Home » MAWblog » Sustainable Development » ডিজিটাল রাজনৈতিক প্রচারণাঃ আমেরিকান রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে যে জিনিসগুলো শিখতে পারে বাংলাদেশীরা
Sustainable Development
Written by: এস এম নাহিয়ান
08-01-2025
রঙ বেরঙের পোস্টার, উচ্চ স্বরে মাইকের আওয়াজ, পথে ঘাটে বিকট স্লোগান, বাংলাদেশের রাজনীতির কথা শুনলে এ দৃশ্যুগুলোই যেন মাথায় ভাসে। শুধু বাংলাদেশ বললে ভুল হবে, পুরো উপমহাদেশের রাজনীতিই যেন অনেকটা এই সূত্রে গাঁথা।
কিন্তু যুগ বদলে যাচ্ছে নিজের নিয়মে, সেই সাথে বদলাচ্ছে রীতি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ দেখা যায় আমেরিকা অথবা ইউরোপের রাজনীতিতে। ‘ডিজিটাল দেশ’ বলার মাঝেই সীমাবদ্ধ না থেকে আক্ষরিক অর্থে ডিজিটাল হয়েছে সেখানকার রাজনীতিবিদরা।
এর মাঝে আমেরিকার কথা একটু আলাদা করে না বললেই নয়। বিশেষ করে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কোনটা, সে প্রশ্ন করা হলে আমেরিকার কথাই আসবে। তাদের নির্বাচনের ধরনটাই যেন আলাদা।
এক্ষেত্রে আপনার চিন্তা-ভাবনা কি বলে? বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের কি একই রকম থাকা উচিত? নাকি পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইন আসলে কাকে বলে, তা শেখা উচিত আমেরিকান দলগুলো থেকে? এ সম্পর্কিত কিছু সুচিন্তিত মতামতই নিয়েই হাজির হয়েছে আজ আপনাদের সামনে।
মনে আছে আরব বসন্তের কথা? সেটিই ছিল প্রথম বিপ্লব যাতে এত বিপুল পরিমাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহৃত হয়েছিলো। পরবর্তীতে সেই ধারা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। এমনকি বাংলাদেশের জুলাই অভুত্থ্যানেও সোশ্যাল মিডিয়া কাজ করেছিলো প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সীমিত পরিসরে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার শুরু করলেও তা খুবই সীমিত। অধিকাংশ দলগুলোর সোশ্যাল মিডিয়া কার্যক্রম এখন অবধি ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ চালানোতেই সীমাবদ্ধ। যদিও সমসাময়িক সময়ে কিছু দল প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্যও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন বলতে প্রকৃত অর্থে যা বোঝায়, তা এদেশের দলগুলো করতে এখনও ব্যর্থ।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায় ট্রাম্পের কথা। ২০২৪ সালে তার বিজয়ের পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিলো সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন। এমনকি তিনি প্রেসিডেনশিয়াল ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছু মাসের মধ্যেই একজন টিকটক স্টার হিসেবে পরিচিত হতে থাকেন। বাংলাদেশে এটি কল্পনাও করা যায় না।
তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে শুধু ভাইরাল হওয়াটা জরুরী নয়। বরং ট্রাম্প যেরকম ফেসবুকের পাশাপাশি টুইটার, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম সকল প্ল্যাটফর্মেই সক্রিয় ছিলেন, সেটিই দরকার ছিল ২০২৪ সালে। বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ফেসবুক পেজ থেকে শুধুমাত্র অফিসিয়াল বিবৃতি দেওয়ার ধারা থেকে বেরিয়ে আসা।
তার বদলে প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের উপস্থিতি রক্ষা, নিয়মিত সকল ইস্যুতে বক্তব্য দেওয়া, উদ্দীপনাময় কিছু ভিডিও বার বার বুস্ট করে সামনে আনা, ইত্যাদি হতে পারে, সার্বক্ষণিক মানুষের মনে যায়গা করে নেওয়ার উপায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি আরও অনেক মাধ্যমেই অ্যাড টার্গেটিং ব্যবহার করা যায়। এমনকি কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কোন ধরনের অ্যাড চালানো হবে, সেটিও একটি কৌশলগত সিধান্ত।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে টার্গেটেড অ্যাডের প্রচলন নেই বললেই চলে। অথচ সেই ২০১২ সালেই বারাক ওবামার নির্বাচন ক্যাম্পেইন বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, ইত্যাদির উপর নির্ভর করে অ্যাড চালিয়েছিলো। সে সময় কমবয়ষ্ক ভোটারদের দেখানো হয়েছিলো স্টুডেন্ট লোন সংক্রান্ত অ্যাড। অন্যদিকে বয়ষ্করা দেখেছিলেন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্ক অ্যাড।
এই ধারা পরবর্তী ২০১৬, ২০২০ এবং ২০২৪ সবকয়টি নির্বাচনেই বজায় থেকেছে। এমনকি ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন গুগল অ্যাডস (Google Ads) ব্যবহার করে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্চগুলোকে অ্যাড দেখানোর জন্য টার্গেট করেছিলো। কারণ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম পয়েন্ট ছিল ট্রাম্পের কোভিড-১৯ সামলানোর ব্যার্থতা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার চিরুনী অভিযান করলেও পাওয়া যাবে না। অথচ ২০২০ এর নির্বাচনে প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাওয়ায় ২০২২ সালে ট্রাম্প নিজেই লঞ্চ করে ট্রুথ সোশ্যাল (Truth Social)।
ট্রাম্পের দাবি এটি এমন একটি সোশ্যাল মিডিয়া যাতে বাকস্বাধীনতা সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে সবসময় যে রাজনীতিবিদদের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া খোলার প্রয়োজন আছে, বিষয়টা তা নয়। কিন্তু নিজের ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ আপডেট দিতেও অনেক অ্যাপ তৈরি করেছে আমেরিকার রাজনীতিবিদরা।
বার্নি স্যান্ডার্স এর ‘বার্নি অ্যাপ’ (Bernie App), জো বাইডেনের ‘ভোট জো’ (Vote Joe), বারাক ওবামার ‘ওবামা ফর আমেরিকা’ (Obama for America) অ্যাপ এসবের সেরা উদাহরণ। এ ধরনের অ্যাপের সঠিক ব্যবহার করতে পারলে অন্তত দেশের আধুনিক সমাজের মাঝে খুব সহজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারবে বাংলাদেশের যেকোনো রাজনৈতিক দল।
যত দিন যাচ্ছে, মানুষ ততই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে ভিডিও কন্টেন্ট এর উপরে। কিন্তু বাংলাদেশের কোন রাজনৈদিক দলের ভাল ভিডিও কন্টেন্ট আছে বলে আপনি মনে করেন? অথচ একটি ভাল ভিডিও টিম পরিচালনা করা কিন্তু খুব খরচের কোনো বিষয় না।
বিষয়টি একবার ভেবে দেখুন। আপনার কাউন্সিলর, এমপি, অথবা দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতি সপ্তাহে একটি করে ভিডিও বানাচ্ছে। মাত্র ৭ মিনিটের একটি ভিডিতেও যে হয়তো সে সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বিষয়ে কথা বলছে। পার্টির গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপের বর্ণনা দিচ্ছে। অথবা শেয়ার করছে তাদের সফল্যর কথা।
এ ধরনের আধুনিক ক্যাম্পেইনই পারে একটি নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। আর এমন ক্যাম্পেইন শুধু আমেরিকা নয় বরং ইউরোপের আরও অনেক দেশের কর্ণধাররাই করে থাকেন।
শুনতে হাস্যকর শোনালেও, মিম কন্টেন্ট গুলো যেকোনো বিষয় সম্পর্কে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সমসাময়িক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ ভাল কিছু মিম কন্টেন্ট দেখা গেছে। কিন্তু তার কি পরিমাণ যে আসলে দলীয় ইন্ধনে সৃষ্ট, আর কতটা যে স্বপ্রণোদিত, সেটিই বড় প্রশ্ন।
উপরের যেই মিমটা দেখছেন, সেটা কিন্তু ট্রাম্পের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে গত ১২ ডিসেম্বর পোস্ট করা। এ ধরনের মিম কন্টেন্ট দেওয়ার কথা, এদেরশের রাজনীতিবিদরা হয়তো চিন্তাও করতে পারেন না। তবে এটিও সত্যি যে বর্তনান বাংলাদেশে সামাজিক অবস্থানে মিম কন্টেন্ট অনেক ভোটারই ভাল ভাবে নেবে না।
তবে সরাসরি নিজস্ব পেজ থেকে আপলোড না দিলেও আরও অনেক ভাবেই মিম কন্টেন্ট বেশ ভাল ক্যাম্পেইন টুল (Campaign Tool) হতে পারে ভোটের রাজনীতিতে। কারণ একটি অ্যাড দিয়ে লক্ষ মানুষকে পৌছাতে যেখানে আপনার প্রচুর ডলার খরচ হবে, একটি ভাল মিম বিনা খরচে ১০ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে নিমিষেই।
বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয় সকল ভোটারকে একসাথে টার্গেট করে। পুরো ক্যাম্পেইন পরিচালনা হয় কিছু ‘ধারনার’ ভিত্তিতে। অথচ সেই ধারনাগুলো কতটুকু সঠিক আর কতটুকু ফলাফল বয়ে আনছে, তার কোনো হিসাব থাকে না।
আপনি যদি ইউসএস পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইনগুলোর দিকে তাকান, কোনোটাই এমন ‘ধারনার’ উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয় না। বরং এই প্রতিটি ক্যাম্পেনই হয় ডাটা-ড্রিভেন। পাবলিক রেকর্ড, ভোটার রেজিস্ট্রেশনের তথ্য এবং অনলাইন এক্টিভিটি উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় ভোটার প্রোফাইল।
প্রায় সকল পক্ষই নির্ভর করে বিগ-ডাটা অ্যানালাইসিস (Big-data Analysis) এর উপরে। এমনকি ভোটারদের ডেমোগ্রাফিক প্রোফাইলের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল একসাথে করে সে অনুযায়ী চালানো হয় ক্যাম্পেইন। শুধু ক্যাম্পেইন চালানোতে সীমাবদ্ধ থাকে না দলগুলো। বরং ক্যাম্পেইনের কৌশলগুলো কতটা ভালভাবে কাজ করছে তাও সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
আমেরিকান রাজনীতিবিদেরা তাদের রাজনৈতিক প্রচারণার বড় একটি অংশের জন্য নির্ভর করে ইনফ্লুয়েন্সারদের উপরে। নিচের যেই ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি আমেরিকান ইনফ্লুয়েন্সার অ্যাডিন রস (Adin Ross)। ২০২৪ এর আগস্ট মাসে ট্রাম্প তার সাথে প্রায় ৯০ মিনিটের কথোপকথন করেন।
আবার আরেকটি ছবিতে আমরা ট্রাম্পকে দেখতে পাই লোগান পলের সাথে। লোগান পল মূলত একজন রেসলার। কিন্তু তার একটি পডকাস্টও আছে। আর সেই পডকাস্টেই উপস্থিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষরা খারাপ পাবলিসিটির ভয়ে সাংবাদিকদের সাথেই সাবধানে কথা বলছিলো, ট্রাম্প এভাবেই নানা ইনফ্লুয়েন্সারের সাথে আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছিলো। আর এটিই তার এবারের নির্বাচনে জয়ী হতে, বিশেষত যুবকদের ভোট পেতে, বিশাল সাহায্য করে।
কিন্তু বাংলাদেশে এই ধারাটি নেই বললেই চলে। অনেক আগে রাফসান দ্যা ছোটভাই এর সাথে আওয়ামিলীগের একজন মন্ত্রী একটি ভিডিওতে এসেছিলেন। কিন্তু সেটি কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না। তবে রাজনীতির সাথে জড়িত নেই কিন্তু জনপ্রিয়তা আছে এমন ইনফ্লুয়েন্সারের সাহায্য নেওয়া হতে পারে কার্যকরী একটি কৌশল।
শেষকথা
সবশেষে এইটুকুই বলা যায়, সময় ও স্রোত কারো জন্যই বসে থাকে না। সময় যেমন বদলে যাচ্ছে, তেমনই বদলাচ্ছে বর্তমানের ভোটারদের পালস। আর অন্যান্য নির্বাচনের থেকে আগামীর জাতীয় নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণ থাকবে অনেক বেশি। তাই সাফল্য চাইলে এখন থেকেই আউট অফ দি বক্স (Out of the box) চিন্তা করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ আগামীর নির্বাচনে তরুণদের ভোটব্যাংক যার, বিজয় তার!
27-01-2025
Sustainable Development
ছোটবেলায় সমাজ বইয়ে আমরা নিশ্চয়ই পড়েছি অনেক আইনসভা হয়...
Read More12-11-2024
Sustainable Development
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বহু দশক ধরে বিকশিত...
Read More27-10-2024
Sustainable Development
ভারত নাকি চীন, বাংলাদেশের জন্য এ যেন এক চিরন্তন টানা...
Read MoreTop 10 in...
03-10-2022
International...
03-10-2024
Miscellaneous...
30-09-2024
Miscellaneous...
20-08-2024
MAWblog strives to provide a platform for authors, reporters, business owners, academics, people who do writing as a hobby and concerned citizens to let their voices be heard by a wider community. Our goal is to publish contents that are in line with our core goals of promoting sustainable business practices, improving community harmony and facilitating knowledge sharing and ethical labour market practices.
We invite you to write and publish under any of our nine chosen categories and make an impact towards building a better and more sustainable future.