Economy
Written by: Suraiya Zaman
04-10-2023
আমরা সকালে উঠে সাধারনত দাঁত ব্রাশ করি, নাস্তা বানাই, গোসল করি, এরপর নাস্তা সেরে রেডি হয়ে কাজে বের হই। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে আমরা গৃহস্থালির আরো নানান কাজ করে থাকি। যেমন, ঘর পরিষ্কার করি, ফার্নিচার ক্লিন করি, নানান ধরনের মজার খাবার বানাই। কখনো কি খেয়াল করেছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করা থেকে শুরু করে সারাদিন আমরা, এমনকি রান্নাতেও যে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করছি সেগুলো কোন ব্রান্ডের? একটু খেয়াল করুন, সবগুলো পণ্যের বেশিরভাগই ইউনিলিভার ব্রান্ডের। এমনকি আপনি যদি চান, তবে শুধু ইউনিলিভারের প্রোডাক্ট ইউজ করেই সারাদিনের যাবতীয় কাজ আপনি সেরে নিতে পারেন। কিভাবে সম্ভব?
আজ জানবো, কিভাবে আজকের পৃথিবীতে রাজত্ব করা ইউনিলিভারের যাত্রা শুরু হলো এবং কিভাবে এটি বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিলো, সে সম্পর্কে।
ইউনিলিভারের সূচনা
ইউনিলিভার কিন্তু শুরু থেকেই ইউনিলিভার হিসেবে গড়ে উঠেনি, এমনকি এই ইউনিলিভারের নাম এক সময় ইউনিলিভারই ছিলো না। ১৯৩০ সালে নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি ‘মার্জারিন ইউনি’ এবং ব্রিটিশ কোম্পানি ‘লিভার ব্রাদার্স’ মিলে তৈরি করে এই ইউনিলিভার।
১৮৮৫ সালে “লিভার ব্রাদার্স” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্রিটিশ উদ্যোক্তা উইলিয়াম হেসকেথ লিভার এবং তার ভাই জেমস লিভার। বিশ্বের প্রথম প্যাকেটজাত লন্ড্রি সাবান বাজারে আনে এই কোম্পানিটি। সেই সাবানের নাম ছিল ‘সানলাইট সোপ’। ১৯১৭ সালের আগ পর্যন্ত কোম্পানিটি শুধু একটি সাবানের কারখানা হিসেবেই টিকে ছিলো। এরপর এই দুই ভাই মিলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে লিভার ভ্রাতৃদ্বয় মাছ, আইসক্রিম এবং বোতলজাত পানীয়ের ব্যবসা শুরু করে।
অন্যদিকে ডাচ কোম্পানি ‘মার্জারিন ইউনি’ প্রাণিজ চর্বির ব্যবসা করতো। সাবান কিংবা মাখন জাত পণ্য উৎপাদনে প্রচুর চর্বির প্রয়োজন হওয়ায় ‘মার্জারিন ইউনি’র সঙ্গে একীভূত হয়ে কাজ শুরু করে ‘লিভার ব্রাদার্স’। ১৯ শতকের ৩০ এর দশকে এসে ‘মার্জারিন ইউনি’ এবং ‘লিভার ব্রাদার্স’ মিলে এভাবেই সূচনা করে ‘ইউনিলিভার’ এর। এ যেন এক নতুন যুগে পদার্পণ!
প্রায় এক দশক এভাবেই চলার পর পঞ্চাশের দশকে এসে ইউনিলিভার বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন, প্যাকেজিং, বাজার গবেষণা এবং বিশেষ করে পণ্যের বিজ্ঞাপনের দিকে মনোযোগ দেয়।
তবে ইউনিলিভার পুরো বিশ্বের নজরে আসে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য লাক্স সাবানের মাধ্যমে। এই সাবানের জন্ম ১৯২৪ সালে, গ্রেট ব্রিটেনে। এই ব্র্যান্ডটিই মূলত লিভার ব্রাদার্সকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাইয়ে দেয়। ইংরেজি শব্দ ‘লাক্সারি’ (luxury) থেকে ছোট করে নেওয়া এই সুগন্ধি লাক্স সাবান এখনো বিশ্বের নানা প্রান্তে সমানভাবে সমাদৃত।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ঘরে ইউনিলিভারের অনুপ্রবেশের ইতিহাস
১৯৪০ এর দিকে আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় ব্যবসা শুরু করে ইউনিলিভার। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৩ সালে তারা কিনে নেয় খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিজে লিপটন। এরপর ১৯৪৪ সালে কিনে নেয় পেপসোডেন্ট।
একই ধারায় ১৯৫৪ সালে, বর্তমানে ইউনিলিভারের অন্যতম সফল পণ্য সানসিল্ক শ্যাম্পু কিনে নেয় তারা। ১৯৫৭ সালে কিনে আরেক প্রসাধনী পণ্য Dove। একের পর এক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিনে নেওয়া ধারা অব্যাহত রাখে তারা। ১৯৮৬ সাল থেকে স্কিন কেয়ার পণ্যে নিজেদের এগিয়ে নিতে থাকে এই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিটি।
১৯৯৭ সালে নিজেদের রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনকারী কোম্পানি ৬১০ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেয় ইউনিলিভার। ১৯৯৮ সাল থেকে একটি কৃষি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে তারা। ২০০০ সালে প্রায় ২০৩ কোটি ডলারে কিনে নেয় বিশ্বখ্যাত খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি বেন অ্যান্ড জেরিস এবং স্লিম ফাস্ট। ওই বছরই ১৩৪০ কোটি ডলারে কিনে বেস্ট ফুড। এতে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসায়িক বিনিয়োগ আরো বেড়ে গেছে।
এরপর আর থেমে থাকেনি তারা। সাবান, টুথব্রাশ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রসাধনী, এমনকি গৃহস্থালীর চাহিদাসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে মানুষের খুব কাছের একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে ইউনিলিভার।
বর্তমান অবস্থা
জানলে অবাক হবেন, বর্তমানে সারা পৃথিবীতে খাদ্য, পানীয়, প্রসাধানী থেকে শুরু করে চার শতাধিক ব্র্যান্ডের পণ্য আছে এই ব্রিটিশ-ডাচ কোম্পানিটির। এর মধ্যে ১৩টি ব্র্যান্ড সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। ডাভ, ওমো, ফ্লোরা, হার্টব্র্যান্ড আইসক্রিম, হেলম্যানস, নর, লিপটন, লাক্স, ম্যাগনাম, রামা, রেক্সোনা, সানসিল্ক এবং সার্ফ - এই ১৩টি পণ্যের বাৎসরিক বিক্রি একশ কোটি ডলারের বেশি। বর্তমানে যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা এবং উন্নয়ন শাখা আছে ইউনিলিভারের।
রাজস্বের দিক থেকে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে আছে ১৯০টি দেশে পণ্য বিক্রি করা এই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। সেই হিসেবে প্রোক্টের অ্যান্ড গ্যাম্বল এবং নেসলের পরেই আছে ইউনিলিভার। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২.৫ বিলিয়ন মানুষ ইউনিলিভারের পণ্য ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে ইউনিলিভারের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
গ্রোথ স্ট্রাটেজি
সব শ্রেনীর মানুষের রূচি এবং আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন সাইজের এবং বিভিন্ন দামের পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বছরের পর বছর এতোগুলো দেশে ব্যবসা করে চলেছে ইউনিলিভার। ছোট্ট একটা উদাহরন টানলেই ধারনা পেয়ে যাবেন তাদের গ্রোথ এবং মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সম্পর্কে।
ধরুন, আপনি দোকানে গেছেন সানসিল্ক শ্যাম্পু কিনতে। সেই দোকানে এই শ্যাম্পুর স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় আপনি ডাভ শ্যাম্পু কিনে নিলেন। এক্ষেত্রে আপনি পছন্দসই সাইজের ডাভ শ্যাম্পুর বোতল কিনতে পারেন। আবার চাইলে মাত্র ৩ টাকায় মিনিপ্যাকও কিনতে পারেন। ডাভ বাদে যদি অন্য শ্যাম্পু কিনতে চান, তাতেও বাধা নেই। অন্য ব্রান্ডের শ্যাম্পুতেও পাচ্ছেন বোতল কিংবা মিনিপ্যাক কেনার সুবিধা। কেনার আগে পণ্যটি হাতে নিলে দেখবেন সেটিও ইউনিলিভারের। অর্থ্যাৎ আপনি যে ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুই কিনুন না কেনো, ইউনিলিভারের পণ্য কিনতে আপনি প্রায় বাধ্য। তাই বলা চলে, বৈশ্বিক বাজারে ইউনিলিভারের প্রতিযোগী ইউনিলিভার নিজেই।
বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য ইউনিলিভার প্রতিটি দেশে স্থানীয় পরিচালকদের কাছে প্রয়োজনীয় যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করে থাকে, যা তাদের আরেকটি গ্রোথ স্ট্রাটেজি হিসেবে প্রচুর সফলতা এনে দিয়েছে।
এছাড়াও ইউনিলিভার তাদের পণ্য গুলিকে অন্যদের তুলনায় আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে স্বতন্ত্র কিছু কৌশল ব্যবহার করে থাকে। যেমন, তারা সেলফ কেয়ার পণ্যগুলোতে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধাপের মাধ্যমে পরিবর্তন এনে বাজারজাতকরন করে এবং একই সাথে পণ্যের পরিমান এবং বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মূল্য বৃদ্ধি করে।
মার্কেটিং স্ট্রাটেজির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন আয়ের, ভিন্ন রূচির মানুষের বেডরুম থেকে রান্নাঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে ইউনিলিভার স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ব্র্যান্ড, যার পণ্য ব্যবহার ছাড়া প্রত্যাহিক জীবন ব্যাহত হতে বাধ্য। সর্ব-সাধারনের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে তোলার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলা ইউনিলিভারের সফলতা এখানেই!
16-10-2024
Economy
ব্যবসা ও বিনিয়োগ, একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা...
Read More28-08-2024
Economy
গত বেশ কয়েক বছরে বাংলাদেশের ফরেইন রিজার্ভ নিয়ে...
Read More23-05-2024
Economy
বাংলাদেশের জনজীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যেন এখন...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
Miscellaneous...
20-08-2024
Miscellaneous...
10-12-2023
International...
03-10-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.