Home » MAWblog » International » জাহাজ বাণিজ্যের আদ্যপান্ত
International
Written by: এস এম নাহিয়ান
14-02-2024
জাহাজ শব্দটি শোনেন নি অথবা জাহাজ চেনে না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু মানুষের ধর্মই হলো যে বিষয়ের সাথে তার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই, সে বিষটিকে ভাবনা-চিন্তার বাইরে রাখা। জাহাজ অথবা নৌ-বাণিজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আপনি এখন যেই ডিভাইসটির সাহায্যে এই লেখাটি পড়ছেন, সেটি আপনার হাতে পৌছাতেই জাহাজ ব্যবহার করার সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ। শুধু বৈদ্যুতিক যন্ত্র নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধিকাংশ পণ্যই প্রাচীন আমল থেকে নৌপথে তথা জাহাজের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে আসছে। তাই আজকের লেখায় থাকছে কিছুটা আড়ালে থেকে সমগ্র বৈশ্বিক বাণিজ্যকে সচল রাখা এই চাবিকাঠির আদ্যপান্ত।
নৌ-বাণিজ্যের ইতিহাস
মানব সভ্যতায় নৌ-বাণিজ্যের ইতিহাস মোটেও নতুন নয়। বরং স্বল্প খরচে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহনের জন্য হাজার বৎসর ধরে নৌ-বাণিজ্যই বিশ্ব-বাণিজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাখার একটি। খুব সহজ ভাষায়, বিশ্ব-বাণিজ্যের যে অংশ নৌপথে পরিবাহিত হয়, তাই নৌ-বাণিজ্য।
নৌ-বাণিজ্যের ইতিহাস আরও বহু পুরোনো হলেও মানব সভ্যতার সংরক্ষিত ইতিহাসে মাত্র ৫০০০ বছর পুরোনো নৌ-পথের তথ্য পাওয়া যায়। সেটি হলো তৎকালীন মেসোপটেমীয় ও ইন্দু সভ্যতার ভেতর আরব উপসাগরের মাধ্যমে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক নৌ-পথ। সে সময় মেসোপটেমিয়া থেকে পাঠানো হতো তেল ও খেজুর। আর বিনিময়ে ইন্দুস ভ্যালি থেকে আসতো তামা ও হাতির দাত। এর অব্যাহত ধারায় রাজা হাম্মুরাবির সময় মেসোপটেমিয়ায় গড়ে ওঠে একটি সুনিদির্ষ্ট সামুদ্রিক নীতি। সেই নীতি অনুসারে জাহাজের দাম হতো তার ধারনক্ষমতা আকারের উপর ভিত্তি করে। জাহাজ নির্মাতাদের জাহাজের জন্য অন্তত এক বছরের নিশ্চয়তা দিতে হতো। জাহাজ ভাড়া নৌ-ভ্রমণের আগেই পরিশোধ করতে হতো।
আরব উপসাগর জুড়ে চলমান নৌ-বাণিজ্যের ধারা পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে ভূমধ্যসাগরেও। ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ভূমধ্যসাগরে মিশরের মেম্ফিস, লেবাননের টায়ার এবং বর্তমান সিরিয়া অঞ্চলের আলেপ্পো হয়ে ওঠে প্রধান বণিজ্যিক কেন্দ্র। সময়ের সাথে সাথে ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়তে থাকে এমন বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সংখ্যা। ৫০০ থেকে ৩৭৫ অব্দে কার্থেজ, সিসিলি, অ্যাথেন্স ও আলেকজান্দ্রিয়া হয়ে ওঠে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। সে সময় গ্রীক সভ্যতার দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। ১০০টিরও বেশি কলোনী নিয়ে গ্রিক ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে।
পড়তে পারেনঃ আরব বিশ্বের ব্যবসা সমূহ
গ্রিক সাম্রাজ্যের পতনের পর সেই আধিপত্য চলে যায় রোমানদের হাতে। সে সময় ভূমাধ্যসাগরের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ইটালি। হলি রোমান এম্পায়ারের হাতে চলে আসে ভূমাধ্যসাগর, কৃষ্ণ সাগর এমনকি দক্ষিণ ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণ। রোমান সাম্রাজ্যের আমলে সমগ্র ভূমধ্যসাগর জুড়েই গড়ে ওঠে একটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক মাধ্যম।
চিত্রঃ মেরিটাইম ইকোনোমিকস (মার্টিন স্টপফোর্ড)
আনুমানিক ৩৯০ খ্রিষ্টাব্দে বিশাল রোমান সাম্রাজ্যও দুই ভাগ হয়ে যায়। কালের গর্ভে ওয়েস্টার্ন রোমান এম্পায়ার বিভিন্ন ছোট ছোট অংশে ভাগ হয়ে গেলও ইস্টার্ন রোমান এম্পায়ার পরিণত হয় বাইজেন্টিন সাম্রাজ্যে। পরবর্তীও ২০০ বছর জুড়ে বাইজেন্টিন সাম্রাজ্যের অধীনে ভূমধ্যসাগরীয় নৌবাণিজ্য বেশ ভাল ভাবেই চলতে থাকে।
আনুমানিক ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পূর্ব-ইউরোপের রাজ্যগুলো নৌ-বাণিজ্যে ভাল ভাবে অংশ নিতে শুরু করে। সে সময় নৌ-বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়ে বাল্টিক অঞ্চলেও। যদিও নৌ-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ভেনিস তখনো তার শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছিলো। কিন্তু বাইজেন্টিন সাম্রাজ্যের শক্তি হ্রাসের সাথে সাথে ১২০০-১৪০০ শতাব্দীর দিকে নৌ-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে দক্ষিণ-ইউরোপ। তবে এক্ষেত্রে একটি কথা না উল্লেখ করলেই নয়।
১৪০৩ খ্রিষ্টাব্দে চৈনিক সম্রাট ঝুং এর নির্দেশে সৃষ্টি হয় বিশাল চৈনিক নৌবহর। এডমিরাল ঝেং হে এর নেতৃত্বে ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যে প্রায় ৩০০ জাহাজের চৈনিক বহর বিশাল নৌ ভ্রমণ সম্পন্ন করে। সে সময় এই বহর ভারতীয় উপমহাদেশ, মালয়েশিয়া, আরব উপসাগর থেকে শুরু করে মোগাদিশু এমনকি কেপ অফ গুড হোপ পর্যন্ত ভ্রমণ করে। সে সময় পৃথিবীর অন্য যেকোনো নৌবহর থেকে চৈনিক নৌবহর প্রযুক্তি ও দক্ষতার দিক থেকে ছিল অনেক এগিয়ে। কিন্তু ক্ষমটা থাকা সত্ত্বেও ১৪৩৩ সালে চৈনিক সম্রাটের নির্দেশে সকল নৌ-অভিযান স্থগিত করা হয় এবং নৌ-বহর ধংস্ব করা হয়। এভাবেই নৌ-আধিপত্য সৃষ্টির পথ থেকে ছিটকে পড়ে চীন। আর সে সুযোগই নেয় দক্ষিণ ইউরোপের বণিকরা।
বৈশ্বিক নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র দক্ষিণ-ইউরোপে চলে যাওয়ার পর পরই বৈশ্বিক সম্প্রসারণের একটি ধারা তৈরি হয়। এর অন্যতম কারণ অবশ্য ছিল অটোম্যান সাম্রাজ্য। বাইজেন্টিন সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে অটোম্যানরা তখন কন্সটান্টিনোপোল তথা ইস্তানবুলকে করায়ত্ত করেছে। ফলে সে অঞ্চলের মাধ্যমে পূর্বের সাথে ইউরোপের যোগাযোগ ব্যাপক ভাবে বাধাগ্রস্থ হয়। এর ফলস্বরুপ ১৪০০ শতক জুড়েই পর্তুগাল এবং স্পেন আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে ভারতীয় উপমহাদেশে পৌছানোর ব্যাপক চেষ্টা শুরু করে। এক্ষেত্রে প্রথমেই যার নাম উঠে আসে তার নাম বার্থালোমিউ দিয়াজ। পর্তুগিজ এই নাবিক প্রথমবারের মতো কেপ অফ গুড হোপ খুঁজে পেতে সমর্থ হন। প্রচন্ড বৈরি আবহাওয়ার কারণে দিয়াজ সে অঞ্চলের নাম রাখেন ‘কেপ অফ স্টর্মস’। কিন্ত পর্তুগিজ রাজার নির্দেশে সে নাম পালটে রাখা হয় ‘কেপ অফ গুড হোপ’।
এদিকে ১৪৮০ সালের দিকে জেনোয়ান নাবিক ও বণিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের নিকট একটি অভিযান পরিচালনার আবেদন করেন। তার চিন্তা মতে আফ্রিকান উপকূল না ঘুরে সোজা পশ্চিমে জাহাজ চালালেই পর্তুগাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে পৌছানো সম্ভব ছিল। কিন্তু তার আর্থিক আবেদন নাকচ করে দেয় পর্তুগিজ সাম্রাজ্য। পরবর্তীতে ১৮৬৫ সালে তিনি কর্পদশূন্য হয়ে পৌছান স্পেনের রাজদরবারে। তবে সেখানেও তাকে নিরাশ করা হয়। তবে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ কিছু কারণে পরবর্তীতে তাকে তিনটি জাহাজ ও অভিযানের জন্য সকল সহায়তা প্রদান করা হয়। এভাবেই তিনি ভারতীয় উপমহাদেশ খুঁজতে গিয়ে পেয়ে যান আমেরিকান মহাদেশ।
অপর দিকে পর্তুগিজ সাম্রাজ্য এই খবর পেয়ে দ্বিগুণ তৎপর হয়ে ওঠে। পরবর্তীত পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা ১৪৯৭ সালে প্রথম বারের মত ভারতের কালিকট বন্দরে পৌছান। সেখানে তিনি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে সুবিধা করতে না পারলেও তার আনিত তথ্য ইউরোপিয়ানদের জন্য বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। সে সময় ভারত হয়ে যায় বাণিজ্যিক স্বর্গ। আর অন্যদিকে আমেরিকা থেকে নামমাত্র মূল্যে আনিত কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হতে থাকে ইউরোপের পণ্য।
চিত্রঃ মেরিটাইম ইকোনোমিকস (মার্টিন স্টপফোর্ড)
পর্তুগিজ ও স্প্যানিশ কর্তৃক নৌপথে এই বৈশ্বিক সংযোগ স্থাপন পরবর্তী ৪০০ বছরকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে। ১৬৫০ সালের দিকে আরেক ইউরোপীয় শক্তি ডাচ এরা মুখ্য ভূমিকায় চলে আসে। প্রায় এক শতাব্দী পর ১৭৩৫ সালের দিকে সে ভূমিকা চলে যায় ব্রিটিশদের হাতে। পরবর্তীতেও ব্রিটিশদের কর্তৃক ভারতীয় উপমহাদেশের শাসনের ইতিহাস তো সকলেরই জানা। তবে এ সময়ে ১৮৫০-১৯৫০ সালের মধ্যে নৌ-বাণিজ্যে শক্তিশালী হয় উত্তর আমেরিকান মহাদেশ। এরপরেই সেই কেন্দ্রটি সরে আসতে শুরু করে এশিয়ার দিকে। ১৯৫০-১৯৭০, এই সময়কালে জাপান উদীত হয় নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে। ১৯৭৩-৮৬ এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসেবে। ফলে নৌ-বাণিজ্যের উপরেও এই দুই অঞ্চলের প্রভাব বেড়ে যায় বহুগুণে। সর্বশেষ ১৯৯৪ থেকে এখন অবধি চীনের অবস্থান নৌ-বাণিজ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে শক্তিশালী। বিশেষত ২০০০ সালে চীন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের সদস্যপদ পাওয়ার পর থেকে বৈশ্বিক ও নৌ-বাণিজ্যের যেই বিপুল উন্নতি ঘটেছে, তাই চীনের প্রভাবকে প্রমাণ করে।
চিত্রঃ মেরিটাইম ইকোনোমিকস (মার্টিন স্টপফোর্ড)
নৌ-বাণিজ্য ও জাহাজ বাণিজ্য, অনেকে একে একই মনে করলেও দুইটি কিছুটা ভিন্ন বিষয়। মূলত জাহাজ হলো নৌ-বাণিজ্য সংগঠিত হওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আর জাহাজ শিল্পকে ঘিরে যেই বাণিজ্য, সেটিই মূলত জাহাজ বাণিজ্য। একে উদ্ভুত বাণিজ্য বা ইংরেজিতে ‘ডিরাইভড ট্রেড’ ও বলা যেতে পারে। এই ডিরাইভড কথাটি এসেছে মূলত ‘ডিরাইভড ডিমান্ড’ থেকে। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
জাহাজ বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এই জাহাজ শিল্পটি কিন্তু মূলত একটি পরিবহন শিল্প। আর এই পরিবহন শিল্পের প্রয়োজন হয় তখনই যখন কোনো পণ্য বা মানুষ পরিবহন করতে হয়। অর্থাৎ জাহাজ শিল্প নিজস্ব ডিমান্ড বা বাংলায় যাকে বলে চাহিদা, সেটি তৈরি করে না। বরং অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের পণ্যের পরিবহনের চাহিদা মেটাতেই জাহাজ শিল্প কাজ করে। এর মাধ্যমে সহজেই বুঝতে পারছেন যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও জাহাজ শিল্প একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া আরেকটির অস্তিত্ব কল্পনা করাও মুশকিল।
জাহাজ বাণিজ্যের ধরন
জাহাজ বাণিজ্যের ধরন একাধিক ভিত্তিতে একাধিক রকমের হতে পারে। যেমন সরাসরি জাহাজ তৈরি, বিক্রয়, জাহাজের ভাড়া ও জাহাজ পুর্নব্যবহারের উপর ভিত্তি করে জাহাজ শিল্পকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। কিন্তু পরিবহনের দিক থেকে জাহাজ বাণিজ্যকে আবার মোটা দাগে তিনটি ভাগ করা যায়। সেগুলো হলোঃ
মূলত একটি ইন্ডাস্ট্রি তথা শিল্প প্রতিষ্ঠান যখন নিজস্ব পণ্য বা কাঁচামাল পরিবহনের জন্য জাহাজ ব্যবহার করে তখন তাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিপিং বলে। অর্থাৎ এখানে জাহাজ গুলো একটি সুনির্দিষ্ট কোম্পানির অংশ হিসেবে কাজ করে। এ সকল জাহাজ পরিচালনার দায়িত্বে সাধারণত ঐ কোম্পানিরই ‘শিপিং ডিপার্টমেন্ট’ থাকে। অথবা অনেক সময় অনেক কোম্পানির সেরকম ডিপার্টমেন্ট না থাকলে তৃতীয় পক্ষের ‘শিপ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ এর উপরেই দায়িত্ব ন্যাস্ত হতে পারে।
এ ধরনের শিপিং এর ক্ষেত্রে জাহাজগুলো শুধু একটি কোম্পানিরই হয়ে কাজ করে। উদাহরণস্বরুপ বসুন্ধরা গ্রুপের নানা ধরনের পণ্য যেমন রয়েছে তেমনই রয়েছে এর নিজস্ব জাহাজ বহর। এই বহরের সাহায্যে গ্রুপটি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সহজেই কাঁচামাল নিয়ে আসতে পারে। আবার যেকোনো স্থানে পণ্য পরিবহনের কাজেও সরাসরি কাজে লাগাতে পারে। মূলত এটিই হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিপিং।
যে সকল ক্ষেত্রে একজন স্বতন্ত্র জাহাজ মালিক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাজে তার জাহাজটিকে সরাসরি ভাড়া দিয়ে থাকেন, সেটিকে বলে ট্র্যাম্প শিপিং। এক্ষেত্রে জাহাজ মালিক অনেক সময়ই সরাসরি জাহাজটিকে পরিচালনা করেন না। শুধু মাত্র জাহাজ পরিচালনার জন্যই পৃথিবীতে অসংখ্য কোম্পানি রয়েছে যাদের বলা হয়ে থাকে ‘শিপ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’। এ ধরনের কোম্পানি বিভিন্ন গ্রাহককে সাময়িক সময়ের জন্য জাহাজ ভাড়া দিয়ে থাকে। ট্র্যাম্প শিপিং এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর সময়সূচী পুরোপুরি নির্দিষ্ট নয়। উদাহরণস্বরুপ, ইউক্রেনে প্রচুর গম ও যব ফলন হয়ে থাকে। তার ফসল সংগ্রহের পরপরই অসংখ্য জাহাজের সাহায্যে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে কোনো রুটিন অনুযায়ী জাহাজ ভাড়া করা হয় না। বরং যখন গ্রাহকের দরকার হয় তখনই জাহাজটিকে ভাড়া করা হয়। মূলত এভাবেই ট্র্যাম্প শিপিং কাজ করে থাকে। তাই সাধারণত ট্র্যাম্প শিপিং এর সাহায্যে ‘বাল্ক কার্গো’, যেমনঃ কয়লা, শস্য, লোহার আকরিক, বক্সাইট ইত্যাদি পরিবহন করা হয়ে থাকে।
লাইনার শিপিংকে অনেকটা নির্দিষ্ট রুটের বাসের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ট্র্যাম্প শিপিং এর যেমন নির্দিষ্ট কোনো রুটিন নেই, লাইনার শিপিং এর ক্ষেত্রে ঠিক তার উলটো। লাইনার শিপিং এর ক্ষেত্রে জাহাজ গুলো নিখুঁত ভাবে রুটিন মেনে চলে। এমনকি কোন রুটে কোন জাহাজ কখন চলবে তা অনেক আগেই প্রকাশ করে দেওয়া হয়। ফলে যে সকল পণ্য নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর নির্দিষ্ট স্থানে পৌছাতে হবে, সে ধরনের পণ্য লাইনার শিপিং ব্যবহার করে পরিবহন করা হয়।
এখানেই ট্র্যাম্প শিপিং এর সাথে লাইনার শিপিং এর অন্যতম বড় পার্থক্যটি পরিলক্ষিত হয়। ট্র্যাম্প শিপিং এ সাধারণত বাল্ক কার্গো পরিবহন করা হলেও লাইনার শিপিং পরিবন করে তৈরিকৃত পণ্য। ট্র্যাম্প শিপিং এর ক্ষেত্রে যেমন পুরো একটি জাহাজই ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে, লাইনার শিপিং এর ক্ষেত্রে তা নয়। বরং লাইনার শিপিং এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থান ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। যেমন একজন ব্যবসায়ী চাইলে একটি কন্টেইনার ভাড়া নিতে পারেন। ঐ কন্টেইনারের ভেতরে যাই থাকুক না কেন, সকল কন্টেইনারের ভাড়া সমান হারেই পরিশোধ করতে হবে। আর এভাবেই রুটিন মাফিক লাইনার শিপিং তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমনকি পণ্য থাকুক আর নাই থাকুক, লাইনার শিপিংকে তাদের রুটিন অনুযায়ী জাহাজ চালাতেই হয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জাহাজ বাণিজ্যের গুরুত্ব
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের যদি কোনো চাবিকাঠি থেকে থাকে, তাহলে সেটি জাহাজ বাণিজ্য। এমনকি জাহাজ জিনিসটিই আন্তর্জাতিক। জাহাজ এমন একটি বস্তু যার মালিকানা এক দেশের, সেটি রেজিস্ট্রেশন হয় আরেক দেশে, জাহাজ পর্যবেক্ষণ করে ভিন্ন আরেকটি দেশের মানুষ এবং জাহাজ চালায় বিভিন্ন দেশের মানুষ। আর জাহাজের কাজই হলো এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য বা মানুষ পরিবহন করা। অর্থাৎ সার্বিক ভাবে জাহাজ মাত্রই আন্তর্জাতিক। তাই স্বভাবতই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। বস্তুত বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৯০ ভাগেরই বেশি পরিবাহিত হয় জাহাজের মাধ্যমে। নিচে একটি গ্রাফের সাহায্যে গত ৩০ বছরে জাহাজ কত বিলিয়ন মেট্রিক টন পরিবহন করেছে তা তুলে ধরা হলো।
শেষকথা
জাহাজ মাত্রই আন্তর্জাতিক। আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মানেই জাহাজ। তাই যারা আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায় জড়িত, তাদের অবশ্যই এ শিল্প নিয়ে সঠিক ধারনা থাকা বাঞ্চণীয়। শুধু তাই নয়, এই জাহাজ ভাড়া তথা ফ্রেইট রেটের উপর নির্ভর করে সকল পণ্যের দামই অনেক উঠানামা করে। আর এই নৌ-বাণিজ্যের সাথে শিল্প ও সভ্যতার মেলবন্ধনটাও বেশ পুরোনো। বস্তুত যুগে যুগে এই জাহাজ শিল্প ও নৌ-বাণিজ্যের উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন সভ্যতা সম্প্রসারিত হয়েছে। এই ধ্রুব সত্যটি মানবজাতির আধুনিক সভ্যতার ইতিহাস পড়লেই স্পষ্ট বোঝা যায়। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যে শক্ত স্থান ধরে রাখতে চাইলে, জাহাজ বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার বিকল্প নেই কোনো ভাবেই।
তথ্যসূত্র
১। মেরিটাইম ইকোনোমিকস - মার্টিন স্টপফোর্ড
24-11-2024
International
আধুনিক পৃথিবীতে যে নির্বাচনটি বিশ্বের উপর সবচেয়ে বেশি...
Read More21-11-2024
International
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বিশ্বের অন্যতম প্রধান...
Read More14-11-2024
International
সত্য নাদেলা মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.