অংশ। কিন্তু ইংলিশ তথা ইংরেজি ভাষাই আজ পৃথিবীর সর্বাধিক উচ্চারিত, লিখিত ও পঠিত ভাষা। একটা সময় ছিল যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনো সূর্য ডুবতো না। আজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সেই জৌলুস না থাকলেও তাদের স্রাম্রাজ্যের ছাপ ঠিকই রয়ে গেছে। আর তার সবচেয়ে বড় নিদর্শন তাদের ভাষা। ব্রিটেনের এক সময়ের ভাষাগত আধিপত্য এতটাই দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে যে, সেটি বর্তমানের আন্তর্জাতিক ভাষা হয়ে গেছে। যদিও বর্তমানে এই ভাষার উপর ব্রিটেনের একচেটিয়া অধিকার আর বজায় নেই। কিন্তু সারা বিশ্বজোড়া ভাষা ও সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ব্রিটেনকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ফলস্বরুপ ব্যবসা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি আইনের দিক থেকেও ব্রিটেন অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে।
লেখার শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে যে, ভাষা ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরকই বটে। ভাষা যেমন সংস্কৃতির একটি অংশমাত্র, আবার ভাষা ছাড়াও সংস্কৃতি কল্পনা করা যায় না। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির সেই ভাষার অধিকারকেই রক্ষা করেছে। একই সাথে রক্ষা পেয়েছে আমাদের সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা। বাঙালি শংকর জাতি হওয়ায় এ অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতি, দুইটিই বহিঃশক্তি দ্বারা ব্যাপক প্রভাবিত। এমনকি উপর্যুক্ত তিনটি দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবও এই বাংলাদেশেই প্রকট ভাবে বিদ্যমান। কিন্তু তা মূলত তাদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও বাঙালীর সাংস্কৃতিক দুর্বলতাকে নির্দেশ করে। কিন্তু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সংগঠিত না হলে হয়তো আজ বাঙালীর ভাষাই বিলুপ্ত হতো। শুধু তাই নয়, ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের প্রথম শিখা। ভাষা আন্দোলন থেকে উৎসরিত জাতীয়তাবাদের ফলেই পরবর্তীতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জন্ম হয়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের। অর্থাৎ বাঙালীর যে ভাষা ও সংস্কৃতি, দুটোকে রক্ষার স্পৃহাই জেগে উঠেছিলো ‘৫২ এর ভাষা আন্দোলনে।
দিনশেষে বলা যায়, নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা ও স্বকীয়তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে খুব কম দেশই শক্তিশালী অস্তিত্ব গঠন করতে পারে। অন্যের নিয়ন্ত্রণে থেকে, অথবা অন্যের নিপীড়নে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে কখনই একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়া যায় না। আর শক্তিশালী অস্তিত্ব সৃষ্টি করতে না পারলে শক্তিশালী ব্যবসায়িক অবস্থানের কথা চিন্তা করা নিতান্তই দুরাশা। তবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতিকে সেদিন রক্ষা করেছিলো ঠিকই। কিন্তু বর্তমানে বৈদিশিক ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে বাঙালী যেন নিজ ভাষা ও সংস্কৃতিই ভুলতে বসেছে। তাই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দুই পর্যায়েই নিজেদের অস্তিত্বকে রক্ষা করতে ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ আজ সময়ের দাবী।
৩। যুগান্তর
৪। ইউনেস্কো
06-11-2024
International
মার্ক জাকারবার্গ, যিনি প্রযুক্তি জগতে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা...
Read More05-11-2024
International
বাংলাদেশের ই-কমার্স এবং অনলাইন মার্কেটিংয়ের জগতে নতুন...
Read More04-11-2024
International
বাংলাদেশ ও ভারত—দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.