একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য সরবরাহকারীর সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, তারা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটাও মূল্যায়ন করা জরুরী। একটি ভাল সরবরাহকারী দিন শেষে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ বয়ে আনে।
অন্যদিকে, সরবরাহকারি যে সঠিকভাবে কাজ করছে বা তার কাছ থেকে আপনি যে পণ্য গ্রহণ করবেন তার জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে হয়। এই চুক্তি শুধু করে ফেলে রাখলে হয় না। তার পাশাপাশি এটি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান করতে হয়। আমরা এখানে আলোচনা করেছি কিভাবে একটি সরবরাহকারীর সাথে চুক্তি ব্যবস্থাপনা করা ও সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়।
চুক্তি সম্পাদন
আমাদের সরবরাহকারীর কাছে থেকে কিছু নিয়ে আসার আগে চুক্তি করা উচিত। তাহলে, তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। চুক্তি করার সময় নিম্নোক্ত বিষয় বিবেচনা করতে হবে:
- কেন চুক্তি সম্পাদন করবেন, চুক্তিতে কি উল্লেখ করা হবে, কি প্রাধান্য পাবে ইত্যাদি নির্ধারণ করতে হবে।
- সম্ভাব্য ঝুকি নির্ণয় করার চেষ্টা করতে হবে।
- ঝুকি নিরসনে বিভিন্ন সমাধান ও বিকল্প ভেবে রাখতে হবে।
- যার সাথে চুক্তি সম্পাদন করবেন তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
- চুক্তি এমনভাবে করতে হবে যাতে উভয় পক্ষ লাভবান হয়।
- চুক্তির সকল ধারা সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করতে হবে।
- কোন অস্পষ্ট ধারা থাকলে তা বিস্তারিত বিবরণী সহ উল্লেখ করে বলতে হবে।
- প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করতে হবে।
- কোন সমস্যা হলে যাতে উভয় পক্ষ যোগাযোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- সমঝোতার মানসিকতা থাকতে হবে।
- উভয় পক্ষ চুক্তি মেনে চলছে কিনা তা তত্ত্বাবধায়ন করতে হবে।
- প্রয়োজনে চুক্তি সংশোধন করতে হবে।
চুক্তির শর্তাবলী
প্রায় প্রতিটি চুক্তিতে কিছু সাধারণ শর্তাবলী থাকে। তবে, তার সব যে আপনার চুক্তিতে রাখতে হবে সেটা জরুরী নয়। আপনি সেগুলি রাখবেন যা আপনার কাজে লাগবে। কিছু সাধারণ শর্তাবলী নিম্নে আলোচনা করা হল:
- চুক্তির উদ্দেশ্য বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে যেমন: কি কাজ করবে, কতদিন চুক্তির মেয়াদ থাকবে, কে পণ্য সরবরাহ করবে ও কে গ্রহণ করবে ইত্যাদি।
- অর্থ লেনদেনের প্রক্রিয়া বিস্তারিত উল্লেখ করা যেতে পারে।
- ডিজিটাল পণ্যের স্বত্তাধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা যেতে পারে যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে ও পারবে না।
- গোপনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা যেতে পারে।
- কখন বা কি করলে চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে তা বিস্তারিত উল্লেখ করা যেতে পারে।
- কোন ক্ষতি বা লোকসান হলে কে দায়ভার নিবে অথবা ক্ষতিপূরণ দিবে সে সম্পর্কে উল্লেখ করা যেতে পারে।
- কোন দেশের আইন অনুযায়ী চুক্তি করা হচ্ছে তা উল্লেখ করা যেতে পারে।
- কোন দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ কে, কিভাবে দিবে সে সম্পর্কে উল্লেখ করা যেতে পারে।
চুক্তি ব্যবস্থাপনা
শুধু চুক্তি করলে হবে না। এটি সঠিক কৌশলের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে। যেমন:
- নিয়মকানুন ও দায়িত্বসমূহ উল্লেখ থাকতে হবে।
- মেয়াদকাল নির্ধারন ও উল্লেখ করা এবং প্রয়োজনে নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে।
- চুক্তির সকল নিয়মাবলী মেনে চলা হচ্ছে কিনা নিয়মিত তত্ত্বাবধায়ন করতে হবে।
- এর সকল ধারা এর সাথে জড়িত সকল পক্ষকে জানাতে হবে।
- এর মেয়াদ সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য কোন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। যেমন: কোন চুক্তির মেয়াদ কবে শেষ হবে সেটা কোথাও লিখে রাখা ইত্যাদি।
- এটি সবসময় পর্যালোচনা করতে হবে যাতে এটি প্রয়োগ করা যায়।
- কোন মতবিরোধ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব তা নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
- উভয় পক্ষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
- প্রয়োজনে দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবীর কাছে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে হবে।
সরবরাহকারীর সাথে সুসম্পর্ক
সরবরাহকারীর সাথে চুক্তি হয়ে গেল। এখন, তাদের সাথে ভাল একটি সম্পর্ক বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এটি নিম্নোক্ত উপায়ে করা যেতে পারে:
- উভয় পক্ষ উভয় পক্ষকে বিশ্বাস করতে হবে।
- একে অপরের উপর আস্থা রাখতে হবে।
- তাদের প্রতি একটি পরিষ্কার, স্পষ্ট আশা রাখতে হবে।
- আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী যাতে পণ্য সরবরাহ করে সে জন্য তাদেরকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
- নিয়মিত যোগানদাতাকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
- যোগানদাতা যাতে নিয়মিত তার সেবা উন্নত করতে পারে সেজন্য তাকে সহযোগিতা করতে হবে।
- আপনিও সম্পর্ক উন্নয়নে আর কি করা যায় সেজন্য যোগানদাতার কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন।
- দ্বন্দ্ব দ্রুত নিরসনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
- স্বচ্ছ যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
- নিয়মিত সরবরাহকারীর কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে হবে।
সরবরাহকারী মূল্যায়ন
একটা সরবরাহকারীর সাথে শুধু কাজ করে গেলে হবে না। নিয়মিত তাকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের কার্যক্ষমতা উন্নয়নে সাহাজ্য করতে হবে। তাছাড়া, আপনি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। নিম্নে কিভাবে একটি সরবরাহকারীকে মূল্যায়ন করা যায় ও তাদেরকে উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
- যোগানদাতার কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন করার জন্য একটি স্বচ্ছ ও স্পষ্ট মানদন্ড তৈরি করতে হবে।
- তাদের সেবা উন্নয়নে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করতে হবে।
- উন্নয়নের সুযোগ চিহ্নিত করতে হবে ও সে জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।
- তাদের কাজ নিয়মিত মূল্যায়ন করতে হবে যাতে তাদেরকে সেবা উন্নয়নে উৎসাহিত করতে পারেন।
- তাদের কাজ অনুযায়ী পুরস্কৃত অথবা শাস্তি প্রদান করতে হবে।
- সরবরাহকারি যাতে উচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করে সেজন্য নিয়মিত তাদের প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে।
- স্বচ্ছ যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
ব্যবসার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সরবরাহকারী
এখন শুধু সরবরাহকারী পেলে হবে না। সেটা আপনার ব্যবশায়িক লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আপনি নিম্নোক্ত উপায়ে একটি সরবরাহকারি নির্বাচন ও কিভাবে তার সাথে কাজ করবেন তা উল্লেখ করা হল:
- প্রথমে, আপনাকে আপনার ব্যবসায়িক লক্ষ্য বুঝতে হবে।
- সে অনুযায়ী যোগানদাতা খুজতে হবে।
- তাদের সাথে কাজ করতে হবে যাতে তাদের সেবার মান উন্নত হয় ও খরচ কমে।
- আপনার ব্যবসার লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
- তাদের কাজ নিয়মিত পর্যালোচনা করতে হবে।
- আপনার সফলতা যোগানদাতাদের সাথে উদযাপন করুন।
বিরোধ নিরসন
অনেক সময় যোগানদাতার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। তা যথাসম্ভব দ্রুত নিরসন করতে হয়। নিম্নে কিভাবে বিরোধ নিরসন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হল:
- মতবিরোধ নিরসনের উপায় আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখা যেতে পারে।
- বিরোধের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
- অপর পক্ষের কথা শুনতে হবে।
- সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
- সমস্যা সমাধান করতে কতদিন লাগতে পারে তা দুই পক্ষ কথা বলে নির্ধারণ করতে পারে।
- প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের স্মরণাপণ্য হতে পারে।
- বিরোধ নিরসনের পর সেটা নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নথিভুক্ত করতে হবে।
- প্রয়োজনে আইনজীবীর কাছে পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।
- দ্বন্দ্ব নিরসনের পর সেখানে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
- সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।
আশা করি, আমাদের ব্লগ আপনাদের ভাল লেগেছে। আমাদের পরবর্তী ব্লগ আপনার ইমেইল ঠিকানাতে পেতে আমাদের Newsletter subscribe করুন। এর পাশাপাশি আমাদের ফেসবুক ও Linkedin পেজ এবং mawbiz.com.bdএর ব্লগ সেকশনে নজর রাখতে পারেন।
Imon Chandra Banik কে আন্তরিক ধন্যবাদ।