Print World Header Banner

Miscellaneous

প্রিন্টিং বিজনেস শুরু করতে চাইলে অবশ্যই জানা দরকার যেসব কথা

Written by: এস এম নাহিয়ান

25-02-2025

প্রিন্টিং বিজনেস শুরু করতে চাইলে অবশ্যই জানা দরকার যেসব কথা


বর্তমানে নতুন যারা ব্যবসা শুরু করছেন, তাদের অনেকেরই পছন্দের প্রথমে থাকে প্রিন্টিং বিজনেস। কারণ সহনীয় পুঁজিতে ভাল লাভ, এরকম ব্যবসার সুযোগ এখন কমই আছে। এছাড়াও যত দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ইভেন্টের পরিমাণ তত বেড়েই চলেছে। আগে হয়তো কিছু বিশেষ অফিস কিংবা রাজনৈতিক দলেরই লোকেরাই প্রিন্টিং এর কাজ করতো। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। স্কুল কলেজের রিইউনিয়ন থেকে শুরু করে অফিসের অনুষ্ঠান, সকল ক্ষেত্রেই প্রিন্টেড পণ্যের চাহিদা ব্যাপক। তাই এই বিজনেসটাও এখন রমরমা। ব্যবসা শুরু করতে আপনি সকল ধরনের প্রিন্টার পেতে পারেন
প্রিন্ট ওয়ার্ল্ডের কাছ থেকে। 

কিন্তু এই ব্যবসায় ঢুকতে গেলে একজন্য উদ্যোক্তা সবার প্রথমে যেই প্রশ্নটা করে, সেটি হলো, কোন ধরনের প্রিন্টার কিনবো? সত্যি বলতে যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগেই সেই ব্যবসা সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা থাকাটা জরুরী। কারণ এখন আর সেই দিন নেই যে, আপনি শুধু টাকা খাটিয়েই ব্যবসাকে সফল করে তুলতে পারবেন। তাই প্রিন্টিং বিজনেসে নামার আগে আপনার সবচেয়ে বেশি যেই জিনিসটা জানা দরকার, সেটি হলো প্রিন্টার। এছাড়া আপনি যদি হয়ে থাকেন কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কর্মকর্তা, অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা অফিসের অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব আপনার উপরেই বর্তায়, তাহলে আপনার জন্যও প্রিন্টার ও প্রিন্টিং এর ধরনগুলো জানা খুবই জরুরী।  

আজকের লেখায় তাই আমরা প্রথমেই জানবো প্রধান তিন ধরনের প্রিন্টারের প্রিন্ট করার ধরন। একই সাথে আলোচনা করবো এগুলোর ভাল খারাপ সব দিক নিয়েই। 

স্কিন প্রিন্টার (Skin Printer) 

বাংলাদেশে এতদিন ধরে যেসকল প্রিন্টিং বিজনেস চলছে, তার একটি বড় অংশ এই স্কিন প্রিন্টিং এর উপরে নির্ভরশীল। অবশ্য এদেশে একে স্কিন প্রিন্টিং বলা হলেও, আদতে এর নাম স্ক্রিন (Screen) প্রিন্টিং। বাংলাদেশে একে অনেকে ডাইস প্রিন্টিংও বলে থাকে।

চিত্রঃ স্কিন / স্ক্রিন প্রিন্টার

যেভাবে স্কিন প্রিন্টিং করা হয় 

সকল প্রিন্টিং প্রক্রিয়ার মতো এক্ষেত্রেও প্রথম ধাপটা হলো ডিজাইন। স্কিন প্রিটিং এর ডিজাইনের ক্ষেত্রে সাধারণত এডোবি ইলাস্ট্রাটেটর অথবা ফটোশপই ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় ধাপটা হলো ডিজাইন অনুসারে একটা ছাঁচ তৈরি করা। একে অনেকে ডাইস বলে, অনেকে আবার প্লেটও বলে। কিন্তু এর শুদ্ধ নামটা হলো ‘স্টেনসিল’। 

নাম যাই হোক, মূলত এই ছাঁচের সাহায্যেই স্কিন প্রিন্টিং এর মূল কাজটা সম্পন্ন হয়। এই ছাঁচটা বসানো হয় প্রিন্টিং সারফেসের উপরে। অর্থাৎ টিশার্ট, মগ যাই হোক না কেন, যার উপরে প্রিন্ট করা হবে সেটার উপরেই ছাঁচটা বসে। এরপর ঘন কালি ছাঁচের মধ্যে দিয়ে প্রিন্ট সারফেসের উপরে দেওয়া হয়। ছাঁচের মধ্যে দিয়ে কালিটা পাঠানোর জন্য  অনেক সময় স্কুইজার বা স্কুইজি নামেও একটা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

এরপরের ধাপে প্রচুর তাপ দিয়ে কালিটা শুকিয়ে ফেলা হয়। কালি শুকিয়ে বসে গেলেই প্রিন্টিং প্রক্রিয়া শেষ।


সুবিধাসমূহ 

এই স্কিন প্রিন্টিং বাংলাদেশের প্রিন্টিং বিজনেসে বহু বছর যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর বেশ কিছু সুবিধার জন্যই আসলে সেটা সম্ভব হয়েছে। 

১। স্থায়িত্ব

প্রথমেই যেই সুবিধাটা নিয়ে কথা বলতে হয়ে সেটা এর স্থায়িত্ব। এই ধরনের প্রিন্টারের কালি অনেক ঘন হয়ে থাকে। কাপড়ের উপরে হাত বোলালে অনেক সময় কালির পুরুত্বও বোঝা যায়। তাই এ ধরনের প্রিন্ট দীর্ঘদিন টিকে। 
২। রঙ

রঙের দিক থেকেও স্কিন প্রিন্টিং দারুণ। অর্থাৎ, স্কিন প্রিটিং এর রঙ হালকা কিংবা গাড়, যেকোনো কাপড়ে খুব ভাল ফুটে ওঠে। স্কিন প্রিন্টারের কালি সাধারণত ওয়াটার অথবা প্লাস্টিসল (Plastisol) বেজড পিগমেন্টেড কালি হয়ে থাকে। ফলে রঙ্গিন প্রিন্ট দেখতে সুন্দর লাগে। 

৩। প্রিন্ট প্রতি কম খরচ

আপনার ব্যবসার ধরন যদি এমন হয়ে থাকে যে বেশিরভাগ অর্ডারের সংখ্যাই অনেক বড় হয়ে থাকে, তাহলে স্কিন প্রিন্টার আপনার জন্য। কারণ একটি স্টেনসিল বা ছাঁচ দিয়েই অগণিত প্রিন্ট করা যায়। এতে কালির খরচও কম। ফলে পণ্যের সংখ্যা যত বেশি হয়, মোট খরচ তত কমে আসে। 

৪। যেকোনো প্রডাক্টে প্রিন্ট করার সুবিধা

স্কিন প্রিন্টার শুধু কাপড়ে নয়, বরং কাঠ, পলিয়েস্টার, গ্লাস, ধাতু, প্লাস্টিক সব কিছুতেই কার্যকরী। অর্থাৎ টি-শার্ট গেঞ্জি এসবের পাশাপাশি আপনি চাইলে যেকোনো পণ্যতেই প্রিন্ট করতে পারবেন। 

৫। স্পেশাল টেক্সাচারের জন্য আদর্শ 

অনেক সময় অনেক গ্রাহক প্রিন্টের উপরে বিশেষ এক ধরনের টেক্সচার চান। অর্থাৎ হাতে নিলে বোঝা যাবে তেমন একটা অনুভূতি পেতে চান। এক্ষেত্রে স্কিন প্রিন্টার আপনার একমাত্র অপশন। কারণ এই প্রিন্টারের কালি দিয়েই শুধু এ ধরনের টেক্সচার তৈরি করা সম্ভব। 


অসুবিধাসমূহ 

সুবিধাগুলো তো জানলেন, চলুন এবার কিছু সমস্যার কথা জানা যাক। মূলত এসব সমস্যার জন্যই দিনে দিনে নতুন উদ্যোক্তরা ঝুঁকে যাচ্ছে সাবলিমেশন অথবা ডিটিএফ প্রিন্টারের দিকে। 

১। সেট-আপের খরচ

ছাঁচ তৈরি করতে হয় বলে এই প্রিন্টারের সেট-আপ খরচ অনেক বেশি। ডিজাইন যাই হোক, ছাঁচ লাগবেই। অর্থাৎ ছোট কোনো অর্ডারের জন্য এই প্রিন্টার একদমই আদর্শ নয়। আবার সবসময় যে বড় অর্ডার পাওয়া যাবে তার গ্যারান্টিও থাকে না। 


চিত্রঃ ছাঁচ বা স্টেনসিল


২। রঙের মিশ্রণ সম্ভব না

স্কিন প্রিন্টারে যেকোনো রঙ মিশিয়ে নতুন রঙ তৈরি করা সম্ভব নয়। কারণ এগুলোতে প্রতিটি রঙের জন্য একটি আলাদা ছাঁচ ব্যবহার করা হয়। এটা অনেকটা লেয়ার সিস্টেমে কাজ করে। তাই এই কালির রঙিন রুপ দেখতে সুন্দর হলেও, জটিল ডিজাইন প্রিন্ট করা সম্ভব নয়।

৩। জটিল ডিজাইন প্রিন্ট করা সম্ভব না 

আপনি যদি চান কোনো ফটোগ্রাফ অথবা খুব হাইল-ডিটেইল সম্পন্ন কোনো ডিজাইন স্কিন প্রিন্টারে প্রিন্ট করাবেন, তাহলে সে আশা না করাই ভাল। যেহেতু ছাঁচ ও প্রতি ছাঁচে এক রঙের কালি ব্যবহার করে হয়, তাই এই প্রিন্টারের সাহায্যে গ্রাফিক্স ইফেক্ট দেওয়া সম্ভব নয়।

৪। দক্ষ কারিগর

আপনার কারিগর যদি খুব দক্ষ না হয়ে থাকে তাহলে এই প্রিন্টার দিয়ে ভাল প্রিন্ট করানো মুশকিল। অর্থাৎ কিছুটা হলেও কারিগরের উপরে নির্ভরশীল হতে হবে। 

সাবলিমেশন প্রিন্টার (Sublimation Printer) 

স্কিন প্রিন্টারের পরেই যেই প্রিন্টারের কথা আসে সেটি হলো সাবলিমেশন প্রিন্টার। বাংলাদেশের অনেক প্রিন্টিং বিজনেসেই এখন সাবলিমেশন প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নতুন যারা ব্যবসা শুরু করছেন তারাও অনেকেই সাবলিমেশন প্রিন্টার নেন। সাবলিমেশন প্রিন্টারের ভেতর কিছু প্রিন্টার পুরোপুরি সাবলিমেশন প্রিন্টার হিসেবেই বানানো হয়। আবার কিছু মডেল ইংকজেট প্রিন্টার থেকে সাবলিমেশন প্রিন্টারে কনভার্ট করা হয়।

বাজারে যেসব ইংকজেট প্রিন্টার ব্র্যান্ড দেখেন, যেমন ক্যানন, এইচপি, এপসন, ব্রাদার, এগুলোর মধ্যে এপসনের প্রিন্টারগুলো ‘মাইক্রো পিয়েজো’ (Micro Piezo) প্রিন্ট হেড ব্যবহার করে। এ ধরনের প্রিন্ট হেড সাবলিমেশন কালি দিয়ে প্রিন্ট করতে পারে। কিন্তু এইচপি কিংবা ক্যাননের ক্ষেত্রে সাধারণ এ সুবিধা থাকে না। পরিচিত বড় ব্র্যান্ড গুলোর মধ্যে এপসনের এল১৩০ সাবলিমেশন প্রিন্টার মডেলটি বেশ জনপ্রিয়। প্রিন্টিং জগতের বড় বড় নাম যেমন প্রিন্ট ওয়ার্ল্ডে পেয়ে যাবেন এই মডেলটি।

চিত্রঃ এপসন এল১৩০ সাবলিমেশন প্রিন্টার 

প্রিন্টিং প্রক্রিয়া 

সাবলিমেশন প্রিন্টারের ক্ষেত্রে প্রথমেই সফটওয়্যারের সাহায্যে ডিজাইন করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে ডিজাইনটা সিএমওয়াইকে (CMYK) কালার মোডে হয়। নাহলে প্রিন্টের রঙ ভিন্ন আসতে পারে। তবে সাবলিমেশন প্রিন্টের ক্ষেত্রে ডিজাইনটাকে মিরর ডিজাইন করতে হয়। কারণ প্রিন্টের সময় ডিজাইন উলটে যায়। 

এর পরের ধাপে ডিজাইনটাইকে একটা সাবলিমেশন পেপারের উপরে প্রিন্ট করা হয়। সাবলিমেশন পেপারের উপরে প্রিন্টটা দেখতে কিছুটা ফ্যাকাসে মনে হতে পারে। কিন্তু প্রিন্টটা যখন কাপড়ে চলে যায় তখন তা আবার বর্ণিল হয়ে যায়। তবে সাবলিমেশন পেপার ও কালি ভাল হওয়া জরুরী। সেক্ষেত্রেও ভরসা করতে পারেন প্রিন্ট ওয়ার্ল্ডের উপর। 

এরপরের ধাপে প্রিন্ট সারফেস, অর্থাৎ যার উপরে প্রিন্ট হবে সেটাকে প্রস্তুত করতে হয়। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যেটা, প্রিন্ট সারফেসকে অবশ্যই পলিয়েস্টার টাইপের হতে হয়। অর্থাৎ সাবলিমেশন প্রিন্টার দিয়ে আপনি সুতি কাপড়ে প্রিন্ট করতে পারবেন না। পলিয়েস্টার কাপড়, সিরামিকের মগ, অ্যালুমিনিয়ামে প্লেট এসব ক্ষেত্রেই শুধু সাবলিমেশন প্রিন্টার ভাল কাজ করে। কিন্তু কেন? 

কারণ সাবলিমেশন পেপারে যে কালি ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেটাকে বলে সাবলিমেশন ইংক। আর এই কালি অন্য কালি থেকে অনেকটাই আলাদা। কারণ তাপ দিলে সাবলিমেশন ইংক গ্যাসে পরিণত হয়। এবং প্রিন্ট সারফেসের সাথে গ্যাস হিসেবে লেগে যায়। কিন্তু কাপড় যদি পলিয়েস্টার ধরনের না হয়, তাহলে গ্যাসীয় কালি ভাল ভাবে বসে না। 

সাবলিমেশন পেপারে প্রিন্ট করার পরের ধাপে প্রিন্ট সারফেসের উপর পেপারটাকে বসানো হয়। এরপর দুইটিকে একসাথে হিট প্রেস মেশিনে ঢোকানো হয়। এই মেশিনে ভেতর ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ডের জন্য অন্তত ১৮০ থেকে ২১০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা রাখা হয়। একই সাথে প্রচন্ড চাপ দেওয়া হয়। এই উচ্চ তাপের কারণে সাবলিমেশন ইংক গ্যাসে পরিণত হয় এবং পলিয়েস্টার কোটেড সারফেসের সাথে লেগে যায়। 

শেষ ধাপে এসে কাপড় গরম থাকা অবস্থাতেই সাবলিমেশন পেপারটাকে টেনে খুলে ফেলতে হয়। এরপর প্রিন্টেড পণ্যটিকে ঠান্ডা হতে দেওয়া হয়। কাপড়ের ক্ষেত্রে ঠান্ডা হওয়ার পর কাপড়টাকে হালকা টেনে দেওয়া হয় যাতে কালিটা আরও ভালভাবে বসতে পারে। 

চিত্রঃ সাবলিমেশন কালি ও পেপার 

এটাই মূলত সাবলিমেশন প্রিন্টারের প্রিন্টিং প্রক্রিয়া। চলুন জানা যাক আপনি যদি একটা সাবলিমেশন প্রিন্টার কেনেন তাহলে ঠিক কি কি সুবিধা পাবেন। 

সুবিধাসমূহ

১। রঙ

সাবলিমেশন প্রিন্টের রঙ খুবই বর্ণিল আর সুন্দর হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়। স্কিন প্রিন্টের মতো কোনো ধরনের ডিজাইন বাধ্যবোধকতা নেই। অর্থাৎ সাবলিমেশনের সাহায্যে চাইলেই আপনি জটিল গ্রাফিক্স ইফেক্ট বা বিভিন্ন কালার গ্রেডিং এর ডিজাইন প্রিন্ট করতে পারবেন। 

২। স্থায়িত্ব 

যেহেতু সাবলিমেশন প্রিন্টের কালি গ্যাসীয় আকার ধারণ করে ফেব্রিকের একদম ভেতরে মিশে যায়, তাই এই প্রিন্ট মুছে যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তাই এ ধরনের প্রিন্টের কাপড়ের রঙ কখনো ফাটে না, অথবা হালকা হয়ে যায় না। সাবলিমেশন প্রিন্ট তুলনামূলক ভাবে স্কিন প্রিন্টের থেকেও বেশি স্থায়ী। 

৩। সহজ প্রিন্টিং প্রক্রিয়া

স্কিন প্রিন্টের সাথে তুলনা করলে সাবলিমেশন প্রিন্টিং প্রক্রিয়া বেশ সহজ। কারণ এখানে ছাঁচ বানানোর কোনো ঝামেলা নেই। এই প্রিটিং করতে খুব একটা দক্ষ কারিগরের প্রয়োজনও পড়ে না। 

৪। ছোট অর্ডারের জন্যও মানানসই 

যেহেতু ছাঁচ বানানোর খরচ নেই, তাই সাবলিমেশন প্রিটিং এ ছোট বড় সব ধরনের অর্ডারই করা যায়। এমনকি একটি প্রিন্ট করলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। বর্তমানের বাজারে সবাই খুবই বিশেষায়িত পণ্য খোজে। অর্থাৎ নিজের মতো করে ডিজাইন করতে চায়। বড় অর্ডারের মার্কেটের তুলনায় এই মার্কেটটাই এখন বেশি। আর এই ধরনের অর্ডার করার জন্য সাবলিমেশন প্রিন্টারই ঠিক আছে।

অসুবিধাসমূহ 

সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও নিশ্চয়ই কিছু রয়েছে। তবে প্রধান অসুবিধা তিনটি। 

১। পলিয়েস্টার কাপড় ছাড়া প্রিন্ট করা যায় না

যেহেতু সাবলিমেশন ইংক গ্যাসে পরিণত হয়ে এরপরে প্রিণ্ট সারফেসের সাথে মিশে যায়, তাই পলিয়েস্টার বা পলিয়েস্টার জাতীয় প্রিন্ট সারফেস সাবলিমেশন প্রিন্টের ক্ষেত্রে জরুরী। সেটা হোক পলিয়েস্টার কাপড় কিংবা অন্য যেকোনো পণ্য। এটা একটা বড় বাঁধা। কারণ প্রিন্টিং বিজনেসের বড় একটা অংশ হলো কাপড়ের উপর প্রিন্ট। এবং সব গ্রাহক পলিয়েস্টার কাপড় পছন্দ করে না। 

২। গাড় রঙের সারফেসে ভাল প্রিন্ট হয় না 

সাবলিমেশন প্রিন্টের আরেকটা  বড় সমস্যা হলো, ডার্ক বা গাড় রঙ্গের সারফেসে ভাল প্রিন্ট আসে না। কারণ এই প্রিন্টারের সাহায্যে সাদা কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা যায় না। ফলে শুধু মাত্র সাদা অথবা হালকা রঙের কাপড়েই সাবলিমেশন প্রিন্ট ভাল কাজ করে। 

৩। বড় অর্ডারের জন্য আদর্শ না

যেই কারণে সাবলিমেশন প্রিন্টার ছোট অর্ডারের জন্য আদর্শ, ঠিক একই কারণে এটা খুব বড় অর্ডারের জন্য আদর্শ না। কারণ এক্ষেত্রে প্রতিটা প্রিন্টের ক্ষেত্রেই খরচ একই থাকে। স্কিন প্রিন্টারের ক্ষেত্রে একটা সংখ্যার পরে খরচের পরিমাণ অনেক কমে যায়, কারণ তখন শুধু কালির খরচটাই লাগে। কিন্তু সাবলিমেশন প্রিন্টারে প্রতিবারই সাবলিমেশন পেপার, ইংক সবই প্রয়োজন হয়। 


ডিটিএফ 

সর্বশেষে আমরা জানবো ডিটিএফ প্রিন্টার সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে এটাই সবচেয়ে আধুনিক প্রিন্টার। ডিটিএফ এর পূর্ণ রুপ ডিরেক্ট টু ফিল্ম (Direct to Film)। এর উদ্ভব মূলত হয়েছে ডিটিজি বা ডিরেক্ট টু গার্মেন্ট (Direct to Garment) প্রিন্টারকে প্রতিস্থাপন করার জন্য। 

তবে প্রিন্টারের সাধারণ পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো পাশাপাশি অন্য কিছু ব্র্যান্ড ডিটিএফ প্রিন্টার মার্কেটে ভাল করছে। যেমন মিমাকি, শিল্ডা, রোল্যান্ড, ডিটিএফ স্টেশন ইত্যাদি। বাংলাদেশের বাজারে অবশ্য সব ব্র্যান্ডের ডিটিএফ প্রিন্টার পাওয়া যায় না। এদেশে সবচেয়ে পরিচিত একটি মডেল হলো ‘Siheda A3 30cm AD380 প্রিন্টার। শিল্ডার এই প্রিন্টারটি বেশ নির্ভরযোগ্য। যা পেয়ে যাবেন প্রিন্টওয়ার্ল্ডে। 


চিত্রঃ Siheda A3 30cm AD380 

বর্তমান সময়ে যারা একদম নতুন উদ্যোক্তা আছেন, তারা অনেকেই এখন এই ধরনের প্রিন্টার কথা ভাবছেন। চলুন জানা যাক এটি আসলে অন্য প্রক্রিয়াগুলো থেকে কিভাবে আলাদা। 

অন্যান্য প্রিন্টারের মতো এটার ডিজাইনও অ্যাডোবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, অথবা কোরেলড্র এই ধরনের সফটওয়্যারে করা হয়ে থাকে। সাবলিমেশন প্রিন্টারের মতো এক্ষেত্রেও ডিজাইন সিএমওয়াইকে কালারে করতে হয়। 

ডিটিএফ প্রিন্টার ডিজাইন অনুযায়ী প্রথমেই একটি ফিল্মে উপরে প্রিন্ট করে। একে বলে ‘পেট’ বা ‘পিইটি’ (PET)। পেট’এর পূর্ণ অর্থ পলিইথিলিন টেরেফথালেট (Polyethylene Terephthalate)। এই ধরনের ফিল্মে প্রিন্টের জন্য ডিটিএফ পিগমেন্ট ইংক ব্যবহার করা হয়। চাইলে এই প্রিন্টারের সাহায্যে প্রথমে একটি পুরো সাদা লেয়ার প্রিন্ট করে এরপরেও রঙ্গিন লেয়ারগুলো প্রিন্ট করা যায়। 

ফিল্মে প্রিন্ট করার পরে তার উপর একটা পাউডার দেওয়া হয়। একে বলে ‘অ্যাডহেসিভ পাউডার’ (Adhesive Powder)। কালি ভেজা থাকা অবস্থাতেই এই পাউডারটি দেওয়া হয়। এরপর অতিরিক্ত কালি ঝেড়ে ফেলা হয়। এরপরে এই ফিল্ম আর পাউডারটাকে হিট মেশিন ব্যবহার করে ১-২ মিনিট সময় ১৬০ থেকে ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়া তাপমাত্রায় রাখা হয়। এই তাপের কারণে অ্যাডহেসিভ পাউডার গলে কালির সাথে মিশে যায়। 

এরপরে ফিল্ম ও পাউডার একবারে প্রিন্ট সারফেসে উপর বসিয়ে দেওয়া হয়। যদি প্রিন্ট সারফেস হয় কাপড়, তাহলে সেই কাপড়ের সাথে কালি আর পাউডার লেগে যায়। তখন আবারও ১০-১৫ সেকেন্ডের জন্য তাপ আর চাপ দিয়ে কাপড়ের সাথে কালিকে স্থায়ী করে দেওয়া হয়। গলে যাওয়া পাউডারের কারণে কালি খুবই ভালভাবে প্রিন্ট সারফেসে লেগে যায়। 

সবশেষে ফিল্মটাকে উঠিয়ে ফেলা হয়। গরম, ঠান্ডা দুই অবস্থাতেই ওঠানো যায়। কিন্তু ঠান্ডা অবস্থাতে খোলাটাই ভাল। কাপড়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় ঠান্ডা হওয়ার পরে আবারও ৫-১০ সেকেন্ড তাপ দিয়ে প্রিন্টটাকে আরও স্থায়ী করা হয়। 


সুবিধাসমূহ 

১। সকল কাপড়ে প্রিন্ট করা যায় 

সাবলিমেশন প্রিন্টার দিয়ে যেমন শুধু পলিয়েস্টার কাপড়ে প্রিন্ট করা যায়, ডিটিএফের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বাধ্যবোধকতা নেই। আপনি চাইলেই সুতি কাপড়ের উপরে প্রিন্ট করতে পারবেন। শুধু তাই না, কটন, পলিয়েস্টার, সিল্ক, লেদার, ডেনিম, সিনথেটিক, সব ধরনের কাপড়ের উপরেই ডিটিএফ প্রিন্টিং সমান কার্যকর। 

২। স্থায়িত্ব 

স্থায়িত্বের দিক থেকে এই তিন ধরনের প্রিন্টিং এর ভেতরে ডিটিএফ প্রিটিং সেরা। এই প্রিন্টিং এর কালি উঠে যাওয়া, ফ্যাকাসে হওয়া অথবা ফেটে যাওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। 

৩। রঙ

ডিটিএফ প্রিন্টারের সাহায্যে আপনি যেকোনো ধরনের, যেকোনো গ্র্যাডিয়েন্টের কালার প্রিন্ট করতে পারবেন। যত জটিল ডিজাইনই হোক, ডিটিএফ প্রিন্টারের সাহায্যে তা প্রিন্ট করা সম্ভব। সাবলিমেশনের সাথে এর সবচেয়ে বড় যেটা পার্থক্য, এটি প্রয়োজন সাদা কালারের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রিন্টও করতে পারে। 


চিত্রঃ ডিটিএফ প্রিন্ট 

৪। হালকা-গাড় সকল সারফেসে প্রিন্ট করার ক্ষমতা

সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করতে পারে বিধায় ডিটিএফ প্রিন্টার দিয়ে যেকোনো রঙের সারফেসে প্রিন্ট করা যায়। অর্থাৎ আপনার কাপড় গাড় রঙের হোক অথবা হালকা, ডিটিএফ প্রিন্টারের উপর ভরসা করতে পারবেন। কিন্তু সুবিধা সাবলিমেশন প্রিন্টারের ক্ষেত্রে নেই। 
৫। ছোট থেকে মাঝারি অর্ডারের জন্য আদর্শ

সাবলিমেশন প্রিন্টারের মতই ডিটিএফ প্রিন্টার ছোট কিংবা মাঝারি অর্ডারের জন্য আদর্শ। ডিটিএফ স্ক্রিন প্রিন্টারের মতো কোনো ছাঁচ তৈরি করতে হয় না। ফলে আলাদা করে কোনো সেটআপ খরচ নেই। 

অসুবিধাসমূহ

সবচেয়ে আধুনিক প্রিন্টার হলেও ডিটিএফ এরও কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমনঃ 

১। রক্ষণাবেক্ষণ 

ডিটিএফ প্রিন্টারের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ সাবলিমেশন অথবা স্কিন প্রিন্টারের থেকে বেশি। এর প্রিন্ট হেড গুলো একদমই পরিষ্কার রাখতে হয় নাহলে প্রিন্টিং এ সমস্যাআ হয়। 

২। প্রিন্টিং প্রক্রিয়া তুলনামূলক জটিল

সাবলিমেশন প্রিন্টিং এর তুলনায় এর প্রিন্টিং প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও জটিল। এতে কালির সাথে পাউডার মেশানোর জন্য অতিরিক্ত এক ধাপ তাপ দিতে হয়। ফলে একটু বেশি সময় লাগে। 

৩। খুব বড় অর্ডারের জন্য আদর্শ নয়

সাবলিমেশন প্রিন্টারের মতই ডিটিএফ প্রিন্টারও খুব বড় অর্ডারের সেরা নয়। তবে বিষয়টি এমন না যে বড় অর্ডার করতে পারবে না। ডিটিএফ প্রিন্টারে আপনি সব কিছুই প্রিন্ট করতে পারবেন। কিন্তু স্কিন প্রিন্টারের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী খরচ বেশি পড়বে

শেষকথা

পরিশেষে এটুকুই বলা যায়, আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে আপনাকে একই ডিজাইন দিনের পর দিন প্রিন্ট করতে হবে, সেক্ষেত্রে স্কিন প্রিন্টার নিতে পারেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের হিসাবে তা অবাস্তব। সে তুলনায় সাবলিমেশন প্রিন্টার এবং ডিটিএফ প্রিন্টার ভাল। আর তিনটির ভেতরেই তুলনা করতে গেলে, শুধুমাত্র ডিটিএফ প্রিন্টারই অলরাউন্ড স্ট্যাটাস পাওয়ার দাবিদার। 

Previous Post

Next Post

Related Posts

বাংলাদেশের সোনার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি: কীভাবে...

23-02-2025

Miscellaneous

বাংলাদেশের সোনার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি: কীভাবে...

সোনা বরাবরই আর্থিক সুরক্ষা এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতীক...

Read More
কক্সবাজারঃ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অনন্য...

23-02-2025

Miscellaneous

কক্সবাজারঃ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অনন্য...

বাংলাদেশের কক্সবাজার শহরটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র...

Read More
সাধারণ কালি নাকি অ্যান্টি-ইউভি কালি - আপনার জন্য কোনটি...

20-02-2025

Miscellaneous

সাধারণ কালি নাকি অ্যান্টি-ইউভি কালি - আপনার জন্য কোনটি...

প্রিন্টার, এমন একটা জিনিস যা যেমন সুবিধাজনক তেমনই...

Read More

Trending

About MAWblog

MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.

We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.

Sign Up for Our Weekly Fresh Newsletter